2 of 2

৮৩. সূর্য কলকাতায় এসে পৌঁছোল

সূর্য কলকাতায় এসে পৌঁছোল রাতদুপুরে। পরনে চোস্ত আর শেরওয়ানি, বেশ ময়লা, গলায় মোটা মাফলার, একমুখ দাড়ি, মাথায় কঁকড়া ঝাকড়া চুল। সঙ্গে আরও দু’জন কাঠখোট্টা চেহারার লোক, ট্যাক্সি নিয়ে হাজির হল বাড়িতে। বাদলরা সবাই তখন ঘুমিয়ে পড়েছিল।

দরজার শব্দ শুনে জেগে উঠল সকলে। বাদল ছাড়া আর কেউ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল না। চিররঞ্জন খানিকটা ভর্ৎসনার সঙ্গে বললেন, একটা কোনও খোঁজখবর নেই। বহু দিন কোনও চিঠিপত্র নেই, কোথায় ছিলে?

সূর্য প্রশ্নটাকে কোনও গুরুত্ব না দিয়ে উত্তর দিল, এই, ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম নানা জায়গায়। আপনারা সবাই কেমন আছেন?

বাদলের মায়ের অসুখের কথা শুনেও সূর্য বিশেষ কোনও ঔৎসুক্য দেখাল না। দু-চার কথার পরেই জিজ্ঞেস করল, বাড়িতে কিছু খাবারদাবার আছে? আমার সঙ্গে দু’জন লোক এসেছে, তারা আজ রাত্রে এখানেই থাকবে।

এত রাত্রে তিন জন লোকের মতন খাবার আর কী করে থাকবে? কিছুই নেই। চিররঞ্জন একটু অপ্রস্তুত বোধ করলেন। একজন রাঁধুনি রাখা হয়েছে, তাকে ডেকে তুলে কিছু তৈরি করতে বললেও অনেক রাত হয়ে যাবে।

বাদল বলল, আমি খাবার কিনে আনব? পাঞ্জাবিদের দোকান অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে।

সূর্য পকেট থেকে দুটো দশ টাকার নোট বার করে দিয়ে বলল, যা তো, কিছু রুটি আর মাংস নিয়ে আয় তো চট করে। ট্যাক্সি নিয়ে চলে যা।

বাদল একটা চাদর জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ল বাড়ি থেকে। নিঝুম নিস্তব্ধ রাস্তা, দু’পাশের আলোগুলো ঝকমক করছে। একটুক্ষণ দাঁড়িয়েও বাদল কোনও ট্যাক্সি পেল না। শ্যামবাজারের মোড়ের মাথায় একটা দোকান অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে, সেখানে গেলে কিছু পাওয়া যাবেই। বাদল আর দেরি না করে হনহন করে হাঁটতে লাগল। সে একটুও কষ্ট বা বিরক্তি বোধ করছে না–সূর্যদাকে দেখলেই তার মধ্যে একটা চাঞ্চল্য আসে। সূর্যদার জন্য সে কিছু একটা করতে পারছে–এইটাই যেন ধন্য হয়ে যাবার মতন ব্যাপার। সূর্যদা ফিরে এসেছে, আবার সবকিছু বদলে যাবে–এই চিন্তা তাকে একটা চাপা উত্তেজনা দেয়। তবু, এক একবার মনের কোণে আর একটা কথাও উঁকি মারে, সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে সে ভুলতে চায়, আবার মনে আসে। সূর্যদা যেন খানিকটা দেরি করে ফেলেছে। ফিরলই যখন–।

শ্যামবাজারের কাছে বাদল যখন এসে পৌঁছোল, তখন সে রীতিমতন ঘামছে। মাংসের দোকানটা সেই সময় ঝাঁপ ফেলার উপক্রম করেছে। নতুন করে কিছু রুটি বানাতে হল, মাংস খানিকটা ছিলই। একটা ট্যাক্সি পাওয়া গেল সেখান থেকে। ট্যাক্সি নিয়ে ফিরে আসতে আসতে তার মনে হল, সূর্যদার প্রত্যাবর্তনের সংবাদটা যেন এক্ষুনি সারা কলকাতায় জানিয়ে দেওয়া দরকার। যেখানে বাদলের যত চেনাশুনো মানুষ আছে, সকলকে এই সময়েই জানিয়ে এলে কেমন হয়। এবং রেণুকে?

