প্রিয়তমা, তোমার চিঠির শেষ কথাগুলো খুব
বিঁধে আছে মর্মমূলে, কতিপয় কালো
অক্ষর কদিন ধ’রে দেখাচ্ছে আমাকে
ভয়, যেখানেই
যাই দুশ্চিন্তার মেঘ ঝুঁকে থাকে আমার ওপর
সকল সময়। তুমি লিখেছো, সম্প্রতি
কী একটা শব্দের ধমকে
খোকার দোলনা কেপে ওঠে ভয়-পাওয়া
পায়রার মতো আর
খুকির পুতুলগুলির মূর্ছা যায় কুলুঙ্গিতে প্রহরে প্রহরে।
লিখেছো সন্ধ্যার পরে ইদানীং কেউ
সহজে রাস্তায় বেরোয় না। দরজায় খিল এঁটে
যে যার আপন ঘরে থাকাটাই শ্রেয়
মনে করে। কেউ কেউ দেয়ালে নিজের ছায়া দেখে
ভীষণ চমকে ওঠে এবং ফাঁসির
আসামীর মতো
কাটাচ্ছে সময় অনেকেই। এমনকি ভালোবাসা
আঁধারে লুকায় মুখ, যেন
গভীর ভূগর্ভে গিয়ে নেবে শেষ শয্যা। কী ব্যাপক
হায়বত, হায়, দাঁত নখ বসিয়েছে লোকালয়ে।
অন্য সব শব্দকে ছাপিয়ে সেই শব্দ নিয়তির
মতো ছোটে এক প্রান্তে থেকে
অন্য প্রান্তে, যে শোনে, হৃদয় তার শিলীভূত হয়
লহমায় গোখরোর ফনার মতোই
সম্মোহন আছে সে শব্দের প্রায়শই
বিপুল অঙ্গার এক দেখা যায় এখানে সেখানে,
তার অভ্যন্তর থেকে দশদিক-কাঁপানো গর্জন
চকিতে বেরিয়ে আসে, ঘরদোরে ধরে
চিড় আর গাছের বাকল ছিঁড়ে যায়। লোকে বলে
চতুর্দিকে শবাতঙ্ক ছড়াচ্ছে প্রবল কেঁদো বাঘ।
যতদিন পারো, প্রিয়তমা,
খোকা আর খুকীকে হাসাও। তোমাদের
হাসি এই অন্ধকারে ছড়াবে আবীর, ভয় নেই,
এই তো আসছি আমি। যদিও কখনো
ধরি নি বন্দুক আমি, এমনকি গুলতির ঘায়ে
মারি নি শৈশবে পাখি, তবু
খুঁজে নেবো আঁটি, এ আমারই দায় ভাগ,
অবলোয় আমাকেই হতে হবে আর্জান সর্দার।