॥ ৯১ ॥
হেমকান্ত একটু সামলে উঠেছেন বটে, তবু দিনরাত কৃষ্ণকান্তর কথাই চিন্তা করেন। সংসারের আর সব কিছুই গৌণ হয়ে গেছে। দিন পনেরো কুড়ির মধ্যেই ছেলেমেয়েরা যে যার জায়গায় ফিরে গেল। বাড়িতে মাত্র দু’টি প্রাণী। হেমকান্ত আর বিশাখা। রঙ্গময়ী ঠিক আগের মতোই স্বাভাবিক আসে যায়। তবে তার মুখে ইদানীং একটু কাঠিন্য দেখা যায়। বেশী হাসে না।
একদিন রঙ্গময়ী বেশ চোখা গলায় বলল, দিনরাত বসে বসে ভাবলেই হবে? মেয়ের বিয়ের চিন্তাটা করবে কে? পাড়ার লোক?
হেমকান্তর কানে কথাটা ঢুকল, কিন্তু মগজে কোনো ছাপ ফেলল না। সম্পূর্ণ অন্যমনস্ক চোখে চেয়ে বললেন, কার বিয়ে? কী ভাবব?
এই মানুষকে নিয়ে কী যে করি!
হেমকান্ত মৃদু একটু হাসলেন। বললেন, এই মানুষটা যে অপদার্থ তা তো বহুকাল ধরে জানো। নতুন করে চিনলে নাকি?
অপদার্থ একবারও ভাবি না।
তুমি না ভাবলেও লোকে ভাবে।
কেউ ভাবে না। শুধু বলতে এসেছিলাম ভাবন কাজী হয়ে বসে থাকলে তো চলবে না। বিশাখার বিয়ের কথাটা একটু মনে রেখো।
ও তুমি মনে রাখো গে। আমার ওসব নিয়ে ভাববার মতো মনের অবস্থা নয়।
আচ্ছা লোক, তুমি বাপ না! আমি ভাবলে কী হবে? আর শুধু ভাবলেই তো চলবে না, উদ্যোগ নিতে হবে।
ক’টা দিন থাক মনু। হেমকান্ত কাতর স্বরে বললেন।
দিন আর কত যাবে বলো তো! বিশাখার কত বয়স হল হিসেব আছে?
হেমকান্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে রইলেন।
রঙ্গময়ী চাপা স্বরে বলে, আর শুধু তাই-ই তো নয়, দেবা-দেবীর মুখ তো দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে তোমার এই উদাস ভাব দেখে। তুমি তো কোনোদিকে তাকাও না, কিছু লক্ষও করো না।
বিশাখা আর শচীনের কথা বলছ নাকি?
তাছাড়া আবার কে?
হেমকান্ত আর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, বিয়েটা দেওয়া তাহলে দরকার বলছো!
দরকার। খুব তাড়াতাড়িই দরকার।
সে বিয়েতে কৃষ্ণকান্ত তো থাকবে না মনু।
কৃষ্ণর কথা কেন ভাবছো বলো তো! বাপ হয়েছো বলেই কি তার ওপর তোমার ষোলো আনা অধিকার? তাকে দেশের দরকার নেই, মানুষের দরকার নেই? ছেলে বুকে আগলে বসে থাকাটাই কি রীতি?
তা বলিনি। হেমকান্ত বিষাদমাখা মুখে বললেন, বলছিলাম যে, বিশাখাকে তো বড় ভালবাসে। ছোড়দির বিয়েতে সে থাকবে না।
ওসব মেয়েলি ভাবনা তোমাকে মানায় না। কৃষ্ণ যেমন সত্যিকারের পুরুষ তার বাপ হিসেবে তোমারও কিছু পৌরুষ দেখানো দরকার।
তুমি বড্ড ক্যাট ক্যাট করে কথা শোনাও মনু।
তা শোনাই। আমার কপালই যে অমন। নইলে তোমার কানে কথা ঢুকবে কেন? কৃষ্ণর কথা সারা শহরের লোক ভাবছে। সারা দেশ ভাবছে।
ভাবছে?
বিশ্বাস হচ্ছে না?
