ঋগ্বেদ ১০।০৫৫
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৫৫
ঋষি ও দেবতা পূর্ববৎ।
১। তোমার সেই শরীর দূরে আছে, মনুষ্যগণ পরাঙ্মুখ হইয়া তাহা গোপন করে, যখন দ্যাবাপৃথিবী ভীত হইয়া অন্নের জন্যে তোমাকে ডাকে, তুমি তখন তোমার নিকটবর্তী মেঘরাশিকে প্রদীপ্ত কর, এবং পৃথিবী হইতে আকাশকে উৰ্দ্ধকৃত করিয়া ধরিয়া রাখ।
২। তোমার সেই যে গোপনীয় শরীর, যাহা বিস্তর স্থান ব্যাপ্ত করিয়া আছে, তাহা অতি প্রকাণ্ড। তাহা দ্বারা তুমি ভূত ভবিষ্যৎ সৃষ্টি কর। যে যে জ্যোতির্ময় বস্তু উৎপাদন করিতে ইচ্ছা হইল, সেই সমস্ত প্রাচীন বস্তু উহা হইতে উৎপন্ন হইল, পঞ্চ জনপদের মনুষ্য তাহা দ্বারা উপকৃত হইল।
৩। ইন্দ্র আপন শরীরে দ্যাবা ও পৃথিবী ও মধ্য ভাগ সমস্ত আকাশ পূর্ণ করিলেন। তিনি সময়ে সময়ে পঞ্চ জাতি ও সপ্তসংখ্যক যাবতীয় তত্ত্ব আপনার জ্যোতির্ময় নানাবিধ কাৰ্য্যের দ্বারা সংধারণ করেন, তাঁহার সেই কাৰ্য একই ভাবে চলিতেছে। চৌত্রিশ দেবতা এই বিষয়ে তাহার সাহায্য করে (১)।
৪। হে উষা! তুমি আলোকধারী পদার্থদিগের মধ্যে সর্ব প্রথম আলোক দিয়াছ, যাহা পুষ্টিযুক্ত আছে, তুমি তাকে আরও পুষ্টিযুক্ত কর, তুমি উপরে আছ, কিন্তু নিম্নে মনুষ্যদিগের প্রতি তোমার বন্ধুত্ব, ইহা তোমার মহত্ত্বের ও অসাধারণ অসুরত্বের(২) লক্ষণ।
৫। যখন যুবা থাকে, কত কাৰ্য্য করে যুদ্ধে কত শত্রু তাহার ভয়ে পলায়ন করে, তথাপি বহুকালের বৃদ্ধকাল তাহাকে গ্রাস করে। দেবতার একবার আশ্চর্য ক্ষমতা দেখ, সে গত কল্য জীবিত ছিল, অদ্য মরিয়া গেল।
৬। দেখ, উজ্জ্বল একটি পক্ষী আসিতেছে, তাহার অদ্ভুত বল, সে বৃহৎ ও প্রাচীন বলশালী, তাহার কুলায় কুত্রাপি নাই। সে যাহা করিতে চায়, তাহা সত্যই হইবে, বৃথা হইবে না। অতি চমৎকার সম্পত্তি সে জয় করে এবং দান করে।
৭। বজ্রধারী ইন্দ্র এই সকল মরুৎদেবতাদিগের এতাদৃশ বল প্রাপ্ত হইলেন, যাহাতে বৃষ্টি বর্ষণ করিলেন এবং বৃত্রকে বধ করিয়া পৃথিবীকে অভিষিক্ত করিলেন। মহীয়ান ইন্দ্র যখন সেই কাৰ্য্য করেন, তখন মরুতগণ আপনা হইতেই বৃষ্টি উৎপাদন কাৰ্য্যে প্রবৃত্ত হয়েন।
৮। সেই ইন্দ্র মরুদগণের সাহায্যে কর্ম সম্পন্ন করেন, তাহার তেজ সৰ্বত্রগামী; তিনি রাক্ষসদিগকে নিধন করেন, তাহার মন বিশ্বব্যাপী তিনি সত্বর জয়ী হয়েন, তিনি আকাশ হইতে আসিয়া সোমপানপূর্বক, শরীর বৃদ্ধি করিলেন এবং বীৰ্য্যসহকারে যুদ্ধ করিয়া দস্যু জাতীয়দিগকে বধ করিলেন ।
————
(১) এ ঋকের অর্থ অস্পষ্ট। মূলে এই রূপ আছে “আরোদসী আপৃণাং আ উত মধ্যং পঞ্চ দেবান ঋতুশঃ সপ্ত সপ্ত চতুস্ত্রিংশতা পুরুষা বিচষ্টেস রূপেণ জ্যেতিষা বিব্রতেন”। সায়ণ বলেন পঞ্চজাতি যথা- দেব, মনুষ্য, পিতৃ, অসুর ও রাক্ষস। সপ্ত সংখ্যক যাবতীয় তত্ত্ব যেমন সপ্ত মরুত সপ্ত ইন্দ্রিয় ইত্যাদি।
(২) ঋগ্বেদের দশম অষ্টকে “অসুর” শব্দ ১৮ বার ব্যবহৃত হইয়াছে যথা—
৫৩ সূক্তের ৪ ঋকে অসুর শব্দ বলবান শত্রু সম্বন্ধে ব্যবহৃত।
৫৫ ,, ৪ ,, অসুরত্ব ,, ঊষার ক্ষমতা ,,
৫৬ ,, ৬ ,, অসুর ,, সূর্য্য ,,
৭৪ ,, ২ ,, ঐ ,, প্রবল অর্থে ,,।
৮২ ,, ৫ ,, ঐ ,, দেবগণ ,,
৯২ ,, ৬ ,, ঐ ,, মেঘ ,,
৯৩ ,, ১৪ ,, ঐ ,, রাম রাজা ,,
৯৬ ,, ১১ ,, ঐ ,, ইন্দ্র ,,
৯৯ ,, ২ ,, অসুরত্ব ,, বল ,,
৯৯ ,, ১২ ,, অসুর ,, ইন্দ্র ,,
২৪ ,, ৩ ,, ঐ ,, দেবগণ ,,
১২৪ ,, ৫ ,, ঐ ,, ,, ,, ,,
১৩২ ,, ৪ ,, ঐ ,, মিত্র ,,
১৩৮ ,, ৩ ,, ঐ ,, দেবশত্রু পিপ্রু ,,
১৫১ ,, ৩ ,, ঐ ,, দেবশত্রুদিগের ,,
১৫৭ ,, ৪ ,, ঐ ,, ,, ,,
১৭০ ,, ২ ,, ঐ ,, ,, ,,
১৭৭ ,, ১ ,, ঐ ,, দেবশত্রু ,,
দশম মন্ডলের অনেক সূক্ত ঋগ্বেদের অন্যান্য মন্ডলের অনেক পরে রচিত হইয়াছে, তাহা পূর্বেই বলিয়াছি। দশম মন্ডলের শেষ ভাগের সূক্তগুলি প্রায়ই অপেক্ষাকৃত আধুনিক। সুতরাং সেই সকল সূক্তে “অসুর” শব্দ অনেকটা পৌরাণিক অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে।