॥ ৮৯ ॥
রামকান্ত রায় খুন হওয়ার পরেই ধরপাকড় শুরু হল। শহরময় একটা হুলস্থুল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় পুলিস একবারও হেমকান্তর বাড়িতে হানা দিল না। অথচ সেটাই ছিল স্বাভাবিক।
হেমকান্ত দুদিন ঘুমোলেন না, খেলেন না। নিজের ঘরে চুপচাপ বসে থাকলেন বেশীর ভাগ সময়। এমন থমথমে মুখ ও গম্ভীর তাঁর চেহারা যে কেউ কাছে বিশেষ ঘেঁষতে সাহস পেল না। রঙ্গময়ী শুধু মাঝে মাঝে এসে চুপ করে বসে থাকে কাছে। তারপর চলে যায়।
তিন দিনের দিন দুপুরবেলা কনক খুব সতর্কভাবে হেমকান্তর কাছে এসে দাঁড়াল। কাঁচুমাচু মুখ। মৃদু স্বরে ডাকল, বাবা!
হেমকান্ত মুখ ফেরালেন, কিছু শীর্ণ দেখাচ্ছিল তাঁকে। চোখের কোল ফোলা, দৃষ্টি ভারী অনিশ্চয়, জবাব দিলেন, বলো।
আপনি এরকমভাবে অন্নজল ত্যাগ করলে যে শরীর ভেঙে পড়বে।
আমি তো ঠিক আছি। শরীর ভালো আছে।
আপনি এরকম নিজেকে গুটিয়ে রাখলে আমরা কার কাছে যাবো? কে আমাদের ভরসা দেবে?
হেমকান্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, তার একটা খবরও তো এখনো পেলাম না কনক!
যা শোনা যাচ্ছে তাতে তো খুব খারাপ কিছু মনে হচ্ছে না।
নতুন কিছু শুনেছো?
রোজই আমি আর জীমূত বেরিয়ে চারদিকে খোঁজ খবর করছি।
কিছু শুনতে পাও?
যা শুনি সেটা একদিক দিয়ে খুবই আনন্দের।
হেমকান্ত টানটান হয়ে বসে বললেন, বলো কী শোনো তোমরা?
সকলের মুখেই এখন কৃষ্ণর নাম।
কৃষ্ণর নাম? কেন?
সবাই জেনে গেছে যে, কৃষ্ণ বিপ্লবীদের দলে চলে গেছে।
আর কিছু শোনো?
রামকান্ত রায়ের হত্যাকারী হিসেবে তার নাম অনেকে বলছে বটে, তবে সেটা গুজব।
গুজব কী করে বুঝলে?
গুজব না হলে এতদিন পুলিস এসে আমাদের বাড়ি তছনছ করত। সবাইকে ধরে নিয়ে যেত।
সে সময় এখনো যায়নি।
আমার মনে হয় পুলিস গুজবটা বিশ্বাস করে না।
হেমকান্ত বিরক্ত হয়ে বলেন, সেটা জানলে কি করে?
থানার অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছি।
তাঁরা কী বলছেন?
কৃষ্ণের নামে কোনো প্রিভিয়াস ক্রিমিন্যাল রেকর্ড নেই। তাছাড়া সে জমিদার এবং ব্রাহ্মণবংশের ছেলে। বয়স নিতান্ত কম। ফলে⋯
তাতে কী? ওটা কোনো অজুহাত হতে পারে না।
পুলিস এসব ফ্যাক্টরকে গুরুত্ব দেয়। তাছাড়া মেথড অফ মার্ডারটাও দেখতে হবে।
কী মেথড?
রামকান্ত রায়কে প্রথমে গুলি করা হয়। অবশ্য গুলিটা লাগে দুপক্ষের লড়াইয়ের সময়।
তারপর?
রামকান্ত পালাচ্ছিলেন উণ্ডেড অবস্থায়। কিছু দূর গিয়ে পড়ে যান। তখন কেউ চপার দিয়ে বাকি কাজটা সারে।
খুব বীভৎস, না?
