ঋগ্বেদ ০৮।০৯১

ঋগ্বেদ ০৮।০৯১
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ৯১
ইন্দ্র দেবতা। অপালা ঋষি।

১। জলের অভিমুখে গমন কালে কন্যা পথে সোমও লাভ করিলেন; গৃহে আনয়ন কালে সোমকে বলিলেন ইন্দ্রের উদ্দেশে তোমাকে অভিষব করি, সমর্থ ইন্দ্রের উদ্দেশে তোমায় অভিষব করি (১)।

২। হে ইন্দ্র! তুমি বীর, তুমি অত্যন্ত দীপ্তিমান্, তুমি গৃহে গৃহে গমন কর, এই দন্তদ্বারা অভিযুত, ভ্ৰষ্টযব শক্তু, অপূপ এবং উকথস্তুতিবিশিষ্ট সোম পান কর।

৩। হে ইন্দ্র! তোমায় জানিতে ইচ্ছা করি, এখন তোমার সহিত অধিগত হইব না। হে সোম! ইহার উদ্দেশে প্রধম মন্দ মন্দ পরে দ্রুত বেগে ক্ষরিত হও।

৪। সেই ইন্দ্র বহুবার আমাদিগকে সামর্থ যুক্ত করুন, আমাদিগকে বহুসংখ্যক করুন, তিনি আমাদিগকে অনেক বার ধনবান্ করুন। আমরা পতিকর্তৃক পরিত্যক্ত হইয়া এখানে আসিয়াছি, আমরা ইন্দ্রের সহিত সঙ্গত হইব।

৫। হে ইন্দ্র! আমার পিতার মস্তক ও ক্ষেত্র এবং আমার উদর সমীপস্থিত প্রদেশ এই তিনটি স্থান আছে, ইহাদিগকে উৎপাদনশীল কর ।

৬। আমাদের পিতার যে উশর ক্ষেত্র আছে, আমার এই শরীর ও আমার পিতার মস্তক এই সমস্তকে লোমযুক্ত কর।

৭। হে শতক্রতু! তুমি রথের ছিদ্রে, শকটের ছিদ্রে এবং সূগের ছিদ্রে তিনবার নিষ্কর্ষনদ্বারা শোধন করত অপালাকে সূৰ্য্য সমান চৰ্ম্মবিশিষ্ট করিয়াছিলে।

————

(১) পূর্বকালে অত্রির কন্যা অপালা নাম্নী ব্রহ্মবাদিনী কোন কারণে ত্বক রোগে আক্রান্ত হুওয়ায় স্বামী কর্তৃক পরিত্যক্ত হইয়া পিতার আশ্রমে তপস্যা করিয়াছিলেন, সোম ইন্দ্রের প্রিয় এই ভাবিয়া তিনি ইন্দ্রকে সোন দানার্থে এক দিন নদীতীরে গমন করিয়াছিলেন। স্নান করিয়া পথে সোমও পাইয়াছিলেন, কিন্তু পথে তিনি তাহাকে খাইয়া ফেলিয়াছিলেন। খাইবার সময় দন্ত ঘর্ষণজাত যে শব্দ হইয়াছিল ইন্দ্র তাহাকেই অভিষব প্রস্তরের ধ্বনি মনে করিয়া তাঁহার নিকট গমন করিয়াছিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন এখানে কি সোম অভিযুত হইতেছে? তিনিও বলিলেন না, দন্ত ঘর্ষণজাত শব্দ হইতেছে। ইন্দ্র তাহা শুনিয়া ফিরিয়া যাইবার উপক্রম করিলেন। তাহাতে ব্রহ্মবাদিনী বলিলেন, আপনিত গৃহে গৃহে সোম পানের জন্য গমন করেন, আপনি কেন ফিরিয়া যাইতেছেন? আপনি দংষ্ট্রা হইতেই সোম পান করুন। পরে, ইন্দ্রই আসিয়াছেন ইহা নিশ্চয় জানিয়া তিনি সোমকে বলিলেন, হে সোম! উপস্থিত ইন্দ্রের উদ্দেশে প্রথম আস্তে আস্তে পরে দ্রুত গমন কর। ইন্দ্র তাঁহাকে কামনা করিয়া তাঁহার মুখ হইতেই সোম পান করিলেন। তখন অপালা বলিলেন আমি ত্বকরোগে আক্তান্ত হওয়ায় স্বামী কর্তৃক পরিত্যক্ত হইয়াছি, এক্ষণে ইন্দ্র আমার সহিত সঙ্গত হইলেন। ইন্দ্র এই কথা শুনিয়া বলিলেন, আমি তোমার জন্য কি করিতে পারি, বর প্রার্থণা কর। তখন অপালা বলিলেন আমার পিতার মস্তকে কেশ নাই এবং তাঁহার ক্ষেত্রে ফল উৎপন্ন হয় না। এবং আমার গোপনীয় স্থান লোমশূন্য, আমাদের সকল দোষ দূর কর। ইন্দ্র উহার পিতার দোষ দুইটি পরিহার করিয়া উহাকে তিনবার আপনার রথ, শকট এবং যুগের ছিদ্রের মধ্যে দিয়া আকর্ষণ করিলেন তাহাতে উহার দোষযুক্ত ত্বক তিনবার উন্মুক্ত হইল। প্রথম বারের ত্বক হইতে শল্যকের উৎপত্তি হইল, দ্বিতীয় বার ত্বক হইতে গোধার উৎপত্তি হইল এবং তৃতীয় বারের ত্বক হইতে কৃললাস হইল এবং ব্রহ্মবাদিনীর বর্ণ সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল হইল। সায়ণ। এই সূক্তেরও একজন নারী ঋষি। কিন্তু প্রকৃত অত্রি কন্যাদ্বারা এ সূক্ত রচিত নহে, অত্রি কন্যা সম্বন্ধে একটি পুরাতন উপাখ্যান অবলম্বন করিয়া সেই বংশীয়গণ এই সূক্ত বোধ হয় রচনা করিয়াছেন।