ঋগ্বেদ ০৮।০২০
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ২০
মরুৎগণ দেবতা। সোভরি ঋষি।
১। হে প্রস্থানশীল মরুৎগণ! তোমরা আগমন কর, হিংসা করিও না, তোমরা সমান ক্ৰোধবিশিষ্ট হইয়া দৃঢ় পৰ্বতকেও কম্পিত কর; আমাদিগের অন্যত্র থাকিও না।
২। হে দীপ্তনিবাসযুক্ত রুদ্রপুত্র মরুৎগণ! সুন্দর দীপ্তিযুক্ত দৃঢ় নেমিয়ুক্ত রথে আগমন কর। হে সকলের স্পৃহণীয়গণ! তোমরা সোভরিকে কামনা করতঃ অন্নের সহিত অদ্য আমাদের যজ্ঞের আগমন কর।
৩। কৰ্ম্মবান ও বিষ্ণু ও অভিলষণীয় জলের সেক্তা রুদ্রপুত্র মরুৎগণের উগ্র বল জানি।
৪। হে সুন্দর আয়ুধযুক্ত দীপ্তিযুক্তগণ! তোমরা যখন কম্পিত কর, তখন দ্বীপ সকল পতিত হয়; স্থাবর পদার্থ দুঃখ প্ৰাপ্ত হয়; দ্যাবাপৃথিবী কম্পিত হয়, গমনশীল জল প্রগত হয়।
৫। হে মরুৎগণ! তোমরা গমন করিলে অচ্যুত মেঘ ও বৃক্ষাদি অত্যন্ত শব্দ করে, পৃথিবী কম্পিত হয়।
৬। হে মরুৎগণ! তোমাদের দলের গমনার্থ দ্যুলোক বৃহৎ অন্তরিক্ষ ত্যাগ করতঃ উদ্ধগত হইয়াছেন। বহুবলযুক্ত নেতা মরুৎগণ দীপ্ত আচরণ আপন শরীরে ধারণ করিতেছেন।
৭। দীপ্ত বলবান, বর্ষণরূপ ও অকুটিল রূপ নেতা মরুৎগণ অন্নের উদ্দেশে মহাশোভা ধারণ করিতেছেন।
৮। সোভরি ঋষিগণের শব্দদ্বারা হিরন্ময় রথের মধ্যদেশে মরুৎগণের বাণ ব্যক্ত হইতেছে। গোমাতৃক সুজন্মা, মহানুভব মরুৎগণ আমাদের অন্ন ভোগ ও প্ৰীতিপ্রদ হউন।
৯। হে সোমবর্ষী অধুর্য্যগণ! বৃষ্টিপ্রদ মরুৎগণের বলাৰ্থ হব্য আহরণ কর। ঐ বলদ্বারা তাঁহারা সেক্তা ও প্রকৃষ্ট গমনযুক্ত হয়েন।
১০। নেতা মরুৎগণ সেচনসমর্থ, অশ্বমুক্ত, বৃষ্টিপ্রদরূপযুক্ত, বৃষ্টিপ্রদ নাভিযুক্ত রথে হব্যের নিকট অনায়াসে স্যেনপক্ষীর ন্যায় আগমন করুন।
১১। মরুৎগণের অভিব্যঞ্জক আভরণ একরূপই। দীপ্যমান সুবৰ্ণময় হার শোভা পাইতেছে। ৰাহুর উপর ভাগে আয়ুধ সকল অত্যন্ত দ্যুতিলাভ করিতেছে।
১২। উগ্র বৃষ্টিপ্রদ, উগ্রবাহুযুক্ত মরুৎগণ আপনার শরীরে যত্ন করেন না। হে মরুৎগণ! তোমাদের রথে ধনু সকল ও আয়ুধ সকল স্থির এবং দৃঢ় হইয়াছে, অতেব সেনামুখে তোমাদেরই জয় হয়।
১৩। উদকের ন্যায় সর্বত্রবিস্তীর্ণ দীপ্ত বহুসংখ্যক মরুতের নাম এক হইয়াই পৈতৃক দীর্ঘস্থায়ী অন্নের ন্যায় ভোগার্থ পৰ্য্যাপ্ত হয়।
১৪। তাহাদিগকে বন্দনা কর, মরুৎগণের উদ্দেশে স্তুতি কর। আমরা আৰ্য্য স্বামীর হীন সেবকের ন্যায় কম্পোৎপাদক মরুৎগণের হীন সেবক তাঁহাদের দান মহত্বযুক্ত।
