কী-যে হয়, এই
আমার মতোন ঘরকুনো লোকটাও একদিন
বলা-কওয়া সেই ঘরবাড়ি ছেড়ে ছুড়ে
হঠাৎ পালিয়ে এল এই এলাকায়,
যেখানে কোথাও জনমানবের সাড়া নেই। গলা
ফাটিয়ে ডাকাও নিরর্থক। চতুদিকে গাছপালা
রয়েছে গৌরবে মাথা তুলে আর কাছে একটি সরোবরে
প্রফুল্ল সাঁতার কাটে ক’টি রাজহাঁস।
বেলা বাড়ে, ফলমূল, খেয়ে
মেটাই সুতীক্ষ্ম ক্ষুধা; ডালপাতা দিয়ে আস্তে সুস্থে
বানাই বিনীত ডেরা মাথা গোঁজার এবং শ্রমে
অবসন্ন ভুলে থাকি; আশেপাশে আছে
কি নেই নেকড়ে বাঘ, সাপ খোপ। শুধু মনে পড়ে,
বিরক্তির হুলে জর্জরিত আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি।
গোড়ায় ভালোই লেগেছিল এ বাড়িতে বসবাস,
ভেবেছি নিজেকে সুখী, অথচ ক্রমেই
পূর্ণিমাকে করে গ্রাস অমাবস্যা। মাস না ফুরাতে
ভাড়ারে নাছোড় টান, ধারদেনা শুরু,
ঘিনঘিনে কাদা যেন নিত্য নৈমিত্তিক খিটিমিটি,
উপরন্তু অবিরাম সভাসমিতির
ঠেলাঠেলি, চ্যাঁচামেচি। ফলে সংসারের মুখে থুথু
ছিটিয়ে পালিয়ে আসি নিঃসর্গের শান্তিনিকেতনে।
এখানে হরিণ আসে ভোরবেলা কিংবা জ্যোস্নারাতে
কাঠবিড়ালিরা খেলা করে ডালে ডালে
এবং পাখির গানে গানে বিমোহিত
দিকগুলি। নিশীথের আরণ্যক নিদ্রায় স্বপ্নের
ভেতরে আমার ঘরবাড়ি
চকিতে পাতাল থেকে জেগে ওঠে ফের
মানবিক কণ্ঠস্বর নিয়ে। আমার চায়ের বাটি
দেখছি প্রবালে তৈরি, জ্বলজ্বলে হীরে দিয়ে গড়া
লেখার টেবিল, সংসারের খিটিমিটি
শ্রী চৌরাসিয়ার বংশীধ্বনি, টেলিফোনে ভেসে আসে
ভেনাসের কণ্ঠসুর; জেগে উঠে স্বপ্নকে আদর করি খুব।
ভোরবেলা জনহীন নিসর্গের রূপে কিছুক্ষণ
মগ্ন থেকে অনন্তর পথ চলি, থেমে
তাকাই পিছন ফিরে, ফের হেঁটে যাই, বেলাবেলি
পুনরায় বাজাব কলিংবেল আপন ভুবনে।