ঋগ্বেদ ১০।১০৮

ঋগ্বেদ ১০।১০৮
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ১০৮
পণিগণ, সরমা দেবতা। তাঁহারাই ঋষি।

১। হে সরমা! তুমি কি বানায় এ স্থানে আসিয়াছ? ইহা অতি দুরের পথ। এ পথে আসিতে হইলে পশ্চাৎ দিকে দৃষ্টিপাত করিলে আসা যায় না, আমাদিগের নিকট এমন কি বস্তু আছে, যাহার জন্য আসিয়াছ? কয়রাত্রি ধরিয়া আসিয়াছ? নদীর জল পার হইলে কিরূপে?।

২। (সরমার উক্তি) -ইন্দ্রের দূতী স্বরূপ প্রেরিত হইয়া আমি আসিয়াছি। হে পণিগণ! তোমরা যে বিস্তর গোধন সংগ্রহ করিয়াছ, তাহা গ্রহণ করাই আমার ইচ্ছা। জল আমাকে রক্ষা করিয়াছে, জলের ভয় হইল, পাছে আমি উলঙ্ঘনপূর্বক চলিয়া যাই। এই রূপে নদীর জল পার হইয়াছি(১)।

৩। (পণিদিগের উক্তি)-হে সরমা! যে ইন্দ্রের দূতী হইয়া তুমি দূর দেশ হইতে আসিয়াছ, সেই ইন্দ্র কিরূপ? তাহাকে দেখিতে কি প্রকার? তিনি আসুন, তাঁহাকে আমরা বন্ধু বলিয়া স্বীকার করিতে প্রস্তুত আছি, তিনি আমাদিগের গাভী লইয়া গাভীগণের সত্ত্বাধিকারী হউন।

৪। (সরমার উক্তি)-যে ইন্দ্রের দূতী হইয়া আমি দূরদেশ হইতে আসিয়াছি, তাহাকে পরাজয় করে, এরূপ ব্যক্তিকে দেখি না। তিনিই সকলকে পরাজয় করেন। গম্ভীর নদীগণ তাহাকে আচ্ছাদন, অর্থাৎ তাহার গতিরোধ করিতে সমর্থ নহে। হে পণিগণ! নিশ্চয় তোমরা ইন্দ্রের হস্তে নিধন হইয়া শয়ন করিবে।

৫। (পণিদিগের উক্তি)-হে সুন্দরি সরমে! তুমি স্বর্গের শেষ সীমা হইতে আসিতেছ, অতএব তোমাকে এই সকল গাভীর মধ্য হইতে যে কয়েকটা ইচ্ছা কর, দিতেছি, বিনা যুদ্ধে এই সকল গাভী কেইবা তোমাকে দিত? তীক্ষ্ণ তীক্ষ্ণ অনেক অস্ত্র আমাদিগের নিকট বিদ্যমান আছে।

৬। (সরমার উক্তি) -হে পণিগণ! সৈনিক পুরুষের উপযুক্ত তোমা দিগের এই সকল কথা হয় নাই। তোমাদিগের শরীরে পাপ আছে, এই শরীর যেন ইন্দ্রের বাণের লক্ষ্য না হয়। তোমাদিগের গৃহে আসিবার এই যে পথ, ইহা যেন দেবতার আক্রমণ না করেন; আমি আশঙ্কা করিতেছি, পাছে বৃহস্পতি তোমাদিগকে ক্লেশ দেন। অর্থাৎ যদি তোমরা নম্র হইয়া গাভী না দেও, তাহা হইলে তোমাদিগের বিপদ নিকট।

৭। (পণিদিগের উক্তি)-হে সরমা! আমাদিগের এই ধন পর্বতদ্বারা রক্ষিত, ইহা গাভী, অশ্ব ও অন্যান্য সম্পত্তিতে পরিপূর্ণ। যাহারা উত্তম রূপ রক্ষা করিতে পারে, এতাদৃশ পণিগণ সেই ধন রক্ষা করিতেছে। তুমি গাভীর শব্দ শুনিয়া এই স্থানে আসিয়াছ, কিন্তু তোমার বৃথাই আসা হইয়াছে।

