এত বিশাল নদী, যেন অপার বারিধি। সত্যিই, এই নদীর প্রান্তে দাঁড়ালে যেন সমুদ্র দর্শন হয়। শুধু উত্তাল জলরাশি, পরপর দেখা যায় না। নদী নয় অবশ্য, নদ, সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার মানসপুত্র, ব্রহ্মপুত্র। ব্রহ্মপুত্র মহাভাগে শান্তনু কুলনন্দন। তিব্বতের মানস সরোবরে এর উৎপত্তি, তিব্বতের আদি নাম শাংপো, সংস্কৃতে সেই শাংপো-ই হয়েছে শান্তনু। পাহাড় থেকে সমতলে নামার পর এই নদ ক্রমশ বিশাল আকার ধারণ করেছে। আসামের ব্রহ্মপুত্ৰ তেজী, দুর্দান্ত; উত্তরবঙ্গে কুড়িগ্রামের কাছে অপেক্ষাকৃত শান্ত কিন্তু সুবিস্তৃত।
লোকে অবশ্য মুখে মুখে নদীই বলে। নদ-নদীগুলির কে নামকরণ করেছে কে জানে, কেন একটি জলধারা হবে নদ, অন্যটি হবে নদী, তাও জানার কোনও উপায় নেই, এখন লিঙ্গ নির্ধারিত থাকে কাগজে কলমে, সাধারণ মানুষ সব নদীকেই নারী মনে করে, তাই ব্ৰহ্মপুত্ৰও নদী।
এই ব্ৰহ্মপুত্র বক্ষে একটি বড় আকারের বজরায় কয়েকদিন ধরে আস্তানা গেড়েছে দ্বারিকানাথ ও বসন্তমঞ্জরী। তাদের পুত্রসন্তানটির বয়েস এখন ছ’ বছর, ভারী সুশ্রী ও বুদ্ধিমান ছেলে, তার নাম সত্যানন্দ, ডাকনাম ছোটকু। পাহারাদার, দাস-দাসী-পাঁচক নিয়ে জলের ওপর রীতিমতন এক সংসার। ওই সব কর্মচারীদের জন্য বজরার সঙ্গে বাঁধা আছে আরও দুটি বোট।
রাত পোহালে সর্বপ্রথম ঘুম ভাঙে বসন্তমঞ্জরীর। একেবারে ব্রাহ্ম মুহূর্তে। প্রতিদিন সূর্যোদয় দেখা তার নেশার মতন দাঁড়িয়ে গেছে। দ্বারিকা অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমোয়, সূর্য দেখার জন্য তাকে ডাকলেও সে জাগে না, বরং বিরক্তি প্রকাশ করে। আর কেউই জাগে না, বজরার ছাদে উঠে হাঁটু গেড়ে সূর্যমুখী হয়ে বসে থাকে বসন্তমঞ্জরী। নদীগর্ভ থেকে একটি লাল গোলকের মতন লাফিয়ে উঠে আসে সুর্য, তখন তাকে আকাশের বদলে জলের দেবতা বলে মনে হয়, সেই মুহূর্তটিতে হাত জোড় করে বসন্তমঞ্জরী প্রণাম জানায়, কোনও কোনও দিন খুব মৃদু স্বরে আপনমনে গান করে। সেই গান অনেকটা কান্নার মতন শোনায়। কবে যে বসন্তমঞ্জরীর মনে গান আসবে তার ঠিক নেই, কখনও মাসের পর মাস সে গান করে না, স্বামীর অনুরোধেও গলা খোলে না, আবার হঠাৎ এক এক দিন নিজে থেকে গেয়ে ওঠে। [ স্বামী-পুত্র নিয়ে সুখের সংসার, কোনও কিছুরই অভাব নেই, তবু বসন্তমঞ্জরী ঠিক সংসারী হতে পারল না। তার মধ্যে একটুও গৃহিণীপনা নেই। প্রতিদিন কী রান্না হবে তা নিয়ে সে মাথা ঘামায় না, কোনও খাদ্যদ্রব্যের প্রতিই তার নিজস্ব ঝোঁক নেই, টাকা-পয়সা, গয়নাগাঁটি বিষয়েও লোভ নেই, এমনকী নিজের ছেলের সম্পর্কেও যেন সে খানিকটা উদাসীন। প্রতিটি মা-ই সন্তানকে ভালবাসে, বসন্তমঞ্জরীই বা ভালবাসবে না কেন, কিন্তু সে ছেলেকে নিয়ে আদিখ্যেতা করে না, ছেলের জন্য একটি ভৃত্য নিযুক্ত আছে, তার ওপর ভার দিয়েই সে নিশ্চিন্ত। সে যেন সুরলোকের মানুষ, কখনও পুরোপুরি বাস্তবে নেমে আসে না, কখনও সখনও সে গাছপালার দিকে অনেকক্ষণ এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে, যেন সে প্রকৃতির নিঃশব্দ সঙ্গীত শুনতে পাচ্ছে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে সে পূর্ণিমার চাঁদ দেখার জন্য ছাদে বসে থাকে একা। পুকুরে স্নান করতে গেলে যেন জলের সঙ্গে কথা বলে। হঠাৎ হঠাৎ সে ঘরের সাদা দেওয়ালের দিকে এমন ভাবে মনোযোগী হয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, যেন কোনও গ্রন্থ পাঠ করছে।
অনেকে আড়ালে বসন্তমঞ্জরীকে পাগল বলে, দ্বারিকার বোন-ভগ্নীপতি ও অন্যান্য আত্মীয়রা মনে করে, বসন্তমঞ্জরীর হাব-ভাব মোটেই স্বাভাবিক নয়। তা তো মনে করবেই। অধিকাংশ সংসারী মানুষই একরকম ধরাবাঁধা নিয়মে চলে, যাদের সঙ্গে তাদের ব্যবহার মেলে না, তাদেরই তারা মনে করে অস্বাভাবিক। দ্বারিকা তার স্ত্রীর এই সব পাগলামি মোটামুটি পছন্দই করে, শুধু একটি ব্যাপার ছাড়া। মাঝে মাঝে বসন্তমঞ্জরীর মুখচোখের চেহারা বদলে যায়, তখন যেন তার শরীরে কিছু একটা ভর করে, সে ভবিষ্যদ্বাণী করতে থাকে, যে-ঘটনা তখনও ঘটেনি তা সে বলে দেয়, কিংবা অনেক দূরে যা ঘটছে, তা যেন দেখতে পায় সে। দ্বারিকা তখন খুব অস্বস্তি বোধ করে, নিজের স্ত্রীকে কেউ জাদুকরী হিসেবে দেখতে চায় না। এ জন্য দ্বারিকা কবিরাজ ডেকে চিকিৎসাও করিয়েছে বসন্তমঞ্জরীর। বসন্তমঞ্জরী নিজেও ওই ব্যাপারটার জন্য লজ্জা পায়, ঘোর কেটে গেলে সে কান্নাকাটি করে, স্বামীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বারবার বলতে থাকে, কেন, কেন আমার এমন হয়! আমি নিজেই যে কিছু বুঝি না।
বসন্তমঞ্জরীর বিবাহ উপলক্ষে বেশ শোরগোল পড়ে গিয়েছিল শহরে। নিজের প্রজারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে ক্রুদ্ধ দ্বারিকা বিক্রি করে দিয়েছিল জমিদারি। তারপর সে এটা-সেটা ব্যবসায়ের চেষ্টা করেছিল, কোনওটাতেই তেমন সফল হয়নি। তা ছাড়া বসন্তমঞ্জরী এক জায়গায় বেশিদিন থাকতে চায় না, কলকাতায় তার মন টেকে না, অনবরত ভ্রাম্যমাণ হলে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে কী করে? অনেক ভেবে-চিন্তে দ্বারিকা সঞ্চিত অর্থ দিয়ে আবার একটি জমিদারি কিনে ফেলেছে। জমিদারিই এখন সবচেয়ে লাভজনক, সর্বক্ষণ জমিদারের উপস্থিতির প্রয়োজন হয় না, নায়েব-গোমস্তা দিয়ে কাজ চালানো যায়, জমিদারের দর্শন যত দুর্লভ হয়, প্রজারা তত বেশি সমীহ করে। তার অসামাজিক বিবাহের কথা মানুষের মনে নেই।
দ্বারিকার আগের জমিদারি ছিল খুলনায়, এখন কিনেছে জঙ্গিপুরে। যে ঋণগ্রস্ত জমিদারের কাছ থেকে দ্বারিকা এটি কিনেছে, তার আরও পাঁচটি তালুক ছড়িয়ে আছে বাংলার বিভিন্ন জেলায়। দ্বারিকা এক সঙ্গে সব কিছুরই মালিক হয়েছে, তবে দূর দূর স্থানের ছোটখাটো তালুকগুলির খবরদারি করা কষ্টকর, সে জন্য সেগুলি আস্তে আস্তে বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছে সে। কুড়িগ্রামের কাছে সেরকম একটি তালুক আছে। কিন্তু এ জায়গাটিতে এসে এখানকার প্রকৃতির শোভা দেখে মুগ্ধ হয়েছে বসন্তমঞ্জরী, তাই অচিরে এই তালুক বিক্রি করার সংকল্প পরিত্যাগ করা হয়েছে। এখানে বেশ কিছু দিন থেকে যাবার আরও একটি কারণ আছে। বঙ্গভঙ্গের ফলে এই জেলা নবগঠিত প্রদেশ পূর্ববঙ্গ ও আসামের মধ্যে পড়েছে, এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে এখনও। সরকারি স্কুলের ছাত্ররা বন্দেমাতরম ধ্বনি দিতে দিতে প্রতিবাদ মিছিল করেছিল, সেই অপরাধে সেপাইরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ছাত্রদের লাঠিপেটা করেছে, রক্তপাতও হয়েছে যথেষ্ট, শুধু তাই নয়, গভর্নর সাহেবের নির্দেশে সেই স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য। এই ঘটনা শুনে দ্বারিকা দারুণ বিক্ষুব্ধ। সে ঘোষণা করে দিয়েছে, নিজ ব্যয়ে সে এখানে একটি স্কুল খুলে দেবে, যা সরকারি সাহায্যের তোয়াক্কা করবে না। সেই স্কুল ভবন দ্রুত নির্মিত হচ্ছে, শেষ হলে দ্বার উদঘাটন করে দিয়ে তবে সে কুড়িগ্রাম ছেড়ে যাবে বগুড়ার দিকে।
কাল শেষ রাতে জোর একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে, আকাশ এখনও মেঘলা। আজ সূর্যোদয় দেখা যাবে কি না সন্দেহ। বজরার ছাদে বসে আছে বসন্তমঞ্জরী, পূর্ব দিকে মুখ করে। একটু একটু আলোয় ছিঁড়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে অন্ধকার। ফিনফিনে বাতাসে কাঁপছে ব্রহ্মপুত্রের জল।
অনেক দিন পর আপনা আপনি বসন্তমঞ্জরীর কণ্ঠ থেকে সুর বেরিয়ে এল।
আষাঢ় শ্রাবণ মাসে নব ঘন মেঘ ডাকে
বিজুলি চমকে লাগে ডর, চল যাবো ঘর
কদমতলায় নিশি হল ভোর।
একটা কদমের তলে
কৃষ্ণ ঘুমালো বলে
বাঁশিটি তো নিয়ে
গেল চোর….
হঠাৎ গান থামিয়ে দিয়ে দ্রুত পদে নীচে নেমে এল বসন্তমঞ্জরী। স্বামীর কক্ষে এসে পালঙ্কের পাশে দাঁড়াল। নাসিকা-গর্জন করতে করতে হাত-পা ছড়িয়ে নিদ্রিত রয়েছে দ্বারিকা। তার চেহারাটি এখন বেশ স্থূল, সেই অনুযায়ী গোঁফটিও সুপক্ক হয়েছে, জমিদার হিসেবে তাকে বেশ মানায়। বসন্তমঞ্জরী আগেকার মতনই তন্বী।
আস্তে আস্তে স্বামীর গায়ে কয়েকবার ঠেলা দিয়ে সে ডাকল, এই, এই, একটু উঠবে?
অত সহজে জেগে ওঠার পাত্র নয় দ্বারিকা। গত রাতে একটু বেশি মদ্যপান হয়েছে। সেই সঙ্গে গুরুভোজন, বেলা দশটা-এগারোটার আগে তার ঘুম ভাঙার কথা নয়।
বসন্তমঞ্জরী ব্যস্তভাবে জোরে জোরে ঠেলতে লাগল।
নাসিকা-গর্জন থেমে গেল দ্বারিকার, একটু পরে চোখ না মেলে বিরক্তভাবে বলল, কে?
বসন্তমঞ্জরী বলল, ওগো, বজরাটা চালাতে বলবে?
দ্বারিকা বলল, কী?
বসন্তমঞ্জরী খুব কোমল অনুনয়ের সুরে বলল, বজরাটা তিন দিন ধরে এই এক জায়গায় থেমে আছে, আমার ভাল লাগছে না। একটু চালাতে বলো না!
পুরোপুরি চক্ষু মেলল দ্বারিকা, কথাটা বুঝতে কিঞ্চিৎ সময় নিল। তারপর বলল, এই আবার পাগলামি শুরু হল! এখনও সুয্যি ওঠেনি, কাকপক্ষী ডাকেনি এখন বজরা চালাবে কে? দাড়ি-মাঝিরা গ্যাঁজায় দম দিয়ে ঘুমোচ্ছে!
বসন্তমঞ্জরী বলল, তুমি ডাকলে তারা উঠবে না?