বাড়িতে ফিরে বাদল দেখল চিররঞ্জন ইতিমধ্যেই আবার শুয়ে পড়েছেন। অনেক আলোই আবার নেভানো। তিনতলা থেকে সূর্যদাদের গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। রান্নাঘর থেকে কয়েকটা প্লেট নিয়ে বাদল খাবারগুলো সমেত উঠে এল ওপরে।

তিনতলায় বড়বাবুর ঘর অনেক দিন ভোলা হয়নি। আসবাবপত্র ধুলোয় ধূসর। বাদল। সেখানে এসে দেখল, সেই ধুলোর মধ্যেই মেঝেতে শতরঞ্চি বিছিয়ে ওরা তিনজন বসে গেছে, সামনে গেলাস ও মদের বোতল।

সূর্য বলল, খাবার পেয়েছিস? আয়, বোস এখানে।

বাদলের সারা শরীর আড়ষ্ট হয়ে গেছে। চোখের দৃষ্টিতে বিস্ময় ও আঘাত লুকোতে পারছে না। সূর্যর সঙ্গী দু’জন দুর্বোধ্য হিন্দিতে কিছু প্রশ্ন করল, বাদল ঠিক বুঝল না, সুর্য উত্তর দিল সেই রকম ভাষায়। ওদের মধ্যে একজন, যার চেহারা অনেকটা সিনেমার অমর মল্লিকের মতন, নিজের পাশের জায়গাটা হাত দিয়ে চাপড়ে বলল, বৈঠিয়ে বৈঠিয়ে, ইধার বৈঠিয়ে।

বাদল হাঁটু মুড়ে বসে প্লেট ক’খানাতে মাংস ঢেলে রুটি সাজিয়ে দিল। সূর্য এক টুকরো মাংস মুখে দিয়ে বলল, বাঃ বেশ।

গলা থেকে মাফলারটা খুলে সূর্য তাতে হাত মুছল। তারপর মদের বোতলটা ধরে বাদলকে জিজ্ঞেস করল, তুই একটু খাবি, তা হলে গেলাস নিয়ে আয়!

বাদল শুকনো গলায় বলল, না, না, দরকার নেই।

তুই খাস না?

না।

সিগারেট টিগারেট খাস তো। এই নে, নিতে পারিস।

সূর্য একটা সিগারেটের টিন এগিয়ে দিয়েছে। ঠিক ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় নয়, যান্ত্রিক ভাবে হাত বাড়িয়ে বাদল একটা সিগারেট তুলে নিল। দেশলাই জ্বেলে ধরাতে গিয়ে সে টের পেল, তার হাত কাঁপছে। সূর্যদাকে সে অনেক রকম অবস্থায় দেখেছে, কিন্তু এই রকম অবস্থায় দেখবার কথা সে কল্পনাও করেনি৷ মদ খাওয়া সম্পর্কে যে তার খুব একটা ভীতি আছে তা নয়। অনেক বিদেশি গল্প-উপন্যাস পড়ার পর সে এ-সম্পর্কে সংস্কার কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। কিন্তু নীচে বাবা-মা রয়েছেন, এতদিন পরে বাড়িতে ফিরেই সূর্যদা, বিশেষত বড়বাবুর ঘরে এ রকম আসর জমিয়ে বসেছে–এ ব্যাপারটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। সূর্যদার আগেকার সেই গাম্ভীর্যও আর নেই, লোকদুটির সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছে অনর্গল।

একসময় সূর্য বাদলের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করল, তারপর তোদের খবরটবর কী বল?

বাদল বলল, নতুন খবর কিছু নেই। বড়দিরা অনেক দিন কলকাতায় আসেনি। আমি কিছুদিন আগে খড়্গপুরে বড়দিদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম–

প্রথম শ্রীলেখার কথাই মনে এল বাদলের। তাই সে সবিস্তারে শ্রীলেখার কথা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু সূর্য কোনও আগ্রহই দেখাল না। হঠাৎ মাঝপথে বাদলকে জিজ্ঞেস করল, তুই কি এখন কী করছিস, পড়ছিস?

লজ্জায় অবনত মুখে বাদল বলল, না, চাকরি করছি।

বাদল ভেবেছিল, সাধারণ ছেলের মতন সেও যে শেষ পর্যন্ত চাকুরিজীবী হয়ে গেছে, একথা শুনে সূর্য নিশ্চয়ই উপহাস করবে। কিন্তু সূর্য এ ব্যাপারেও কোনও মন্তব্য করল না। যেন নিছক প্রশ্ন করে যাচ্ছে, উত্তরগুলি সম্পর্কে তার কোনও প্রতিক্রিয়া নেই।

বাদল এবার জিজ্ঞেস করল, তুমি এতদিন কোথায় ছিলে সূর্যদা?

অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়ালাম। গোয়ালিয়ার, গাজিয়াবাদ, সিমলা–এ-দিকে। কন্যাকুমারিকা পর্যন্তও গিয়েছিলাম।

এখন থেকে কলকাতাতেই থাকবে তো?

