ঋগ্বেদ ১০।০৬৪

ঋগ্বেদ ১০।০৬৪
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৬৪
বিশ্বদেব দেবতা। গয় ঋষি।

১। যজ্ঞের সময় দেবতারা আমাদিগের স্তব শুনিয়া থাকেন। তাহাদিগের মধ্যে কাহার স্তব কি উপায়ে উত্তম রূপে রচনা করি? কে আমাদিগকে কৃপা করেন? কে সুখ বিধান করেন? কেই বা রক্ষা করিবার জন্য আমাদিগের নিকট আসেন?

২। অনুষ্ঠান সকল অনুষ্ঠিত হইতেছে; দেবতাদিগের স্তব সকল হৃদয়ের মধ্যে রহিয়াছে; উৎকৃষ্ট ভাব সকল স্ফূর্তি পাইতেছে; মনের প্রার্থনা সকল উপস্থিত হইয়াছে; আমার মনের অভিলাষগুলি দেবতাদিগের দিকেই বাঁধা আছে। তাহারা ব্যতীত সুখদাতা আর কেহ নাই।

৩। মনুষ্যগণ যাহাকে বর্ণনা করেন, সেই পূষাদেবকে স্তবের দ্বারা পূজা কর; দেবতারা যাহাকে প্রজ্বলিত করিয়াছেন, সেই দুদ্ধর্ষ অগ্নিকে স্তবের দ্বারা পূজা কর। সূর্য ও চন্দ্র ও যম ও দিব্যলোকবাসী ত্রিত ও বার ও ঊষা ও রাত্রি ও অশ্বিদ্বয়কে স্তব কর।

৪। জ্ঞানী অগ্নি কি প্রকারে এবং কি বাক্যদ্বারা বৃদ্ধিযুক্ত হয়েন। বৃহস্পতি নামক দেবতা সুরচিত স্তবের দ্বারা পরিতুষ্ট হয়েন। অজ একপাদ ও অহির্বুধ্ন আমাদিগের আহ্বানকালে রচিত স্তব সকল শ্রবণ করুন।

৫। হে অবিনাশী পৃথিবী! সুৰ্য্যের জন্ম ব্যাপারের সময় তুমি, মিত্র ও বরুণ এই দুই রাজার পরিচর্যা করিয়া থাক। সেই সূৰ্য্য বৃহৎ রথে আরোহণপূর্বক শনৈঃ শনৈঃ গমন করেন, তাহার জন্ম নানা মূর্তিতে হয়; সপ্তঋষি তাহার আহ্বানকর্তা।

৬। ইন্দ্রের যে সকল ঘোটক নিজে হইতে যুদ্ধের সময় বিস্তর ধন শত্রু দিগের নিকট হরণ করিল; যাহারা, যেন যজ্ঞের সময়, সর্বদাই সহস্র ধন দান করেন, যাহারা সুশিক্ষিত ঘোটকের মত পরিমিতরূপে চরণ ক্ষেপ করে, তাহারা সকলে আমাদিগের আহ্বান শ্রবণ করুক, নিমন্ত্রণ গ্রহণ করিতে তাহারা কখনই পরাঙ্মুখ নহে।

৭। হে স্তবকৰ্তাগণ! রথযোজনাকারী বায়ুকে এবং বহুকাৰ্য্যকারী ইন্দ্রকে এবং পুষাকে স্তব করিয়া তোমাদিগের বন্ধুত্ব স্বীকার করাও। তাহারা সকলে এক মন ও অনন্যমনা হইয়া সূর্যের প্রসব সময়ে অর্থাৎ প্রভাতে যজ্ঞে উপস্থিত হয়েন।

৮। প্রবাহশালিনী ত্রিগুণিত সপ্ত সংখ্যক প্রকাণ্ড নদী এবং জল, বনতরু গণ, পর্বত, অগ্নি, কৃশানু নামক দেব, বাণক্ষেপকারী গন্ধর্বগণ, তিষ্য, রুদ্র এবং রুদ্রদিগের মধ্যে প্রধান রুদ্র, আশ্রয় পাইবার জন্য ইহাদিগের সকলকে আমরা আহ্বান করিতেছি।

৯। সরস্বতী, সরযু, এবং সিন্ধু (১) এই সকল মহাতরঙ্গশালিনী প্রবাহশালিনী নদী রক্ষা করিতে আসুন। জল প্রেরণকারিণী জননীস্বরূপা এই সকল দেবী আমাদিগকে ঘৃততুল্য, মধুতুল্য, জল দান করুন ।

১০। সেই বিপুল দীপ্তিশালিনী দেবতা এবং দেবপিতা ত্বষ্টা নিজ পুত্র দেবতাদিগের সহিত আমাদিগের বাক্য শ্রবণ করুন। আমরা উত্তম উত্তম স্তব উচ্চারণ করিতেছি, আমাদিগকে ইন্দ্র এবং বাজ এবং রথপতি ভগ রক্ষা করুন।

১১। যেমন অন্ন পরিপূর্ণ গৃহ রমণীয়, মরুগণ দেখিতে তেমনি রমণীয়! রুদ্রপুত্র মরুগণের তবে মঙ্গল হইয়া থাকে।লোকদিগের মধ্যে আমরা গোধনে ধনী হইয়া যেন যশস্বী হই। যেন সর্বদাই আমরা স্তবের দ্বারা দেবতা দিগকে ভজনা করি।

১২। হে মরুৎগণ! হে ইন্দ্র! হে দেবতাগণ! হে বৰুণ! হে মিত্র! তোমাদিগের প্রসাদে আমি যে সুমতি প্রাপ্ত হইয়াছি, যেরূপ গাভী দুগ্ধে পরি পূর্ণ হয়, তদ্রূপ সেই সুমতিকে পরিপূর্ণ কর। তোমরা আমার স্তব শ্রবণপূর্বক অনেক বার রথারোহণে যজ্ঞে আসিয়াছ।

১৩। হে মরুৎগণ! তোমরা যেমন পূর্বে অনেক বার আমাদিগের বন্ধুত্বের অনুরোধ রক্ষা করিয়াছ, তদ্রূপ এখনও কর। আমরা যে স্থানে সর্ব প্রথম যজ্ঞবেদী সংস্থাপন করি, তথায় পৃথিবী আমাদিগের আত্মীয়ের ন্যায় কার্য্য করুন।

১৪। সেই সর্বজনবিদিত দ্যাবাপৃথিবী অতিমহতী জননীস্বরূপা, সেই দুই দেবী যজ্ঞের সময় নিজ পুত্র দেবতাদিগের সহিত আগমন করেন, তাহারা উভয়ে দুই ভুবনকে নানা উপায়ে ধারণ করিয়া রাখেন। তাঁহার পিতৃলোক দিগের সহিতমিলিত হইয়া প্রচুর শুক্র, অর্থাৎ বৃষ্টিবারি সেচন করেন।

১৫। সেই হোমের মন্ত্র সৰ্ব্ব প্রকার কাম্য বস্তুর বিষয়ই উল্লেখ করে, সেই মন্ত্র প্রধান ব্যক্তিদিগকে পালন করে, সে অবিশ্রান্ত দেবতাদিগকে স্তব করিতেছে। সেই মন্ত্রে মধু উৎপাদনকারী প্রস্তর বৃহৎ বলিয়া কীৰ্তিত আছে। বিদ্বানগণ স্তবের দ্বারা দেবতাদিগকে যজ্ঞকামুক করিয়াছেন।

১৬। যিনি জ্ঞানসম্পন্ন, যাঁহার বিস্তর স্তরের সঞ্চয় আছে, যিনি যজ্ঞানুষ্ঠান জানেন; সেই মেধাবী গয় ঋষ বিশিষ্ট ধন কামনাদ্বারা প্রবর্তিত হইয়া তাবৎ দেবতাদিগকে উত্তম উত্তম স্তব ও স্তবের দ্বারা এইরূপে আখ্যায়িত করিলেন।

১৭। পূর্ব সূক্তের শেষ ঋকের সহিত অভিন্ন।

————

(১) সরস্বতী, সরযু ও সিন্ধু নদীর উল্লেখ।