দ্বারিকা আবার পাশ ফিরে চক্ষু মুদে বলল, ঠিক আছে, তোর ইচ্ছে হয়েছে যখন, দুপুরবেলা চালাতে বলব!
বসন্তমঞ্জরী বলল, না দুপুরে চাই না! এখন! এখানকার আকাশ মেঘলা, আজ সূর্যোদয় দেখা যাবে না, খানিক দূর গেলে দেখা যাবে।
দ্বারিকা বলল, এমন উদ্ভুট্টে কথা কখনও শুনিনি! মেঘ কি এক চিলতে হয়। এখানে যে-মেঘ, দশ মাইল দূরে গেলেও সেই মেঘ। এখন উঠে সবাই মিলে তৈরি হতে হতেই অনেক বেলা হয়ে যাবে। সুয্যি কি বসে থাকবে তোর জন্য! আমাকে আর একটু ঘুমোতে দে!
বসন্তমঞ্জরী ব্যাকুলভাবে বলল, বড় বজরা ছাড়তে যদি অসুবিধে হয়, একটা ছোট বোট নিয়ে তো যাওয়া যায়। চলল, আমার খুব ইচ্ছে করছে!
অন্য কেউ এ রকম বেয়াদপি করলে সিংহগর্জনে ধমক দিত দ্বারিকা। সে শুধু কটমট করে তাকাল স্ত্রীর দিকে। এই ছোট্টখাট্ট তরুণীটির কাছে সে জব্দ। একে সে বকুনি দিতে পারে না। কারণ, সে জানে, সংসারে মন গাঁথেনি বসন্তমঞ্জরীর, জাগতিক কোনও বিষয়ের প্রতিই তার আসক্তি নেই, তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে সে হঠাৎ এ সংসার ছেড়ে চলে যেতে পারে। আত্মহননও বিচিত্র নয়। সেই জন্যেই এর অনেক অযৌক্তিক আবদার তাকে মেনে নিতে হয়।
সে বলল, ঠিক আছে কাল সকালে যাব। আজ ব্যবস্থা করে রাখব।
বসন্তমঞ্জরী তবু বলল, না, আজই। চলো, ছোট নৌকোয় দুজনে বেড়াতে যাই। এই ভোরের হাওয়া গায় মাখলে তোমারও ভাল লাগবে।
শেষপর্যন্ত বসন্তমঞ্জরীর জেদই বজায় রইল। শয্যা ছেড়ে দ্রুত তৈরি হয়ে নিল দ্বারিকা। পাশের কামরায় ছোটকু গভীর ঘুমে মগ্ন, বসন্তমঞ্জরী তাকে ডাকল না, ঝুঁকে তার ললাটে আলতো একটা চুমো দিয়ে চলে এল।
ছোট নৌকোটিতে একজন মাঝিই যথেষ্ট। জলিল নামে সেই মাঝিটি প্রতিদিন প্রত্যুষে উঠে নামাজ পড়ে। তাকে ডেকে তোেলার প্রয়োজন হল না। মেঘ আরও জমাট হয়েছে, এ বেলা সূর্য দর্শনের আশা নেই। আলো ফুটতে পারছে না ভাল করে, নদীর জল গভীর কৃষ্ণবর্ণ। তবে বাতাসের স্পর্শ সত্যি উপভোগ্য।
তাকিয়ায় হেলান দিয়ে আধো-শোওয়া হয়ে রয়েছে দ্বারিকা, তার পায়ের কাছে বসে আছে। বসন্তমঞ্জরী। প্রতিদিন সূবন্দনা করে সে প্রীত হয়, আজ সূর্যহীন আকাশের দিকে চেয়েও সে আনন্দবোধ করছে।
মাঝি জিজ্ঞেস করল, কোন দিকে যাব হুজুর?
দ্বারিকা বলল, চল, যেদিকে তোর মন চায়। হ্যাঁ রে, ঝড়-টড় উঠবে না তো? দেখিস বাবা, ডোবাসনি। এই ধড়া চূড়ো পরে সাঁতরাতে পারব না।
নৌকো চলল, দক্ষিণ দিকে। বসন্তমঞ্জরী একবার পেছন ফিরে দেখে নিল। তাদের বজরাটা ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। সে আস্তে আস্তে মাথা দুলিয়ে স্বামীকে জিজ্ঞেস করল, এখন বলো, ভাল লাগছে না? ঘুমোলে কত সময় নষ্ট হয়। আজকের দিনটা কেমন অন্যরকম। রাত শেষ হয়ে গেছে, অথচ সকাল হয়নি।
দ্বারিকা বলল, মন্দ লাগছে না ঠিকই। কিন্তু এখন যদি ঝুপঝুপিয়ে বৃষ্টি নামে, একেবারে পাঁঠা-ভেজা ভিজব!
