ঋগ্বেদ ১০।১০২

ঋগ্বেদ ১০।১০২
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ১০২
ইন্দ্র দেবতা। মুদ্গল ঋষি।

১। হে মুদ্গল! যুদ্ধে তোমার রথ যখন অসহায় হয়, তখন দুর্ধর্ষ ইন্দ্র তাহা রক্ষা করুন। হে ইন্দ্র! এই বিখ্যাত যুদ্ধে ধনোপার্জনের সময় তুমি আমাদিগকে রক্ষা কর।

২। যুগলের পত্নী যখন রথারূঢ়া হয় সহস্রজয়িনী হইলেন, তখন বায়ু তাঁহার বস্ত্র সঞ্চালিত করিল, পাভী জয়ের সময় মুদগলপত্নী রখী হইলেন। ইন্দ্রসেনা নারী সেই মুদগলানী যুদ্ধের সময় গাভীগণকে শত্রু সৈন্য হইতে বাহির করিয়া আনিলেন (১)।

৩। হে ইন্দ্র! অনিষ্টকারী নিধনোদ্যত শত্রুদিগের উপর বজ্রপাত কর। দাসজাতীয় হউক, বা আৰ্যজাতীয় হউক, উহাকে অপ্রকাশরূপে বধ কর(২)।

৪। দেখ এই বৃষ মহানন্দে জলপান করিল, মৃত্তিকাস্তূপ শৃঙ্গদ্বারা খনন পূর্বক শক্রর দিকে যাইতেছে। তার মুষ্ক ভাববৎ লম্বমান আছে, সে আহারার্থী হইয়া দুই শৃঙ্গ শাণিত করিয়া শীঘ্র আসিতেছে।

৫। মনুষ্যগণ এই বৃষের নিকটে গিয়া ইহাকে চীৎকার করাইল, যুদ্ধ মধ্যে ইহাকে প্রস্রাব করাইল। তাহাতে মুদগল উত্তম আহারপটু শতসহস্র গাভী জয় করিলেন।

৬। শত্রু হিংসার জন্য বৃষ যোজিত হইল; ইহার কেশধারিণী সারথি, অর্থাৎ মুদগলানী শব্দ করিতে লাগিলেন। রথে যোজিত সেই বৃষকে ধরিয়া রাখা গেল না, সে শকট লইয়া ধাবমান হইল, সৈন্যগণ নির্গত হইয়ামুদগলানীর পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল।

৭। সেই বিদ্বান মুদ্গল রথের চক্রের পরিধি বাঁধিয়া দিয়াছিলেন। কৌশলসহকারে রথে বৃষকে যোজনা করিলেন। সেই গাভীগণের পতি, অর্থাৎ বৃষকে ইন্দ্র রক্ষা করিলেন। সেই বৃষ দ্রুতবেগে পথে চলিল।

৮। এতোদধারী ও কপর্দী চর্মরজ্জুদ্বারা কাঠ বঁধিতে বাঁধিতে সুচারুরূপে বিচরণ করিলেন। বিস্তর লোকের ধন উদ্ধার করিলেন। বহুসংখ্যক গাভী স্পর্শ করিয়া বলিয়া আনিলেন।

৯। দেখ, যুদ্ধ সীমার মধ্যে এই যে মুদ্গল পতিত আছে, ইহা সেই বৃষের সহকারিতা করিয়াছিল। ইহাদ্বারা মুদগল শত্রুসৈন্য মধ্যে শতসহস্র গাভী জয় করিয়াছিলেন।

১০। অতি দূরদেশেও কেই বা এপ্রকার কখন দেখিয়াছে? যাহাকে রথে যোজনা করিয়াছে, তাহাকেই আরোহণ করাইয়াছে। ইহাকে ঘাসজল দেয়না, অথচ এ রথধুরার উক্ত ভার বহন করিতেছে, এবং প্রভুকে জয়ীও করিতেছে (৩)।

১১। মুদগলানী বিধবার ন্যায় নিয়ে ক্ষমতা প্রকাশ করিয়া পতির ধন গ্রহণ করিলেন, তিনি যেন মেঘের ন্যায় বাণবর্ষণ করিলেন। ঈদৃশ সারথি দ্বারা আমরা যেন জয়শ্রী লাভ করি। আমাদিগেরও যেন অন্ন প্রভৃতি লাভ হয়।

১২। হে ইন্দ্র! তুমি সমস্ত জগতের চক্ষু স্বরূপ; যাহাদিগের চক্ষু আছে, তাহাদিগের তুমি চক্ষু। তুমি বারিবর্ষণকারী; তুমি দুইটী পুরুষজাতীয় অশ্ব রজ্জুদ্বারা একত্র বন্ধন করিয়া চালিত কর এবং ধনদান কর।

————

(১) যুদ্ধরথে নারীর সারথিরূপে বর্তমান থাকার কথা। ৬, ৮, ও ১১ ঋকে দেখ।

(২) আর্য্যদিগের মধ্যে পরপস্পরের অনেক বৈরভাব ছিল ও যুদ্ধ হইত। অনার্য্যদিগের মধ্যেও অনেকে আর্য্যধর্ম গ্রহণ করিয়া মিত্রভাবে থাকিত তাহার প্রমাণ পূর্বে পাইয়াছি।

(৩) এই ঋকের অর্থ অস্পষ্ট, সায়ণের ব্যাখ্যা হইতেও বিশদ হয় না। তবে কল্পনা করা যাইতে পারে যে, মুদ্গল বৃষরূপী হইয়া যুদ্ধে রথ টানিয়া ছিল; বোধ হয় এই প্রকার প্রবাদ অবলম্বন করিয়া ইহা লিখিত হইয়াছে।