কি জানি! বলে হেমকান্ত চুপ করে গেলেন।
কিন্তু সারা দেশ না হোক, কৃষ্ণর নাম যে রাজনৈতিক মহলে পৌঁছে গেছে তার প্রমাণ পেতে হেমকান্তর বিশেষ দেরী হল না।
একদিন সকালবেলা কয়েকজন অচেনা লোক দেখা করতে এল।
খবর পেয়ে হেমকান্ত বৈঠকখানায় গিয়ে দেখেন, ধুতি এবং পাঞ্জাবি পরা বিশিষ্ট চেহারার কয়েকজন মানুষ। যুবক, মধ্যবয়স্ক দুরকমই আছে। মধ্যবয়স্কদের একজন বেশ ফর্সা, মুখে আভিজাত্যের ছাপ। হাতজোড় করে বললেন, আমার নাম সোমক দাশগুপ্ত। আপনার সঙ্গে একটু দেখা করতে এলাম।
সোমক দাশগুপ্ত নামটা চেনা মনে হল না হেমকান্তর। প্রতিনমস্কার করে বললেন, লক্ষ করে দেখলেন আগন্তুকদের পরনে খদ্দরের পোশাক। একটু স্বদেশী মার্কা চেহারা।
সোমক বললেন, আমরা কৃষ্ণকান্তর কথা কাগজে পড়েছি।
কাগজে? হেমকান্ত সোজা হয়ে বসে বললেন, কাগজে তার কথা বেরিয়েছে নাকি?
আজকের কাগজেই আছে। বলে একজন ভাঁজ করা-একটা বাংলা খবরের কাগজ এগিয়ে দিল।
ভিতরের পাতায় ছোট্ট একটু খবর লাল পেনসিলে দাগানো। কিশোরগঞ্জের এক গ্রামে এক দল বিপ্লবী পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। দলের কয়েকজন পালিয়ে যায়। তাদের মধ্যে পুলিশ একজনকে চিনতে পেরেছে। জমিদার হেমকান্ত চৌধুরির নিরুদ্দিষ্ট ছেলে কৃষ্ণকান্ত চৌধুরি।
হেমকান্ত আর্তনাদ করে উঠলেন, সর্বনাশ!
সকলে চুপ।
একটু বাদে সোমক বললেন, বাবা হিসেবে আপনার দুশ্চিন্তা স্বাভাবিক। কিন্তু কৃষ্ণকান্ত আমার ছেলে হলে আমি গৌরব বোধ করতাম।
হেমকান্ত অতি কষ্টে নিজেকে সামলে নিলেন। তারপর বললেন, আমার এই ছেলেটির অনেক সম্ভাবনা ছিল। ভারী মেধাবী, সাহসী। ও চলে যাওয়ায় আমার একটা অবলম্বন হারিয়ে গেছে।
সোমক বললেন, জমিদারদের ছেলেরা যেমন হয় আপনার ছেলে তেমন হয়নি। এটা খুব শুভ লক্ষণ। আমার বাবাও জমিদার। যশোরে আমাদের বিষয় সম্পত্তি আছে।
হেমকান্ত চুপ করে লোকটার মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। কথাগুলো ভাল বুঝতে পারছিলেন না। কৃষ্ণ পালিয়েছে। কিন্তু কতদিন পালিয়ে থাকতে পারবে? হয় ধরা পড়ে জেল খাটবে, ফাঁসি হবে, কিংবা গুলি খেয়ে মরবে। অস্থিরতায় মাথাটা নাড়লেন হেমকান্ত। বলে উঠলেন, নাঃ।
সকলে তাকে নিবিষ্ট চোখে দেখছিল। হেমকান্ত সচেতন হয়ে লজ্জা বোধ করেন। শ্বাস ছাড়তে গিয়ে টের পেলেন, শ্বাসের বাতাসটা কেঁপে গেল।
সোমক বললেন, আমরা কংগ্রেস করি। তবে টেররিস্ট দলের নই। সেই ব্যাপারেই আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলার ছিল।
আমি রাজনীতির কিছুই বুঝি না। আমাকে বলে কী লাভ?
যদি কখনো কৃষ্ণকান্ত আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাহলে আমাদের কথা আপনি যদি দয়া করে বলেন তাহলে খুব উপকার হবে।
আমার সঙ্গে সে কি যোগাযোগ করবে বলে আপনাদের ধারণা?