বসন্তমঞ্জরী বলল, না হয় একদিন ভিজলাম!
দ্বারিকা বলল, বেশি ভিজলে নির্ঘাত সান্নিপাতিক হবে, কোবরেজের তেতো ওষুধ গিলতে হবে, মনে থাকে যেন!
বসন্তমঞ্জরী বলল, জ্বর হলে আমার ভাল লাগে, মাথার মধ্যে ঝাঁ ঝাঁ করে, চক্ষু বুজে আসে, যেন বয়েস কমে যায়, কত কী দেখি ছোটবেলায় আমার খুব জ্বর হত। নবদ্বীপের গঙ্গায় জ্বর গায়ে নাইতাম।
কিছুদূর যাবার পর দেখা গেল, আর একটা ছোট নদী ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিশেছে। দ্বারিকা মাঝিকে জিজ্ঞেস করল, জলিল মিঞা, এটা কী নদী? এটাই সেই বাঙালি নদীটা নাকি?
জলিল বলল, না, হুজুর, এইটা বাংগালি নদী না। সেইটা পাবেন কানাইপাড়ার কাছে। এর নাম ধরলা।
দ্বারিকা বলল, বাঙালি নদী! কী অদ্ভুত নাম। বিষখালি, তেতুলিয়া, শারিগোয়াইন, পিয়াইন, ঘাঘাট, কতরকম নামই যে হয়! এটার নাম ধরলা, তা হলে ছাড়লা নামেও নদী আছে নাকি?
জলিল বলল, কী জানি হুজুর, থাকলেও থাকতে পারে। এত বড় দ্যাশ, আমি আর কতটুকু জানি! বগুড়া জেলার ওই ধারে আর যাই নাই কখনও!
দ্বারিকা বলল, পদ্মা দেখিসনি? গঙ্গা দেখিসনি? ঠিক আছে, তোকে একবার কলকাতায় নিয়ে যাব।
জলিল নিজের বুকে এক হাত ছুঁইয়ে বলল, ইনসা আল্লা—
দ্বারিকা এবার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, তা হলে এবার ফেরা যাক?
বসন্তমঞ্জরী শাখা নদীটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দেখার কিছুই নেই, কোনও নৌকো চলাচল করছে না সেখানে, কোনও মানুষ নেই, তবু সে দেখছে। মুখ না ফিরিয়েই বলল, একবার ওই নদীতে যাই না?
দ্বারিকা বলল, ওখানে গিয়ে কী হবে? অনেক তো ঘোরা হল, এখন একটু চায়ের জন্য মনটা আনচান করছে।
কিন্তু জলিল বলল, এই নদীটায় পানি বেশি নাই। বেশি দূর যাওয়া যাবে না।
বসন্তমঞ্জরীর মাথায় ঘোমটা, মাঝির দিকে সে পেছন ফিরে বসে আছে। স্বামীকে বলল, ওকে বলল, যত দূর যাওয়া যায়। দু’দিকে জঙ্গল দেখা যাচ্ছে, নিশ্চয়ই অনেক পাখি আছে। একটা পাখি চোখ গেল চোখ গেল বলে ডাকতে ডাকতে গলা ফাটায়, সে পাখিটা কেমন দেখতে হয়, কখনও দেখিনি।
দ্বারিকা বলল, আমরা যে পাখিটাকে বলি চোখ গেল, পশ্চিম মুল্লুকে সেটাকেই বলে পিউ কাঁহা। বেশি দূর আর যাব না কিন্তু, বড়জোর আর আধঘণ্টা।
ধরলা নদীর দু’পাশে সত্যিই বেশ ঘন গাছপালা, কোনও জনবসতি দেখা যায় না। বসন্তমঞ্জরী কথা বন্ধ করে এক দৃষ্টিতে দেখছে তীরের দিকে, যেন সে উৎকর্ণ হয়ে রয়েছে কোনও বিশেষ পাখির ডাকের জন্য।
খানিকটা যাবার পর নদী অগম্ভীর হয়ে এল। এখনও পুরোপুরি বর্ষা নামেনি, মাঝে মাঝে চর হয়ে আছে। জলিল জিজ্ঞেস করল, কত্তা, এবার নাওয়ের মুখ ঘুরাই?
বসন্তমঞ্জরী বলল, ওকে নৌকোটা পাড়ে লাগাতে বলল, একটু ঘুরে দেখব!
দ্বারিকা বলল, এখানে তো শুধু জঙ্গল। কী দেখার আছে?
বসন্তমঞ্জরী বলল, জঙ্গলে গিয়ে জঙ্গলই দেখব। তোমার জঙ্গলে ঘুরতে ভাল লাগে না?
