ঋগ্বেদ ০৮।০৪৫
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ৪৫
ইন্দ্র দেবতা। কণ্বগোত্রীয় ত্রিশোক ঋষি।
১। যে ঋষিগণ সম্যকভাবে অগ্নিকে দীপ্ত করিতেছেন, যুবা ইন্দ্র যাঁহাদের সখা, তাহারা পরস্পর মিলিত করিয়া কুশ বিস্তীর্ণ করিতেছেন।
২। এই ঋষিগণের সমধি বৃহৎ, ইহাদিগের স্তোত্র প্রচুর এবং স্বরু, স্থূল, যুবা ইন্দ্র ইহাদিগের সখা।
৩। কোন অযোদ্ধা ব্যক্তি শত্ৰুগণকর্তৃক বেষ্টিত হইয়া নিজবলে বলবান হইয়া শত্ৰুগণকে অবনত করিলেন? যুবা ইন্দ্র ইহাদিগের সখা।
৪। বৃত্রহা জাত হইয়া বাণ ধারণ করিলেন এবং মাতাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, কাহারা উগ্র বলিয়া বিখ্যাত।
৫। বলবতী মাতা প্রত্যুত্তর দিলেন, যে তোমার শত্ৰুত্ব আকাঙ্ক্ষা করে, সে পৰ্ব্বতে দর্শনীয় গজের ন্যায় যুদ্ধ করে।
৬। আরও হে মঘবান! তুমি আমাদের স্তুতি শ্রবণ কর, স্তোতা তোমার নিকট যাহা কামনা করে, তাহা প্রদান কর, তুমি যাহাকে দৃঢ় কর, সেই দৃঢ় হয়।
৭। যুদ্ধকারী ইন্দ্র যখন সুন্দর অশ্বলাভাভিলাষে যুদ্ধে গমন করেন তখন তিনি রথীগণের মধ্যে প্রধান রথী হন।
৮। হে বজ্রযুক্ত ইন্দ্র! তুমি সমস্ত প্রজা যাহাতে বৃদ্ধি প্ৰাপ্ত হয়, সেইরূপ তুমি প্রবৃদ্ধ হও, আমাদের জন্য সর্বাপেক্ষা অধিক অন্নযুক্ত হও।
৯। হিংসকগণ যে ইন্দ্রকে হিংসা করিতে পারে না, সেই ইন্দ্র! আমাদের অভীষ্ট প্রদানার্থ সুন্দর রথ সম্মুখে স্থাপন করুন।
১০। হে ইন্দ্র! আমরা যেন তোমার শত্রুগণের নিকট উপস্থিত না হই, কিন্তু তুমি যখন বহুগোবিশিষ্ট হও, তখন অতীষ্ট প্রদানক্ষম বলিয়া তোমারই নিকট যেন উপস্থিত হই।
১১। হে বজ্রবান ইন্দ্র! আমরা মন্দ মন্দ গমন করতঃ অশ্ববান, বহুধনবান বিচক্ষণ ও উপদ্রবরহিত হইব।
১২। হে ইন্দ্র! তোমার স্তোতাগণের উদ্দেশে নিত্য নিত্য শত ও সহস্রসংখ্যক উৎকৃষ্ট, সুন্দর ও প্ৰিয় বস্তু প্রদান করিতেছে।
১৩। হে ইন্দ্র! তোমাকে ধনঞ্জয় ও পরাক্রমশালী, শত্রুর মথনশালী, ধনাপহারক ও গৃহের ন্যায় উপদ্রবশূন্য বলিয়া জানি।
১৪। হে কবি! হে ধৃষ্ণু! তুমি বণিক, তোমার সম্মুখে যখন অভীষ্ট যাচঞা করিতেছি। তখন সোম সকল তোমায় প্রমত্ত করুক, তুমি ককুদস্বরূপ।
১৫। হে ইন্দ্র! যে মনুষ্য ধনবান হইয়া দান করে না এবং তুমি ধনদাতা, তোমার অসূয়া করে, তাহার ধন আমাদের জন্য আহরণ কর।
১৬। হে ইন্দ্র! লোক যেমন ঘাস সংগ্রহ করিয়া পশুকে দেখে, সেইরূপ আমার এই সখা সকল সোমাভিষব করতঃ তোমায় দেখিতেছে।
১৭। হে ইন্দ্র! তুমি বধির নও, তোমার কর্ণ শ্রবণ করিতে পারে, অতএব আমরা তোমাকে রক্ষার্থ দূর হইতে আহ্বান করিতেছি।
১৮। হে ইন্দ্র! আমাদের এই আহ্বান শ্রবণ কর ও আপনার বল দুৰ্দ্ধৰ্য কর, আমাদের হৃদয়ঙ্গম বন্ধু হও।
১৯। হে ইন্দ্র! আমরা যখন দারিদ্র্য দ্বারা ব্যথিত হইয়া তোমার নিকট গমন করিব ও তোমায় স্তব করিব, তখন আমাদিগকে গো দান করিবার জন্যই জাগরিত হও।
২০। হে বলপতি! আমরা ক্ষীণ হইয়া দণ্ডের ন্যায় তোমায় লাভ করিব, যজ্ঞে তোমায় কামনা করিব।
২১। বহুধনবিশিষ্ট, দানশীল ইন্দ্রের উদ্দেশে স্তোত্র পাঠ কর, যুদ্ধে তাঁহাকে কেহই নিবারন করিতে পারে না।
