তোমরা কি এখনও দেখতে পাচ্ছ না
তোমাদের মুখ? পাঁচ বছরে কী কদাকার আর বীভৎস
হয়ে উঠেছে তোমাদের মুখ,
তা কি চোখে পড়ছে না এখনও?
এত অন্ধ তোমরা যে
নিজেদের কদর্যতা, হিংস্রতা, স্বেচ্ছাচারিতা,
নগ্ন বর্বরতা-সব কিছুই এখনও
পরম মোহনীয় ঠেকছে!
মানুষের ভোটাধিকার তোমরা
কেড়ে নিয়েছ, তামাশা বানিয়েছ
গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে।
তোমাদের নির্লজ্জ জালিয়াতি
সংসদকে রূপান্তরিত করেছে
সার্কাসের তাঁবুতে, যেখানে
নকল, গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লদের
ভাঁড়ামো, জনতার হুঙ্কারে
মসনদ টলোমলো, অথচ প্রতারণা এবং
ধোঁকাবাজিতে দখল-করা সিংহাসন
আঁকড়ে থাকার কী লকলকে লালসা
তোমাদের মুখে ঝুলে রয়েছে।
তোমরা তোমাদের শিকারি কুকুরদের
ছেড়ে দিয়েছ নিরস্ত্র মানুষের
কণ্ঠনালী ছিঁড়ে ফেলার জন্যে।
তোমরা হত্যা করেছ কৃষকদের
ছাত্র আর রাজনৈতিক কর্মীদের,
তোমরা জেলখানায় পুরেছ প্রতিবাদী মানুষকে।
তোমরা তখন লাঠির আঘাতে ভূলুণ্ঠিত করেছ মতিয়া চৌধুরীকে, তখন
বাংলাদেশ প্রমিথিউসের চোখের মতো
ঝরিয়েছে আগুন।
তোমরা লাল শাপলার ফুল, দোয়েল,
কোকিল আর কৃষ্ণচূড়াকে পদদলিত করেছ,
কবিতরদের টুকরো টুকরো করে
ফেলে দিয়েছ আবর্জনার স্তূপে,
কবির হৃদয়কে করেছে রক্তাক্ত, তোমাদের
তাণ্ডবে শান্তি গা ঢাকা দিয়েছে
ভূতলবাসী রাজনীতিকের মতো,
সুন্দর গ্যাছে নির্বাসনে।
অসুস্থতার কারাগারে বন্দি আমি,
অষ্টপ্রহর রুগ্ন ফুসফুস নিয়ে বিড়ম্বিত।
নিষেধের তর্জনী আমার দিকে উদ্যত,
চিকিৎসকের কড়া বিধান
আমার পায়ে পরিয়েছে বেড়ি
তবু আমি ছুটে যেতে চাই রাজপথে,
যে আমার পদধ্বনি চেনে, সামিল
হতে চাই মিছিলে, জনতার মঞ্চে, যেখানে
মানুষ দৃপ্ত প্রত্যয়ে নজরুলের আগুন-ঝরানো
কবিতার মতো অঙ্গীকারাবদ্ধ আর সঙ্গীতময়।
জনসাধারণ আজ দাবানল এবং
বানের পানির মতো অপ্রতিরোধ্য,
অন্যায় আর অনাচারের নিকট স্তম্ভগুলি
গুঁড়িয়ে ফেলার জন্যে, স্বৈরাচারীদের
বিতাড়নের জন্যে,
ষড়যন্ত্রের ফাঁস ছিন্ন করার উদ্দীপনায়
নতুন পথের মোড়ে দাঁড়িয়ে
পেশী সঞ্চারিত করছে, মুঠো ভরে তুলে নিচ্ছে সূর্য কণায়।