শুনেছি সে অত্যন্ত পিতৃভক্ত।
হেমকান্তর বুকটা দুলে উঠল গর্বে, আনন্দে, অহংকারে। কিছু বলার মতো খুঁজে পেলেন না।
সোমক বললেন, টেররিস্ট দলে একবার ঢুকলে অবশ্য বেরিয়ে আসা মুশকিল। তবু কৃষ্ণ হয়তো পারবে। তার নামে অন্তত মাডার চার্জ নেই।
নেই? হেমকান্ত খুব উদ্গ্রীব হয়ে প্রশ্ন করলেন।
না। থাকলে আমরা খবর পেতাম।
কী বলতে হবে কৃষ্ণকে?
সে যেন মহাত্মাজীর সঙ্গে গিয়ে একবার দেখা করে।
হেমকান্ত চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, মহাত্মাজী কি ওর কথা জানেন?
আমরা তাঁকে জানাবো।
কেন জানাবেন?
কৃষ্ণ খুব ব্রাইট ছেলে। কিন্তু পথটা ঠিক নয়। ও পথে গিয়ে লাভ নেই।
হেমকান্ত একটু অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন, তাহলে কী বলব তাকে? পুলিশের কাছে ধরা দিতে?
সোমক হাসলেন। বললেন, সেটা মহাত্মাজী স্থির করবেন।
হেমকান্ত মাথা নেড়ে বললেন, উনি মস্ত মানুষ। ওঁকে এইসব ছোটোখাটো ব্যাপার নিয়ে বিরক্ত করবেন কেন?
উনি বিরক্ত হবেন না।
হেমকান্তর এ প্রস্তাব পছন্দ হল না। কৃষ্ণ টেররিস্টদের দলে ঢুকেছে, খুন করেছে, ফেরারী হয়ে ঘুরছে। অর্থাৎ চিহ্ণিত, দাগী। সে এখন মহাত্মাজীর শরণ নিলেও পুলিশ তাকে ছাড়বে না। খুন প্রমাণ না হলেও ছাড়বে না। অন্তত জেলে পুরবেই। তার চেয়ে বরং পালিয়ে থাকা ভাল।
হেমকান্ত বিরস মুখে বললেন, সে যদি আসে তখন দেখা যাবে। এখন কিছুই বলে কোনো লাভ নেই।
আমাদের বিশ্বাস, আজ হোক কাল হোক, সে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবেই।
লোকগুলো চলে গেলে হেমকান্ত হাঁফ ছাড়লেন। চিন্তা অবশ্য তাঁর আরো বাড়ল। ঘরে এসে খবরের কাগজ খুলে বসলেন। আজকাল খবরের কাগজ বড় একটা পড়েন না। খবরটা বেশ কয়েকবার পড়লেন। তারপর একজন চাকরকে ডেকে বললেন, মনুকে খবর দে।
রঙ্গময়ী আসতেই বললেন, খবর জানো?
কিসের খবর?
এই যে।
রঙ্গময়ী খবরটা পড়ে একটু সাদা হয়ে গেল। বলল, কারা এসেছিল তোমার সঙ্গে দেখা করতে?
কংগ্রেসের লোকেরা।
কি বলল?
তারাই খবরটা দিয়ে গেছে।
ওরা কী চায়?
ওরা চায় কৃষ্ণকে মহাত্মার কাছে নিয়ে যেতে।
মহাত্মা! ও বাবা! সে যে অনেক বড় ব্যাপার।
তাই তো দেখছি।
গিয়ে কি হবে?
আমি জানি না মনু, আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেন? পলিটিকস আমার চেয়ে তুমি ভাল জানো।
রঙ্গময়ী মাথা নেড়ে বলল, না গো, আমি মেয়েমানুষ অত কি বুঝি! তবে কংগ্রেসের মধ্যে এখন বড় গণ্ডগোল।
পলিটিকস মানেই গণ্ডগোল। কৃষ্ণ যে কেন ওর মধ্যে ঢুকতে গেল। বোকা ছেলে।
তুমি কিছু কবুল করোনি তো?
না। চিনিই না কি কবুল করব?
নামগুলো জেনে নিয়েছো?
শুনেছি, তবে মনে নেই। একজনের নাম সোমক দাশগুপ্ত।
রঙ্গময়ী একটা শ্বাস ছেড়ে বলল, জানি।
কিরকম জানো?
