ঋগ্বেদ ০৮।০০৩
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ০০৩
১৯, ২২, ২৩ ও ২৪ এই চারটি ঋকের কুরুযানেরপুত্র পাকস্থাম রাজার দানের স্তুতি করা হইয়াছে, অতএব উহাই দেবতা; অবশিষ্টের ইন্দ্র দেবতা। কণ্বগোত্রোৎপন্ন মেধ্যাতিথি ঋষি।
১। হে ইন্দ্র! আমাদের রসবান, গব্যযুক্ত, অভিযুত সোম পান কর এবং তৃপ্ত হও। তুমি আমাদের সহিত মত্ত হইবার যোগ্য। তুমি বন্ধু হইয়া আমাদিগকে বৰ্দ্ধিত করিবার জন্য প্রবুদ্ধ হও। তোমার বুদ্ধি আমাদিগকে রক্ষা করুক।
২। আমরা হবিষ্মান, আমরা তোমার অনুগ্রহ লাভ করিব, শত্রুর জন্য আমাদিগকে হিংসা করিও না, আমাদিগকে বহুবিধ রক্ষাদ্বারা রক্ষা কর, আমাদিগকে সুখে নিয়ত কর।
৩। হে বহুধনবিশিষ্ট ইন্দ্র! আমার এই বাক্য তোমাকে বর্দ্ধিত করুক, অগ্নিতুল্য তেজস্বী ও শুচি বিদ্বানগণ স্তোত্ৰদ্বারা তোমার স্তুতি করে।
৪। ইনি সহস্র ঋষিগণের নিকট হইতে বল লাভ করিয়া বিস্তীর্ণ হইয়াছেন; ইহার অবিতথ, প্রসিদ্ধ মহিমা ও বল যজ্ঞে বিপ্রগণের রাজত্বে স্তুত হয়।
৫। আমরা যজ্ঞার্থে ইন্দ্রকে আহ্বান করিতেছি, যজ্ঞ আরম্ভ হইলে ইন্দ্রকে আহ্বান করিতেছি, যজ্ঞ সম্পন্ন হইলে ইন্দ্রকে আহ্বান করিতেছি। আমরা ভজমান হইয়া ধন লাভার্থে ইন্দ্রকে আহ্বান করিতেছি।
৬। ইন্দ্র আপনার বলের মহিমায় দ্যাবাপৃথিবী বিস্তারিত করিয়াছেন, ইন্দ্র সূৰ্য্যকে দীপ্ত করিয়াছেন, সমস্ত ভুবন ইন্দ্ৰে নিয়মিত হইয়াছে। অভিযুত সোম ইন্দ্ৰে অন্তর্ভূত হয়।
৭। হে ইন্দ্র! প্রথম পানার্থে মনুষ্যগণ স্তোত্রদ্বারা তোমায় স্তুতি করিতেছেন, সমীচীন ঋভুগণ তোমাকেই সম্যক স্তব করিতেছেন। তুমি পুরাতন, রুদ্রগণ তোমাকেই স্তব করিয়াছে।
৮। অভিযুত সোমপানে সৰ্ব্বদেহব্যাপী মত্ততা জন্মিলে ইন্দ্র এই যজমানেরই বীৰ্য্য ও বল বৰ্দ্ধিত করেন; মনুষ্যগণ অদ্য পুৰ্বকালের ন্যায় ইন্দ্রের সেই গুণ স্তব করিতেছে।
৯। হে ইন্দ্র! তুমি উত্তম বীৰ্য্যবান, আমি তোমার নিকট প্রথম লাভার্থ উৎকৃষ্ট অন্ন যাচঞা করিতেছি। যাহা দ্বারা কৰ্ম্মশূন্য লোকের নিকট হইতে হিতকর ধন প্রদান করিয়াছ ও যাহাদ্বারা প্রস্কম্বকে রক্ষা করিয়াছ, আমি তাহাই প্রার্থণা করি।
১০। হে ইন্দ্র! যে বলদ্বারা সমুদ্রের জন্য প্রভুত জল প্রেরণ করিয়াছ, তোমার সেই বলে অভীষ্ট ফলপ্রদ। ইন্দ্রের সেই সেই মহিমা প্ৰাপ্তিযোগ্য নহে, পৃথিবী এই মহিমা অনুগমন করে।
১১। হে ইন্দ্র! শোভন বীর্য্যবিশিষ্ট যে ধন তোমার নিকট যাচঞা করি আমাদিগকে সেই ধন প্রদান কর। ভজনাভিলাষী হবিষ্মান যজমানের উদ্দেশে প্রথম ধন প্রদান কর।হে পুরাতন! তদনন্তর স্তোতাকে দাও।
