ঋগ্বেদ ০৬।৬৭
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৬ষ্ঠ মণ্ডল সূক্ত ৬৭
মিত্র ও বরুণ দেবতা। ভরদ্বাজ ঋষি।
১। সকলের জ্যেষ্ঠতম, হে মিত্র বরুণ! তোমরা দুই জনে অসম ও যন্তৃশ্রেষ্ঠ এবং রজ্জুর ন্যায় স্বীয় বাহুদ্বারা জনগণকে সংযত কর। আমি তোমাদিগকে স্তুতিদ্বারা বর্ধিত করি।
২। হে প্রিয় মিত্র বরুণ! আমাদিগের এই স্তুতি, তোমাদিগকে প্রচ্ছাদিত করে, হব্যের সহিত তোমাদিগের নিকট গমন করে এবং তোমাদিগের যজ্ঞাভিমুখে গমন করে। হে সুন্দর দানবিশিষ্ট মিত্র ও বরুণ! আমাদিগকে শীতাদির নিবারক অনভিভূত গৃহ দান কর।
৩। হে প্রিয় মিত্র বরুণ! তোমরা স্তোত্রদ্বারা সুন্দররূপে স্তত হইয়া উপাগত হও। কর্মনিযুক্ত পুরুষ যেমন কর্মদ্বারা অন্নাভিলাষী ব্যক্তিগণকে সংযত করে, তোমরা মহিমাদ্বারা সেইরূপ কর।
৪। যাঁহারা অশ্বের ন্যায় বলশালী, পূতস্তোত্রবিশিষ্ট এবং সত্যভূত, অদিতি সেই গর্ভভূত মিত্র ও বরুণকে ধারণ করিয়াছিলেন। যাঁহারা জন্মিবামাত্রেই মহান হইতেও মহান এবং হিংসক মনুষ্যের ঘাতক, অদিতি তাঁহাদিগকে ধারণ করিয়াছিলেন।
৫। সমস্ত দেবগণ পরস্পর প্রীতিযুক্ত হইয়া তোমাদের মহত্ব কীর্তন করতঃ বল ধারণ করিয়াছেন। তোমরা বিস্তীর্ণা দ্যাবাপৃথিবীকে পরিভূত কর। তোমাদিগের অহিংসিত এবং অমূঢ় রশ্মি আছে।
৬। তোমরা প্রতিদিবস বল ধারণ কর এবং অন্তরিক্ষের উন্নত প্রদেশ খোঁটার ন্যায় দৃঢ়রূপে ধারণ কর। তোমাদিগের কর্তৃক দৃঢ়ীকৃত মেঘ অন্তরিক্ষে ব্যাপ্ত হয় এবং বিশ্বদেব মনুষ্যের হব্যে তৃপ্ত হইয়া ভূমিতে এবং দ্যুলোকে ব্যাপ্ত হন।
৭। তোমরা সোমদ্বারা উদর পূর্ণ করিবার জন্য প্রাজ্ঞ ব্যক্তিকে ধারণ কর। হে বিশ্বজিম্বা মিত্র ও বরুণ! যখন ঋত্বিকগণ যজ্ঞগৃহ পূর্ণ করে এবং যখন তোমরা জল প্রেরণ কর, তখন যুবতীগণ (১) মৃষ্ট হয় না; বরং অশুষ্ক হইয়া বিভূতি ধারণ করে।
৮। মেধাবী ব্যক্তি তোমাদিগের নিকট বাক্যদ্বারা সর্বদা এই জল যাচঞা করেন। হে ঘৃতান্নবিশিষ্ট মিত্র ও বরুণ! যেরূপে তোমাদিগের অভিগন্তা যজ্ঞে মায়ারহিত হয়, তোমাদিগের সেরূপ মহিমা হউক। তোমরা হব্যদাতার পাপ বিনাশ কর।
৯। হে মিত্র ও বরুণ! যাহারা স্পর্ধা করিয়া তোমাদিগের কর্তৃক বিহিত এবং তোমাদিগের প্রিয় কর্মের বিঘ্ন করে, যে দেবগণ ও মনুষ্যগণ স্তোত্রযুক্ত হয় না, যাহারা কর্মবান হইয়াও যজ্ঞযুক্ত নহে এবং যাহারা পুত্রস্বরূপ নহে, তাহাদিগকে বিনাশ কর।
১০। যখন মেধাবিগণ স্তুতি উচ্চারণ করেন, কেহ কেহ স্তুতি করতঃ নিবিৎসমূহ পাঠ করেন এবং আমরা তোমাদিগের উদ্দেশে শত উকথসমূহ উচ্চারণ করি, তখন তোমরা মহিমা করিয়া দেবগণের সহিত চলিয়া যাও না।
১১। হে রক্ষক মিত্র ও বরুণ! যখন স্তুতিসমূহ উচ্চারিত হয় এবং যখন ঋজুগামী, ধৰ্যক, অভীষ্টবৰ্ষী সোমকে যজ্ঞে সংযুক্ত করে, তখন গৃহদানের জন্য তোমরা অভিগত হইলে তোমাদিগের কর্তৃক দেয় গৃহ যে অবিচ্ছিন্ন হয় ইহা সত্য।
(১) অর্থাৎ নদী অথবা দিকসকল ধূলিদ্বারা অভিভূত হয় না। সায়ণ।