হ্যাঁ, দেখে মনে হয় খুব ক্রুয়েল কোনো লোক করেছে।
পুলিসের কি ধারণা যে, কৃষ্ণ অত ক্রুয়েল হতে পারে না?
ঠিক তাই। পুলিসের আরো একটা ধারণা আছে।
কী সেটা?
তাদের বিশ্বাস কৃষ্ণ স্বেচ্ছায় স্বদেশীদের দলে চলে যায়নি, তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে।
সত্যিই কি তাই?
তা কি করে বলব? তবে শচীন এ ব্যাপারে হয়তো কিছু একটা বুঝিয়েছে পুলিসকে।
শচীন বুঝিয়েছে! ভারী বুদ্ধিমান ছেলে। পরিস্থিতি যাই হোক সেটাকে অনুকূল করে নিতে জানে। খুব বুদ্ধিমান।
হ্যাঁ। শচীনের ব্যাপারেও আপনার সঙ্গে একটু কথা ছিল।
হেমকান্ত ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা অনুমান করার চেষ্টা করে বললেন, শচীনের কথা পরে বোলো, এখন আমি কৃষ্ণের কথা আরো শুনতে চাই।
কী শুনতে চান বলুন।
পুলিসের ধারণাটা কতদূর স্থায়ী হবে? ওদের ইনফর্মার নেই?
আছে। তবে গতকাল ভূপতি নামে একজন ইনফর্মার খুন হয়েছে।
ভূপতি? চিনি নাকি তাকে?
মেছোবাজারে থাকত।
খুন হল কি করে?
মুক্তাগাছার রাস্তায় তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার কাজই নাকি ছিল ইস্কুলে কলেজে ঘুরে ঘুরে ছেলেদের কাছ থেকে খবর সংগ্রহ করা। বীরু সেনের দল সম্পর্কে সেই পুলিসকে খবর দিয়েছিল।
হেমকান্ত একটু শিউরে উঠলেন। তারপর বললেন, এত খুন এত রক্তপাত কি ভাল হয়েছে বাবা?
আমরাও সেই কথাই আলোচনা করি। কী যে সব হচ্ছে?
হেমকান্ত মাথা নেড়ে বললেন, দেশ স্বাধীন করার দরকার আছে মানি। তা বলে এ ভাবে মানুষ মেরে সেটা করতে হবে? তোমরা কী ভাবছো জানি না, কিন্তু এ সব দেখে আমার বেঁচে থাকার ওপর ঘেন্না ধরে যাচ্ছে।
দেশের অন্য সব জায়গায় এত হাঙ্গামা নেই। যত আমাদের এই বাংলায়। এখানকার ছেলেরা একটু বেশী মিলিটান্ট হয়ে যাচ্ছে।
হেমকান্ত সমর্থনসূচক মাথা নাড়লেন। তারপর বললেন, কৃষ্ণকে নিয়ে আর কী কথা হল?
পুলিস ধরে নিয়েছে কৃষ্ণ সদ্বংশের ছেলে এবং ভাল ছেলে। যদি দলটাকে ধরা যায় তবে কৃষ্ণকে রাজসাক্ষী করার কথাও পুলিস ভাবছে।
হেমকান্ত খুব ম্লান একটু হাসলেন। তারপর মাথা নেড়ে বললেন, ও বাবা! সে তো অনেক দূরের কথা। আগে তো জ্যান্ত অবস্থায় ধরা পড়ুক।
আপনি অত ভাববেন না।
ভাবনার ওপর কি মানুষের হাত থাকে, বলো! যে সব ঘটনা ঘটছে তাতে ভাবনা না হওয়াটাই বিস্ময়কর হবে।
সবই তো জানি বাবা। তবু আপনি স্বাভাবিক ভাবে থাকলে আমরা জোর পাই। সবাই কান্নাকাটি করছে সারা দিন। বিশেষ করে মেয়েরা। বাড়িটায় একটা শোকের ছায়া।
আমার জন্যে তোমরা খুব চিন্তিত, বুঝি। আচ্ছা দেখি।
তাহলে উঠুন। স্নান করে দুটি মুখে দিন। সাড়ে বারোটা বেজে গেছে।
তোমরা কি আমি না খেলে কেউ খাও না?
