কী আশ্চর্য, দু’মাসও হয় নি
অথচ আবার তুমি হঠাৎ হাজির হ’লে ফ্ল্যাট-বাড়িটায়
আমার শোবার ঘরে। তোমার কি আসলে সময়জ্ঞান ব’লে
কিছু নেই? কেন তুমি এমন বাগড়া দিচ্ছো আমার কবিতা
লেখায়? এভাবে দরজায়
দাঁড়িয়ে থাকলে রক্ত-হিম-করা দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে,
কেউ কি বিপুল রহস্যের ঝাঁপিময়
হিস্হিস্ শব্দ নিয়ে সাপুড়ের মতো
খেলায় থাকতে পারে মেতে? ব্যর্থ ভেঁপু খেলা শেষ
হয় নি এখনো, বারবার
তোমার দিকেই দৃষ্টি নিবব্ধ আমার। একদিন
একথা নিশ্চিত জানি, তোমার সঙ্গেই যেতে হবে
ভ্রমণে, তাব’লে আজই এই মধ্যরাতে
হানা দিতে হবে ঘরে আগে ভাগে এত্তেলা না দিয়ে?
দেখছো তো জ্যোৎস্না ফ্ল্যাট-বাড়িটাকে স্নান
করাচ্ছে সস্নেহে, যেন প্রিয় সখী কনের শরীরে প্রীতিবশে
গায়ে হলুদের দিনে ঢেলে দেয় পানি, দ্যাখো দ্যাখো,
প্রতিবেশী ছাদে
কী ডাগর ফুটে আছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, ঐ তো
কিছুদূরে যে-আছে দাঁড়িয়ে ভোরবেলা যাকে গাছে ব’লে জানি,
এখন সে কুয়াশা ও জ্যোৎস্নার মিশ্রণে অপরূপ ব্যালেরিনা
এবং পাশের ঘরে আমার কনিষ্ঠা কন্যা ঘুমিয়ে রয়েছে,
কাল ভোরে ওর সঙ্গে কিছু
কথা বলবার আছে, প্রতিদিন সকালে চায়ের
পেয়ালার স্মৃতি ধরনে
নিরিবিলি সানন্দ চুমুক দিই, পৃথিবীতে আবীর ছড়িয়ে
পড়ার এখনো ঢের দেরি আছে। যাও,
তুমি ফিরে যাও; দেখছো তো আমার কবিতা
আধ-গড়া প্রতিমার মতো প’ড়ে আছে, বাকি আছে
এখনো অনেক কিছু। নিজের মনের মতো ক’রে
আজ অব্দি সাজানো হলো না
কিছুই; সমুদ্রে গিয়ে জলপরীদের ঠোঁট থেকে
মুক্তো আনবার কথা ছিলো,
কথা ছিলো চেনা পাকদন্ডি থেকে দূরে বহুদূরে
সম্পূর্ণ নতুন পথ কেটে
এগিয়ে যাবার, না, না কিছুই হলো না।
শোনো হে তোমার যাবতীয়
ব্যাপার-স্যাপার, সত্যি বলতে কী, বেখাম্পা ভীষণ।
তোমার নীরক্ত ঠোঁটে হাসি
ফোটে না কখনো
এবং যমজ পাথরের মতো চোখ
ভুলেও করেছে ছলছল কোনোদিন
কোনো দৃশ্য দেখে সূর্যাস্তে কি সূর্যোদয়ে,
একথা শোনে নি কেউ কস্মিনকালেও।
যদি ইচ্ছে হয় কিছুক্ষণ এই ঘরে কোনো এক খেলা খেলে
সময় কাটাতে পারো। বার্গম্যান, মনে পড়ে, তাঁর
একটি ছবিতে
তোমার এবং একজন নাইটের মধ্যে দাবা
প্রতিযোগিতার আয়োজন ক’রে
চমকে দিয়েছিলেন; কিন্তু আমি, হায়,
দাবার তুখোড় চাল দিতে কিংবা তাস
পিটতে শিখি নি, এসো শব্দ শব্দ খেলা খেলে
আজকের মতো ফিরে যাও,
পরে, আরো পরে কোনোদিন কুয়াশা ও মেঘে মিশে সঙ্গী হবো
ভ্রমণে তোমার।