ঋগ্বেদ ১০।১১৪

ঋগ্বেদ ১০।১১৪
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ১১৪
বিশ্বদেব দেবতা। সধ্র ঋষি।

১। সূৰ্য্য আর অগ্নি, এই যে দুই প্রতপ্ত দেবতা আছেন, তাঁহারা চতুর্দিকে গমনপূর্বক ত্রিভুবনব্যাপী হইলেন। মাতরিশ্বা তাহাদিগের প্রতি লাভ করি লেন। যখন দেবতারা সাম ও সুৰ্য্যকে প্রাপ্ত হইলেন, তখন তাঁহারা ত্রিভুবন রক্ষার জন্য আকাশের জল সৃষ্টি করিলেন।

২। যজ্ঞ দিবার জন্য যজ্ঞকর্তারা তিন নিঃঋতির উপাসনা করে। পরে যশস্বী অগ্নিরা দেবতাদিগের সহিত পরিচিত হয়েন। বিদ্বানেরা তাহাদিগের নিদান অবগত আছেন, তাঁহারা পরম গুহ্যব্রতে অবস্থান করেন।

৩। এক যুবতী নারী আছেন, তাঁহার মন্তকে চারি বেণী, তাহার মূর্তি সুন্দর ও স্নিগ্ধ, তিনি উৎকৃষ্ট উৎকৃষ্ট বস্ত্র পরিধান করেন। দুই পক্ষী তাহার উপর উপবেশন করে, তথায় দেবতারা ভাগ প্রাপ্ত হয়েন(১)।

৪। এক পক্ষী সমুদ্রে প্রবেশ করিল, সে এই সমস্ত বিশ্বভুবন অবলোকন করে। পরিণত বুদ্ধিদ্বারা তাহাকে আমি দেখিয়াছি, সে নিকটবর্তিনী মাতাকে লেহন করে, মাতাও তাহাকে লেহন করে(২)।

৫। পক্ষী একই আছেন, বুদ্ধিমান পণ্ডিতগণ তাহাকে কল্পনাপূর্বক অনেক প্রকার বর্ণনা করেন। তাঁহারা যজ্ঞের সময় নানা ছন্দ উচ্চারণ করেন, এবং দ্বাদশসংখ্যক সোমপাত্র সংস্থাপন করেন(৩)।

৬। পণ্ডিতগণ চত্বারিংশৎ প্রকার ছন্দ উচ্চারণ করেন। এবং দ্বাদশ সোম পাত্র সংস্থাপন করেন; এই রূপে তাঁহারা বুদ্ধিপূর্বক যজ্ঞানুষ্ঠান করিয়া ঋক ও সাম দ্বারা রথ চালাইয়া থাকেন। অর্থাৎ যজ্ঞ সম্পাদন করেন।

৭। এই যজ্ঞের আরও চতুর্দশ মহিমা আছে; সাত জন বিদ্বান বাক্যদ্বারা সেই যজ্ঞ সম্পাদন করেন। যজ্ঞের পথে উপস্থিত হই দেবতারা সোন পান করেন, সেই বিশ্বব্যাপী পথের বিষয় কে বর্ণনা করিতে পারে?

৮। পঞ্চদশ সহস্র উকথ আছে; দ্যাবাপৃথিবী যত বৃহৎ, উকথও তত বৃহৎ। স্তোত্রের মহিমা সহস্র প্রকার, স্তোত্র যেরূপ অসীম, বাক্যও তদ্রূপ অসীম(৪)।

৯। কোন্ পণ্ডিত এরূপ আছেন, যিনি সমস্ত ছন্দের বিষয় অবগত আছেন? কেই বা মূলীভূত বাক্যকে বুঝিয়াছেন? কে এরূপ প্রধান পুরুষ আছেন, যিনি সমস্ত পুরোহিতের উপর অষ্টম হইতে পারেন(৫)? কেই বা ইন্দ্রের দুই হরিতবর্ণ ঘোটককে নিশ্চিত বুঝিয়াছে অথবা দেখিয়াছে।

১০। কোন কোন ঘোটক পৃথিবীর শেষ সীমা পর্যন্ত বিচরণ করে; কেহ বা রথের ধুরাতে যোজিত হইয়াই থাকে। যখন সারথি রথের উপরে সংস্থাপিত হয়েন, তখন পরিশ্রম দূর করিবার জন্য ঐ সকলঘোটকদিগকে উপযুক্ত আহার দেওয়া হয়।

————

(১) অর্থাৎ যজ্ঞ বেদিই সেই নারী, চারি কোন ঘৃত থাকাতে স্নিগ্ধ, যজ্ঞ সামগ্রীই ভাল ভাল বস্ত্র, দুই পক্ষী অর্থে যজমান ও পুরোহিত। সায়ণ।

(২) অর্থাত পক্ষী এস্থানে প্রাণ বায়ু, সমুদ্র ব্রহ্মাণ্ড। আর মাতা অর্থে বাক্য। প্রাণ না থাকিলে বাক্য থাকে না। সায়ণ।

(৩) অর্থাৎ পরমাত্মা এক, তাঁহাকে নানারূপ কল্পনা করা হয়। সায়ণ। ভিন্ন ভিন্ন দেবতার নাম এক আত্মা, বা ঈশ্বরের ভিন্ন ভিন্ন নাম মাত্র এই কথাটি ঋগ্বেদে অনেকগুলি অপেক্ষাকৃত আধুনিক সূক্তে দেখিতে পাওয়া যায়। ১০ মন্ডলের ১৬৪ সূক্তের ৪৬ ঋক দেখ। যে কারণে সেই সূক্তটিকে আমরা অপেক্ষাকৃত আধুনিক বলিয়াছি, (তাঁহার শেষ ঋকের টীকা দেখ), সেই সমস্ত কারণ বশতঃ এই সূক্তটিও অপেক্ষাকৃত আধুনিক বলিয়া অনুমান হয়।

(৪) “As early as about 6oo B. C. we find that in the theological schools of India every verse, every word, every syllable, of the (Rig) Veda had been counted. The number of varses as computed in treatises of that date varies from 10,402 to 10,622 : that of the words is 153,826; that of the syllables, 432,000.”-Max Muller’s Selected Essays, vol. II (1881), p. 119.

(৫) সাত জন পুরোহিতের উল্লেখ নবম ও দশম মন্ডলের অনেক স্থানে পাওয়া যায়।