৪২তম অধ্যায়
শল্যের প্রত্যুত্তর-হংসবায়স ইতিহাস
সঞ্জয় কহিলেন, “হে মহারাজ! অনন্তর মদ্ররাজ শল্য যুদ্ধাভিলাষী কর্ণের বাক্য শ্রবণগগাচর করিয়া একটি দৃষ্টান্ত প্রদর্শনপূর্ব্বক পুনরায় তাঁহাকে কহিলেন, ‘হে সূতপুত্র! আমি ধর্ম্মপরায়ণ এবং সমরে অপরাঙ্মুখ যাগযজ্ঞনিরত মূৰ্দ্ধাভিষিক্তদিগের বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছি। এক্ষণে তোমাকে মত্তের ন্যায় লক্ষিত হইতেছে, অতএব আমি বন্ধুতানিবন্ধন তোমার চিকিৎসা করিব। হে কর্ণ! আমি যে এক্ষণে একটি কাকের বৃত্তান্ত কীৰ্ত্তন করিতেছি, তুমি তাহা শ্রবণ করিয়া স্বেচ্ছানুসারে কার্য্যানুষ্ঠান কর। হে কুলপাংশন [কুলাঙ্গার]! আমার অণুমাত্র দোষ নাই। অতএব তুমি কি নিমিত্ত বিনাপরাধে আমাকে সংহার করিতে অভিলাষ করিতেছ? আমি সারথ্যে নিযুক্ত, বিশেষতঃ দুৰ্য্যোধনের প্রিয়ানুষ্ঠানপরতন্ত্র, সুতরাং তোমাকে হিত ও অহিত এই দুইটি বিষয় অবশ্যই জ্ঞাত করিব। তোমার তৎসমুদয় বুঝিয়া কাৰ্য্য করা কৰ্ত্তব্য। আমি এই রথের সারথি হইয়াছি, সুতরাং সমবিযম ভূভাগ, রথীর বলাবল, রথ, অশ্বদিগের শ্রম ও খেদ, মৃগধ্বনি, পক্ষীর বিরুত [ক্রন্দন], ভার [সহ্য], অতিভার [অসহ্য], শল্যের প্রতিকার, অস্ত্রযোগ, যুদ্ধ ও নিমিত্ত সমুদয় আমার পরিজ্ঞাত হওয়া কর্ত্তব্য। যাহা হউক, এক্ষণে আমি যে উপাখ্যান কীৰ্ত্তন করিতেছি, তাহা শ্রবণ কর।
‘সমুদ্রপারে কোন ধর্ম্মপরায়ণ রাজার রাজ্যে এক প্রভূতধনসম্পন্ন, যাজ্ঞিক, দাতা, ক্ষমাশীল, স্বধর্ম্মনিরত, পবিত্রচিত্ত, সর্ব্বভূতানুকম্পী [সকল প্রাণীতে সদয়] বৈশ্য নির্ভয়ে বাস করিত। ঐ বৈশ্যের অনেকগুলি পুত্র ছিল। বৈশ্যপুত্রেরা আপনাদের উচ্ছিষ্ট মাংস, অন্ন, দধি, ক্ষীর, পায়স, মধু ও ঘৃতদ্বারা একটি কাককে ভরণপোষণ করিত। ঐ কাক বৈশ্যপুত্রগণের উচ্ছিষ্ট ভোজন করিয়া ক্রমে ক্রমে নিতান্ত গর্ব্বিত হইয়া উঠিল এবং আপনার সদৃশ ও আপনার অপেক্ষা উৎকৃষ্ট পক্ষিগণকে অবজ্ঞা করিতে লাগিল।
‘একদা গরুড়ের ন্যায় বেগগামী হৃষ্টচিত্ত কতকগুলি হংস সেই সমুদ্রতীরে উপস্থিত হইল। বৈশ্যকুমারগণ সেই হংসসমুদয়কে নিরীক্ষণ করিয়া কাককে কহিল,—অহে কাক! তুমি সকল পক্ষী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। উচ্ছিষ্টভোজনতৃপ্ত বায়স অল্পবুদ্ধি বৈশ্যকুমারগণের সেই প্রতারণাবাক্যে আহ্লাদিত হইয়া মূর্খতা ও গর্ব্বনিবন্ধন তাহাদিগের বাক্য সত্য বলিয়া বিবেচনা করিল। তখন