কী জানি!

কত দিন আর ঘুরে বেড়াবে। তোমাকেও একটা কিছু করতে হবে তো!

সূর্য এবার হাসল বেশ উঁচু গলায়। তারপর বলল, একটা কিছু করতে হবে, তাই না। দেখা যাক!

সূর্যর সঙ্গীরা গপাগপ করে মাংস রুটি খাচ্ছে। মাংসের ঝোল পড়ছে জামাকাপড়ে, তাতে কোনও হুঁশ নেই। সিগারেটের টুকরোগুলো ছুঁড়ে দিচ্ছে ঘরের যেদিকে-সেদিকে। একজন তার লম্বা পা ছড়িয়ে দিয়েছে দেওয়ালের দিকে, সেখানে গাদা করা বইতে যে তার পা লাগছে, সেটা খেয়ালই করছে না। বাদল সজ্ঞানে কখনও বইতে পা ছোঁওয়ানোর কথা চিন্তাই করতে পারে না। তার বার বার মনে হচ্ছে, বড়বাবুর ঘরটাকে যেন অপবিত্র করা হচ্ছে। এ-ঘরে এলে বড়বাবুর কথা বড় বেশি মনে পড়ে–যেন বড়বাবুর প্রগাঢ় ব্যক্তিত্বব্যঞ্জক দৃষ্টি ভেসে আছে সর্বত্র। সূর্যদার কি একবারও মনে পড়ছে না সেসব কথা!

পরদিন সকাল নটার মধ্যেও সূর্য আর তার সঙ্গীদের ঘুম ভাঙল না। বাদল দু-তিন বার ওপরে এসে দেখে গেল। ওদের জন্য তৈরি করা চা ঠান্ডা হয়ে গেল দু’বার। ওরা কাল কত রাত্রে ঘুমিয়েছে কে জানে, তাই বাদল ডাকতে সাহস করল না।

এদিকে বাদলের অফিসের বেলা হয়ে যাচ্ছে। একবার সে মনে মনে ভেবেছিল, আজ আর অফিসে যাবে না। কিন্তু সেকথা উত্থাপনেরই সুযোগ পেল না। তার বাবা-মা-ই বার বার তাড়া দিতে লাগলেন। নতুন চাকরি, এরই মধ্যে কামাই করা চলে নাকি? বিলেতি কোম্পানি–ওদের নিয়মকানুন খুব কঠোর। ক্ষুব্ধ হৃদয়ে বাদল অফিসে গেল। এতদিন পরে সূর্যদা এসেছে, কত কী গল্প করার আছে।

অফিস ছুটির পর একটুও দেরি না করে বাড়ি ফিরে এল বাদল। তখন সূর্য বেরিয়ে গেছে। দুপুরে খেয়েদেয়েই সে বেরিয়েছে, কখন ফিরবে বলে যায়নি। সারা সন্ধ্যা সে অপেক্ষা করে রইল।

সূর্য ফিরল প্রায় রাত বারোটার সময়, সঙ্গীদের নিয়ে হল্লা করতে করতে। ওরা যে যথেষ্ট মাতাল হয়ে এসেছে, তা বুঝতে কোনও অসুবিধে হয় না। গোপন করারও কোনও চেষ্টা নেই ওদের। ওপরতলায় উঠে গিয়ে গানবাজনা জুড়ে দিল।

দু-তিন দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেল যে সূর্য কলকাতায় ফিরে এসেছে শুধু উপদ্রব করতে। বাদলের বাবা-মাকে গুরুজন হিসেবে ও সামান্য সমীহও করে না। ওঁদের সঙ্গে বিশেষ কথা বলারও সময় নেই তার। অধিকাংশ সময়েই সে বাড়িতে থাকে না, আবার নিতান্ত অসময়ে অজানা-অচেনা লোকদের বাড়িতে ডেকে আনে। সূর্য চিরকালই একরোখা ছেলে, যখন যেটাকে ধরে সেটাকেই প্রাণপণে আঁকড়ে থাকে। এখন ও বেল্লেলাপনাতেই শুধু আনন্দ পাচ্ছে।

হিমানী ও চিররঞ্জন আবার দারুণ অশান্তিতে পড়লেন। এখন সব সময় একটা কথা কাটার মতন বেঁধে, সূর্যই এই বাড়ির মালিক। তাকে জোর করে কিছু বলা যায় না। কিন্তু বাড়ির মালিক হলেই যে সে যা খুশি তাই করবে, এটাই বা সহ্য করা যায় কী করে? ভদ্রসমাজে সম্মানরক্ষা করে বাঁচতে হবে তো!

