2 of 2

৮৫. বরানগর-আলমবাজারের দিকে

বরানগর-আলমবাজারের দিকে একটা দোতলা বাড়ি। সামনে ছোট্ট একটি মাঠ, যা বাগান হওয়ার প্রতীক্ষায় আছে, উঁচু পাঁচিল তোলা হচ্ছে সেটাকে ঘিরে, বসানো হয়েছে লোহার গেট। বাড়ির দেওয়ালগুলোতে নতুন রং করা হয়েছে, তাই বেশ একটা টাটকা টাটকা গন্ধ। এই বাড়িতে শংকর বসু সদ্য উঠে এসেছেন।

সকালের দিকে বাড়ির সামনে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। গেটের দু’পাশে বসা দু’জন পুলিশ সেই ভিড় সামলায়। তবে এবাড়ি থেকে যেন কোনও ভিখিরিকেও ফিরিয়ে দেওয়া না হয়, সে ব্যাপারে কড়া নির্দেশ আছে। একতলার বসবার ঘরে একটি নারকেলমালায় অনেক খুচরো পয়সা রাখা আছে, ভিখিরি এলে পুলিশের লোকই সেখান থেকে পয়সা এনে দিয়ে দেয়। পুলিশ কারওর হাতে পয়সা তুলে দিচ্ছে, এই দুর্লভ দৃশ্য এ বাড়িতে এলেই দেখা যাবে শুধু।

ভিখিরি ছাড়াও নানা রকম প্রার্থী ও উমেদার আসে। সকালবেলা শংকরবাবু দু’ঘণ্টা নীচে এসে বসেন, এক এক করে তাদের সকলেরই কথা শোনেন এবং সাধ্যমতন সাহায্য করেন। বহু লোকের বহু রকমের দরখাস্তে তিনি কখনও লাল ও কখনও নীল পেনসিলে সুপারিশ লিখে দেন। তবে মন্ত্রীদের দু’রকম রঙের পেনসিল ব্যবহার করার পেছনে যে একটা রহস্য আছে, তা অনেকেই জানে না।

রুক্ষ চুলদাড়ি সমন্বিত চেহারায় সূর্য সেই গেটের সামনে এসে দাঁড়াবার পর পুলিশরা তার আপাদমস্তক কয়েক বার দেখল বিতৃষ্ণার সঙ্গে, তবু ঢুকতে দিল ভিতরে। মাঠটা পেরিয়ে এসে বারান্দায় উঠলেই চোখে পড়বে দেওয়ালের গায়ে একটা লাল রঙের তির আঁকা, তার পাশে লেখা আছে–এই দিকে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী গেলে যে ঘরটি পড়বে, সেখানে বসে থাকেন শংকর বসুর সেক্রেটারি রাখাল চট্টরাজ, যিনি বরানগর পাড়ায় রাখালদা নামে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সেই ঘরের দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ এবং ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের সঙ্গে আলোচনারত শংকর বসুর একটি বাঁধানো ফটোগ্রাফ।

রাখাল চট্টরাজ সূর্যকে অবাঙালি মনে করে তার দিকে ভিজিটিং স্লিপের প্যাড এগিয়ে দিয়ে বললেন, কেয়া নাম আর কেয়া কাম–হিঁয়া লিখ দিজিয়ে।

সূর্য নাম লিখতে গিয়েও ঘরের মধ্যে অপেক্ষমান আরও অনেক দর্শনপ্রার্থী দেখে বলল, আমার খুব জরুরি দরকার।

রাখাল চট্টরাজ একগাল হেসে বললেন, এখানে আর যারা বসে আছে, তাদের কার জরুরি দরকার? ঠিক আছে বুঝেছি, বুঝেছি। একটু বোসো ভাই, বেশিক্ষণ লাগবে না।

হাসির উত্তরে হাসিমুখ দেখানোই মনুষ্যসমাজের নিয়ম। কিন্তু সূর্য মুখখানাকে রেখাহীন করে রাখল। সে বসল না, দাঁড়িয়ে রইল দেওয়ালে হেলান দিয়ে।

রাখাল চট্টরাজ বললেন, বোসোনা, দাঁড়িয়ে কেন?

সূর্য উত্তরও দিল না, বসলও না। ঘরে কয়েকখানা চেয়ার ও তিনটি বেঞ্চ, এর মধ্যে বেঞ্চগুলিতে একটু জায়গা থাকলেও সূর্য যেন অন্য কারওর পাশে বসবেই না ঠিক করেছে।

সূর্যর যখন ডাক পড়ল শংকর বসুর ঘরে, তখনও সেখানে দু-তিন জন তোক রয়েছে। যদিও সূর্যর চেহারা অনেক বদলে গেছে এই কয়েক বছরে, মুখ দাড়িগোঁফে ঢাকা–তবু, আশ্চর্যের বিষয়, শংকরবাবু তাকে দেখামাত্রই চিনতে পারলেন। বিস্মিত হয়ে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে বললেন, আরে, সূর্য, এসো এসো! কোথায় ছিলে এতদিন?

