আমি কাউকেই কাঠগড়ায় কখনও
করাবো না দাঁড় নিরর্থক
আমার হালের জন্যে।কারও নামে নালিশ করার
বিন্দুমাত্র অধিকার নেই এই লোকটার, মানে
আমার, কেননা আমি নিজেরই বিরুদ্ধে
বারবার করেছি ফুলুম, অপরাধ।
নিয়ত আমার হৃৎপিণ্ড, প্লীহা ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে
জাঁহাবাজ এক বাজপাখি।
অসহায় আমি বড় অপারগ বাধা দিতে ওকে।
আমি যে অন্যায় করে কাটিয়েছি যত দিনরাত্রি,
তার পরিণাম এরকমই হতে হবে-
কী করে এড়াবো শাস্তি? রক্তাক্ত প্রহর?
সামান্য পাখিও নীড় সাজায় গোছায়
নন্দনতত্ত্বের অ আ ক খ না জেনেও,
নিজ শাবকের যত্ন নেয় যথারীতি।
আর এই আমি সভ্যভব্য মনুষ্য সমাজে নিত্য
বসবাস করেও আপন সংসারের, গৃহিণীর,
সন্তানের যথাযথ লালন পালন থেকে সরিয়ে দু’হাত
আমার সাধনালব্ধ শিক্ষার খানিক কণা দিতে
ব্যর্থতাকে বরণ করেছি। ওরা আমার অনেক কথা বোঝে না বলেই
শোনার আগ্রহ স্রেফ হারিয়ে ফেলেছে।
আর আমি শুধু বুনো হাঁসের পেছনে ছুটে ছুটে
কাটিয়েছি সারা বেলা, সংসারে নেমেছে খাঁ খাঁ ধস,
বস্তুত হুমড়ি খেয়ে কোনওমতে রুখেছি বিচ্ছিরি পরিণতি
কুড়িয়েছি বদনাম কত; খামাকা লোকেরা ডাস্টবিনভরা
আবর্জনাগন্ধী গুচ্ছ গুচ্ছ কল্পকথা রটিয়েছে।
অনেকেই উদাসীন পদাতিক আমার উদ্দেশে
তাকিয়েছে আড়চোড়ে, যেন আমি চিড়িয়াখানার
একটি কিম্ভূত কিমাকার জীব, হাসির হুল্লোড়
ওঠে অলিগলি, চৌরাস্তায়।
উপরন্তু দেবকুল অতিশয় ক্ষিপ্ত আজ আমার ওপর,
কেননা তাদের কণ্ঠ থেকে সুর নিয়ে অনুপম পদাবল্মী
রচনা করেছি নিশীথের কত নিস্তব্ধ প্রহরে,
যার ধ্বনি গুঞ্জরিত মানুষের মনে প্রাণে গ্রামে ও শহরে।
তবে কি সঙ্গীতময় দেবতার প্রতিযোগী হওয়ার কসুরে
অভিশপ্ত আমি আজ? তারই পরিণামে
এরকম রোগক্লিষ্ট পড়ে আছি একা অসহায়?
অভিশাপ যতই জ্বলন্ত হোক, পোকাক্রান্ত কাঠ হোক শরীর, জীবন,
তবু আমি প্রতিযোগিতার পথ ছেড়ে
শব্দের, ধ্বনির রূপ থেকে দূরে সরে থাকব না।
নিভুক চোখের জ্যোতি, কাঁপুক দু’হাত অবিরত,
আমার কবিতা তবু সাজাবে জমিন, সীমাহীন আসমান।
১৫.১১.৯৯