ঋগ্বেদ ০৯।১০৮
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ১০৮
পবমান সোম দেবতা। গৌরিবীতি, শক্তি, উরু, ঋজিশ্বা, উর্ধসদ্মা, কৃতযশা ও ঋণঞ্চয় ইহারা ঋষি।
১। হে সোম! তুমি মত্ততার উৎপাদনকারী, দীপ্তিমান ও কর্মে অতি পটু, তুমি যারপর নাই মধুপূর্ণ হইয়া ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিত হও।
২। বৃষ্টিবর্ষণকারী ইন্দ্র তোমাকে পান করিয়া বৃষের ন্যায় বলবান্ হন। তুমি তাবৎ বস্তু দান করিতে পার। এতাদৃশ তোমাকে পান করিয়া ইন্দ্রের বুদ্ধি সুন্দররূপে স্ফুর্তিযুক্ত হয়, যেমন ঘোটক যুদ্ধে যায়, তিনি তদ্রুপ শত্রুর আহারীয় সামগ্রী লুণ্ঠন করিতে যান।
৩। হে সোম! তোমার ন্যায় উজ্জ্বল কিছুই নাই। তুমি যখন ক্ষরিত হও, তখন দেবতা বংশজাত তাবৎ ব্যক্তিকে অমরত্ব দিবার নিমিত্ত আহ্বান করিতে থাক (১)।
৪। তুমি সেই সোম, যাহার সাহায্যে অঙ্গিরবংশসম্ভূত দধ্যঙ নামক ব্যক্তি তাহার নিযের অপহৃত গাভীর সন্ধান পাইয়াছিলেন; যাহার সাহায্যে তাহার মেধাবী পুত্ররা সেই গাভী প্রাপ্ত হয়; যাহার সাহায্যে সুচারুরূপে যজ্ঞকার্য সম্পন্ন হইয়া দেবতার পরিতোষ প্রাপ্ত হইলে যজ্ঞকর্তা ব্যক্তিগণ অন্নলাভ করিয়া থাকেন।
৫। এই দেখ, সেই তিনি সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ মাদকতা শক্তিসম্পন্ন হইয়া ধারার আকারে ক্ষরণপূর্বক মেষলোম পথে নির্গত হইতেছেন, যেন জলের একটি তরঙ্গ ক্রীড়া করিতেছে।
৬। হে সোম! তুমি আকাশ হইতে ক্ষরণশীল জল সমস্ত মেঘের মধ্য হইতে নিজ বলে নির্গত করিয়াছিলে, গোসমূহ ও ঘোটকসমূহকে রক্ষা করিয়াছিলে, সেই তুমি দূর্ধর্ষ কবচধারী বীরের ন্যায় সংহার কর।
৭। হে পুরোহিতগণ! এই সে সোম, যিনি ঘোটকের ন্যায় দ্রুতগামী যিনি স্তবের যোগ্য, ঘিনি জলবর্ষণ করেন, আপনার তেজ বিকীর্ণ করেন, যিনি কাষ্ঠময় পাত্রে পাত্রে সঞ্চিত হইয়া জলের সহিত মিশিত হয়েন, সেইসোমকে প্রস্তুত কর, সেই সোমকে চতুর্দিকে সেচন কর।
৮। যিনি রসসেচনকারী এবং সহস্রধারায় ক্ষরিত হইয়া থাকেন, যিনি জলের সহযোগে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইয়া দেবতামাত্রের প্রীতিপ্রদ হয়েন, যজ্ঞে যাহার জন্ম, যজ্ঞেতেই যাহার বৃদ্ধি, যিনি রাজা এবং দেবতা স্বরূপ এবং অতি প্রধান সত্যস্বরূপ।
৯। হে অন্নের অধিপতি দেব! দেবতাদিগের নিকট গমনপূর্বক তুমি উজ্জ্বল ও প্রভূত অন্নরাশি আহরণ করিয়া দাও এবং আকাশস্থিত মেঘকে দ্বিখণ্ড করিয়া বৃষ্টিবর্ষণ কর।
১০। হে সুনিপুণ সোম! তুমি দুই ফলক সহযোগে প্রস্তুত হইয়া রাজ্য ভারবহনকারী নরপতি রাজার ন্যায় আগমন কর। আকাশ হইতে জলের স্রোত বর্ষণ কর, গোধনের অভিলাসী যজ্ঞ কর্তা ব্যক্তির অনুষ্ঠান সকল সম্পন্ন কর ।
১১। এই যে সোন, যিনি মাদকরস বর্ষণ করেন, সহস্রধারায় ক্ষরিত হয়েন, তাবৎ সম্পত্তি ধারণ করেন, পুরোহিতেরা, তাহাকে দোহন, অর্থাৎ প্রস্তুত করিতেছেন।
১২। রসবর্ষণকারী সোম জন্ম গ্রহণ করলেন, তিনি শব্দ করিতেছেন, আপনার কিরণদ্বারা অন্ধকার নষ্ট করিতেছেন। কবিরা তাহাকে স্তব করিলে তিনি দুগ্ধের সংসর্গে শুভ্র মূর্তি হইতেছেন, তাহার ক্ষরণ ক্ৰিয়াদ্বারা তিনটিআধার পরিপূর্ণ হইতেছে।
১৩। যে সোম অন্ন ও গাভী ও ধন ও উত্তম উত্তম গৃহ উপার্জন করাইয়া দেন, তাহাকে পুরোহিতেরা প্রস্তুত করিলেন।
১৪। আমরা প্রস্তুত করিলে লোকে ইন্দ্র পান করিলেন এবং মরুৎগণ ও অৰ্যমা ও ভগ পান করলেন। তাহার সাহায্যে আমরা মিত্র ও বরুণকে এবং ইন্দ্রকে অনুকূল করা উত্তমরূপে রক্ষা প্রাপ্ত হই।
১৫। হে সোম! যজ্ঞের অধ্যক্ষগণ তোমাকে সঞ্চয় করিয়াছেন, তোমার আধারভূত পাত্র সকল তোমার অস্ত্র শস্ত্রের ন্যায় শোভা পাইতেছে, তুমি যারপর নাই মধুর ও মাদকতা শক্তি যুক্ত হইয়া ইন্দ্রের পানের জন্য ক্ষরিত হও।
১৬। হে সোম! যেমন নদীগণ সমুদ্রে প্রবেশ করে, তদ্রূপ তুমি ইন্দ্রের আহ্লাদ উৎপাদনকারী কলসে প্রবেশ কর । মিত্র ও বরুণ এবং বায়ুর জন্য তোমাকে নিবেদন করা হইয়াছে। তুমি স্বৰ্গধামের সর্বশ্রেষ্ঠ অবলম্বন স্বরূপ।
————
(১) অমৃত পান করিয়া দেবগণের অমরত্ব লাভ করা স্বরূপ পৌরাণিক গল্প সোমরসের বৈদিক বর্ণনা হইতে উৎপন্ন।