শংকরবাবুর কণ্ঠস্বরে উত্তাপ আছে। এক পার্টিতে থাকবার সময় তিনি কোনও দিনই সূর্যকে ঠিকমতন পছন্দ করতে পারেননি, কিন্তু আজ সূর্যকে দেখে তিনি সত্যই খুশি হয়েছেন মনে হল। সূর্যকে পাশের চেয়ারে বসিয়ে অনেক প্রশ্ন করতে লাগলেন।

তারপর কেমন আছ, বলো।

ভালো।

চেহারাটা বড্ড খারাপ হয়ে গেছে। কোথায় ছিলে এতদিন?

ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম।

ভারত দর্শনে বেরিয়েছিলে? খুব ভালো–এত বিরাট এই দেশ, এর কতটুকু আমরা দেখেছি বা জানি! কয়েক মাস ধরে তোমার খুব খোঁজ করেছিলাম।

তোমার এক মাসতুতো না পিসতুতো ভাই আছে না? তার কাছেও খোঁজ করা হয়েছিল, সেও কিছু বলতে পারে নাকারএর কাছে ঠিকানাও রেখে যাওনি!

ঠিকানা ঠিক ছিল না।

এখন এখানেই থাকবে ঠিক করেছ তো? কী করবে কিছু ঠিক করেছ?

কী জানি!

তুমি অনেক কিছু করতে পারবে–আমার দ্বারা যদি কোনও সাহায্য করা সম্ভব হয়।

শংকরবাবু নিতাই নামে একজন লোককে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, বউদি ফিরেছেন? ফেরেননি এখনও? ঠিক আছে, ফিরলেই এখানে একবার খবর দিস।

সূর্যর দিকে ফিরে বললেন, দীপ্তি এখনও স্কুলে পড়ানো ছাড়েনি। এখানকার একটা স্কুলে হেডমিস্ট্রেস হয়েছে, একটু বাদেই আসবে। তুমি বোসো, ওর সঙ্গে দেখা করে তারপর যাবে। আমি ততক্ষণ এঁদের সঙ্গে একটু কথাবার্তা সেরে নিই।

সূর্য চুপ করে বসে রইল এমন একটা ভঙ্গিতে যেন অন্য কারওর কথা সে শুনতে পাচ্ছে না। পকেট থেকে সিগারেট বার করে ধরাল। শংকরবাবুর কথাবার্তা আগে একটু রুক্ষ ধরনের ছিল, এখন বয়েস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক মিষ্টভাষী হয়েছেন। যদিও জহরকোট ও গান্ধীটুপি পরে চেহারাটা বদলেছেন, তবু অনর্থক লম্বা লম্বা কথা বলেন না, কাজের কথাই সংক্ষেপে সেরে নিতে চান।

কত রকম লোকের কত রকম চাহিদা। এত বছর পরাধীনতার পর লোকে হঠাৎ কতকগুলো নতুন ঠাকুরদেবতা পেয়ে গেছে, যাদের কাছে এলে সব রকম মনস্কামনাসিদ্ধি হতে পারে, অন্তত যাদের কাছে মনস্কামনার কথা জানানো যায়। সকলেই এসে পৃথক পৃথক ভাবে বলছে, আমাকে দাও, আমাকে দাও! আমার ছেলের জন্য, আমার ভাইয়ের জন্য, আমার নিজের জন্য অর্থাৎ আমাকে কেন্দ্র করে যে-পরিবার, শুধু তার উন্নতির জন্য আমি কিছু একটা চাই, দাও দাও দাও! এর বাইরে যে-দেশ, যে-সমাজ–তার যা হয় হোক, তুমি শুধু আমাকে দাও! ভোটে জেতার আগে কিংবা পরে এইসব দেবতারাও যাকে যতটা সম্ভব পাইয়ে দিয়ে মনে করলেন, তবু তো কিছু একটা করলাম ওদের জন্য। যেন এইটাই দেশের কাজ। যারা চোখের সামনে আসে, তারা এই রকম ভাবে কখনও কিছু পায়। যারা চোখের আড়ালে রইল, সেই পিণ্ড পিণ্ড জনসমষ্টি, তাদের যেন কোনও অস্তিত্বই নেই, গ্রামে গঞ্জে হাটে বাজারে তাদের হাড়ে ঘুণ ধরতে লাগল। শংকর বসুও মানুষটা অসৎ না, তিনি মনে করছেন, তিনি সত্যিই দেশের কাজ করছেন আন্তরিক ভাবে, তিনি চোখে একটা ভুল চশমা পরে আছেন।

দীপ্তি এ-ঘরে ঢুকে পড়ে শংকরবাবুকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার যে আজ রানাঘাটে যাবার কথা আছে, কখন বেরোবে?