সে সেই হংসগণের মধ্যে কে প্রধান, ইহা জানিবার নিমিত্ত তাহাদের সন্নিধানে সমুপস্থিত হইল এবং তাহাদের মধ্যে একটি হংসকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করিয়া তাহাকে আহ্বানপূর্ব্বক কহিল, হে হংসবর! আইস, আমরা উভয়ে নভোমণ্ডলে উড্ডীন হই। তখন সেই সমাগত হংসগণ বহুভাষী কাকের বাক্য শ্রবণপূর্ব্বক হাস্য করিয়া কহিল,—রে দুৰ্ম্মতিপরতন্ত্র কাক! আমরা মানসসরোবরবাসী হংস। অনায়াসে এই সমুদয় ভূমণ্ডল সঞ্চরণ করিয়া থাকি। অন্যান্য বিহঙ্গমগণ আমাদিগকে দূরগামিত্বনিবন্ধন প্রতিনিয়ত সৎকার করিয়া থাকে; সুতরাং তুই কাক হইয়া কোন্ সাহসে মহাবল হংসকে উড্ডীন হইতে আহ্বান করিতেছিস্? যাহা হউক, বল্ দেখি, তুই কিরূপে আমাদের সহিত উড্ডীন হইবি?
পক্ষীদিগের বিবিধ বিচিত্র গতি
তখন জাতিসুলভ [৫] লাঘবতা [৬] নিবন্ধন আত্মশ্লাঘাপরবশ বায়স হংসের বাক্যে বারংবার অনাদর প্রদর্শনপূর্ব্বক কহিল,-হে হংসগণ! আমি শত প্রকার বিচিত্র উড্ডয়ন প্রদর্শন করিতে পারি। আমি প্রত্যেক উড্ডয়নে শত যোজন করিয়া ঊর্ধ্বে উত্থিত হইব এবং তোমাদিগের সমক্ষে উড্ডীন[উড়ন—ঊর্ধ্বগতি], অবডীন[অধোগতি—নীচে নামিয়া আসা], প্রডীন[সকল দিকে সমান গতি], ডীন[সাধারণ গতি], নিডীন[ধীর গতি], সংডীন[সুদৃশ্য গতি], তির্যগর্গডীন[বক্ৰগতি—এঁকে বেঁকে উড়া], বিডীন[দ্রুতবিলম্বিত গতি—কখনও দ্রুত কখনও বিলম্বিত], পরিডীন[অতি অল্পক্ষণের মধ্যে একবার উপরে, একবার নীচে এই ভাবের সর্ব্বদেশ গতি], পরাডীন[পশ্চাদ্ গতি-পশ্চাদ্ দিকে পিছাইয়া যাওয়া], সুডীন[স্বর্গের দিকে অতি উৰ্দ্ধগতি-অদৃশ্য হওয়া], অতিডীন[অভিমুখে গতি], মহাডীন[অত্যন্ত উজ্জিত গতি—অতিবেগ গতি, অথচ চিত্তাকর্ষক], নির্ডীন [নিশ্চল গতি-উড়িবার সময় পক্ষাদির নড়াচড়া না থাকা], ডীনডীন [শোভনভাবে অত্যর্থ গতি], সম্পাত [শোভনভাবে অধঃপতন], সমুদীর্ণ [অনেকের সহিত পরস্পর ব্যতিক্রম হীন একভাবের গতি], ও অন্যান্য নানাপ্রকার গতাগতির এবং কাকের সমুচিত বিবিধ গতি প্রদর্শন করিব। তোমরা এক্ষণে আমার বল অবলোকন কর। এক্ষণে আমি ঐ সমুদয় গতি মধ্যে কোন্ প্রকার গতি অবলম্বনপূর্ব্বক অন্তরীক্ষে উত্থিত হইব, তোমরা তাহা আদেশ কর। আমি যে গতিদ্বারা উড্ডীন হইব, তোমাদিগকেও সেই গতি অবলম্বন করিয়া আমার সহিত এই আশ্রয়হীন, নভোমণ্ডলে সমুত্থিত হইতে হইবে; অতএব উত্তমরূপ বিবেচনা করিয়া বল, আমি কোন্ প্রকার গতি অবলম্বনপূর্ব্বক উড্ডীন হইব?