দ্বারিকা হেসে বলল, শোনো মেয়ের কথা। খামোখা জঙ্গলে ঘুরতে যাব কেন? শিকারটিকার করতে যাওয়া যায়, এ জঙ্গল তো তেমনও নয়।
বসন্তমঞ্জরী কাতরভাবে বলল, একবারটি নামবে না? আমার যে খুব ইচ্ছে করছে!
দ্বারিকা বলল, সকলই তোমারই ইচ্ছা, ইচ্ছাময়ী তারা তুমি! এখন এই জলকাদার মধ্যে আমাকে হাঁটতে হবে!
কোনওক্রমে কাদা বাঁচিয়ে নামা হল তীরে। এখানে বন বেশ ঘন। পাখির অভাব নেই। গাংশালিকই বেশি, আর একরকম পাখি ট-র-র ট-র-র করে ডাকছে, ওদের বলে জলতরঙ্গ। ছাতারে পাখির দল ঝগড়া করছে মাটিতে নেমে, চোখ গেল শোনা গেল না বটে, কিন্তু কোনও বড় গাছের নিবিড় পাতার আড়ালে একটা হলুদ পাখি ডেকে যাচ্ছে, গৃহস্থের থোকা হোক, গৃহস্থের থোকা হোক। ঘুঘু ডাকছে, ঠাকুর গোপাল ওঠো, ওঠো, ওঠো!
বসন্তমঞ্জরী বিহ্বল হয়ে সেইসব পাখির ডাক শুনতে শুনতে হাঁটছে। হঠাৎ এক জায়গায় থমকে দাঁড়াল সে। যেন তার ঘোর লেগেছে, চক্ষু দুটি বিস্ফারিত, ভুরু দুটি অনেকখানি তোলা, শরীর একটু একটু দুলছে।
দ্বারিকা একটি সোনালি গোসাপ দেখতে পেয়ে সেটাকে ধরার কথা চিন্তা করছিল, ইদানীং বিশেষ চোখে পড়ে না, এই গোসাপের চামড়ায় ভাল চটি জুতো হয়। বসন্তমঞ্জরীর পরিবর্তন সে লক্ষ করেনি।
বসন্তমঞ্জরীর বলল, ও গো, আমার ভেতরটা যেন কেমন কেমন করছে!
দ্বারিকা চমকে মুখ ফিরিয়ে বলল, আঁ, শরীর খারাপ লাগছে? বাসি, এই জন্য নৌকো থেকে নামতে বারণ করছিলুম! চল, শিগগির ফিরে চল। হাঁটতে পারবি, নইলে আমার হাত ধর। চিনি
বসন্তমঞ্জরী বলল, না, সে রকম নয়। কীসে যেন আমায় টানছে। আমার কেন এই রকম হয়। বলো তো?
দ্বারিকা বলল, পাগলামি করিস না। আমার হাত ধরে থাক।
দিন বসন্তমঞ্জরী সে কথায় কান না দিয়ে এক দিকে দৌড় লাগাল। অগত্যা দ্বারিকাকেও ধুতির কোঁচা সামলে ছুটতে হল। হরিণীর মতন এস্ত পায়ে ছুটে যাচ্ছে বসন্তমঞ্জরী, বনের মধ্যে আর একটি ছোট নদী পড়ল, তাতে অতি সামান্য জল, ছপছপিয়ে সে নদী পার হয়ে গেল। তারপর দাঁড়াল একটা ভাঙা মন্দিরের সামনে। দু হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সে।
হতবুদ্ধির মতন দ্বারিকা তার পাশে এসে বলল, কী হল, বাসি? কাঁদছিস কেন? কী হল, আমাকে বল!
মুখ থেকে একটা হাত সরিয়ে বসন্তমঞ্জরী মন্দিরটার দিকে দেখিয়ে বলল, তুমি ওর ভেতরে যাও!
দ্বারিকা বলল, কেন? দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখানে পুজোটুজো হয় না। আমি এই মন্দিরের মধ্যে যেতে যাব কেন?
বসন্তমঞ্জরী দ্বারিকার পায়ের কাছে বসে পড়ে অতি কাতর স্বরে বলল, লক্ষ্মীটি, তোমার পায়ে পড়ি, একবার ভেতরে গিয়ে দেখে এসো!
এ তো বিশুদ্ধ পাগলামি। এর সঙ্গে তর্ক চলে না। বোঝাই যাচ্ছে, বসন্তমঞ্জরীর মাথায় বায়ু চড়ে গেছে। দ্বারিকা ঠিক করল, এ বার কলকাতায় ফিরে সাহেব ডাক্তার দিয়ে ওর চিকিৎসা করাতেই হবে!
