মানুষ অধিককাল বরাদ্দ জায়গায়
থাকতে পারে না বসে নিত্য এক ঠায়
পিতলের মূর্তির মতোন।
পরিণামে গড়ানে পাথর হয়, জমে না সঞ্চয়
শ্যাওলার; মাঠ নদী বন উপবন
পেরিয়ে সর্বদা তার শুধু মনে হয়
কোথাও যায়নি যেন, কুচকাওয়াজের ভঙ্গিমায়
রয়ে গেছে একই বৃত্তে; দুঃখ তাকে নিজের দিকেই নিয়ে যায়।
কখনো দূরত্ব ডাকে বন্ধুর ভঙ্গিতে;
ব্যাকুলতা বয়
শিরায় শিরায়, গৃহত্যাগ অবিরাম
ফিস্ ফিস্ করে কানে, নিজেরই আলয়
মরুর দোসর হয়ে ওঠে, ফণিমনসার নাম
জপে আসবাবপত্র। কোন্ মরুদ্যান
দেয় হাতছানি, জাগে দূরে বিরল পাখির গান।
অস্থিরতা ব্যেপে এলে অসময়ে থাকে না কিছুই
করবার, স্বপ্নে ভাসে বিদেশ বিভুই
বারবার শিকড়ের টানে
চোখ ছলছল করলেও, মায়ের দুধের স্মৃতি সারাক্ষণ
অন্তর্গত জাতিস্মর শিশুর সত্তার বিয়াবানে
জাগলেও, দেহমন খিদে তেষ্টা ভুলে নির্বাসন
চর্চা করে ঘুমে জাগরণে। স্তব্ধতার
বাহুতে হেলান দিয়ে কেউ কেউ করে পান কালের আঁধার।
আমিও কেবলি জায়গা বদল করতে থাকি, বড়
কষ্ট পাই, দুঃখ জড়ো
হয় ক্রমাগত; একি মানুষের মুদ্রাদোষ, এই ঘরবাড়ি
বদলের গ্লেসিয়ার-স্পৃহা, নাকি
কবিরই স্বভাব এই? অনেক মিলন আর শত ছাড়াছাড়ি
কষ্টের আড়ালে রেখে ডাকি
ভুল করে মনোনীত কাউকএ; অস্থায়ী অন্তরায়
বেজে উঠে পায়ের ওপর দিয়ে নদী বয়ে যায়।
এখন একথা সোজাসুজি
বলে দেয়া ভালো, নিত্য এই খোঁজাখুজি,
ঘোরাঘুরি কখনো সরল পথে কখনো বিপথে, বাঁকা চোরা,
হয়েছে অনেক; একে ঠিক পর্যটন
বলবে কি কায়ক্লেশে কাতর পথিক? এই অন্তহীন ঘোরা
প্রকৃত ভ্রমণ নয়; ভ্রমণের মতো কিছু ভঙ্গী আমরণ
থেকে যাবে স্মৃতিতে আমার। ভাবি, নিয়ত দুঃখের দীর্ঘ খাল
সেচে যদি থিতু হয়ে বসে থাকা যেত কিছুকাল।