তখন সেই হংসদিগের মধ্যে একটি হংস কাকের বাক্যশ্রবণে হাস্য করিয়া কহিল,—হে কাক! তুমি শত প্রকার গতাগতি অবগত আছ; কিন্তু আমরা সমুদয় পক্ষিজাতির বিদিত একমাত্র গতি ভিন্ন আর কিছুই জ্ঞাত নহি। আমি তাহাই অবলম্বন করিয়া তোমার সহিত গমন করিব; এক্ষণে তুমি স্বীয় অভিলাষানুরূপ গতি অবলম্বনপূর্ব্বক গমন কর।
হংসকাকের আকাশগতি
‘হে কর্ণ। ঐ সময় ঐ স্থানে আরও কয়েকটি কাকের সমাগম হইয়াছিল। তাহারা হংসের বাক্যশ্রবণে হাস্য করিয়া কহিল,—এই হংস এক গতিদ্বারা কিরূপে শত প্রকার গতি পরাজয় করিবে?
‘অনন্তর কাক ও হংস পরম্পর স্পর্ধা প্রকাশপূর্ব্বক অন্তরীক্ষে উত্থিত হইল এবং স্ব স্ব কাৰ্য্যের শ্লাঘা করিয়া পরস্পরকে বিস্মিত করিয়া গমন করিতে লাগিল। বায়সেরা সেই কাকের বিবিধ বিচিত্র উড্ডয়ন নিরীক্ষণ করিয়া হৃষ্টমনে মুক্তকণ্ঠে কোলাহল করিতে আরম্ভ করিল; হংসেরাও অপ্রিয় বাক্য প্রয়োগপূর্ব্বক কাককে উপহাসপূৰ্বক কখন বৃক্ষাগ্র, কখন বা ভূতল হইতে উৎপতিত ও নিপতিত হইতে লাগিল এবং অনবরত কোলাহল করিয়া আপনাদিগের জয় ঘোষণা করিতে প্রবৃত্ত হইল। ঐ সময় হংস একমাত্র মৃদুগতি অবলম্বনপূর্ব্বক আকাশমার্গে উত্থিত হইবার উপক্রম করায় মুহূর্ত্তকাল কাক অপেক্ষা হীনগতি লক্ষিত হইতে লাগিল। তখন বায়সগণ হংসদিগকে অশ্রদ্ধা করিয়া কহিল, ‘হে হংসগণ! তোমাদের মধ্যে যে হংসটি অন্তরীক্ষে উত্থিত হইয়াছে, ঐ দেখ, এক্ষণে তাহাকে হীনগতি লক্ষিত হইতেছে। তখন সেই অন্তরীক্ষস্থিত হংস বায়সগণের বাক্য শ্রবণ করিয়া সাগরের উপরিভাগে পশ্চিমদিকে মহাবেগে ভ্রমণ করিতে লাগিল। অনন্তর কাক একান্ত পরিশ্রান্ত হইয়া সেই অগাধ সমুদ্রমধ্যে দ্বীপ ও বৃক্ষসকল নিরীক্ষণ না করিয়া ভীত ও মোহে নিতান্ত অভিভূত হইল এবং কোথায় অবস্থানপূর্ব্বক শ্রান্তি দূর করিবে, বারংবার ইহাই চিন্তা করিতে লাগিল। হে কর্ণ! মহাসাগর জলজন্তুগণের আকর ও দুঃসহ বেগসম্পন্ন; উহা অসংখ্য মহাসত্ত্বে সমুদ্ভাসিত হইয়া আকাশকেও পরাভূত করিয়াছে। গাম্ভীর্য্যে কেহই উহাকে অতিক্রম করিতে সমর্থ হয় নাই। উহার জলরাশি আকাশের ন্যায় সুদূরবিস্তৃত। সুতরাং সামান্য কাক কিরূপে সেই বহু বিস্তীর্ণ অর্ণব পার হইতে সমর্থ হইবে? অনন্তর হংস বহুদূর অতিক্রম করিয়া মুহূৰ্ত্তকাল সেই কাককে নিরীক্ষণপূর্ব্বক তাহাকে পরিত্যাগপূর্ব্বক গমন করিতে সমর্থ হইয়াও তাহার আগমনকাল প্রতীক্ষা