দ্বারিকা পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল মন্দিরের দিকে। দরজার একটা পাল্লা ভাঙা। ভেতরটা বেশ অন্ধকার। মাটির কালী মূর্তি উপুড় হয়ে পড়ে মেঝেতে, মাথাটা গড়িয়ে গেছে খানিক দূরে। প্রথমে দ্বারিকার মনে হল, কালীমূর্তির নীচেও আর একটা কোনও মূর্তি! হয়তো শিবের। কিন্তু মূর্তিটা এক কাত হয়ে পড়ে আছে, হাত দুটো মাথার কাছে। কোনও কুমোর বা ভাস্কর মাথায় হাত দেওয়া শিবের মূর্তি গড়ে কি?
আরও কাছে এসে দ্বারিকা দেখল, মূর্তি নয়, একজন মানুষ, সদ্য মৃত।
ছুটে মন্দির থেকে বেরিয়ে এল দ্বারিকা। রাগে তার সমস্ত শরীর জ্বলছে। এখন আর সে সংযম রাখতে পারল না, মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা বসন্তমঞ্জরীর চুলের মুঠি ধরে চিৎকার করে বলল, হারামজাদি, তুই কে? মায়াবিনী না পিশাচী, তোকে আজ বলতেই হবে!
অশ্রু আপ্লুত কণ্ঠে বসন্তমঞ্জরী বলল, আমি জানি না। বিশ্বাস করো, আমি কে, তা জানি না। আমি প্রাণপণে তোমার দাসী হয়ে থাকতে চাই।
দ্বারিকা বলল, মিথ্যে কথা, সব মিথ্যে কথা। তুই নৌকোয় বেড়াবার ছুতো করে আমাকে ঘুম থেকে তুললি, তারপর ভুলিয়ে-ভালিয়ে এখানে নিয়ে এসে আমার বন্ধুর মড়া মুখ দেখালি? কেন? তোকে বলতেই হবে!
বসন্তকুমারী বলল, কেন এমন হয় আমি বুঝি না! মা কালীর নামে দিব্যি করে বলছি, আমার মনের মধ্যে কী হয়, আমি জানি না। তুমি ঠিকই বলো, আমি পাগল। দিন দিন আরও পাগল হয়ে যাচ্ছি।
হঠাৎ কান্না থামিয়ে সে বলল, মরে গেছে?
দ্বারিকা বলল, চতুর্দিক রক্তে মাখামাখি। হতভাগাটা এখানে কেন মরতে এল কে জানে! মনে হয়, কেউ খুন করেছে! তুই কী করে জানলি, ও এখানে পড়ে থাকবে? ভরত সম্বন্ধে তুই আগেও এমনধারা কথা বলেছিস। ভরত তোর কে? আমাকে চেনার আগে তুই ভরতকে চিনতি? সত্যি করে বল!
নিঃস্ব মানুষের মতন মাথা দোলাতে দোলাতে ভাঙা ভাঙা গলায় বসন্তমঞ্জরী বলল, কেউ না। উনি আমার কেউ না। তুমিই প্রথম আমার ঘরে নিয়ে এসেছিলে। উনি তো কোনও কথাও বলেননি। উনি যে এখানে আসবেন, তা আমি কেমন করে জানব? তবু কেউ যেন আমাকে টেনে নিয়ে এল! তুমি আমাকে শাস্তি দাও!
ওর চুল ছেড়ে দিল দ্বারিকা। মনের দিক থেকে সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত, অথচ রাগও দমন করতে পারছে। ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলতে লাগল।
স্থানটি একটি পরিত্যক্ত শ্মশান। হয়ত কাছাকাছি কোনও গ্রাম ছিল একসময়। ওলাউঠা-বিসূচিকায় কিছু লোক মরে গেলে সেই গ্রাম ছেড়ে বাকি লোকরা পালিয়ে যায়, সেইরকমই কিছু ঘটেছে বোধহয়, শ্মশানটা আর ব্যবহৃত হয় না, এই মন্দিরেও কেউ আসে না অনেক দিন। কিছু কিছু হাড়গোড় ছড়িয়ে আছে এ-দিকে সেদিকে।।
আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়িয়ে বসন্তমঞ্জরী নত মুখে জিজ্ঞেস করল, আমি একবার মন্দিরের মধ্যে যাব?
দ্বারিকা ঠিক বুঝতে পারছে না, এখানে আর থাকা উচিত হবে কি না। ভরতের জন্য তার কষ্ট হচ্ছে ঠিকই। ছেলেটা বরাবরের হতভাগ্য। কিন্তু এখানে আর কেউ নেই, শেষ পর্যন্ত সে-ই খুনের মামলায় জড়িয়ে পড়বে না তো! নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার আগে পুলিশের খাঁই মেটাতে বহু টাকা খসাতে হবে। তা ছাড়া মানুষজনও এমন, একবার কথাটা রটলে অনেকে চক্ষু কুঞ্চিত করে বলবে, হুঁ হুঁ বাবা, ভেতরে ভেতরে কী ছিল কে জানে!
বসন্তমঞ্জরী মন্দিরের দিকে এগিয়ে গেলে দ্বারিকা অবশ্য বাধা দিল না। সেও চলল সঙ্গে সঙ্গে। সিঁড়িতে এসে বসন্তমঞ্জরী মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করল। তারপর ঢুকল ভেতরে।
সেই নিদারুণ দৃশ্যের সামনে দু’জনে কেউই কিছুক্ষণ কথা বলল না। বসন্তমঞ্জরীর চক্ষু দিয়ে নিঃশব্দে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আঁচল দিয়ে চোখ মুছে সে একটু পরে বলল, আমি কি একবার ছুঁয়ে দেখব? তুমি অনুমতি দেবে?
চোখের ইঙ্গিতে সম্মতি জানাল দ্বারিকা।
বসন্তমঞ্জরী হাঁটু গেড়ে বসে প্রথমে কালীমূর্তির ভগ্নাংশ সরাতে লাগল। স্থানটি একেবারে পরিষ্কার করে ফেলার পর সযত্নে ভরতের দেহটাকে চিত করে শুইয়ে দিল। এবারে উভয়েরই চোখে পড়ল ভরতের পেটের ক্ষত। একটা বশীর ফলা বিধে আছে, এখনও চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্ত পড়ছে সেখান থেকে।
বসন্তমঞ্জরী ভিতু ভিতু স্বরে জিজ্ঞেস করল, আমি ওঁর মাথাটা কোলে নিয়ে বসলে কি দোষ হবে? আমার পাপ হবে?
বসমঞ্জরী আরও কী মায়ার খেলা দেখাবে, দ্বারিকা তা শেষ পর্যন্ত দেখতে চায়। উগ্র কৌতূহলে তার বুক ধকধক করছে। সে আবার চোখের ইঙ্গিত করল।
জানু ভাঁজ করে বসে ভরতের মাথাটা কোলের ওপর তুলে নিল বসন্তমঞ্জরী। চোখের পাতা দুটো টেনে টেনে খুলতে লাগল। কী যেন বিড়বিড় করে সে বলছে আপন মনে।
দ্বারিকা জিজ্ঞেস করল, এখন তুই মন্ত্র পড়বি?
বসন্তমঞ্জরী বলল, না, আমি সে রকম কোনও মন্তর জানি না। কিন্তু মনে হচ্ছে, শরীরটা এখনও একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে যায়নি। তুমি একটু জল আনতে পারো?
দ্বারিকা ঝটিতি বেরিয়ে গেল। কীসে করে জল আনবে? কয়েকটা ভাঙা মাটির হাঁড়ি মালসা বাইরে পড়ে থাকতে দেখেছে, তারই একটা কুড়িয়ে নিয়ে কাছের সেই ক্ষীণতোয়া নদী থেকে জল নিয়ে এল।
মন্দিরে এসে দেখল, ততক্ষণে বসন্তমঞ্জরী নিজের আঁচল দিয়ে ভরতের মুখ থেকে ধুলোময়লা মুছে দিয়েছে, জোরে জোরে অনবরত ফুঁ দিচ্ছে ভরতের দৃষ্টিহীন খোলা চোখে।
জল নিয়ে সেই চোখেই ঝাঁপটা মারতে লাগল বসন্তমঞ্জরী। মারছে তো মারছেই। দ্বারিকার মনে হল, যেন অনন্তকাল এ রকম চালাতে চায় তার স্ত্রী, সে এখান থেকে ভরতকে ছেড়ে উঠবে না। অথচ এ সবই পণ্ডশ্রম।
একাগ্রভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এক সময় মনে হল, একবার কি কাঁপল ভরতের চোখের পলক? বারেক স্পন্দিত হল শরীর?
আরও কিছুক্ষণ বাদে স্পষ্টতই নড়ে উঠল সেই মৃতবৎ দেহ, কাতর শব্দ করল, আঃ আঃ, মা, মা, মাগো–
আশ্চর্য, যে মানুষ নিজের মাকে দেখেইনি প্রায়, মাতৃস্নেহের কণামাত্র পায়নি, এমন অন্তিম মুহূর্তে সেই মানুষও মাকেই স্মরণ করে!