জাহাজডুবির পর

অকস্মাৎ বজপাত; বুকে লগ্ন তক্তা, ভাসমান;
ধুধু আসমান, ক্লান্ত দেহমন, কোথায়্য সৈকত?
ঢেউগুলি সর্পফণা; নিজ নাম অর্থহীন, কেউ
ডাকলেও পারবো না দিতে সাড়া। এখনও যে কোনো
হাঙর নেয়নি কেটে পা আমার, করেনি সাবাড়
অন্য কোনো জলচর প্রাণী, এ এক বিস্ময় ঝলমলে।

জালের সুতোর মতো কিছু স্মৃতি ঝুলে আছে, হাড়ে
তিন মাথা-অলা কুকুরের দন্তশলাকার ক্রমে
ভীষণ প্রবিষ্ট; মনে হয়, এক্ষুণি দু’হাত তক্তা
থেকে খ’সে যাবে আর পাতালের কবর হবে সেই
করুণ নাবিকদের মতো। রকমারি অছিলায়
নিজেকে জাগিয়ে রাখি, বার বার খুঁজি তীরভূমি।

জীবনের চেয়ে বেশি মৃত্যুর দিকেই যাচ্ছি ভেসে
একা, দ্রুত; আমার ব্যাকুল ডাক বুদ্বুদের মতো।
সঙ্গীদের আর্তনাদ মনে পড়লেই নিঃসঙ্গতা
অধিক দাঁতাল হ’য়ে ওঠে; হীনবল দুটো হাত
মর্চে-পড়া তরবারি, চোখে-মুখে লবণাক্ত ঝাপ্টা,
মাঝে-মাঝে ফেলে-আসা শহরের আলোর তামাশা।

গোধূলিবেলায় যদি প্রায়-মৃত ভেসে উঠি তীরে,
আবার বানাতে হবে জলযান বন থেকে কাঠ
কেটে এনে; কায়ক্লেশ সইবো সব স্মিত মুখে আর
খাটাবো স্পর্ধিত পাল পুনরায়। অভিযানে মেতে
তরঙ্গে সওয়ার হ’য়ে বাজাবো নিজস্ব দিলরুবা;
জীবন রেখেছি জমা সুরের গভীর মর্মমূলে।
২০।৯।৯০