২২। হে বৃষভ ইন্দ্র! সোম অভিযুত হইলে, সেই অভিযুত সোমপানার্থ তোমার উদ্দেশ্যে ত্যাগ করি, তৃপ্ত হও, মদকর সোম পান কর।
২৩। হে ইন্দ্র! মূঢ়লোক রক্ষাভিলাষী হইয়া তোমাকে যেন হিংসা না করে এবং তোমায় যেন উপহাস না করে, স্তুতিদ্বেষীকে কখন ভজনা করিও না।
২৪। হে ইন্দ্র! এই যজ্ঞে মহাধনলাভার্থ মনুষ্যগণ গব্যমিশ্ৰিত সোম পানে মত্ত হউক, তুমিও গৌর মৃগ যেরূপ সরোবর হইতে পান করে, সেইরূপ পান কর।
২৫। হে ইন্দ্র! হে বৃত্রহা! দূরদেশে যে নতুন এবং পুরাতন ধন প্রেরণ করিয়াছ, সভাস্থলে তাহার কথা কহ।
২৬। হে ইন্দ্র! তুমি রুদ্র ঋষির অভিযুত সোম পান করিয়াছ এবং সহস্রবাহুর শত্ৰুনাশ করিয়াছ, এই সময় ইন্দ্রের বীৰ্য্য অত্যন্ত দীপ্ত হইয়াছিল।
২৭। তুৰ্ব্বশু ও যদুর প্রসিদ্ধ কৰ্ম্ম সত্য জানিয়া তাহাদের জন্য সংগ্রামে অহ্ণবায্যকে ইন্দ্র ব্যাপ্ত করিয়াছিলেন।
২৮। হে স্তোতাগণ! তোমাদের সন্তানগণের তারক, শত্রুগণের বিমৰ্দক, গোবিশিষ্ট, অন্নদাতা, সাধারণ ইন্দ্রকে আমি স্তুতি করি।
২৯। জলবর্ধী, মহান ইন্দ্রকে ধনদানার্থ সোম অভিযুত হইলে উকথ উচ্চারণ কালে স্তব করি।
৩০। যে ইন্দ্র জল নিৰ্গমণের দ্বারস্বরূপ, বিস্তীর্ণ মেঘকে তৃশোকের জন্য ছিন্ন করিয়াছিলেন, তিনি জলের গমনার্থ পথ করিয়াছিলেন।
৩১। হে ইন্দ্র! তুমি হর্ষযুক্ত হইয়া যাহা ধারন কর, যাহার পূজা কর এবং যাহা দান কর, আমাদের জন্য তাহা কর নাই কেন? সুখী কর।
৩২। হে ইন্দ্র! তোমার মত কৰ্ম্ম অল্প করিলেও পৃথিবীতে প্রসিদ্ধ হয়। হে ইন্দ্র! তোমার মন আমার প্রতি গমন করুক।
৩৩। হে ইন্দ্র! তুমি যাহার দ্বারা আমাদিগকে সুখী কর, সেই কীৰ্ত্তিসকল ও সেই স্তুতি সকল তোমারই যেন হয়।
৩৪। হে ইন্দ্র! এক অপরাধে আমাদিগকে বধ করিও না, দুই, তিন এবং বহু অপরাধেও আমাদিগকে বধ করিও না।
৩৫। হে ইন্দ্র! তোমার ন্যায় উগ্র শত্রুদিগের প্রহারকারী, দর্শনীয়, হিংসাসহ্যকারী দেব হইতে আমি নির্ভয় হই।
৩৬। হে প্রভূত ধনবান ইন্দ্র! তোমার সখার সমৃদ্ধির কথা নিবেদন করিতেছি, তাঁহার পুত্রের সমৃদ্ধির কথা নিবেদন করিতেছি, তোমায় মন আমাদের হইতে যেন না ফিরিয়া যায়।
৩৭। হে মনুষ্যগণ! ইন্দ্র ভিন্ন কোন সখা প্রশ্ন করিবার পূর্বেই সখাকে বলিতে পারে? আমি কাহাকে হনন করিব? কেবা আমার নিকট ভীত হইয়া পলায়ন করিবে?
৩৮। হে অভিলাষপ্রদ ইন্দ্র! সোম অভিযুত হইলে এবার নামক ব্যক্তিকে বহুধন দান না করিয়া সেই সোম ধূর্তের ন্যায় তোমার নিকট আগমন করে। দেবগণ অধোমুখ হইয়া বহির্গত হন।
৩৯। সুন্দর রথবিশিষ্ট, বাক্যমাত্র রথে যোজিত অশ্বদ্বয়কে আকর্ষণ করি, যেহেতু তুমি স্তোতাদিগকে এই ধন দান করিয়াছ।
৪০। হে ইন্দ্র! তুমি সমস্ত শত্রুগণকে বিদীর্ণ কর, হিংসা কর, সংগ্ৰাম পরিহার কর, স্পৃহণীয় ধন আহরণ কর।
৪১। হে ইন্দ্র! তুমি দৃঢ় স্থানে যে ধন বিন্যাস করিয়াছ, স্থির স্থানে যাহা বিন্যাস করিয়াছ, সন্দেহযুক্ত স্থানে যে ধন বিন্যাস করিয়াছ, সেই স্পৃহনীয় ধন আহরণ কর।
৪২। হে ইন্দ্র! তোমার দত্ত যে বহুধন আছে বলিয়া সকল লোকে জানে সেই স্পৃহণীয় ধন আহরণ কর।