শংকরবাবু তখন একটা দরখাস্তে মন্তব্য লিখছিলেন, অন্যমনস্ক ভাবে বললেন, রাখালকে জিজ্ঞেস করো। বোধহয় গাড়ি পাওয়া যাবে না, ট্রেনে যেতে হবে।

কটার সময় ট্রেন?

আমি ঠিক জানি না, রাখাল বলতে পারবে।

সেই সময় দুনিয়া কাঁপিয়ে একটা দুম দুম শব্দ হচ্ছে। তোলপাড় করা ঝড়ে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে চরাচর। অন্ধকারে বিদ্যুতের মতন ঝলসে উঠল একটা ছুরি। কে যেন আকুল আর্তনাদে বলছে, আমাকে তাড়িয়ে দিয়ো না, আমাকে তাড়িয়ে দিয়ো না!

চেয়ারে আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে সূর্য। মুখ নিচু করা। শংকরবাবু কথার মাঝখানে হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। একগাল হেসে দীপ্তিকে বললেন, আরে, তোমাকে বলতেই ভুলে গেছি। দেখেছ কে এসেছে?

দীপ্তি তাকালেন সূর্যর দিকে, আপনাআপনি তার ভুরুটা কুঁচকে গেল। তিনি প্রথম পলকেই সূর্যকে চিনতে পারলেন না, কিংবা চিনতে চাননি। সূর্যর চোখে তার চোখ থেমে রইল।

শংকরবাবু বললেন, চিনতে পারলে না? এ তো আমাদের সেই সূর্য।

দীপ্তি আস্তে আস্তে বললেন, ও সূর্য? সত্যিই আমি চিনতে পারিনি। অনেক বদলে গেছ তুমি!

সূর্য বলল, কেমন আছেন, দীপ্তিদি?

শংকরবাবু উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, চলো ভেতরে চলো। আজকের মতন আমার। এখানে কাজ শেষ।

তিনি অন্তরঙ্গ ভাবে সূর্যর কাঁধে হাত রেখে বললেন, এসো! কত দিন পর তোমার সঙ্গে দেখা, অনেক গল্প করার আছে।

জেলখানায় থাকার সময় শংকরবাবু সূর্যর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করেছিলেন, কারণ তিনি তখন দল বদলেছিলেন। এখন তিনি আবার এমন দলে এসেছেন, যেখানে সকলকেই উদার প্রশ্রয় দেওয়া যায়। নির্বাচনের পর বোঝা গেছে, ভারতে আসলে এখন একটিই দল আছে।

একতলার সিঁড়ি বেয়ে উঠে দোতলার প্রশস্ত বারান্দা। বারান্দাতেই কয়েকখানা বেতের চেয়ার ও টেবিল পেতে একটা বসবার জায়গা। লম্বা দেওয়ালে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের ছবি, মাঝখানে হঠাৎ বেখাপ্পা ভাবে রবীন্দ্রনাথের।

চেয়ারে বসবার আগেই শংকরবাবু বললেন, সূর্য কিন্তু আজ এখানেই খেয়ে যাবে। দীপ্তি, তুমি ঠাকুরকে বলে দাও!

দীপ্তি বললেন, আচ্ছা। তিনি সূর্যকে নিজে থেকে আর কিছু বললেন না। সূর্যও ভদ্রতাবশত আপত্তি জানাল না।

দীপ্তি পরে আছেন একটা কালো পাড়ের সাদা তাঁতের শাড়ি। চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা, মাথায় কেঁকড়া চুল–সবকিছুই আগের মতন, শুধু পরিবর্তনের মধ্যে তার সিঁথিতে সূক্ষ্ম সিঁদুরের চিহ্ন। হাতদুটি সম্পূর্ণ নিরাভরণ–হিন্দু সধবা মেয়েদের মতন একগাছা নোয়া কিংবা রুলিও নেই। চেয়ারে বসে তিনি শান্ত ভাবে তাঁর উরুর কাছের শাড়ি প্লেন করলেন হাত দিয়ে, এটাও তার পুরনো অভ্যাস। মুখ তুলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এতদিন তুমি কোথায় ছিলে?