অনেকটা সেইরকমই।
তাহলে আমার তো খুব অন্যায় হয়ে গেছে।
না, না, এরকম তো জীবনে কিছু ঘটনা ঘটেই। আপনাকে আমরা খুব শক্ত মানুষ বলে জানি। আপনি ভেঙে পড়লে আমরা আর মনের জোর পাই না। আপনি আমাদের সঙ্গে থাকলে এতটা অসহায় বোধ করতাম না।
হেমকান্ত মাথা নাড়লেন। বুঝেছেন। একটু চুপ করে থেকে বললেন, শচীনের কথা কী বলছিলে?
হ্যাঁ, শচীনের সম্পর্কে আপনি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শুনলাম।
নিয়েছি তবে তোমাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে পাকা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তোমাদের কি অমত আছে?
কনক একটু ভাবল। তারপর বলল, ছেলেটি সব দিক দিয়েই ভাল। তবে আমাদের সমান সমান নয়।
সমান হয়তো ছিল না। এখন হয়েছে। যদি আর্থিক অবস্থাকে মাপকাঠি হিসেবে ধরো তাহলে শচীন পাসমার্কা পাবে।
আমি বংশমর্যাদার কথা ভেবে বলছিলাম।
মর্যাদা আজকাল আর কারই বা ধরবে! রাজেনবাবু, অর্থাৎ শচীনের বাবা চমৎকার মানুষ। তোমরা আবার নতুন করে ভেবে দেখ। বউমা এবং মেয়েদের সঙ্গেও আলোচনা কর। লাখ কথা ছাড়া বিয়ে হয় না।
বলব তবে এখন তো বিয়ের তাড়াহুড়ো কিছু নেই। কৃষ্ণর খোঁজ আগে পাওয়া যাক। তারপর।
হেমকান্ত মাথা নাড়লেন। বললেন, ওটা বিবেচনার কথা হল না।
তাহলে?
কৃষ্ণের জন্য আমরা অপেক্ষা করতে পারি না। বিশাখার বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। তোমরা তো জানোই ওর মা না থাকায় আমার দায়িত্ব এখন অনেক বেশী। আর একটা কথাও আছে।
কী কথা বাবা?
আমি হয়ত এখানকার পাট চুকিয়ে ফেলব। আমার আর ভাল লাগছে না।
চুকিয়ে ফেলবেন? তাহলে কোথায় থাকবেন গিয়ে? কলকাতা?
না। ও শহরে আমার ভাল লাগে না। আমার ইচ্ছে ভাল খদ্দের পেলে এস্টেট বিক্রি করে দেবো। তারপর সব টাকা পয়সার বিলিব্যবস্থা করে নিরিবিলি কোথাও গিয়ে থাকব।
এ সিদ্ধান্ত কি আপনার পাকা?
হেমকান্ত মাথা নাড়লেন, না। ভাবছি।
এস্টেট কেনার লোক পাওয়া যাবে বলে ভাবছেন? এখন নগদ টাকার খুব অভাব চলছে।
খদ্দের তবু পাওয়া যাবে। হয়তো দাম পাবো না।
আপনি এস্টেট বিক্রি করে দিন সেটা আমরাও চাই। কিন্তু ডিপ্রেশনটা কেটে যাওয়ার পর করলেই ভাল।
দেখা যাক। আর একটা কথাও ভেবে রেখেছি।
কি কথা বাবা?
আমার এখানে থাকার ইচ্ছে নেই। এস্টেটের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে আজকাল আমার আর ভাল লাগে না। তাই ভেবেছি বিশাখার বিয়ে দিতে পারলে শচীনকে এস্টেটের অভিভাবক করে রেখে যাবো।
কনক উদ্বিগ্ন গলায় বলে, কোথায় যেতে চান বাবা?