১২। হে ইন্দ্র! কৰ্ম্ম সংভজনকারী, যে ধন দ্বারা পুরুরাজার পুত্রকে রক্ষা করিয়াছিলে, সেই ধন আমাদের এই যজমানকে প্রদান কর। রুশম শ্বাবক ও কৃপকে যেরূপে রক্ষা করিয়াছিলে, সেইরূপ সকল হবির্নেতা যজমানকে রক্ষা কর।
১৩। সর্বত্রগামী স্তুতির কর্তা, কোন অভিনব মনুষ্য ইন্দ্রকে স্তুতি করিতে পারে। সুখলভ্য ইন্দ্রের স্তুতিকারী লোক ইন্দ্রের ইন্দ্ৰিয় ও মহত্ব ব্যাপ্ত করিতে পারে না।
১৪। হে ইন্দ্র! তুমি দেবতা, স্তুতিকারী কোন লোক তোমার উদ্দেশে যজ্ঞ করিতে ইচ্ছা করে? কোন ঋষি বিপ্র তোমার স্তুতি বহন করে? হে ইন্দ্র! তুমি কখন স্তুতিকারীর আহ্বাননুসারে আগমন কর? কখনই বা স্তোতার নিকট আগমন কর।
১৫। প্রসিদ্ধ, অতিমধুর বাক্যসমূহ ও স্তোত্রসমূহ শত্রুজয়ী, ধনভাক, অক্ষয় রক্ষাবিশিষ্ট, অন্নাভিলাষী রথের ন্যায় উদীরিত হইতেছে।
১৬। কণ্বগণের ন্যায় ভৃগুগণ সূৰ্য্যরশ্মির ন্যায় ধ্যানাস্পদীভূত, ব্যাপ্ত ইন্দ্রকেই ব্যাপ্ত করিয়াছিল। প্রিয়মেধ মনুষ্যগণ পূজা করতঃ স্তোত্রদ্বারা তাঁহাকেই পূজা করিয়াছিল।
১৭। হে বৃত্রহা শ্ৰেষ্ঠ! হরিদ্বয়কে রথে যোজনা কর। হে ধনবান! তুমি উগ্র, সোমপানাৰ্থ আমাদের অভিমুখে দূরদেশ হইতে দর্শনীয় মরুদগণের সহিত আগমন কর।
১৮। হে ইন্দ্র! কর্মকর্তা, মেধাবী, এই যজমানগণ যজ্ঞ ভজনার্থে তোমাকেই স্তুতি করিতেছে। হে মঘবন! হে স্তুতিভাক ইন্দ্র! তুমি কামুক পুরুষের ন্যায় আমাদের আহ্বান শ্রবণ কর।
১৯। হে ইন্দ্র! মহাধনুদ্বারা তুমি বৃত্রকে হত করিয়াছ, মায়াবী অর্বুদের ও মৃগয়কে বিনাশ করিয়াছ, পৰ্ব্বত হইতে গোসকলকে নিৰ্গত করিয়াছ।
২০। হে ইন্দ্র! তুমি যখন অন্তরিক্ষ হইতে মহান ও হননশীল বৃত্রকে নিৰ্গত করিয়াছিলে, তখন বলপ্রকাশ করিয়াছিলে। অগ্নি সকল দীপ্ত হইয়াছিল, সূৰ্য দীপ্ত হইয়াছিল,ইন্দ্রের সেব্য সোমরসও দীপ্ত হইয়াছিল।
২১। ইন্দ্র ও মরুদগণ যাহা আমাকে দিয়াছিলেন, কুরযানের পুত্র পাকস্থামা তাহাই আমাকে দিয়াছেন। উহা সমস্ত ধনের মধ্যে স্বৰ্গে ধাবমান, প্রভাযুক্ত সূৰ্য্যের ন্যায় শোভা পায়।
২২। পাকস্থামা আমাকে লোহিতবর্ণ, সুন্দর বহনবিশিষ্ট, বন্ধন রজ্জুর পরিপূরক ও বহুধনের প্রাপক ধন প্রদান করিয়াছেন।
২৩। দশ সংখ্যক অশ্ব উহার প্রতিনিধি হইয়া আমাকে বহন করে। অশ্বগণ এইরূপে ভুগ্যপুত্রকে বহন করিয়াছিল।
২৪। পাকস্থামা তাহার পিতার তনয় এবং বাসপ্রদ ও পরিস্ফুটভাবে বলদাতা, শত্রুদিগের হিংসাকারী ও ভোজয়িতা। লোহিতবর্ণ অশ্বদাতা পাকস্থামাকে স্তব করি।