সূর্য সংক্ষেপে উত্তর দিল, নানান জায়গায়।

শংকরবাবু বললেন, তোমার সঙ্গে লাস্ট দেখা হয়েছিল কবে যেন? দাঁড়াও দাঁড়াও, আমি বলছি, নাইটিন ফরটি ফোরের জুলাইতে। তারপর আমি অন্য জেলে চলে গেলাম। তোমার অতুলদাকে মনে আছে? অতুলদা এখন কী করছেন জানো তো?

সূর্য মাথা ঝাঁকিয়ে জানাল, না।

শংকরবাবু আপশোসের সুরে বললেন, ভেরি স্যাড! মানুষটাকে সে-সময় আমরা কত সম্মান করতাম। জেল থেকে বেরিয়ে উনি পলিটিকস প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন, একটা আশ্রম করেছিলেন অনাথা মেয়েদের নিয়ে–তারপর এই বুড়ো বয়সে একটা বিশ্রী মেয়েঘটিত কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়লেন। আমার কাছে এসেছিলেন, আমি অনেক চেষ্টা করেও কেসটা ছাড়াতে পারলাম না–এর মধ্যে আবার একটা অ্যাবর্শান আছে। উনিই যে জোর করে অ্যাবর্শান করিয়েছেন তার একেবারে অকাট্য প্রমাণ আছে।

শংকরবাবু দীপ্তিদির দিকে তাকিয়ে বললেন, ওসব আশ্রমটাশ্রম করে যে কিছু হয় না, তা আমি অনেক বার বলেছি।

সূর্য চুপ করে রইল। অতুলদার কথা মনে পড়ল তার। ঋষিকল্প মানুষ ছিলেন, জেলের মধ্যে সকলেই ওঁকে শ্রদ্ধা করত। আঁস্তাকুড়ের মধ্যে একটা লেবুগাছের চারাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ওঁর কী আপ্রাণ চেষ্টা ছিল, সূর্যকে সেই গাছটার ভার দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই মানুষ–

শংকরবাবু সূর্যকে বললেন, জলপাইগুড়ির আশ্রমে তোমার ওপর যে কী অবিচার করা হয়েছে, তা সবই শুনেছি। তখন যদি আমাকে একবার খবর দিতে! আমি খবর পেলাম আশ্রমটা উঠে যাবার পর। ওখানকার ব্যাড এলিমেন্টসদের অবশ্য আমরা এখন একেবারে উৎখাত করে দিয়েছি!

শংকবাবুর কথাবার্তা ও বিশ্বাসের মধ্যে একটা ক্ষমতার চিহ্ন ফুটে উঠছে। তিনি অনেক কিছু করতে পারেন। যেখানে যে বিপদে পড়েছে, তার কাছে আসুক, তিনি সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন।

তুমি আর কোনও পার্টিতে যোগ দাওনি? তোমাদের আগেকার পার্টি তো একেবারেই ভেঙে গেছে!

না, আমি আর কোথাও যাইনি।

আমার কী মনে হয় জানো! টেররিস্ট পার্টিগুলোকে একেবারে ভেঙে দেওয়া ঠিক হয়নি! যারা এখনও বেঁচে আছেন, তাঁরাও অন্যান্য দলে ভিড়ে গেছেন। তার বদলে ওঁরা সকলে মিলে যদি আলাদা একটা দল গড়ে রাখতেন, তা হলে ডেফিনিটলি একটা ফোর্স থাকত। আমি অবশ্য ওই মতবাদ অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি।

দীপ্তি বললেন, ওদের উদ্দেশ্য ছিল শুধু দেশের স্বাধীনতা আনা। সেই জন্যই এখন। আর ওদের আলাদা কোনও অস্তিত্বের দরকার নেই।

সেইটাই তো ভুল হয়েছে। স্বাধীনতা চেয়েছিল ওরা–কিন্তু স্বাধীনতা পাবার পর কী প্রোগ্রাম হবে–তার কিছুই ঠিক ছিল না। তার মানেই আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল– কোনও দিনই ওরা ভাবেনি যে, সত্যিই একদিন স্বাধীনতা আসবে।

কংগ্রেসেরও তো প্রোগ্রাম ছিল না।

কংগ্রেস চট করে সেটা তৈরি করে নিতে পেরেছে। সবচেয়ে বড় কথা, কংগ্রেস দেশের মানুষদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে। টেররিস্টদের মধ্যে যারা মারা গেছে–লোকে তাদের ছবি বাঁধিয়ে ঘরে টাঙিয়ে রাখে। যারা বেঁচে আছে, তাদের কথা কেউ মনেও রাখেনি।