নাম শুনেছি।
নেতা নাকি!
নেতাই। তবে বড় কিছু নয়। নামটা শোনা যায় লোকের মুখে।
কি করব বলো তো!
কি আর করবে, কিছু করার নেই।
ওরা বলল, কৃষ্ণ নাকি ঠিক আমার সঙ্গে দেখা করবে। আমার বিশ্বাস হয় না।
আমার হয়।
কৃষ্ণ আসবে?
আসবে। সে তোমাকে ভীষণ ভালবাসে।
হেমকান্ত হতাশ গলায় বলেন, সকলেই ওই কথা বলে, কিন্তু আমি তো কিছু বুঝি না। ভালবাসে তো এরকম একবস্ত্রে একবারও না বলে চলে গেল কেন?
নিমাই যখন সন্ন্যাস নেয় তখন কি শচীমাকে বলে গিয়েছিল? ওরকম নিয়মরীতি কিছু নেই গো।
হেমকান্ত চুপ করে রইলেন। হাতে খবরের কাগজ। মনে দুশ্চিন্তা।
রঙ্গময়ী বলল, কতবার বলতে হবে যে, কৃষ্ণর জন্য চিন্তা করার কিছু নেই। ভগবান আছেন, তিনি দেখবেন।
হেমকান্ত মাথা নেড়ে বললেন, তোমার মতো ঈশ্বরবিশ্বাসটা আমার পাকা নয়।
তোমার কোনো বিশ্বাসই পাকা নয়।
হেমকান্ত একটু হাসলেন, বললেন, শুধু তোমার ওপর বিশ্বাসটাই খুব পাকাপোক্ত, তাই না?
রঙ্গময়ীও একটু হাসে। তারপর বলে, বিশাখার বিয়ে নিয়ে কথাটা কবে এগোবে?
হেমকান্ত বিরক্ত হলেন। তবে বিরক্তি প্রকাশ না করে শান্ত স্বরে বললেন, ওরা খুব অস্থির হয়ে পড়েছে, না?
না। ওরা অবিবেচক নয়। এ অবস্থায় যে তোমার পক্ষে বিয়ে নিয়ে চিন্তা করা মুশকিল তা ওরা জানে। বিশাখা তো ভাইয়ের জন্য প্রায়ই কাঁদে।
আমি ভাবছিলাম ক’টা দিন গেলে আমার মানসিক অবস্থাটা একটু স্বাভাবিক হত।
রঙ্গময়ী মাথা নেড়ে বলে, সেটা হবে না। তোমার মনকে আমি চিনি। যত দিন যাবে তত বেশী করে ভাববে, দুশ্চিন্তাও বাড়বে। তার চেয়ে বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাতে থাকো, কোমর বেঁধে কাজে নামো, তাতে খানিকটা ভাল থাকবে। দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেয় কাজ।
বলছো?
বলছি।
তাহলে বোধহয় সেটাই করা ঠিক হবে।
তাহলে বাবাকে দিন স্থির করতে বলি?
বলো।
একটা কথা।
আবার কী?
কৃষ্ণ তার ছোড়দির বিয়ের খবর যদি পায় তাহলে হয়তো এসে পড়তেও পারে।
হেমকান্তর চোখ উজ্জ্বল হল, আসতে পারে?
হ্যাঁ। তার কারণ বিয়ে বাড়ির হট্টগোলের মধ্যেই তার পক্ষে আসা সম্ভব। অন্য কোনো সময়ে আসা সম্ভব নয়।
কেন বলো তো!
তুমি কি কিছু টের পাও না?
কী টের পাবো?
কৃষ্ণর কথা জেনেও পুলিশ তোমার কাছে একবারও কেন আসেনি?
হেমকান্ত অবাক হয়ে বললেন, কেন, আমার কাছে কেন আসবে?
আসাই স্বাভাবিক ছিল। জিজ্ঞাসাবাদ করাটাও তো দরকার। তুমি কিছু জানো কিনা বা তোমার সঙ্গে যোগাযোগ আছে কিনা।
তা বটে।
পুলিশ আসেনি, তার কারণ পুলিশ চব্বিশ ঘন্টা তোমার বাড়ির ওপর নজর রাখছে।
বলো কী?
সত্যি কথাই বলছি।
কই, আমি তো কাউকে লক্ষ করিনি।
তুমি আবার কবে কাকে লক্ষ করো? বাইরে কদম গাছটার তলায় আজকাল একটা ভিখার সারাদিন বসে থাকে। পিছনের আমবাগানে কয়েকটা দারোয়ান খাটিয়া পেতে বসে সারাদিন খেনি ডলে। একটা নতুন বোষ্টম পাড়ায় ভিক্ষে করতে আসছে আজকাল। একটা আধ-ন্যাংটা পাগলকেও দেখবে সন্ধের ঝোঁকে বিড়বিড় করে বকতে বকতে এদিক সেদিক ঘুরঘুর করে বেড়ায়।
ও বাবা, এত আয়োজন!
তাই বলছি, এমনিতে কৃষ্ণর পক্ষে আসা বিপজ্জনক।
বিয়ে বাড়িতে কি নজর রাখবে না বলছো?
রাখবে। নিশ্চয়ই রাখবে। তবে অনেক লোক নিমন্ত্রিত হয়ে আসবে। কাজের লোক থাকবে অনেক। তার মধ্যে নজর রাখা খুব মুশকিল।
হেমকান্ত মাথা নেড়ে বললেন, আমি চাই না বিপদ মাথায় নিয়ে কৃষ্ণ আসুক।
সে বুদ্ধিমান ছেলে। বিপদ বুঝলে আসবে না।
হেমকান্ত হঠাৎ সন্দিহান দৃষ্টিতে রঙ্গময়ীর দিকে চেয়ে বললেন, মনু একটা কথা বলবে?
কি কথা? বলো।
তোমার সঙ্গে কি কৃষ্ণর যোগাযোগ আছে?
রঙ্গময়ী দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়াল। তারপর মৃদুস্বরে বলল, সরাসরি নেই। তবে মাঝে-মধ্যে খবর পাই।
কি খবর পাও?
ভাল আছে। চিন্তা কোরো না।
ভাল বলতে?
ফেরারী অবস্থায় যতটা ভাল থাকা যায়।
যাদের সঙ্গে আছে তারা তো বিপজ্জনক লোক।
হ্যাঁ। তবে কিশোরগঞ্জে দলের প্রায় সবাই ধরা পড়ে গেছে। বিপজ্জনক হলেও তারা কৃষ্ণকে বুকে করে রাখত। তারা ধরা পড়ায় একটু চিন্তার কথা।
হেমকান্ত হাত বাড়িয়ে রঙ্গময়ীর একটা হাত চেপে ধরলেন, মনু, বাপের মুখের দিকে চেয়ে সত্যি কথা বলো।
রঙ্গময়ী বড় বড় চোখদুটো হেমকান্তর চোখে রাখে। তারপর স্ফুরিত অধরে একটু অভিমান প্রকাশ করে বলে, আর আমি ওর মা, একথাটা ভুলে যেও না।
হেমকান্ত তটস্থ হয়ে বললেন, জানি। জানি।
তার জন্য আমারও বুক পোড়ে।
মানছি মনু।
রঙ্গময়ী মাথা নেড়ে বলে, মানলে আমাকে সন্দেহ করতে না।
সন্দেহ! কিসের সন্দেহ?
সন্দেহ যে, আমি কৃষ্ণর খবর জেনেও লুকোই।
লুকোও তো ঠিকই মনু, সব কথা আমাকে তো বলো না।
সেটা লুকোবো বলে নয়। বলি না বলার মতো খবর নয় বলে।
হেমকান্ত রঙ্গময়ীর হাতটা ছাড়লেন না। একটু চেপে ধরে বললেন, বিয়ে বাড়িতে সে আসবে এসব কি ঠিক?
রঙ্গময়ী মাথা নেড়ে বলে, না। আমার সন্দেহ সে আসতে পারে।
সে কোথায় আছে জানো?
না। কি করে জানবো?
হেমকান্ত হতাশায় চোখ বুজলেন। অনেকক্ষণ ঝুম হয়ে বসে থাকার পর উঠলেন, বললেন, ঠিক আছে, ব্যবস্থা করো। বিশাখার বিয়েটাই আগে দিই।
দিন স্থির করা আছে। আমিই দেখে রেখেছি। বাবাকেও দেখিয়ে নেবো।
কবে?
ফাল্গুন। তেরোই। মোটে এক মাস হাতে আছে।