হিমানী হঠাৎ একদিন জেদ ধরে বসলেন, তিনি আর এ বাড়িতে থাকবেন না। বিয়ের পর থেকে এতগুলো বছর তাকে কত রকম অপমান সহ্য করতে হয়েছে, এখন মরার আগে তিনি একটু শান্তি পেতে চান। চিররঞ্জনকে তিনি বললেন, আমার ছেলে এখন চাকরি করে, সে কি এখন আলাদা একটা বাড়ি ভাড়া করে আমাদের নিয়ে যেতে পারে না। কেন আমরা অপমান সহ্য করে এখানে থাকব। যত সব ম্লেচ্ছদের উৎপাত শুরু হয়েছে।

বাদলের দিকে ফিরে তিনি বললেন, কী রে, তুই পারবি না? তোর বাবা তো সারা জীবন আমাদের জন্য একটা বাসা জোগাড় করতে পারল না। পাঁচজনকে আমি বলতে পারব তবু আমার ছেলে আমার জন্য…

পুত্রগর্বে হিমানী তার স্বামীকেও অপমান করতে দ্বিধা করেন না। চিররঞ্জন প্রতিবাদ করে বললেন, কেন, আমরা এবাড়ি ছাড়ব কেন? এতদিন রইলাম, দেখাশুনো করলাম–এখন এখানে থাকার একটা রাইট আছে আমাদের। কাগজপত্তরও সব আমার কাছে। আমরা না থাকলে তো এ বাড়ি এতদিনে বেওয়ারিশ হয়ে যেত।

হিমানী ঠোঁট বেঁকিয়ে বললেন, লাথিঝাঁটা খেয়েও তুমি এখানে থাকতে চাও! বেশ তো, তুমি থাকো। ছেলেকে নিয়ে আমি আলাদা থাকব।

বাড়ি ভাড়া করে আলাদা সংসার করা কি কম খরচের কথা। বাদল কতই বা মাইনে পায়। এর ওপর তোমার চিকিৎসার খরচ আছে।

দরকার নেই আমার চিকিৎসার। না হয় আধপেটা খেয়ে থাকব–তবু এই কুলাঙ্গারের সঙ্গে এক বাড়িতে…

মা কোনও দিনই সূর্যদাকে ঠিক পছন্দ করেননি।

সূর্যদার জন্মবৃত্তান্ত মা কখনও ভুলতে পারেন না। সামাজিক রীতিনীতিগুলোকে মা বড় বেশি মূল্য দেন। সমাজও যে বদলায়, মা’র সেদিকে খেয়াল নেই। সূর্যদার স্বভাবের। ছেলেমানুষি দিকটাও মা’র চোখে পড়ে না।

মা বাবার বচসার সময় বাদল কোনও কথা বলে না। তার মনটা বিস্বাদ হয়ে যায়। আজকাল যখন তখন হঠাৎ টাকাপয়সার প্রশ্নটাই বড় হয়ে দেখা দেয়। টাকাপয়সাকে কেন্দ্র করেই যা কিছু শান্তির চিন্তা। যে-চাকরিটাকে সে একেবারেই পছন্দ করে না, সেই চাকরির কয়েকশো টাকা মাইনের ওপরেই নির্ভর করছে তাদের পারিবারিক নিরাপত্তা যতদিন বাবা-মা বেঁচে থাকবেন, ততদিন তাকে এই চাকরি থেকে উপার্জন করে যেতে হবে। এর নাম দায়িত্ব। সে নিজের ইচ্ছে মতন বাঁচতে পারবে না। যাদের টাকা আছে, শুধু তারাই নিজের ইচ্ছে মতন বাঁচবে। যে শ্রেণিহীন সমাজের স্বপ্ন সে কলেজজীবনে দেখেছিল, তা আজ কত দূরে সরে গেছে। কোনও সমাজেই আর মানুষের মুক্তি নেই। এখনও মানুষ আলাদা ভাবে নিজের চেতনার জগতেই শুধু মুক্তি খুঁজতে পারে। বাদল নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকে।

সব অশান্তির মূল যে, সেই সূর্যদার ওপরে বাদল তবুও রাগ করতে পারে না। সেই ছেলেবেলা থেকেই তার ধারণা, সূর্যদা একদিন-না-একদিন বড় কিছু একটা করবে। এখনও সেই ধারণাটা ছাড়তে পারে না। সূর্যদা এ-পর্যন্ত একবারও সুস্থির হতে পারল না। একটু সুস্থির হলেই সূর্যদা অনেক কিছু করতে পারে।

