সময়টা না শীত না গ্রীষ্ম, শরতের বলা যায়,
সুনীল সানাই বাজে শ্বেতপদ্ম হয়ে আকাশে আকাশে।
‘এ জায়গায় শান্তি ফুটে আছে, ভেজা ঘাস, কাল
রাতে কিছু বৃষ্টি হয়েছিলো হয়তো’, ব’লে
তিনি তাকালেন দূরে পাহাড়ি টিলার দিকে দুটি
অত্যন্ত প্রসন্ন চোখে? আকন্দগাছের পাতা থেকে ফোঁটা ফোঁটা
পানি ঝরে, যেন
আনন্দের বিন্দু কিছু। মনে পড়ে তাঁর অতিদূর শৈশবের
সর্ষেখেত, মাঠে ছুটে-বেড়ানো একটি
সফেদ বাছুর, বেতফল খেতে খেতে ঘরে ফেরা
সন্ধেবেলা, ডুমুর পাতায়
জ্যোৎস্নালতা পাকা ধান খেতে-আসা বালি-হাঁসের সাঁতার।
শিকারে এসেছিলেন, আপাতত ভৃত্যের সস্নেহ হেফাজতে
বন্দুক বিশ্রামরত। পাখিদের বুক
কার্তুজে রক্তাক্ত করবার
বদলে বরং
ওদের পাখার রঙ , ময়ূরের পেখমের মতো
আসমানে ওড়াউড়ি ভালো লাগে তাঁর। অকস্মাৎ
খরগোশের দৌড় ঝোপ থেকে ঝোপান্তরে, ‘থাক থাক,
বেঁচে থাক,’ ব’লে নিসর্গের কাছ থেকে বুকভরা
শান্তিও কল্যাণ ধার ক’রে
উঠলেন তিনি
ঘাতক-বুলেট-প্রুফ ক্যাডিলাকে, পদ্যের কুসুম
ঝাঁকে আসে তার ঠোঁটে, দ্যাখেন দু’চোখ ভ’রে শত কু’ড়েঘর।
সান্ত্রীঘেরা সুরম্য ভবনে ফিরে এসে ঠান্ডা ঘরে
সোফায় সোপর্দ ক’রে নিজেকে ভাবেন
আকাশ পাতাল, টেলিফোন
বাজে ঘন ঘন, কেউ কেউ কেতাদুরস্ত ভঙ্গিতে
প্রবেশ করেন ঘরে, চলে আলোচনা গুরুত্বের খাপে মোড়া
নানা খাতে। কানে কানে মন্ত্র তন্ত্র ষড়যন্ত্র, কান্তিমান চোয়ালটা তার
ক্রমে শক্ত হয়ে ওঠে, চোখে
ফোটে রক্তজবা, নিসর্গের কাছ থেকে বর্জ-ক’রে আনা
শান্তি ও কল্যাণ খ’সে যায়,
যেমন দেয়াল থেকে জীর্ণ পলেস্তারা। গর্জমান কণ্ঠস্বর,
কাকে কাকে করবেন বরখাস্ত, পাঠাবেন দূর বনবাসে,
ক’জনকে পুরবেন কয়েদখানায়
তালিকা প্রস্তুত
করেন অলক্ষ্যে, হাতে উঠে আসে চকচকে নলের বন্দুক
যা তিনি একটু আগে করেন নি ব্যবহার পাখির বিরুদ্ধে।।