ঋগ্বেদ ১০।১০৬

ঋগ্বেদ ১০।১০৬
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ১০৬
অশ্বিদ্বয় দেবতা। ভূতাংশ ঋষি।

১। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা দুজনে আমাদিগের আহুতি অভিলাষ করিতেছ; যেরূপ তন্তুবায় বস্ত্র বয়ন কবে, তদ্রুপ আমাদিগের স্তব বিস্তার করিয়া দিতেছ(১)। এই যজমান উত্তমরূপে এই বলিয়া তব করিতেছে যে,তোমরা একত্রে এস। চন্দ্র সূর্যের ন্যায় তোমরা খাদ্য দ্রব্যকে আলোকিত করিয়া বসিয়াছ।

২। যেরূপ দুই বলীবর্দ ঘাসপূর্ণ স্থানে বিচরণ করে, তদ্রুপ তোমরা যজ্ঞ দানক্ষম ব্যক্তির নিকটে গমন কর। রথে যোজিত দুই বৃষের ন্যায় ধন দানের জন্য তোমরা স্তবকত্তার নিকট আসিয়া থাক। তোমরা দূতের ন্যায় লোকদিগের নিকট যশস্বী হও। দুটা মহিষ যেমন জলপান স্থান হইতে অপসৃত হয় না, তদ্রুপ তোমরাও সোম পান হইতে অপসৃত হইওনা।

৩। যেরূপ পক্ষীর দুই পক্ষ পরস্পর মিলিত, তদ্রুপ তোমরাও পরস্পর মিলিত। বিচিত্র দুই পশুর ন্যায় তোমরা এই যজ্ঞে আসিয়াছ। যজ্ঞকর্তা অগ্নির ন্যায় তোমরা দীপ্তিযুক্ত। সৰ্বত্ৰবিহারী দুই পুরোহিতের ন্যায় তোমরা নানা স্থানে দেবপূজা করিয়া থাক।

৪। পিতা মাতা যেরূপ পুত্রের প্রতি, তদ্রুপ তোমরা আমাদিগের আত্মীয় হও। অগ্নি ও সূর্যের ন্যায় তোমরা দীপ্তিশীল হও; রাজার ন্যায় ক্ষিপ্রকারী হও, ধনবান ব্যক্তির ন্যায় উপকারী হও; সূর্যকিরণের ন্যায়আলোক দান পূর্বক লোকদিগের সুখভোগের অনুকূলতা কর। সুখী লোকের ন্যায় তোমরা এই যজ্ঞে আগমন কর।

৫। সুচারুগতিশালী দুই বৃষের ন্যায় তোমরা হৃষ্টপুষ্ট ও সুশ্রী, মিত্র ও বরুণের ন্যায় তোমরা যথার্থদশী, বদান্য এবং দুঃখ হ্রাস করিয়া স্তব লাভ কর, দুটী ঘোটকের ন্যায় তোমরা খাইয়া খাইয়া উন্নতশরীরবিশিষ্ট হইয়াছ, এবং আলোকময় আকাশে বাস কর। দুই মেষের ন্যায় তোমরা আহারাদি পরিচৰ্য্যা প্রাপ্ত হইয়া পরিপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিশিষ্ট হইয়াছ।

৬। অঙ্কুশ তাড়িত মত্ত হস্তীর ন্যায় তোমরা শরীর অবনত করিয়া শত্রু সংহার কর। শত্রুনিধন কারীর সন্তানের ন্যায় তোমরা শত্রুকে বিদীর্ণ ও বধ কর। তোমরা এমনি নির্মল, যেন জলমধ্যে জন্মিয়াছ; তোমরা বলবান্ ও জয়শীল। সেই তোমরা আমার মরণধৰ্ম্মশীল দেহকে পুনর্বার যৌবনাবস্থা দান কর।

৭। হে তীব্ৰবলশালী অশ্বিদ্বয়! যেরূপ দীর্ঘচরণবিশিষ্ট ব্যক্তি অন্যকে কল পান করিয়া দেয়, তদ্রূপ তোমরা আমার জরাজীর্ণ মরণ ধর্মশীল দেহকে বিপদ হইতে পার করিইয়া অভিলষিত বিষয়ে লইয়া চল, তোমরা ঋভুর ন্যায় অতি পরিষ্কার রথ পাইয়াহ। সেই শীঘ্রগামী রথ বায়ুর ন্যায় উড়িয়া গিয়া শত্রুর ধন আনিয়া দিয়াছে।

৮। তোমরা মহাবীরের ন্যায় আপন উদরে ঘৃত ঢালিয়া দাও। তোমরা ধন রক্ষা কর এবং অস্ত্রধারী হইয়া শক্ত হিংসা কর। তোমরা পক্ষীর ন্যায় রূপবান ও সর্বত্র বিহারী, ইচ্ছামাত্রে তোমরা ভূষিত হও, এবং স্তবের জন্য যজ্ঞে আগমন কর।

৯। যেরূপ সুদীর্ঘ দুই চরণ থাকিলে গভীর জল পার হইবার সময় আশ্রয় পাওয়া যায়, তোমরা সেইরুপ আশ্রয় দাও। তোমরা দুই কর্ণের ন্যায় স্তবকারীর কথা মনোযোগপূর্বক শ্রবণ কর। যজ্ঞের দুই অঙ্গের ন্যায়আমাদিগের এই বিচিত্র যজ্ঞে আগমন কর।

১০। শব্দকারী দুই মধুমক্ষিকাই যেমন মধু চক্রে মধুসেচন করে, তদ্রূপ তোমরা গভীর আপীনে মধুতুল্য দুগ্ধ সঞ্চার করিয়া দাও। শ্রমজীবী যেমন শ্রম করিয়া ঘর্মাক্ত কলেবর হয়, তদ্রুপ তোমরা ঘর্মের ন্যায় জল সেচন কর। যেমন দুর্বল গাভী ঘাসযুক্ত স্থানে যাইয়া আহার প্রাপ্ত হয়, তদ্রূপ তোমরা যজ্ঞে আসিয়া আহার পাও।

১১। আমরা স্তব বিস্তাৱিত করিতেছি, আহার বিতরণ করিতেছি, তোমরা একরথারূঢ় হইয়া আমাদিগের যজ্ঞে এস। গাভীর আপীন মধ্যে সুমিষ্ট আহারের ন্যায় দুগ্ধ সঞ্চার হইয়াছে। ভূতাংশ ঋষি এই স্তব করিয়াঅশ্বিদ্বয়ের মনোরথ পূর্ণ করিলেন।

————

(১) তন্তুবায়ের উল্লেখ।