অফিস থেকে দুপুরবেলা বেরিয়ে এসে বাদল প্রেসিডেন্সি কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে রইল। রেণুর সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয়নি। অনেক দিন দেখা না হলেও রেণু কি বুঝতে পারে যে ওকে দেখার জন্য সে সব সময় ছটফট করছে? কম বয়সে সন্দেহ কিংবা ঈর্ষা–এসব কিছুই থাকে না। কয়েক বছর আগেও পরস্পরের ওপর নির্ভরতা ছিল, তা কী করে চলে গেল? এখন কয়েক দিন চোখের আড়াল হলেই বাদলের মনে হয়, রেণু বুঝি তাকে ভুলে গেছে। কিংবা, অন্য কোনও রূপবান, গুণবান যুবকের সঙ্গে কথা বলছে। হেসে হেসে। দেবুদার পর্বটা অনেকটা চুকেছে। মহীশূর থেকে ফেরার কয়েক দিন পর বাদল নিজেই রেণুর সঙ্গে দেখা করে তার মান ভেঙেছিল। তখন সব মিলিয়ে বাদলের অপরাধবোধ খুব প্রবল ছিল।

অফিসে চাকরি নেবার পর রেণুর সঙ্গে আর নিয়মিত দেখা হয় না। রেণু কখনও কখনও বাড়িতে আসে। আজ সকাল থেকে নানা রকম পারিবারিক ঝামেলার কথা চিন্তা করতে করতে বাদলের একসময়ে মনে হয়েছে, রেণুকে আমার চাই। রেণুকে আরও বেশি সময়ে খুব কাছাকাছি না পেলে আমি বেঁচে থাকতে পারব না।

ক্লাস শেষ হয়ে গেছে। ছেলেমেয়েরা বেরিয়ে আসছে, গেটের কাছে রেণুকে দেখতেও পেল বাদল। কিন্তু রেণু রাস্তা পার হবার পরেই একটা মিছিল এসে পড়ল। পর পর তিনটি গাড়ি আসছে ধীর গতিতে, তার সামনে পেছনে একদল ছেলে লাফালাফিই করছে মহা উৎসাহে। বিরাট বড় কংগ্রেসের পতাকা, গান্ধীজির ছবি, সেই সঙ্গে ইনকিলাব জিন্দাবাদ ধ্বনি। মাঝখানের জিপ গাড়িতে ফুলের মালা গলায় এক ব্যক্তি হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছেন। বাদল চিনতে পারল। শংকর বোস। কাশীপুর বাই ইলেকশানের ফলাফল বেরিয়েছে আজ, শংকর বোস বিপুল ভোটাধিক্যে জয়ী হয়েছেন। উনি যে জিতবেনই সবাই জানত–তবু এই আনন্দ উৎসবের মিছিল।

বাদল ওই মিছিলের সব মানুষ এবং গাড়ি তিনটের মধ্যে দ্রুত চোখ বোলাল একবার। শংকর বোসের গাড়িতেই সে দেখতে পেল দীপ্তিদিকে। মৃদু হাসিমাখা মুখে দীপ্তিদি আরও দু-তিন জন মহিলার সঙ্গে বসে আছেন পেছনের সিটে। বাদলের একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল। এই জন্যই তার মনে হয়েছিল, সূর্যদা যখন ফিরলই, এত দেরি করে ফিরল কেন?

বাদল একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল দীপ্তিদির দিকে। হঠাৎ মনে পড়ে গেল একদিনের কথা। বড়বাবু যে-দিন সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন সে-দিন বাদল সূর্যকে খুঁজতে গিয়েছিল দীপ্তিদির বাড়িতে। ঘরের মধ্যে সূর্যদা আর দীপ্তিদি ছাড়া আর কেউ ছিল না। ওদের চোখের দৃষ্টি দেখেই বোঝা গিয়েছিল, ওরা পরস্পরকে গভীর ভাবে ভালোবাসে। তবু ওরা এত দূরে সরে গেল কেন?

উল্লাস-মিছিলটা এইটুকু পথ পেরিয়ে যাবার জন্য যতটুকু সময় লাগা উচিত ছিল, তার চেয়েও বেশি সময় লাগছে। সামনের দিকটা থেমে পড়েছে হঠাৎ, তরুণ ভলান্টিয়াররা নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে। সাধারণত বিপক্ষ দলের শক্ত ঘাঁটিগুলোর সামনেই জয়ের আনন্দ বেশি করে দেখাবার নিয়ম। কলেজ পাড়ার ইউনিয়নগুলো অধিকাংশই এখন এস এফ-এর দখলে, তাই কংগ্রেসের ছেলেরা এখানে বীরত্ব দেখাতে চায়। বাদল যদিও আবার তার পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছে, তবু রক্তের মধ্যে তার রেশ রয়ে গেছে। এখনও। সে নির্বিকার থাকতে পারে না, ভোটে-জেতা কংগ্রেসিদের এই আস্ফালন দেখে। তার রাগ হয়, দাঁতে দাঁত চেপে সে চোয়াল শক্ত করে।

