আমি তো তুখোড় কোনো জকি নই, অথবা সহিসও নই, তবু
কমলা রঙের ঘোড়া কেশরের গৌরব দুলিয়ে
আমার চাদ্দিকে ঘোরে দুলকি চালে, কখনো হঠাৎ
কোথায় যে চলে যায়, বোঝা দায়। পুনরায় আমার নিকটে
ছুটে আসে স্বেদসিক্ত শরীরের এবং গ্রীবা কবিতার পঙ্ক্তির মতন
সমুখে বাড়িয়ে দেয় আদর কুড়াতে।
সে কবে কোত্থেকে এই কলা রঙের দীপ্র ঘোড়া এসেছিল
আমার নিকটে, বলা মুশকিল। এসেছিল, বলা যেতে পারে,
পথ ভুলে গোধূলিতে দুলে দুলে, যেন মেঘ। তারপর আস্তাবলহীন
কাটিয়েছে বহু দিনরাত্রি খোলা আকাশের নিচে, নক্ষত্রের
স্পন্দন করেছে অনুভব চোখে, পেশির ভেতরে, স্তরে স্তরে।
আমাকে যায়নি ছেড়ে কোনো দিন কমলা রঙের এই ঘোড়া।
রৌদ্রে তাকে নিয়ে যাই প্রতিদিন, কখনো নিজেই যায় আর
গড়ায় দবিজ ঘাসে, খুশি ঝরে সত্তা থেকে, বুঝি
সবুজের স্পর্শে তার ঘরে রূপান্তর-তখন সে ঘোড়া নয়,
নিঃসঙ্গ দেবতা কোনো, স্বর্গচ্যুত ক্রীড়াপরায়ণ।
রাত্তিরে বাজিয়ে ব্যাঞ্জো কাছে ডাকি তাকে, নিরিবিলি
সে আসে, ঘুমায়, স্বপ্ন দ্যাখে অভ্রময় গূঢ় শিল্পিত ক্ষেতের।
কমলা রঙের ঘোড়া নর্তকের মতো ভঙ্গিতে কখনো ঘোরে
আশেপাশে, অকস্মাৎ দেয় লাফ, কম্পমান প্রোজ্জ্বল কেশর
অমরত্ব চায়, তার গ্রীবা চায় শারদ ভোরের
নীলিমার মতো শান্তি, চক্ষুদ্বয় বহুদূরে ফেলে-আসা কোনো
উপত্যকা, ঝকঝকে, সঙ্গীত-স্পন্দিত। তার খুর মানবিক
সাঁকো চায়, চায় সাম্য-ঘেরা পূর্ণ গোলাপ বাগান আর স্বপ্নের প্রান্তর।
আমার আপন ঘোড়া-এতদিনে আমারই তো বলা যায়, নাকি
এমন একটি ঘোড়া কারো কখনো হওয়ার নয়?
কমলা রঙের ঘোড়া মাঝে-মধ্যে কবিতার পায়ের কাছেই
মাথা রাখে, যেন মৃত্যুহীন স্বপ্নে মগ্ন। অকস্মাৎ
কখনো ভীতির ফণা দেখে প্রশ্ন করি নিজেকেই-
কমলা রঙের ঘোড়া আমার নিকট থাকবে কি চিরদিন?