ঋগ্বেদ ০৮।০০৯

ঋগ্বেদ ০৮।০০৯
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল  সূক্ত ৯
অশ্বিদ্বয় দেবতা। শশকর্ণ ঋষি।

১। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা বৎসের রক্ষার্থ নিশ্চয়ই গমন করিয়াছ, ঐ ঋষিকে বাধারহিত বিস্তীর্ণ গৃহ প্রদান কর, উহার শত্ৰুগণকে দূর করিয়া দাও।

২। হে অশ্বিদ্বয়! যে ধন অন্তরিক্ষে ও যে ধন স্বৰ্গে বর্তমান ও যাহা পঞ্চ শ্ৰেণী মানুষ্যে অনুপ্রবিষ্ট, সেই ধন প্রদান কর।

৩। হে অশ্বিদ্বয়! যে বিপ্রগণ তোমাদের কৰ্ম্ম পুনঃ পুনঃ অনুষ্ঠান করে, তোমরা তাহাদের জান। অতএব কণ্বপুত্রের কৰ্ম্ম অবগত হও।

৪। হে অশ্বিদ্বয়! তোমাদের হবিঃ স্তোত্রদ্বারা পরিষিক্ত হইতেছে, হে অন্নবিশিষ্ট, ধনযুক্ত অশ্বিদ্বয়! যে সোমদ্বারা তোমরা বৃত্রকে জানিতে পারিয়াছিলে, সে মধুমান সোম এই।

৫। হে বহুকর্মা অশ্বিদ্বয়! জলে, বনস্পতিতে এবং ওষধিতে যাহা করিয়াছ, তাহার দ্বারা আমাদের রক্ষা কর।

৬। হে দেব নাসত্যদ্বয়! তোমরা জগৎ পোষণ করিয়াছ ও সকলকে আরোগ্য করিয়াছ, বৎস স্তুতিদ্বারা তোমাদিগকে পাইতেছে না। তোমরা হবিষ্মানের নিকট গমন কর।

৭। ঋষি উৎকৃষ্ট বুদ্ধিদ্বারা অশ্বিদ্বয়ের স্তোত্র জানিয়াছিলেন, অতিশয় মধুর সোম ও হবিঃ, অথৰ্ব্ব অগ্নিতে প্রক্ষেপ করিয়াছেন।

৮। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা শীঘ্রগামী রথে আরোহণ কর, আমার এই স্তোত্র সকল সূৰ্য্যের ন্যায় তোমাদের অভিমুখে গমন করিতেছে।

৯। হে নাসত্যদ্বয়! অদ্য উকথদ্বারা যে প্রকারে তোমাদিগকে আনয়ন করিতেছি, যে প্রকারে বাণীদ্বারা আনয়ন করিতেছি, সেই প্রকারেই কণ্বপুত্রের স্তোত্র অবগত হও।

১০। হে অশ্বিদ্বয়! কক্ষিবান ঋষি যেরূপে তোমাদিগকে আহ্বান করিয়াছে, যেরূপে ব্যশ্ব ও দীর্ঘতমাঃ যেরূপে বেণের পুত্র পৃথী যজ্ঞগৃহে আহ্বান করিয়াছেন, সেইরূপেই আমি স্তব করিতেছি। আমার এই স্তোত্র অবগত হও।

১১। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা গৃহপালক হইয়া আগমন কর। তোমরা অতিশয় পালক, জগৎপালক ও শরীর পালক হও; পুত্র পৌত্রের গৃহে আগমন কর।

১২। হে অশ্বিদ্বয়! যদি তোমরা ইন্দ্রের সহিত এক রথে গমন কর, যদি বায়ুর সহিত এক স্থানবাসী হও, যদি অদিতির পুত্রগণের সহিত সমান প্ৰীতিযুক্ত হও, যদি বিষ্ণুর পাদক্ষেপে অবস্থান কর, তবে আগমন কর(১)।

১৩। যদি আমি সংগ্ৰামার্থে অশ্বিদ্বয়কে আহ্বান করি, তখন তাঁহারা আগমন করুক। যুদ্ধে শত্রুগণের হিংসা করণে অশ্বিগণের যে অভিভবকর রক্ষা আছে, তাহাই শ্রেষ্ঠ।

১৪। হে অশ্বিদ্বয়! এই হব্য সকল তোমাদের জন্য বিহিত হইয়াছে, তোমরা অবশ্য আগমন কর। এই সোম তুৰ্ব্বশ ও যদুতে বৰ্ত্তমান। ইহা তোমাদের জন্য সংস্কৃত ও কণ্বপুত্রগণকে প্রদত্ত।

১৫। হে নাসত্যদ্বয়! দূরে অথবা নিকটে যে ভেষজ আছে, হে প্রচেতাদ্বয়! তাহার সহিত বিমদের ন্যায় বৎসকে গৃহ প্রদান কর।

১৬। অশ্বি সম্বন্ধীয়, দ্যুতিমান স্তোত্রের সহিত আমি প্রবুদ্ধ হইয়াছি। হে দ্যুতিমতি ঊষা! আমার স্তুতি প্রযুক্ত তমঃ নিবারণ কর ও মর্তসমূহকে ধন দান কর।

১৭। হে ঊষা! হে দেবি! হে সুনৃতে! হে মহতি! অশ্বিদ্বয়কে প্রবুদ্ধ কর। হে দেবগণের আহ্বাতা! অনবরত প্রবোধিত কর, উহাদের আনন্দের জন্য বৃহৎ অন্ন প্রস্তুত হইয়াছে।

১৮। হে ঊষা! যখন তুমি দীপ্তির সহিত গমন কর, তখন সূৰ্য্যের সহিত সমান শোভা পাও। সেই সময় অশ্বিদ্বয়ের এই রথ মনুষ্যগণের পালনীয় যজ্ঞগৃহে আগমন করে।

১৯। যখন পীতবর্ণ সোমলতাকে গাভীর উধঃ প্রদেশের ন্যায় দোহন করে, যখন দেবাভিলাষিগণ স্তুতি উচ্চারণ করে, হে অশ্বিদ্বয়! তখন রক্ষা কর।

২০। হে প্রচেতাদ্বয়! তোমরা ধনের জন্য আমাদের রক্ষা কর, বলের জন্য মনুষ্যদিগের উপভোগ্যযোগ্য, সুখের জন্য এবং সমৃদ্ধির জন্য আমাদিগকে রক্ষা কর।

২১। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা পিতৃভূত দ্যুলোকের ক্রোড়ে যদি কর্মের সহিত উপবেশন করিয়া থাক, যদিবা প্রশংসনীয় হইয়া সুখে নিবাস কর, তবে আমাদের নিকট আগমন কর।

————
(১) বিষ্ণুর পাদবিক্ষেপ সম্বন্ধে ১।২২।১৬ ঋকের টীকা দেখ।