জিপের ওপর দাঁড়িয়ে শংকর বোস হাত জোড় করে, এ-দিকে ও-দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে জনতার অভিনন্দন গ্রহণ করছেন। তবে সাধারণত এইসব পরিস্থিতিতে এইসব লোকের মুখে যে একটা বিগলিত হাসি থাকে, ওঁর মুখে সে রকম হাসিটা নেই। বরং বেশ খানিকটা ক্লান্ত ভাব। দেখলেই মনে হয়, মানুষটি তার জীবনে বহু পথ ও বহু সংঘর্ষ পার হয়ে এসেছেন। এখন যেন তার খানিকটা বিশ্রাম ও আরামের প্রয়োজন। খবরের কাগজগুলো আগে থেকেই ভবিষ্যৎবাণী করে রেখেছে, ভোটে জিতলেই শংকর বোস অন্তত রাষ্ট্রমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী হবেনই। অর্থাৎ ক্লান্ত বিপ্লবীর জন্য এবার আরামের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে।

মিছিলটা পার হতে হয়তো সময় লেগেছিল দশ বা বারো মিনিট। কিন্তু বাদলের মনে হল ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে। সে অধীর হয়ে উঠল। তার মনে হল এই মিছিলটা একটা অজগর সাপের মতন তার আর রেণুর মাঝখানে পড়ে আছে–কিছুতেই দু’জনকে। কাছাকাছি আসতে দিচ্ছে না। ভিড়ের আড়ালে রেণুকে আর দেখা যাচ্ছে না এখন। এরপর কি আর রেণুকে সে খুঁজে পাবে? মনশ্চক্ষে সে একটা অজগর সাপই দেখতে পাচ্ছিল, ঘোর ভেঙে সে নিজেকে ভর্ৎসনা করল। মনে মনে বলল, আমি বড় বেশি রোমান্টিক, তাই আমার এত দিনেও একটুও বাস্তব বুদ্ধি হল না। শুধু শুধু মনগড়া দুঃখে আমি কষ্ট পাই। মিছিল আর কতক্ষণ থাকবে, এক্ষুনি চলে যাবে, রেণুকে আমি খুঁজে পাব। ওই তো, মিছিল নড়তে শুরু করেছে, অজগর নয়, মিছিলই। সে আবার তাকাল দীপ্তিদির দিকে। দীপ্তিদি বড় সুন্দর। যেন দীপ্তিদি বাদলেরই প্রেমিকা, এই ভাবে বাদল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বস্তুত বাদলের দীর্ঘশ্বাসের কারণ এত সরল নয়, আরও অনেক জটিল।

বাদল রেণুকে আগেই দেখেছিল, কিন্তু রেণু তো তাকে দেখেনি। রেণু তার দু’জন বান্ধবীর সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছিল বাস স্টপের দিকে, বাদল দ্রুত হেঁটে তার আগেই সেখানে দাঁড়াল। রেণুর চোখে চোখ ফেলার চেষ্টা করল। রেণু কী একটা গল্পে মত্ত। অন্য দিন। হলে বাদল অন্য মেয়ের সামনে রেণুর সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা পেত, কিন্তু আজ সে। কিছুতেই রেণুকে চোখের আড়াল হতে দিতে পারে না। সে কাছে গিয়ে ডাকল, ইন্দ্রানী!

রেণু মুখ ফিরিয়ে বাদলকে দেখল, তারপর বান্ধবীদের কাছ থেকে বিদায় না নিয়েই এগিয়ে এল বাদলের দিকে। অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত গলায় জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে? কী?

বাদল হকচকিয়ে গিয়ে বলল, কিছু হয়নি তো? কেন?

তুমি হঠাৎ দুপুরবেলা—

এমনিই। মানে—

কিছু হয়নি তা হলে? বাবাঃ!

রেণু হেসে ফেলল। মেয়েদের এ রকম আকস্মিক হাসির অর্থ ছেলেরা আবার কবে বুঝতে পেরেছে! বাদল বিমূঢ় ভাবে তাকিয়ে রইল।

রেণু মুখ তুলে তার সঙ্গিনীদের উদ্দেশে বলল, তোরা যা, আমি একটু পরে যাব।

তারপর আবার বাদলের দিকে ফিরে বলল, মুখ-চোখের কী রকম চেহারা হয়েছে। তোমার, গলার আওয়াজ অন্য রকম–”আমি ভয় পেয়ে ভাবলাম কিছু একটা বিপদ হয়েছে বুঝি!