তুমি ওদের টেররিস্ট বল কেন? ওটা তো ব্রিটিশদের দেওয়া নাম।

ওই হল। অন্য নাম দাও আর যাই দাও, আর একটা স্যাড ব্যাপারও আছে। ওদের মধ্যে অনেকে হিন্দু মহাসভা কিংবা এই ধরনের কমুনাল পার্টিতেও যোগ দিয়েছে। কেউ তো মার্কসবাদ পড়েনি ভালো করে। শুধু ইমোশান দিয়ে কি আর…

সূর্য চুপ করে স্বামী-স্ত্রীর মত বিনিময় শুনছিল। ওঁদের কথার মধ্যে তর্কের ঝুঁজ নেই–যেন পরস্পরের মতামতের স্বাধীনতা আগে থেকেই স্বীকৃত।

একটু বাদে শংকরবাবু বললেন, তা হলে সূর্য তুমি এখন কী করতে চাও? কিছু একটা কাজটাজ করতে হবে তো!

সূর্য বিনীত ভাবে বলল, হ্যাঁ, কিছু তো করতেই হবে। সেই জন্যই তো আপনার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছি।

শংকরবাবু তৃপ্ত হলেন। আর একজন পথভ্রষ্টকে তিনি পথ দেখাবেন। এই তো দেশের কাজ। তিনি দীপ্তির দিকে তাকিয়ে বললেন, সূর্যকে দিয়ে অনেক ভালো কাজ করানো যাবে! কী বলো! যাক, ব্যস্ততার কিছু নেই, আস্তে আস্তে ভেবেচিন্তে তোমার জন্য ঠিক করা যাবে কিছু একটা কাজ। কলকাতায় তোমাদের সেই বাড়িটা এখনও আছে তো?

হ্যাঁ।

ঠিক আছে। নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে আমার সঙ্গে। আমি সব সময় না থাকলেও দীপ্তি তো আছেই, ও সাহায্য করবে তোমায়। তবে দাড়িটাড়িগুলো কামিয়ে ফেলো, কী রকম যেন বিদঘুঁটে দেখাচ্ছে তোমায়।

আর কিছুক্ষণ কথা বলে শংকরবাবু উঠলেন স্নান করার জন্য। তারপর সূর্যর সঙ্গে তিনি খেতে বসবেন। শংকরবাবুকে কথা বলার উৎসাহে পেয়ে বসেছে। গায়ে তেল মাখতে মাখতেও তিনি কথা বলতে লাগলেন সূর্যর সঙ্গে। তারপর তিনি বাথরুমে ঢুকে যেতেই দীপ্তি বললেন, সূর্য, তুমি বোসো, আমি আসছি।

সূর্যও উঠে দাঁড়াল।

দীপ্তি অবাক হয়ে বললেন, এ কী উঠছ কেন? বোসো, তুমি তো এখানে খেয়ে যাবে।

সূর্য এক পা এগিয়ে গেল দীপ্তির দিকে। এখন তার মুখের চেহারা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। চোখদুটি অত্যন্ত চঞ্চল।

দীপ্তি এবার হুকুম করার ভঙ্গিতে বললেন, বললাম না তোমাকে বসতে? কোথায় যাচ্ছ?

সূর্য তবু এগিয়ে আসতে লাগল দীপ্তির দিকে। যেন আকস্মিক কোনও আঘাত সামলাচ্ছেন, এই ভাবে দীপ্তি মুখের সামনে একটা হাত তুললেন। তিনি আঘাতেরই প্রত্যাশা করেছিলেন বোধহয়, কিন্তু সূর্য তার একেবারে মুখোমুখি এসে চুপ করে পঁড়াল।

এই মুহূর্তটার জন্য কি দু’জনেই অপেক্ষা করে ছিল না? এতক্ষণ অন্য সমস্ত কথাই কি দূরাগত অর্থহীন শব্দের মতন নয়? অনেক দিন পর দু’জনে মুখোমুখি। দু’জনের দৃষ্টির কাছে সমস্ত ভাষা পরাজিত হয়ে যায়। কোথাও যেন কিছু একটা ঝনঝন করে ভেঙে যাচ্ছে।

হাতটা সরিয়ে নিয়ে দীপ্তি আস্তে আস্তে দুঃখিত নরম গলায় বললেন, সূর্য, তুমি কেন এসেছ?

সূর্য বলল, আসবার কথা ছিল না, তাই না?

তুমি বলেছিলে, তোমার সঙ্গে আমার আর সারা জীবনে দেখা হবে না।

আমি বলেছিলাম? হয়তো। আমি কথা রাখিনি।

সূর্য, তুমি ফিরে যাও।

কোথায়? কোথায় ফিরে যাব? দীপ্তিদি, তুমিও কথা রাখোনি!

দীপ্তি আর কিছু না বলে দ্রুত চলে গেলেন রান্নাঘরের দিকে। সূর্য ফিরে গিয়ে ধপ করে চেয়ারে বসল। তারপর এমন ভঙ্গিতে সিগারেট ধরাল, যেন এটাই তার নিজের বাড়ি।

শংকরবাবু স্নান সেরে এসে বললেন, এসো সূর্য, চট করে খেয়ে নেওয়া যাক। সামান্য যা আছে–

সূর্য ভদ্রতা করেও আপত্তি জানাল না। হঠাৎ কারওর বাড়িতে উপস্থিত হবার পর ভাত খাবার আমন্ত্রণ পেলে মানুষ একবার অন্তত না বলে। সূর্য সঙ্গে সঙ্গে এসে খাবার। টেবিলে চেয়ার টেনে নিয়ে বসল।

শংকরবাবু বললেন, হাতটাত ধোবে না?

না, ঠিক আছে।

নেমন্তন্নর দিন তুমি বাদ পড়ে গেছ, তোমাকে একদিন ভালো করে খাওয়াতে হবে। তুমি যদি আমাদের সঙ্গে কোনও কাজ করতে চাও–কোনও একটা চাকরিটাকরির তো ব্যবস্থা করা যেতেই পারে, তা ছাড়া যদি পার্টির কাজে তোমার আগ্রহ থাকে–আমার। তো মনে হয়, পার্টির কাজেই অনেক বেশি থ্রিল আছে।

আমি কিছু একটা করতে চাই।

আচ্ছা, দু-এক দিন পরে ধীরেসুস্থে ভেবেচিন্তে একটা কিছু ঠিক করা যাবে।

শংকরবাবুর মুখে বেশ একটা সন্তুষ্ট ভাব ফুটে ওঠে। মানুষের উপকার করার ক্ষমতা আয়ত্তে এলে চমৎকার আরাম পাওয়া যায়।

দীপ্তি নিজেই খাবার পরিবেশন করলেন। খুবই সংক্ষিপ্ত ও অনাড়ম্বর খাদ্যসূচী। ভাত, নিম-বেগুন, ডাল, পেঁপেসেদ্ধ, ফুলকপির তরকারি এবং দই। মাছ-মাংস নেই। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই এখন নিরামিষাশী।

সাধারণ লোকে এখন মন্ত্রীদের জীবনযাত্রার বিলাসিতা নিয়ে অনেক রকম ব্যঙ্গবিদ্রূপ করে। বিরোধী দলগুলোর নীতিই হচ্ছে সরকারি দলের ক্ষমতাশীন ব্যক্তিদের চরিত্রহনন করা। তাদের সুনির্দিষ্ট প্রচারে সাধারণ লোকের ধারণা, মন্ত্রীরা সবাই টাকা চুরি করে, বাড়িতে সোনারুপো চিবিয়ে খায় এবং ডিস্ট্রিক্ট ট্যুর প্রোগ্রামের সময় ডাকবাংলোতে মদ ও মেয়েমানুষ নিয়ে ফুর্তি করে।

শংকরবাবু বললেন, মাছমাংস ছাড়া সূর্যর নিশ্চয়ই অসুবিধে হবে। দীপ্তি, ওকে একটা ডিম ভেজে দাও না।

দীপ্তি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে ডিম ভেজে দেব?

সূর্য ঘাড় হেলিয়ে বলল, হ্যাঁ, দিন।

নিরামিষাশীদের বাড়িতে ডিমও থাকে না। লোক দিয়ে দোকান থেকে ডিম আনিয়ে। ভেজে দিতে অনেক সময় লাগল, সূর্যর সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। সে বসেই আছে খাবার টেবিলে। ডাল দিয়ে ভাত মেখে বসে আছে ডিম ভাজার প্রতীক্ষায়। শংকরবাবু নিজের খাবার শেষ করেও বসে রইলেন একটুক্ষণ। তারপর চঞ্চল হয়ে উঠলেন। তিনি ব্যস্ত লোক, খাবার টেবিলে বেশি সময় নষ্ট করতে পারেন না। একটু বাদে তিনি ভদ্রতা করে বললেন, তুমি যদি কিছু না মনে করো, তা হলে আমি উঠি? আমাকে আবার এক্ষুনি বেরোতে হবে তো-তুমি লজ্জা কোরো না, ভালো করে খাও–

সূর্যর লজ্জা পাবার কোনও প্রশ্নই নেই। সে খুব মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে। দীপ্তির হাতের রান্না বলেই তার এই উপভোগ। হয়তো দীপ্তি নিজের হাতে রাঁধেননি, একজন ঠাকুর বা রাঁধুনি থাকাই সম্ভব, তবু তো পরিবেশন করছেন নিজে।

শংকরবাবু বললেন, দীপ্তি, আমার ব্যাগটা হলে গুছিয়ে দিয়ো। আমি ততক্ষণ নীচে গিয়ে কাগজপত্তরগুলো–

দীপ্তি বললেন, আমি ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি। আমিও তোমার সঙ্গেই যাচ্ছি।

তার স্বামী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি যাবে? তুমি কী করতে যাবে– মাত্র এক দিনের তো প্রোগ্রাম।

না, আমিও ঘুরে আসব ঠিক করেছি। ও-দিকটায় কখনও যাইনি।

এমন কিছু জায়গা নয়। তুমি বরং সূর্যর সঙ্গে গল্পটল্প করো–এতদিন পরে এল—

সূর্য তো আবার আসবেই। আমি তোমার সঙ্গেই আজ যাব।

শংকরবাবু নীচে নেমে গেলেন। দীপ্তি সূর্যকে জিজ্ঞেস করলেন, সূর্য, তোমার আর কিছু লাগবে? আর একটু ভাত আর তরকারি নেবে?

সূর্য জিজ্ঞেস করল, আপনি খাবেন না?

হ্যাঁ, এবার বসছি।

দীপ্তি খেতে বসেও বার বার নানা অজুহাতে তার পরিচারিকাকে ডেকে নানা রকম ফরমাশ করতে লাগলেন। স্পষ্ট বোঝা যায়, তিনি সূর্যকে বেশি কথা বলার সুযোগ দিতে চান না।

সূর্য একদৃষ্টিতে দীপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে তো তাকিয়েই আছে। তার বিমর্ষ মুখোনি দেখলে মনের কথা কিছুই বোঝা যায় না। যে-নারীটি তার সামনে বসে আছে, একসময় দিনের পর দিন সূর্য তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে থেকেছে। এমনও দিন গেছে, যখন চব্বিশ ঘণ্টাই তারা কাটিয়েছে এক ঘরে। ওই নারীর নগ্ন শরীরটিও তার চেনা– যে-শরীরে রয়েছে তার নিজস্ব প্রিয় আগুন কিংবা শান্তি কিংবা অমৃত। এখন তার সঙ্গে কথা বলতে হবে অল্প-চেনার মতন। অদূরে দেখা যায় দীপ্তির শয়নকক্ষ, দরজা খোলা, শুভ্র চাদর পাতা বিছানা–ওই বিছানায় এই নারী এখন অপর পুরুষের সঙ্গে শোয় প্রতি রাত্রে। এখন দীপ্তি তাকে এড়াবার জন্যই শুধু স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছে রানাঘাট বা বনগাঁর মতন কোনও অকিঞ্চিৎকর জায়গায়।

সূর্য একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি হঠাৎ এসে পড়ায় তুমি খুব বিরক্ত হয়েছ, তাই না?

দীপ্তি শুকনো ভদ্রতার সুরে বললেন, না বিরক্ত কেন হব?

তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলে—

তখন সেটাই একমাত্র পথ ছিল।

তুমি বলেছিলে, তুমি কখনও বিয়ে করবে না। যে-সব মেয়েরা বিয়ে করে সুখে-শান্তিতে থাকে, তুমি কিছুতেই তাদের মতন হতে পারবে না।

জীবন বড় নিষ্ঠুর। মানুষ যা ভাবে, কিছুতেই তা শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক মেলে না। বড়মামা মারা গেছেন, তুমি শুনেছ বোধহয়!

ওঁর যথেষ্ট বয়স হয়েছিল।

তবুশরীর ভালো ছিল যথেষ্ট। জলপাইগুড়ির ছেলেরা ওঁকে উত্ত্যক্ত করে মারত, তবু উনি একটুও ভেঙে পড়েননি, কিন্তু নিয়তি যে কখন কোন দিক দিয়ে ছোবল দেয়! ওঁকে সাপে কামড়েছিল।

সত্যেন গুহকে সূর্য বেশ পছন্দ করত। কিন্তু তার অপঘাতে মৃত্যুর সংবাদ শুনেও সে কোনও দুঃখ প্রকাশ করল না, চুপ করে রইল। মনে হয় যেন সে খুব অন্যমনস্ক।

দীপ্তি আবার বললেন, বড়মামার মৃত্যুর পর আমি আর কিছুতেই আশ্রমটাকে বাঁচাতে পারলাম না। অনেক চেষ্টা করেছিলাম। আশ্রমটাও ভেঙে যাবার পর আমি এই পৃথিবীতে একা হয়ে গেলাম। তখন কেউ আমাকে খুঁজতে আসেনি। আমি অন্ধের মতন। এ-দিক ওদিক হাতড়ে একজন কাউকে খুঁজেছি। দুঃখের সময় মেয়েরা কিছুতেই একা থাকতে পারে না।

কলকাতা ছেড়ে তুমি ওই আশ্রমে পালিয়ে গিয়েছিলে কেন? ওটা কি তোমার জায়গা?