হেমকান্ত মৃদু হেসে বললেন, ভয় পেও না। আমি দাদার মত সন্ন্যাস নেবো না।
কনক তবু নিশ্চিন্ত হল না। বলল, আমাদের বংশে এরকম একটা প্রবণতা তো আছে।
আছে। কিন্তু আমার ধাতু সেরকম নয়। ভয় পেও না।
সন্ন্যাস নেওয়ার তো দরকারও নেই বাবা।
হেমকান্ত হাতটা উল্টে বললেন, কি জানি বাবা জীবনের গণ্ডীর গভীরে কত কী আছে। সুখের সংসার ছেড়ে মানুষ যখন ঈশ্বর সন্ধানে যায় তখন বুঝতে হবে সুখের ধারণা সকলের এক রকম নয়। ক’দিন আগে কেওটখালিতে এক সন্ন্যাসীর সঙ্গে আচমকা দেখা। প্রথমটায় চমকে উঠে ভেবেছিলাম, দাদা বুঝি।
আপনি কেওটখালি গিয়েছিলেন কি খুনের দিন?
হেমকান্ত মাথা নাড়ালেন, গিয়েছিলাম।
কাজটা ভাল করেননি। বিপদ হতে পারত।
সে বিপদ তো কৃষ্ণর চেয়ে বেশী নয়। অতটুকু ছেলে কোথায় কোথায় হাভাতের মতো ঘুরছে কে জানে।
হেমকান্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
কনক বলল, সন্ন্যাসীটা কে?
হেমকান্ত মাথা নেড়ে বললেন, কি করে বলব? তবে খুব পারসোনালিটি আছে। লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছিল, বেশ তো আছে। কিছু নেই, তবু বেশ আনন্দে নির্ভাবনায় বেঁচে আছে।
এবার উঠুন বাবা।
শচীনকে নিয়ে কথাটা শেষ হল না।
আপনি স্থির করেছেন আমাদের অমত হওয়ার কথাই নয়।
যা বললাম সকলের সঙ্গে পরামর্শ করে দেখো।
করব বাবা।
হেমকান্ত উঠলেন। তিন দিন পরে স্নান করলেন তিনি। ভাতের পাতেও বসলেন একটু।
বাড়িশুদ্ধু লোক স্বস্তির শ্বাস ফেলল।
আমবাগানে পড়ন্ত রোদের আলোয় চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল বিশাখা। চোখের দৃষ্টি হরিণের মতো ভীত ও চঞ্চল। শরীরে অস্থিরতা।
আমবাগানের পিছন দিকে একটা কাঁচা রাস্তা আছে। তার দৃষ্টি সেই দিকে। চারটে প্রায় বাজে।
খুব বেশী অপেক্ষা করতে হল না। ঝোপঝাড়ের মাথার ওপর দিয়ে এক সাইকেল-আরোহীর চলন্ত মাথা দেখা গেল।
বিশাখার হাত-পা হিম হয়ে যাচ্ছিল ভয়ে। বুকের ভিতর ঠিক উল্টোরকম এক উথাল-পাথাল। সে চারিদিকে এস্তভাবে চেয়ে দেখল কেউ লক্ষ্য করছে কিনা।
না। আমবাগান সম্পূর্ণ নির্জন এবং নিঃশব্দ।
শচীন সাইকেলটা ঝোপের মধ্যে ঠেলে ঢুকিয়ে ছায়াচ্ছন্ন বনভূমিতে ঢুকল। তার মুখে সামান্য হাসি। চোখে দুষ্টুমি।
তলব কেন?
বিশাখা চোখ নত করে বলে, খুব খাটুনি পড়েছে বুঝি?
কেন? খাটুনির কী দেখলে?
আজকাল তো কাছারিতেও আসেন না!