মুখ-চোখের চেহারা কী রকম?

জানো না? ওই পানের দোকানের আয়নায় মুখটা দেখে নাও? মাসিমা কেমন আছেন?

বাদল এর মধ্যে এক দিনও অফিস কামাই করেনি, দুপুরে পালায়নি, সুতরাং হঠাৎ তাকে দেখে রেণু ধরে নিয়েছে অন্য কিছু। কিন্তু মুখ-চোখের চেহারা পালটাল কেন? বাদল জানে না। রেণু কি ভেবেছে, বাদল আর কখনও হঠাৎ যে-কোনও সময়ে রেণুর

সঙ্গে দেখা করতে আসবে না?

রেণু খবর জানতে চেয়েছিল বলেই বাদল বলল, জানো, সূর্যদা ফিরে এসেছে।

রেণু উৎসাহিত হয়ে বলল, তাই নাকি? কোথায় ছিলেন এতদিন? কী রকম চেহারা হয়েছে?

মুখ-ভরতি দাড়ি গোঁফ।

আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। একদিন আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসো না।

খুব ব্যস্ত। তুমি এসো আমাদের বাড়িতে। এখন চলো না।

এখন? এখন যে আমাকে একবার বাড়িতে ফিরতেই হবে।

প্লিজ রেণু, আজ একটু থাক আমার সঙ্গে। আমি তোর সঙ্গে কয়েকটা কথা বলতে চাই।

কয়েকটা কথা মানে আগে থেকে ঠিক করা বিশেষ কোনও কথা নয়। বাদল চাইছে রেণুর সঙ্গ। শরীরের যে একটা দুরন্ত পিপাসা আছে, তা কিছুক্ষণের সান্নিধ্য ও কথাবার্তাতেও অনেকখানি মেটে। আজ সকালেই বাদল ঠিক করেছে, রেণুকে অনেকক্ষণের জন্য কাছাকাছি না পেলে তার চলবে না, সে বিদেশে পালাতে পারেনি, এবার রেণুর বুকের কাছে আশ্রয় নেবে। আর দু’বছরের মধ্যেই বিয়ে করবে সে, ততদিনে রেণুর পরীক্ষা হয়ে যাবে। একথাটা রেণুকে এখন জানাবার দরকার নেই।

রেণু বলল, কিন্তু আমার যে বাড়ি ফেরা বিষম দরকার এখন?

কেন, কেউ আসবে বুঝি?

বাদলের এই প্রশ্নের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস ছিল, রেণু তা পছন্দ করল না। সে দৃষ্টিতে সামান্য ছিঃ দিয়ে তাকাল বাদলের দিকে। তারপর বলল, তুমিও চলো আমার সঙ্গে।

বাদল দুঃখিত ভাবে বলল, তোের কাজ থাকলে আমি আর গিয়ে কী করব?

আমি শাড়িতে বাটিকের কাজ করছি। রং টং সব ভিজিয়ে রেখে এসেছি। এখন না। গেলে সব নষ্ট হয়ে যাবে। তুমি চলো আমার সঙ্গে, আমি রং করব, তুমি পাশে বসে গল্প করবে।

বাদলের মনের মেঘ কেটে গেল। এটা একটা ভালো আহ্বান। মেয়েদের কোনও রকম মেয়েলি কাজ করতে দেখলে বাদলের সেই সময়টা বেশ ভালো লাগে। যেমন রান্নাঘরে। কুটনো কুটতে বসা কিংবা স্নান করার পর চুল ঝাড়ার সময়, কিংবা মেয়েরা যখন কাঁচের চুড়ি পরে, তখন বাদলের চোখে তাদের অন্য রকম একটা রূপ ভেসে ওঠে, যাতে অন্য রকম মোহ। রেণুর বাটিক রচনার দৃশ্যও সে উপভোগ করবে।

উৎসাহে দরাজ হয়ে বাদল একটা ট্যাক্সি ডেকে বসল। রেণুর আপত্তি শুনল না। ট্যাক্সিতে উঠে সে রেণুকে জিজ্ঞেস করল, তুমি তোমার দু’জন বন্ধুর সঙ্গে বাসে উঠতে যাচ্ছিলে–তারপর আমার সঙ্গে চলে এলে, ওরা কিছু ভাবল না?