হ্যাঁ। আমি এ রকম কোনও একটা জায়গাতেই থাকতে চেয়েছিলাম। তা হলে আমি শান্তিতে থাকতে পারতাম। কিন্তু কেউ আমাকে থাকতে দিল না। মানুষের অনেক আশাই মিথ্যে হয়ে যায়।

এটাও মিথ্যে!

কোনটা?

এই যে তোমার এই বিয়ে–

দীপ্তি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে খানিকটা কৈফিয়তের সুরে বললেন, তোমাদের শংকরদা বার বার আমাকে স্নেহ করতেন। আমার অনেক বিপদআপদে উনি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আশ্রমটা উঠে যাবার পর আমি যখন একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম, তখন উনিই আমাকে খুঁজে বার করেন, আমি ডাকিনি, উনি নিজেই গিয়ে আমাকে সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এমনকী, আশ্রমটা আবার গড়ে দেবার কথাও বলেছিলেন, কিন্তু তখন সেটা আর সম্ভব ছিল না। একা ওই আশ্রম চালানো যে আমার পক্ষে অসম্ভব তা বুঝে গিয়েছিলাম। উনিও বুঝেছিলেন, একটা কোনও কাজের মধ্যে ডুবে পড়তে পারলেই আমি আবার সুস্থ-স্বাভাবিক হতে পারব। তাই আমাকে এনে জুড়ে দিলেন এখানকার নারীমঙ্গল সমিতির সঙ্গে। তুমি তো জানোই, কোনও একটা কাজ ছাড়া আমি কিছুতেই ঠিক থাকতে পারি না। আর এ-দেশে কোনও একজন পুরুষ যদি একজন মেয়েকে কিছু সাহায্য করে, তা হলেই নানা রকম কথা ওঠে। ওই রকম কথা শুনে শুনে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আগেকার মতন আর অগ্রাহ্য করতে পারি না, সে জোর নেই তাই–দু’জনেই ঠিক করলাম, বিয়ে করাটাই–

সূর্য আবার সেই একই সুরে বলল, না, এটা মিথ্যে!

সূর্য, আমি এখন খুব ভালো আছি।

আমি ভালো নেই।

দীপ্তি একটু যেন কেঁপে উঠলেন। সূর্য তাঁকে হারিয়ে দিয়েছে, কারণ সে স্পষ্ট বলতে পারে, আমি ভালো নেই। তিনি কথাটা ঘোরাবার জন্য জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তো বললে না, এত দিন কোথায় ছিলে?

সূর্য বলল, আমি কোথাও স্থির হয়ে থাকতে পারলাম না। অনেক চেষ্টা করেছি, তুমি আমাকে তাড়িয়ে দেবার পর সারা ভারতবর্ষ ঘুরে ঘুরে একটা আশ্রয় খুঁজেছি। গোয়ালিয়ারে একটা মেয়ের কাছে ছিলাম। আমার মায়ের নামে তার নাম। ভেবেছিলাম তাকে নিয়েই আর সবকিছু ভুলে থাকব, কিন্তু সে-ও আমাকে ছেড়ে গেল। তোমার কাছে ফিরে আসাই আমার নিয়তি।

তোমার সবকিছু আবার ঠিক হয়ে যাবে। তুমি যদি একটা কাজটাজের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে নাও–এই দেশের কোনওনা-কোনও কাজের মধ্যে আমাদের থাকতেই হবে–আমরা দূরে গিয়ে কিছুতেই বেশি শান্তি পেতে পারি না–

দীপ্তিদি, চন্দননগরের সেই বাড়িটার কথা তোমার মনে আছে? যেখানে তোমাকে প্রথম আমি দেখেছিলাম?

কেন মনে থাকবে না?

সেখানে তোমাকে আমি বিবাহিতা মহিলা হিসেবেই জানতাম। আসলে সেটা ছিল মিথ্যে। তোমরা নকল স্বামী-স্ত্রী সেজে থাকতে। সেই রকম এটাও মিথ্যে।

সূর্য, কী বলছ তুমি?

আমি ঠিকই বলছি।

তোমার মাথার ঠিক নেই। তুমি এবার ওঠো তো!

সূর্য টেবিলে একটা চাপড় মেরে কড়া গলায় বলল, না মিথ্যে মিথ্যে! আমি বলছি, এটাও মিথ্যে!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *