গোছা গোছা ফুল কি ফুটেছে লোকটির মেঘময়
অবচেতনের জমি জুড়ে? সে জমিনে গোধূলি
কখন যে নেমে আসে, জটিলতা সৃষ্টি হয়, লোকটি বোঝে না
কিছুতেই, অন্ধকারে অনেকটা অন্ধের মতোই
আবছা বেড়ায় ডানে বামে। আশঙ্কার বাইসন
তেড়ে আসে ডান দিক থেকে, বোঝে না সে।
আকাশে জমলে কালো মেঘ, রাজপথে
কেউ দিনদুপুরে হঠাৎ খুন হলে কিংবা কোথাও হাঙ্গামা
বাঁধলে লোকটা নিজেকেই অপরাধী ভেবে বসে আর মনের অসুখ
তাকে কুরে কুরে খায়।
বিশেষত রাতগুলো খুব ভয়াবহ চেহারায়
সম্মুখে হাজির হয়। ঘরের দেয়াল চারদিক
থেকে তীক্ষ্ণ দাঁত-নখ খিঁচিয়ে এগিয়ে আসে সেই
লোকটাকে লক্ষ্য করে। ঘোর অনিদ্রার প্রহরের চাপে
দম বন্ধ হয়ে আসে তার, তখন সে মৃত্যুকেই
পরম সুহৃদ ভেবে নেয়। কখনও কখনও অবচেতনের
ছায়াচ্ছন্নতায় এক মোহন উদ্যান দেখা দেয়, তার দিকে
কারও মায়াময় হাত অপরূপ মুদ্রায় এগোয়।
রোদের কামড় লোকটাকে যন্ত্রণাকাতর করে বড়, লহমায়
জ্যোৎস্নার মলমে ঠিক নিভে যায় জ্বালা। যখন সে
ঘাসে শুয়ে নক্ষত্রের উদ্দীপিত সভা দ্যাখে,
অনেক পুরনো কথা বুদ্বুদের মতো জেগে উঠে
মিশে যায় স্মৃতিমগ্ন ধূসর গুদামে। ধুলো ওড়ে
কিছুক্ষণ, অনেক মুখের ভিড়ে একটি মুখের রূপরেখা
ক্রমাগত গাঢ় হতে হতে লোকটার
নিজেরই হৃদয় হয়ে যায়। পরমুহূর্তেই তার
বুকের ভেতর এক বেয়াড়া নেউল বড় বেশি দাপাদাপি
গুরু করে; লোকটা ভীষণ ভয় পেয়ে মুখ ঢাকে। মাঝে মাঝে
আঙুলের ফাঁক দিয়ে দ্যাখে, আশঙ্কায় কাঁপে-
হয়তো অনেক কিছু এক্ষুণি হাজির হবে, অকস্মাৎ চোখে
পড়ে তার-একটি করুণ লাশ ভাসে ফিকে চাঁদের আলোয়।
ভাবে, কার এই লাশ? এটা কি অভাগা
কোনও পুরুষের, যার নাম জানবে না কেউ আর? নাকি তার?
১৭.১২.২০০০