কাজ অনেক পড়ে গেছে তোমাদের এস্টেটের। কিন্তু সময় করতে পারছি না। কৃষ্ণের ব্যাপারটা নিয়ে ক’দিন খুব ব্যস্ত থাকতে হল।
বিশাখা চোখ তুলে বলল, কিছু খবর পাওয়া গেল?
পাওয়া গেছে তো অনেক। কোনটা বিশ্বাসযোগ্য, কোনটা নয় তাই এখন ভাবনা।
আমরা ভেবে ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছি।
সেটা তো স্বাভাবিক। তবে একটা কথা আছে।
কি কথা?
কৃষ্ণের মতো কারেজিয়াস এবং বুদ্ধিমান ছেলে তো শুধু ঘরে আটকে থাকার নয়। তাকে তোমরা কি দিয়ে আটকাবে?
তা বলে এতটুকু বয়সে স্বদেশী করবে?
করবে তা তো বলিনি। কিন্তু কিছু একটা করবেই। ওর ধাতই আলাদা। তোমাদের বংশে এরকম এক আধজন ছিলেন। ও তাঁদেরই রক্তের ধারা পেয়েছে।
সবাই খুব ওর কথা বলছে আজকাল, না?
সবাই বলছে বিশাখা। আই ফিল প্রাউড অব্ হিম।
বিশাখা চোখ পাকিয়ে বলল, ইংরিজি বলতে বারণ করেছি না?
শচীন হেসে ফেলে বলে, ওঃ তাই তো। আচ্ছা আর বলব না।
খুব রোগা হয়ে গেছেন কিন্তু।
আচ্ছা তুমি ওই আপনি আজ্ঞে বলার অভ্যাসটা ছাড়বে?
ছাড়ব তো ঠিকই। তবে—
তবে টবে নয়। এখনই বলো।
লজ্জা করে।
আমাকে আবার লজ্জা কিসের?
তোমাকে ছাড়া আবার আমার লজ্জা কাকেই বা!
এই তো বলেছো।
বিশাখা জিব কেটে বলে, ইস, বেরিয়ে গেছে।
তাহলে তো হয়েই গেল।
বিশাখা মাথা নেড়ে বলে, না, হল না।
হল না কেন?
বাড়িতে কিছু শুনতে পাচ্ছি না।
কী নিয়ে শুনবে?
বিয়ে নিয়ে।
শুনছো না?
না। কী বিশ্রী যে লাগছে।
এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল। এখন বিয়ে নিয়ে ভাবার মতো মানসিক অবস্থা কি কারো আছে?
সে ঠিক কথা। কিন্তু আমাদের কী অবস্থা বলো তো!
শচীনের মুখ উদাস হয়ে গেল। বলল, এক দুর্দিনে তোমার আমার চেনা-জানা হল বিশাখা, সইতে হবে।
সইছি না বুঝি? ভাই নিরুদ্দেশ, তোমার দেখা নেই। কষ্ট কি কম?
শচীন এই ছেলেমানুষী কথায় একটু হাসল।
বিশাখা হঠাৎ বলল, সেই পেত্নীর কি খবর?
কোন পেত্নী?
ওই যে কে এক জমিদারের মেয়ে আমার গ্রাসে ভাগ বসাতে চেয়েছিল?
শচীন উঁচু স্বরে হেসে ফেলেই সতর্ক হল। বলল, ভয় নেই।
নেই তো!
না। তোমার গ্রাসে ভাগ বসায় সাধ্য কার?
যা ভয়ে ভয়ে ছিলাম।
এখন ভয় কেটেছে তো!
সবটা কি কাটে?
আর ভয় কিসের?
পুরুষ মানুষকে কি বিশ্বাস আছে?
শচীন হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলে, কী ইদানীং ইংগিত করছো বল তো!
ইংগিত আবার কি?
তাহলে বিশ্বাসের কথাটা উঠল কেন?
বিশাখাও গম্ভীর হয়ে গেল। চোখ পাকিয়ে বলল, আমার কপাল ভাল নয়। তাই ভয় পাই।
শচীন চুপ করে রইল।