১৫। হে মরুৎগণ! তোমাদের রক্ষা লাভ করিয়া স্তোতা অতীত দিবসসমূহে সুভগ হইয়াছে, যে স্তোতা, সে অবশ্য তোমাদেরই হয়।
১৬। হে নেতাগণ! তোমরা হব্যভক্ষণার্থ যে হবিষ্মান ব্যক্তির হব্যের নিকট গমন কর, হে কম্পোৎপাদক! মরুৎগণের দ্যুতিমান অন্ন এবং অন্ন-সম্ভোগ দ্বারা তোমাদের দেয় সুখ তাহাদের চারিদিকে ব্যাপ্ত হয়।
১৭। রুদ্রের পুত্র অসুরের বিধাতা (১), নিত্য তরুণ মরুৎগণ অন্তরিক্ষ হইতে আগমন করিয়া যাহাতে আমাদের কামনা করেন, এই স্তোত্র সেইরূপ হউক।
১৮। যে সুন্দর দানবিশিষ্ট যজমান মরুৎগণকে পূজা করে, যাহারা সেক্তাগণকে হব্যদ্বারা পূজা করে, আমরা এই উভয় প্রকারের লোকের সদৃশ, আমাদের উদ্দেশে অত্যন্ত ধনপ্রদ মনে আগমন করতঃ মিলিত হও।
১৯। হে সোভরি! নিত্যতরুণ, অত্যন্ত বৃষ্টিপ্রদ, পাবক মরুৎগণকে অত্যন্ত নুতন বাক্যদ্বারা সুন্দররূপে, কৃষকগণ যেরূপ, বলীবৰ্দের স্তব করে, সেইরূপ স্তব কর।
২০। সমস্ত যুদ্ধে যোদ্ধাগণ আহ্বান করিলে মরুৎগণ অভিভবকর হয়। আহ্বানযোগ্য মল্লের ন্যায় সম্প্রতি আহ্লাদকর, বৃষ্টিপ্রদ, অত্যন্ত যশস্বী মরুৎগণকে আমরা বাক্যদ্বারা বন্দনা করি।
২১। হে সমান ক্ৰোধশীল মরুৎগণ! গোসমূহ একজাতি বলিয়া সমান বন্ধুযুক্ত হইয়া চারিদিকে পরস্পর লেহন করিতেছে।
২২। হে নৃত্যকারী, বক্ষঃস্থলে উজ্জ্বল আভরণযুক্ত মরুৎগণ! মনুষ্যও তোমাদের সখ্য উদ্দেশে গমন করিতেছে। অতএব আমাদের পক্ষ হইয়া কথা কও। সর্বদা ধারণীয় যজ্ঞে তোমাদের বন্ধুত্ব সর্বদাই আছে।
২৩। হে সুন্দর, দানশীল, গমনশীল সখা মরুৎগণ! তোমাদিগের ঔষধ আনয়ন কর।
২৪। হে মরুৎগণ! যাহা দ্বারা সমুদ্রকে রক্ষা কর, যাহাদ্বারা যজমানের শত্রুকে হিংসা কর, যাহাদ্বারা তৃষ্ণজকে কৃপা প্রদান করিয়াছিলে, হে সুখোৎপাদক শত্রুরহিতগণ!সেই কল্যাণকর সর্বপ্রকার রক্ষাদ্বারা আমাদের সুখ উৎপাদন কর।
২৫। হে সুন্দর যজ্ঞযুক্ত মরুৎগণ! সিন্ধুনদে, অসিক্লীতে(২), সমুদ্রে ও পৰ্ব্বতে যে ঔষধ আছে।
২৬। তোমরা সেই সকল ঔষধ জানিয়া আমাদের শরীরার্থ আনয়ন কর। তদ্দ্বারা আমাদের চিকিৎসা কর। হে মরুৎগণ! আমাদের মধ্যে যাহাতে রোগীর রোগ শান্তি হয়,সেইরূপে বাধাপ্ৰাপ্ত অঙ্গ পূর্ণ কর।
————
(১) সায়ণাচার্য্য এই স্থলে অসুর শব্দে মেঘ অর্থ করিয়াছেন। প্রকৃত অর্থ বলবান।
(২) অর্ধে কৃষ্ণবর্ণা নদী। আধুনিক চিনাব নদী। ১০।৭৫।৫ ঋকের টিকা দেখ।