আমার ঘুমের মধ্যে শুনি পদধ্বনি গাঢ় রাতে
ঘুম ভাঙে, একবার নয়,
দশবারও নয়,
কেবলি।
দেয়ালে ছায়া দেখে প্রাণের শেকড়ে
লাগে টান, কে এল আমার ঘরে মনের খেয়ালে,
নাকি অন্তর্ধানা কারো
না পেয়ে আমার সাড়া! সাত তাড়াতাড়ি
শয্যা ছেড়ে উঠি, যাই দরজার কাছে,
বারান্দায় কেউ কি দাঁড়িয়ে আছে? প্রখর শূন্যতা
আমাকে কামড়ে ধরে। ফিরে আসি, আধপড়া বই
হাতে শূই,
বাসি-হয়ে-আসা
ঘুমের ভেতরে যদি বাঁশি বেজে ওঠে অতীতের
বিকেল বেলায়
বিনম্র মাঠের
ঘুম ভেঙে যাবে কি তখন?
রাত্রির ললাটে যার স্পর্শে ফের ফুটবে কুঙ্কুম,
সে এখন অন্তরালে। এখন তো পদধ্বনি শুধু
পদধ্বনি ঘুমের ভেতরে।
যার পদধ্বনি শুনি তাকে যেতে হবে বহুদূরে,
আমিও কি থাকবো এখানে
সারাবেলা ম’জে গেরস্থালি সুরে? যাবো
আমি দূরে তোমারই উদ্দেশে,
হয়তো লঞ্চে যেতে যেতে
তোমার নিবাস
নিমেষে পেরিয়ে যাবো, জানবো না। তুমি
হয়তো কূয়োতলায় মুখ
ধুচ্ছো কিংবা পাল্টাচ্ছো রাতের
বালুচরী শাড়ি, কাঁঠালের গাছে একটি অচিন
পাখি অতিথির নাম ধ’রে ডেকে যাবে,
মনে হবে তোমার এবং
আমি একা ধাবমান লঞ্চ থেকে তাকাবো তোমার
ভূরুর মতোই
দূরবর্তী গ্রামটির দিকে।
আমার ঘুমের মধ্যে শুনি পদধ্বনি, যেন তুমি
আসছো স্তিমিত আঁধারকে
চমকিয়ে, দেখি
বাগ্দি-পাড়া, চার বেহারার ডুলি, জামতলা, পর্দা-
পেরুনো চকিত দৃষ্টি, আমার হৃদয় জুড়ে তোমার কোমল
পদচ্ছাপ। ভোরবেলাকার
মাছের মতোই
তোমার হাতের নড়া দেখলাম, মনে
হলো আর যে-ঘাটে ভিড়লো
লঞ্চ, সেখানে তো ঠিক নামতে চাইনি। এ কোথায়
চলেছি আচ্ছন্নতায়? আমার হাতের ব্যাগ হাঁস
হয়ে উড়ে যায় দূরে; একটি পাখির
গীতাভায় চমকিত চোখ
স্বাগত জানায়, তুমি সাঁঝবাতি জ্বেলে
দাঁড়াও দাওয়ায় একা
এবং আমার ঘুম দীপান্বিতা হয়,
আমার ঘুমের মধ্যে তোমার নিশ্বাস জেগে ওঠে,
আমাকে ক্ষইয়ে দিতে থাকে
ক্রমশ তোমার পদধ্বনি, অন্ধকারে মঞ্জরিত পদধ্বনি।
তোমাকে দেখি না আমি, দেখি
তোমার নির্জন রাত্রিরূপময় পদধ্বনিকেই।