ঋগ্বেদ ১০ মণ্ডল(১), ১ সূক্ত
অগ্নি দেবতা। ত্রিত ঋষি।
১. প্রভাত না হইতে হইতেই প্রকাণ্ড ও সুন্দর মুর্ত্তিধারী অগ্নি অন্ধকারের মধ্য হইতে নির্গত হইয়া আলোকযুক্ত হইলেন। তিনি দীপ্যমান শিখাসম্পন্ন হইয়া তাবৎ গৃহ আলোকে পরিপূর্ণ করিলেন।
২. হে অগ্নি! তুমি দ্যুলোক ও ভূলোকের সুশ্রী সন্তানস্বরূপ, তাঁহাদিগের হইতেই তোমার উৎপত্তি, তুমি ওষধি অর্থাৎ কাষ্ঠের মধ্যে সঞ্চিত থাক। তুমি আশ্চর্য্য বালক, তোমার শত্রুস্বরূপ অন্ধকারকে দূর করিয়া থাক, ওষধী অর্থাৎ কাষ্ট তোমার মাতা, তুমি শব্দ করিতে করিতে তোমার সেই মাতৃবর্গের দিকে ধাবিত হও।
৩. অগ্নি বিষ্ণু, কেননা চতুর্দ্দিকব্যাপী, ইনি, বিদ্বান অর্থাৎ জানেন, ইনি প্রকাণ্ড হইয়া আমি যে ত্রিত, আমাকে উত্তমরূপে রক্ষা করেন। ইহার জল মুখে করিয়া অর্থাৎ জল যাঞ্চা করিতে করিতে যজ্ঞকর্ত্তা ব্যক্তিরা একমনে তাঁহাকে অর্চ্চনা করেন।
৪. তোমার মাতাস্বরূপ ওষধীবর্গ (অর্থাৎ উদ্ভিজ্জগণ), খাদ্যদ্রব্যের ধারণকর্ত্রী, তাঁহারা নানাবিধ অন্নসহকারে তোমার পূজা করেন, যে হেতু তুমি অন্নের বৃদ্ধি করিয়া দাও। তুমি আবার সেই ওষধিবর্গের প্রতি যাইয়া থাক, তাহাতে তাহারা অন্যরূপ অর্থাৎ দগ্ধ হইয়া যায়, তুমি মনুষ্য জাতীয় প্রজাদিগের হোতাস্বরূপ, অর্থাৎ যজ্ঞে দেবতাদিগকে আহ্বান কর।
৫. অগ্নির রথ নানা বর্ণ, ইনি যজ্ঞের হোতা, ইনি যজ্ঞের উজ্জ্বল পতাকাস্বরূপ, অর্থাৎ যজ্ঞানুষ্ঠানের বিষয় সকলকে জানাইয়া দেন, ইনি সকল দেবতার অধিপতি ইন্দ্রের প্রতি যাইয়া থাকেন, ইনি লোকদিগের নিকট অতিথির ন্যায় পূজ্য; ইহাকে বিপুল সম্পত্তির জন্য স্তব করিতেছি।
৬. হে অগ্নি! তুমি সুবর্ণময় বস্ত্র পরিধানপূর্ব্বক পৃথিবীর নাভি, অর্থাৎ মধ্যস্থানস্বরূপ উত্তর বেদির উপর অধিষ্ঠান করিয়া এবং লোহিতবর্ণ হইয়া উঠিয়া দীপ্ত পাইতে পাইতে দেবতাদিগকে অর্চ্চনা করিতেছ।
৭. যে রূপ, পুত্র জননীকে আলিঙ্গন করে, তদ্রুপ, হে অগ্নি! তুমি দ্যাবাপৃথিবীকে আপনার আলোকে পরিপূর্ণ কর। হে যুবা পুরুষ! তুমি ভক্তদিগের নিকট গমন কর। হে বলশালী! তুমি দেবতাদিগকে এই স্থানে লইয়া আইস।
———————–
(১) ঋগ্বেদের নবম মণ্ডলের সহিত যেরূপ সামবেদের বিশেষ সম্পর্ক, সেই রূপ ঋগবেদের দশম মণ্ডলের সহিত অথর্ব্ববেদের বিশেষ সম্পর্ক। অথর্ব্ববেদের অনেকগুলি সূক্ত এই দশম মণ্ডল হইতে লওয়া। দশম মণ্ডল ঋগ্বেদ রচনাকালের শেষ অংশে রচিত হইয়াছে, তাহা বিবেচনা করিবার অনেক কারণ আছে, তাহা আমরা ক্রমশ নির্দ্দেশ করিব। প্রথম মণ্ডলের ন্যায় দশম মণ্ডল নানা বংশীয় ঋষিকর্ত্তৃক রচিত।