৮। (সরমার উক্তি) -অযাস্য ঋষি, অঙ্গিরার সন্তানগণ এবং নবগুগণ, সোমপাণে, উৎসাহিত হইয়া আসিবেন; তাঁহারা এই বহু পরিমাণ গাভী ভাগ করিয়া লইবেন; হে পণিগণ! তখন তোমাদিগকে এপ্রকার দর্পের উক্তি ত্যাগ করিতে হইবে।

৯। (পণিগণের উক্তি) -হে সরমা! দেবতারা ভয় প্রদর্শন করিয়া তোমাকে এই স্থানে পাঠাইয়াছেন, সেই নিমিত্তই তুমি আসিয়াছ। তোমাকে আমরা ভগিনীস্বরূপে পরিগ্রহ করিতেছি, তুমি আর ফিরিয়া যাইও না। হে সুন্দরি! তোমাকে এই গোধনের ভাগ দিতেছি।

১০। (সরমার উক্তি)—আমি ভাতৃভগিনীসংক্রান্ত কোন কথা বুঝতে পারিনা। ইন্দ্র ও পরাক্রান্ত অঙ্গিরার সন্তানেরা সকলি জানেন, তাঁহারা গাভী পাইবার জন্য আমাকে রক্ষাপূর্বক পাঠাইয়া দিয়াছেন, আমি তাহাদিগের আশ্রয় পাইয়া আসিয়াছি। হে পণিগণ! এই স্থান হইতে অতি দূরে পলায়ন কর।

১১। হে পণিগণ! এস্থান হইতে অতি দূরে পলায়ন কর। গাভীগণ কষ্ট পাইতেছে, তাহারা ধর্মের আশ্রয়ে এই পৰ্বত হইতে উঠিয়া চলুক। বৃহস্পতি, সোম, সোমপ্রস্তুতকারী প্রস্তরগণ, ঋষিগণ এবং মেধাবীগণ এই সকল গুপ্তস্থানস্থিত গাভীদিগের বিষয় জানিতে পারিয়াছেন।

————

(১) ঊষাকর্তৃক প্রাতকালে আলোক উদ্ধারই উপমাচ্ছলে সরমাকর্তৃক গাভী উদ্ধাররূপে বর্ণিত হইয়াছে এবং এই আখ্যান আবার গ্রীকদিগের মধ্যে ট্রয়ের যুদ্ধের গল্পরূপে বর্ণিত হইয়াছে, এই ইউরোপীয় মতটি আমরা পূর্বেই উদ্ধৃত করিয়াছি। পুনরায় এ স্থলে সেটি উদ্ধৃত করিতেছি।

“The bright cows, the rays of the sun or the rain clouds, for both go by the same name, have been stolen by the powers of darkness, by the Night and her manifold progeny. Gods and men are anxious for their return; but where are they to bu found? They are hidden in a dark and strong stable, or scattered along the ends of the sky, and the robbers will not restore them. At last in the farthest distance the first signs of the Dawn appear; the poem about, and runs with lightning quickness, it may be like a hound after a scene across the darkness of the sky. She is looking for something and following the right path. She has found it; she has heard the lowing of the cows.”

“ The idea that Pani wished to reduce Sarama from her allegiance to Indra may be discovered in the ninth verse of the Vedio dialogue, though in India it does not seem to have given rise to any further myths. But many a muth that only germinates in the Veds may be seen breaking forth in full bloom in Homer. If, then, we may be allowed a guess, we would recognize in Helen, the sister of the Dioskuroi, the Indian Sanama, their names being phonetically identical, not only in every consonant and vowel, but even in their accent.”

“ The siege of Troy is but a repetition of the daily stage of the east by the solar powers that every evening are robbed of their brightest treasures in the west. That siege in its original form is the conctant theme of the hymns of the Veda. Sarama, it is true, does not yield in the Veda to the temptation of Pani, yet the first indications of her faithlessness are there.”

“And as the Sanskrit name Panis betrays the former presence of an r, Paris himself might possibly be identified with the robber who tempted Sarama.”-Max Muller’s Science of Language (1882), vol. II, pp. 513 to 516.