রেণু বলল, ভাবুক না! তুমি একদিন বলেছিলে, অন্য লোকের সামনে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলি না। আসলে তা নয়। তুমিই অন্য লোকের সামনে আমার সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা পাও! তোমার মনের মধ্যে সব সময় থাকে, অন্য কে কী ভাবছে। আমি তা গ্রাহ্য করি না।

এটা তর্ক করার বিষয় নয়। বাদল সন্ধি করার কার্যক্রম হিসেবে রেণুর একটা হাত তুলে নিল নিজের হাতে। কী পরিচ্ছন্ন নরম হাত। আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে রং লেগে আছে, না, মেহেদি নয়, সকালবেলা বাটিকের রং গুলেছিল। অনেক দিন পর বাদলের মাথায় দু’লাইন কবিতা জেগে উঠল অকস্মাৎ! প্রথম শ্লোক উচ্চারণের পর বাল্মীকি যেমন বিস্মিত হয়েছিলেন, ততটা না হলেও বাদল রীতিমতন অবাক হয়ে মনে মনে বলেছিল, এ কী! আবার কবিতার উৎপাত কেন? পরে বাদলের সেই কবিতাটি ছাপা। হয়েছিল বুদ্ধদেব বসুর কবিতা পত্রিকায় এবং আবু সয়ীদ আইয়ুবয়ের মতন বিদগ্ধ সমালোচক দু-এক জনকে বলেছিলেন, ছেলেটি কে? বেশ লিখছে তো!

কবিতার সৌরভ অবশ্য বেশিক্ষণ রইল না। রেণুদের বাড়ির গেটে ওর ছোটকাকা দাঁড়িয়ে ছিলেন। রেণু ও বাদলকে ট্যাক্সি থেকে নামতে দেখে তিনি সরু চোখে তাকালেন। তারপর তার অখুশি মুখে অনাবশ্যক হাসি ফুটিয়ে বললেন, এই যে, বাদলকুমার যে, অনেক দিন দেখিনি! কোথায় ছিলে?

ছোটকাকা সম্পর্কে বাদলের মনোভাব রেণু জানে। তাই সে তাড়াতাড়ি বাদলকে বলল, চলো, ওপরে চলো–।

কিন্তু ছোটকাকা বাদলের হাত ধরে বললেন, আরে বোসো বোসো। এখানে একটু বোসো, তোমার সঙ্গে গল্প করি। চাকরিবাকরি পেয়েছ?

বাদলকে ফেলেই রেণু তর তর করে ওপরে উঠে গেল। দু-তিন মিনিটের মধ্যেই। আবার নেমে এসে বলল, এই ওপরে এসো। মা তোমাকে খাবার দিয়েছেন!

ছোটকাকার হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে বাদল রেণুর সঙ্গে উঠতে লাগল সিঁড়ি দিয়ে। মনটা আবার একটু বিস্বাদ হয়ে গেছে। মামলাবাজ ছোটকাকাটি অতি পাজি, হাসতে হাসতে অনেকখানি বিষ ঢেলে দিয়েছে বাদলের কানে।

সিঁড়ির বাঁক ঘুরে রেণু থমকে দাঁড়াল। তারপর বলল, এই সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে প্রথম স্বাধীনতার দিনে আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, মনে আছে?

বাদলের মনে ছিল না। মনে পড়ল। সে ঘাড় নাড়ল।

রেণু বলল, তুমি আমার জন্য অন্তত আমাদের বাড়ির কারওর ওপর কখনও রাগ করবে না। পারবে?

পারব।

মুড়ি, চিঁড়েভাজার সঙ্গে নারকোলকোরা আর চিনি মিশিয়ে একবাটি দেওয়া হল বাদলকে। রেণুদের বাড়িতে এই সুখাদ্যটি বাদল আগে অনেক বার খেয়েছে। আজ অবশ্য অনেক দিন পরে ওপরে এসেছে। কিন্তু রেণুকে আর নিরিবিলি পাওয়া গেল না। সে বাটিকের রং করতে বসতেই তার কাকিমা, পিসিমা এবং অন্য ছেলেমেয়েরা এসে ভিড় করে রইল।

একটু বাদে সেখানে এসে দাঁড়ালেন রেণুর মা। মুখখানায় গাম্ভীর্য ও দুঃখ মাখা। ছেলেবেলায় বাদল সব সময় রেণুর মাকে হাসিখুশি দেখেছে। দেখলেই মনে হত, খুব সরল ধরনের ভালোমানুষ। পর পর কয়েকটা নিদারুণ শাক পেয়ে ওঁর আর মাথার ঠিক নেই এখন।

একটুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর তিনি বাদলের দিকে তাকালেন। বাদল তাড়াতাড়ি হাতের বাটিটা নামিয়ে রেখে ওঁকে প্রণাম করল। রেণুর মা বললেন, বাদল, আমার সঙ্গে একটু এসো তো, তোমার সঙ্গে দুটো কথা আছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *