ঋগ্বেদ ০৮।০২৭
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ২৭
বিশ্বদেবগণ দেবতা। বিবস্বানের পুত্র মনু ঋষি।
১। এই যজ্ঞে উকথ উচ্চারণ কালে অগ্নি সোমাভিষব প্রস্তর বৰ্হির অগ্রভাগে স্থাপিত হইয়াছিলেন। মরুৎগণ এবং ব্রহ্মণস্পতির নিকট বরণীয় রক্ষালাভার্থ ঋকময় উচ্চারণ করিয়া গমন করি।
২। হে অগ্নি! আমাদের যজ্ঞে পশুর নিকট আগমন কর, যজ্ঞশালা ও বনস্পতির নিকট আগমন কর, দিনরাত্রি সোমাভিষব প্রস্তরের নিকট আগমন কর, হে বাসপ্রদ, সৰ্বধনবান বিশ্বদেবগণ! আমাদের কৰ্ম্মের রক্ষক হও।
৩। পুরাতন যজ্ঞ, অগ্নি ও অন্যান্য দেবগণের নিকট সুন্দররূপে গমন করুক, আদিত্যগণ ও ধৃতব্রত বরুণ বিস্তৃত তেজোবিশিষ্ট মরুৎগণের সহিত গমন করুন।
৪। সমস্ত ধনসম্পন্ন, শত্রুভক্ষক বিশ্বদেবগণ মনুর সমৃদ্ধিকর হউন। হে সৰ্ব্বধনসম্পন্ন দেবগণ! অহিংসিত পালনের সহিত আমাদিগকে বাধারহিত গৃহ প্রদান কর।
৫। সমান প্ৰীতিযুক্ত ও পরস্পর মিলিত হইয়া বাক্য এবং ঋকের সহিত অদ্য আমাদের নিকট আগমন করুন। হে মরুৎগণ! হে মহতী দেবী অদিতি! আমাদের এই গৃহে উপবেশন কর।
৬। হে মরুৎগণ! তোমাদের যে প্রিয় অশ্ব আছে, তাহাদিগকে এই যজ্ঞে প্রেরণ কর। হে মিত্র! হব্যের জন্য আগমন কর। ইন্দ্র, বরুণ এবং যুদ্ধে ত্বরাবিশিষ্ট আদিত্যগণ আমাদের কুশে উপবেশন করুন।
৭। হে বরুণ! আমরা মনুর ন্যায়(১) সোম অভিষব করিয়া ও অগ্নি সমিদ্ধ করিয়া, ঘন ঘন হব্য স্থাপন করত ও বর্হি চ্ছেদন করত তোমাদিগকে আহ্বান করিতেছি।
৮। হে মরুৎগণ! হে বিষ্ণু! হে অশ্বিদ্বয়! হে পূষা! আমার স্তুতির সহিত যজ্ঞে আগমন কর, দেবগণের মধ্যে প্রথম ইন্দ্রও আগমন করুন। ইন্দ্রভিলাষী স্তোতাগণ তাঁহাকে বৃত্রহা বলিয়া স্তব করে।
৯। হে দ্ৰোহরহিত দেবগণ! আমাদিগকে বাধারহিত গৃহ প্রদান কর। হে বাসপ্রদ দেবগণ! দূরদেশ ও অন্তিক দেশ হইতে কেহ যেন কখন বরণীয় গৃহের হিংসা করিতে না পারে।
১০। হে শত্রুভক্ষক দেবগণ! তোমাদের এক জাতিভাব ও বন্ধুভাব আছে, প্রথম অভ্যুদয়ার্থ এবং নুতন ধনাৰ্থ শীঘ্র আমাদিগকে প্রস্তুত কর।
১১। হে সৰ্ব্বধনবান দেবগণ! আমি অন্নাভিলাষী। এখনই তোমাদের রমণীর ধন লাভার্থ তোমাদের স্তুতি এই মাত্র করিতেছি।
১২। হে সুন্দর স্তুতিযুক্ত মরুৎগণ! তোমাদের উৰ্দ্ধগামী বরণীয় সবিতা যখন উত্থিত হন, তখন দ্বিপদ ও চতুষ্পদ জন্তু এবং পক্ষী সকল আপনি আপন কাৰ্য্যে প্রবৃত্ত হয়।
১৩। আমরা দ্যুতিমান, স্তুতিদ্বারা স্তব করিয়া তোমাদের মধ্যে দীপ্যমান দেবতাকে কৰ্ম্মরক্ষার্থ আহ্বান করিব, অভিলষিত লাভার্থ দীপ্তিমান দেবতাকে আহ্বান করিব, অন্ন লাভার্থ দীপ্তিমান দেবতাকে লাভ করিব।
১৪। সমান ক্ৰোধবিশিষ্ট বিশ্বদেবগণ মনুর উদ্দেশে যুগপৎ দানে প্রবৃত্ত হউন, অদ্য এবং অপর দিনে এবং আমাদের পুত্রের জন্যও ধনদাতা হউন।
১৫। হে দ্রোহরহিত তেজোময় দেবগণ! স্তোত্রগণের আধারসদৃশ যজ্ঞে তোমাদিগকে স্তব করিতেছি। হে বরুণ! হে মিত্র! যে তোমাদের পরিচর্য্যা করে, হিংসা সেই মনুষ্যকে বাধা দিতে পারে না।
১৬। হে দেবগণ! যে বরণীয় ধনের জন্য তোমাদিগকে হব্য দান করে, সেই ব্যক্তি গৃহ বৰ্দ্ধিত করে, অন্ন বৰ্দ্ধিত করে, সে যজ্ঞদ্বারা প্রজা লাভ করে এবং অহিংসিত হইয়া সমৃদ্ধ হয়।
১৭। সে বিনা যুদ্ধে ধন লাভ করে, সুন্দর অশ্বে পথ অতিক্রম করে, অর্য্যমা, মিত্র ও বরুণ মিলিত এবং সমান দানযুক্ত হইয়া তাঁহাকে ত্ৰাণ করে।
১৮। হে দেবগণ! অগম্য এবং দুৰ্গম প্রদেশ সুগম কর। এই অশনি কাহারও হিংসা করিতে না পারিয়া যেন বিনষ্ট হয়।
১৯। হে বলপ্রিয় দেবগণ! সূৰ্য্য উদিত হইলে অন্য কল্যাণকর গৃহ ধারণ করিয়াছ, হে সৰ্ব্বাধনবান দেবগণ! সূৰ্য্য গমন করিলে ধারণ করিয়াছ, প্রবোধকালে ধারণ করিয়াছ এবং মধ্যাহ্নে ধারণ করিয়াছ।
২০। হে অসুরগণ! যেহেতু যজ্ঞ প্ৰাপ্তির জন্য যজ্ঞগামী হব্যাদায়ীকে গৃহ প্রদান করিয়াছ, অতএব হে বাসপ্রদ, সৰ্ব্বধনবিশিষ্ট দেবগণ! আমৱা তোমাদের সেই কল্যাণকর গৃহে তোমাদিগকে পূজা করিব।
২১। হে সৰ্ব্বধনিবিশিষ্ট দেবগণ! অদ্য সূৰ্য্য উদিত হইলে এবং মধ্যাহ্নে এবং সায়ংকালে হব্যাদায়ী প্রকৃষ্ট জ্ঞানবান মনুর উদ্দেশে যে কমনীয় ধন ধারণ করিয়াছে।
২২। হে দীপ্তিমান দেবগণ! তোমাদের পুত্রের ন্যায় আমরা সেই বহু লোকের ভোগযোগ্য ধনপ্রাপ্ত হইব। হে আদিত্যগ! হবিঃ হোম করত এই ধনের দ্বারা অতিশয় ধনবত্তা লাভ করিব।
————
(১) সূক্তের প্রারম্ভে বিবস্বানের পুত্র মনুকেই এই সূক্তের ঋষি বলা হইয়াছে কিন্তু মনু নিজে বক্তা হইলে “মনুর ন্যায় সোম অভিষব করিয়া” ইত্যাদি বলিতেন না। মনুবংশীয় বোধ হয় সূক্তের রচয়িতা।