ঋগ্বেদ ০৮।০০৪
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ০০৪
১৫, ১৬, ১৭ এবং ১৮ ঋকের পূষা দেবতা; ১৯, ২০ এবং ২১ ঋকের কুরঙ্গদান দেবতা; অবশিষ্ট ঋকের ইন্দ্র দেবতা। দেবাতিথি ঋষি।
১। হে ইন্দ্র! যদি পূৰ্ব্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ দেশস্থ নরগণ কর্তৃক আহুত হইয়া থাক, হে শ্রেষ্ঠ! তথাপি আনুর পুত্রের উদ্দেশে স্তোতাগণকর্তৃক প্রেরিত হও, তুৰ্বশের উদ্দেশে স্তোতাগণকর্তৃক প্রেরিত হও।
২। হে ইন্দ্র! যদিও তুমি রুম, রুমশ, শ্যাবক ও কৃপের সহিত হৃষ্ট হইয়া থাক; স্তোত্রবাহক, কণ্বগণ তোমাকে স্তোত্র প্রদান করিতেছে, তুমি আগমন কর।
৩। গৌর মৃগ যেরূপ তৃষিত হইয়া জলপূৰ্ণ তৃণ শূন্য স্থান জানিতে পারে। হে ইন্দ্র! সেইরূপ তুমি বন্ধুত্ব প্রাপ্ত হইলে আমাদের অভিমুখে শীঘ্র আগমন কর, আমরা কণ্বপুত্র, আমাদের সহিত একত্র পান কর।
৪। হে মঘবান ইন্দ্র! সোম সকল অভিষবকারীকে ধনদানার্থে তোমাকে প্রমত্ত করুক। তুমি সোম পান করিয়াছ, ঐ সোম অভিষবণ ফলকদ্বারা অভিযুত, অতএব অত্যন্ত প্রশংসাযোগ্য, এই জন্য তুমি মহাবল ধারণ করিয়াছ।
৫। ইন্দ্র বীর কৰ্ম্ম দ্বারা শত্রুগণকে অভিভব করিয়াছেন, বলদ্বারা পরকীয় ক্ৰোধ নষ্ট করিয়াছেন। হে মহান ইন্দ্র! সমস্ত যুদ্ধ কাম শক্রগণকে তুমি বৃক্ষের ন্যায় নিশ্চল করিয়াছ।
৬। হে ইন্দ্র! যে তোমার স্তোত্র করে, সে সহস্বসংখ্যক বজ্রায়ুধ বীর লাভ করে, যে নমস্কার দ্বারা হব্য প্রদান করে, সে সুবীৰ্য্যবান শত্রুনিধনকারী পুত্র লাভ করে।
৭। হে ইন্দ্র! তুমি উগ্র, তোমার সখ্য লাভ করিয়া আমরা ভীত হইব না, শ্ৰান্তও হইব না। তুমি অভীষ্টবৰ্ষী, তোমার মহৎ কৰ্ম্মসকল প্রকাশ করা উচিত। আমরা তুৰ্ব্বশ ও যদুকে দেখিয়াছি।
৮1 অভীষ্টবৰ্ষী ইন্দ্র বাম কটিপ্রদেশদ্বারা সমস্ত ভূতজাত আচ্ছাদন করিয়াছেন। হব্যদাতা ইন্দ্রের ক্ৰোধ উৎপাদন করেন না। মধুমক্ষিকাজাত মধুদ্বারা সংপৃষ্ট ও প্রীতিজনক সোম সকলের অভিমুখে শীঘ্র আগমন, কর, তাহার নিকট গমন কর, এবং পান কর।
৯। হে ইন্দ্র! তোমার সখাই অশ্ববান, রথবান, গোমান ও রূপবান। সে সর্বদা ধন শীঘ্র প্রাপ্ত হয় এবং সকলের আহ্লাদকর হইয়া সভায় গমন করে।
১০। পিপাসু ঋশ্যনামক মৃগের ন্যায় তুমি পাত্রে আনীত সোমাভিমুখে আগমন কর, অভিলাষানুরূপ পান কর। হে মঘবন! তুমি প্রতিদিন নিম্নমুখ বৃষ্টি সিক্ত করতঃ অত্যন্ত ওজস্বী বল ধারণ কর।