করিতে লাগিল। তখন কাক অতিশয়. পরিশ্রান্ত হইয়া হংসসন্নিধানে আগমন করিল। হংস কাককে হীনগতি ও নিমজ্জনোন্মুখ দেখিয়া সৎপুরুষোচিত ব্রত স্মরণপূর্ব্বক তাহার উদ্ধার নিমিত্ত কহিল,-হে কাক! তুমি শত প্রকার উড্ডয়নের বিষয় বারংবার উল্লেখ করিয়া গোপনীয় বিষয় ব্যক্ত করিয়াছ। তুমি এক্ষণে যেরূপ গতি অবলম্বনপূর্ব্বক উড্ডীন হইতেছ, ইহার নাম কি? তুমি চঞ্চুপুট ও দুই পক্ষদ্বারা বারংবার সলিল স্পর্শ করিতেছ, অতএব বল, এক্ষণে কোন্ গতি আশ্রয় করিয়াছ? হে কাক! আমি তোমার অপেক্ষা করিতেছি, তুমি শীঘ্র আমার নিকট আগমন কর।
‘হে কর্ণ! তখন সেই দুষ্টস্বভাব বায়স সাগরের পার নিরীক্ষণ না করিয়া একান্ত শ্রান্ত, বায়ুবেগে মথিত ও নিমজ্জনোন্মুখ হইয়া আৰ্ত্তস্বরে হংসকে কহিল,—হে হংস! আমরা কাক; কা কা শব্দ করিয়া ইতস্ততঃ সঞ্চরণ করি। এক্ষণে আমি জীবন সমর্পণপূর্ব্বক তোমার শরণাপন্ন হইতেছি, তুমি আমাকে সমুদ্রপারে লইয়া যাও। বায়স এই বলিয়া সাতিশয় পরিশ্রান্ত ও নিতান্ত কাতর হইয়া দুই পক্ষ ও চপুটদ্বারা সাগরসলিল স্পর্শ করিয়া নীরমধ্যে নিপতিত হইল। তখন হংস বায়সকে সাগরসলিলে নিপতিত দীনমনাঃ ও ম্রিয়মাণ দেখিয়া কহিল,—হে কাক! তুমি আত্মশ্লাঘা করিয়া কহিয়াছিলে যে আমি শত প্রকার উড্ডয়ন প্রদর্শন করিব; এক্ষণে সেই বাক্যটি স্মরণ কর। তুমি শত প্রকারে উড্ডয়নাভিজ্ঞ ও আমা অপেক্ষা সমধিক ক্ষমতাসম্পন্ন; তবে এক্ষণে এইরূপ পরিশ্রান্ত হইয়া কি নিমিত্ত সাগরে নিপতিত হইলে?
কাকের দর্পচুর্ণ-হংস হইতে তদীয় উদ্ধার
তখন কাক একান্ত অবসন্ন হইয়া উপরিভাগে হংসকে অবলোকনপূর্ব্বক প্রসন্ন হইয়া কহিল,—হে হংস! আমি উচ্ছিষ্টভোজনে দর্পিত হইয়া আপনাকে সুবর্ণের ন্যায় জ্ঞান এবং অন্যান্য কাক ও অপরাপর পক্ষিগণকে অবজ্ঞা করিয়াছিলাম। এক্ষণে প্রাণরক্ষাৰ্থ তোমার শরণাপন্ন হইলাম, তুমি আমাকে দ্বীপে লইয়া চল। যদি আমি জীবিতাবস্থায় স্বদেশে যাইতে পারি, তাহা হইলে আর কাহাকেও অপমানিত করিব না। তুমি আমাকে এই বিপদ হইতে উদ্ধার কর। তখন বেগবান্ হংস মহার্ণবে নিপতিত বিচেতনবায়সের কাতরোক্তি শ্রবণে করুণাহইয়া পদদ্বারা তাহাকে বেগে উৎক্ষেপণ ও আপনার পৃষ্ঠে সংস্থাপনপূর্ব্বক পূর্ব্বে যে দ্বীপ হইতে স্পর্ধা সহকারে উড্ডীন হইয়াছিল, তথায় পুনরায় উত্তীর্ণ হইল এবং কাককে আশ্বাসিত করিয়া স্বীয় অভিলষিত স্থানে প্রস্থান করিল।
যুদ্ধদৌর্ব্বল্য উল্লেখে কর্ণের প্রতি শল্যকটুক্তি
‘হে কর্ণ। এইরূপে সেই উচ্ছিষ্টান্নপরিপোষিত বায়স হংসকর্ত্তৃক পরাজিত হইয়া স্বীয় বলবীৰ্য্য পরিত্যাগপূর্ব্বক ক্ষমাগুণ অবলম্বন করিল। তুমিও সেই উচ্ছিষ্টভোজী কাকের ন্যায় নিঃসন্দেহ দুৰ্য্যোধন-উচ্ছিষ্টান্নে প্রতিপালিত হইয়া কি প্রধান, কি তুল্য, সকলকেই অবজ্ঞা করিতেছ। হে সূতপুত্র! বিরাটনগরে সংগ্রাম সমুপস্থিত হইলে, সিংহ যেমন অনায়াসে শৃগালদিগকে পরাজিত করে, তদ্রূপ অর্জ্জুন তোমাদিগকে পরাজয় করিয়াছিল। সে সময় তুমি, দ্রোণ, অশ্বত্থামা, কৃপ, ভীষ্ম ও অন্যান্য কৌরবগণকর্ত্তৃক রক্ষিত হইয়াও কি নিমিত্ত তাহাকে বিনাশ করিতে সমর্থ হও নাই? তৎকালে তোমার বলবিক্রম কোথায় ছিল? সব্যসাচী তোমার ভ্রাতাকে নিহত করিলে তুমি সমস্ত কৌরবগণের সমক্ষে সর্ব্বাগ্রে পলায়ন করিয়াছিলে। দ্বৈতবনে গন্ধৰ্ব্বগণ কৌরবগণকে আক্রমণ করিলে তুমিই সমস্ত কৌরবগণকে পরিত্যাগ করিয়া প্রথমে পলায়ন করিয়াছিলে। সেই সময় অর্জ্জুন সংগ্রামে চিত্রসেনপ্রমুখ গন্ধৰ্ব্বগণকে পরাজয়পূর্ব্বক জয়লাভ করিয়া ভাৰ্য্যা-সমবেত দুৰ্য্যোধনকে মুক্ত করিয়াছিল। পরশুরাম রাজসভায় অর্জ্জুন ও বাসুদেবের পূৰ্ব্বপ্রভাব কীৰ্ত্তন করিয়াছেন। ভীষ্মদেব এবং দ্রোণাচাৰ্য্যও সর্ব্বদাই ভূপতিগণসমক্ষে বাসুদেব ও ধনঞ্জয়কে অবধ্য বলিয়া নির্দেশ করিতেন। হে সূতপুত্র! ব্রাহ্মণ যেমন সকল প্রাণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, তদ্রূপ ধনঞ্জয় তোমা অপেক্ষা প্রধান। এক্ষণে তুমি অবিলম্বে সেই একরথারূঢ় বসুদেবাত্মজ কৃষ্ণ ও কুন্তীপুত্র অর্জ্জুনকে দেখিতে পাইবে। অতএব সেই বায়স যেমন বুদ্ধিপূর্ব্বক হংসকে আশ্রয় করিয়াছিল, তদ্রূপ তুমিও সেই বীরদ্বয়কে আশ্রয় করিও।
‘হে কর্ণ! যখন তুমি মহাবলপরাক্রান্ত অর্জ্জুন ও বাসুদেবকে একরথে অবলোকন করিবে, তখন আর এরূপ কথা কহিবে না। যখন পার্থ শত শত বার তোমার দর্পচূর্ণ করিবেন, তখন তুমি তাহার ও তোমার যে কি বৈলক্ষণ্য, তাহা অবগত হইবে; তুমি অবজ্ঞাপযুক্তই দেব, অসুর ও মনুষ্যগণের মধ্যে প্রসিদ্ধ নরোত্তম বাসুদেব ও ধনঞ্জয়কে অশ্রদ্ধা করিতেছ। হে মূঢ়! এক্ষণে তুমি আপনাকে খদ্যোতস্বরূপ এবং অর্জ্জুন ও বাসুদেবকে সূৰ্য্য ও চন্দ্রস্বরূপ বিবেচনা করিয়া নিরস্ত হও। আর তাহাদিগকে অবজ্ঞা বা আত্মশ্লাঘা করিও না।”