অসমাপ্ত কবিতা

খরায় শব্দের চাষবাস বেজায় উচ্ছন্নে গেছে;
সুন্দরের পা কাটা এবং চোখে হলুদ পিচুটি,
তা ব’লে এভাবে দুঃখী দুঃখী মুখ নিয়ে সারাক্ষণ
ব’সে থাকবার কী-যে মানে হয়! অসুখ তাড়াও,
আঙুলের ডগা দিয়ে জাগাও আবার ভালবাসা;
ভুল নাম শুনে তুমি জনপদে চুপচাপ থেকো।

ক’পোয়ালা কফি খেলে, স্পর্শ পেলে ক’জন রূপসী
রমণীর একটি কবিতা লেখা যায় নিরিবিলি?
ট্রাউজারে স্কচ কতবার চলকে পড়লে শব্দবোধ
রুপবান হতে পারে? নিশিন্দা পাতায় প্রতীকের
প্রজাপতি উড়ে এসে বসে কি কখনো? বাগানের
ছায়ায় দাঁড়ায় এক আহত হরিণ ভ্রমবশে।

একটি কবিতা অসমাপ্ত রয়ে গেছে বহুদিন
থেকে, এরকম হয়, হতে থাকে মাঝে-মাঝে কিছু
জরুরি শব্দের অকস্মাৎ গা ঢাকা দেয়ার হেতু;
একটি কবিতা অসমাপ্ত রয়ে গেছে দীর্ঘকাল।
জীবনযাপন অবসাদ মুখ্য হয়ে ওঠে, বাড়ে
রক্তচাপ, বিপন্নতা কী আয়েশে পাশে শুয়ে থাকে।

কখনও হবে না লেখা আর এই বিশেষ কবিতা
ভেবে মনোকষ্ট হয়-যেন কোনো বাড়ি নিরালায়
একটি দেয়াল নিয়ে বোবা, সেই কবে ক্ষয়ে গেছে
ইটের গাঁথুনি, বুনো ঘাস অবিরল খল খল
করে ভিটেমাটিতে এবং চামচিকা, ইঁদুরের
চাঞ্চল্য বাড়তে থাকে ক্রমাগত প্রহরে প্রহরে।

নিভৃতে বিষণ্ন থাকি, থাকি পদ্যের সংস্রব থেকে
দূরে, পরবাসে, তবু একটি দোয়েল টুপ করে
ফেলে যায় উপমা, কোত্থেকে ঝরা পাতা রূপটান
দেয় কোনো ছন্দের, কনকচাঁপা খুঁজে আনে মিল।
শব্দগুলি একে একে অপচয়ী পুত্রের মতন
ফিরে আসে, পুনরায় রুগ্‌ণ, ক্ষয়া কবিতা পূর্ণিমা।

দর্শনের খুঁট ধ’রে উদাসীন ঘোরঘুরি করি-
আমি কি নিজের কাছ থেকে ধু ধু দূরে সরে যাচ্ছি?
নিদ্রাহীন রাত্রিগুলি শুষে নেয় কত অশ্রুজল,
অমরত্ব মারবে বিপথে এনে, মুখে এক ফোঁটা
পানি দিতে থাকবে না কেউ ধারে কাছে; এ জীবনে
অসমাপ্ত কবিতার মতো দীর্ঘশ্বাস হয়ে যাবে।
৫।৫।৯১