১১। হে অধ্বর্য্যু! ইন্দ্র পান করিতে ইচ্ছা করিতেছেন, তুমি সোমের অভিষব কর। তরুণবয়স্ক অশ্বদ্বয় অদ্য যোজিত হইয়াছে, বৃত্রহা আগমন করিয়াছেন।
১২। হে ইন্দ্র! যাহার সোমে তুমি তৃপ্ত হও, সে হব্যদায়ী ব্যক্তি আপনি তাহা জানিতে পারে। তোমার যোগ্য অন্ন পাত্রে সিক্ত রহিয়াছে, তুমি আগমন কর, নিকটে গমন কর ও পান কর।
১৩। হে অধ্বর্য্যুগণ! রথে ইন্দ্র অবস্থিতি করিতেছেন, তাঁহার উদ্দেশে সোম অভিষব কর। মূল প্রস্তুরের উপর প্রস্তর সকল যজমানের যাগনিষ্পাদক সোম অভিষব করতঃ শোভা পাইতেছে।
১৪। আমাদের কৰ্ম্মে অন্তরিক্ষবিহারী, সেচন সমর্থ হরিদ্বয় ইন্দ্রকে আনয়ন করুন। হে ইন্দ্র! যজ্ঞসেবী, গমনশীল অশ্বগণ তোমাকে সবনসমূহের অভিমুখে উপনীত করুন।
১৫। আমরা সখ্যলাভার্থে বহুধনবিশিষ্ট পূষাকে বরণ করি। হে শত্ৰু, পুরহূত, পাপবিমোচক পূষা! আমাদিগকে আপনার বুদ্ধিদ্বারা ধন লাভ ও শত্রুনাশার্থে সমর্থ করিতে ইচ্ছা কর।
১৬। হে পুষা! আমাদিগকে বাহুস্থিত ক্ষুরের ন্যায় তীক্ষ্মবুদ্ধি কর, হে পাপবিমোচনকারী! আমাদিগকে ধন দান কর। তোমার গোধন আমাদের সুলভ হউক। তুমি মৰ্ত্ত্যের প্রতি এই ধন প্রেরণ করিয়া থাক।
১৭। হে পুষা! তোমাকে প্রসাধিত করিতে ইচ্ছা করি। হে দীপ্তিযুক্ত! তোমায় স্তুতি করিতে ইচ্ছা করি। তাঁহার স্তোত্র ইচ্ছা করি না। যেহেতু উহা অসুখকর। হে নিবাসপ্রদ!স্তুতি কারী ও সামযুক্ত পজ্রকে অভিলষিত ধন প্রদান কর।
১৮। হে দীপ্তিযুক্ত, অমর পূষা! কোনও কালে আমাদের গোসকল তৃণ ভক্ষণে পরাগত হয় না। গোরূপ ধন আমাদের নিত্য হউক। তুমি আমাদের রক্ষক ও মঙ্গলকর হও, অন্নদানার্থে মহান হও।
১৯। কুরঙ্গ নামক, দীপ্তিযুক্ত ও সৌভাগ্যবান রাজার স্বর্গপ্রাপ্তি হেতু যজ্ঞে ও দানে(১) মনুষ্যগণের মধ্যে প্রভূত অশ্বশতযুক্ত ধন জানিতে পারিয়াছি।
২০। কণ্বপুত্র হবিষ্মান ও স্তোতাগণের ভজনীয়, দীপ্তিপ্রাপ্ত প্রিয়মেধ নামক ঋষিগণের সেবিত অত্যন্ত পবিত্র ষষ্টিসহস্র গোসমূহ আমি দেবাতিথি সকলের শেষে প্ৰাপ্ত হইয়াছি।
২১। আমি ধন প্ৰাপ্ত হইলে, বৃক্ষ সকলও শব্দ করিয়াছিল, যে ইহারা প্রশংসনীয় গোলাভ করিয়াছেন, ইহারা অশ্বগন লাভ করিয়াছেন।
————
(১) মূলে “দিবিষ্টিষু রাতিষু” আছে। যজ্ঞ ও ধনদ্বারা স্বর্গ লাভ করা যায়, এই বিশ্বাস ইহা হইতে প্রতীয়মান হইতেছে।