2 of 2

৭৮. কলকাতার গঙ্গার তীর লোকে লোকারণ্য

কলকাতার গঙ্গার তীর লোকে লোকারণ্য, তাদের সংযত ও সুশৃঙ্খল রাখার ভার নিয়েছে শ্বেতাঙ্গ ফৌজী বাহিনী। স্বাস্থ্যবান অশ্বপুষ্ঠে আরূঢ় গোরা সৈনিকদের অঙ্গে নতুন উর্দি, তাদের কৃতিত্বের মেডেলগুলি সদ্য মার্জিত হয়ে ঝকঝকি করছে। প্রিন্সেপ ঘাটে এসে থেমেছে বিশাল এক রাজকীয় রণতরী। নতুন ভাইসরয় আজ ব্রিটিশ ভারতের রাজধানীতে পদার্পণ করবেন।

তাঁকে স্বাগত জানাবার জন্য উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান। তাদের সকলের মুখমণ্ডলেই কৌতূহলের চিহ্ন পরিস্ফুট। নতুন ভাইসরয় হিসেবে যিনি আসছেন তিনি রাজনীতিজগতে প্রায় অপরিচিত। সমগ্ৰ ব্রিটিশ রাজত্বের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানজনক পদটি কে পাবেন, তা নিয়ে অনেক দিন ধরে জল্পনা-কল্পনা চলে, প্রার্থও থাকেন ইংলণ্ডের সবোচ্চ সমাজের বেশ কয়েকজন। কিন্তু এবার এক বিচিত্র পরিস্থিতির মধ্যে ভাইসরয় হয়ে আসছেন। একজন আইরিশম্যান। এই লর্ড নাস-এর নাম কলকাতার শ্বেতাঙ্গরা প্ৰায় কেউই শোনেনি।

প্রধানমন্ত্রী ডিজরেইলি যখন লর্ড নাস-কে এই সবোচ্চ চাকুরিটিতে নিয়োগ করলেন, তখন প্রচুর সমালোচনার ঝড় উঠেছিল, কিন্তু ডিজিরেইলি অটল। লর্ড নাস জাহাজ যোগে যাত্রা করলেন ভারতের উদ্দেশ্যে। মধ্যপথে পৌঁছতেই এক নাটকীয় ঘটনা ঘটলো। পার্লামেণ্টে পতন হলো ডিজারেইলির দলের। প্ৰধানমন্ত্রী হলেন গ্লাডস্টোন। ভারতের ভাইসরয় এবং গভর্নর জেনারেলের পদে প্রধানমন্ত্রীর নিজের পছন্দের লোক না রাখলে চলে না। ডিজারেইলি-গ্লাডস্টোনের রেষারেষি বহু বিদিত। ভারতের ভাইসরয় হিসেবে গ্রাডস্টোন নিজের লোক বসাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মধ্যপথ থেকে মনোনীত প্রার্থীকে ফিরিয়ে আনা সাম্রাজ্য শাসনের পক্ষে সম্মানহানিকর, মহারানী ভিক্টোরিয়ারও সেরকম অভিপ্ৰায় নয়, তাই গ্রাডস্টোন আপত্তি জানালেন না।

এই লর্ড নাস কিছুদিন আগে মেয়ো-র আর্লডম পাওয়ায় এখন লর্ড মেয়ো নাম নিয়েছেন।

তোপধ্বনি শুরু হবার পর লর্ড মেয়ো জাহাজ থেকে নেমে স্থলে পা দিলেন। তাঁকে প্ৰথম দর্শনেই সমবেত দর্শকদের মধ্য থেকে প্রশস্তিসূচক শব্দ উখিত হলো। এমন সুপুরুষ কদাচিৎ দেখা যায়। স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের এমন সমন্বয়ই বা কজনের হয়। লর্ড মেয়ো দীর্ঘকায়, বৃষস্কন্ধ, মহাবৃঢ়, অথচ তাঁর মুখখানি লালিত্যময়। তাঁর শরীরে তেজ, দীপ্তি এবং শ্ৰী একসঙ্গে মিশে আছে।

প্রিন্সেপ-এর ঘাট থেকে লাটভবন পর্যন্ত সামান্য পথটুকু তিনি পদব্ৰজেই গেলেন। প্রজাদের অভিভূত করবার জন্য বড়লাটের প্রথম আগমন উপলক্ষে প্রচুর জাঁকজমকের ব্যবস্থা থাকে। পথের দুপাশে শ্রেণীবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হাইলাণ্ডার পোশাক পরিহিত বাদকরা শুরু করে ঐকতান, অস্ত্র ও ঐশ্বর্যের প্রদর্শনী হয়। এই স্বল্প পথ পার হতেই লর্ড মেয়োর অনেক সময় লাগলো।

প্রথা অনুযায়ী, লাটভবনের সামনের সিঁড়ির সর্বোচ্চ ধাপে দাঁড়িয়ে আছেন বিদায়ী ভাইসরয় জন লরেন্স। তার অঙ্গে আজ বড়লাটের সম্পূর্ণ পোশাক। পদক, তারকায় বক্ষস্থল প্রায় আবৃত। মধ্যবয়স্ক জন লরেন্সের মুখখানি ক্লান্ত, দেখলেই বোঝা যায় স্বাস্থ্য ভঙ্গ হয়েছে। তাঁকে বিদায় নিতে হচ্ছে সগৌরবে নয়, ভগ্নীমনোরথে। ভারতের বহু যুদ্ধের বীর সেনানী জন লরেন্স ভাইসরয় হিসেবে তেমন সার্থক হতে পারেন নি। কলকাতা শহরটিকে তিনি পছন্দ করতে পারেন নি, কলকাতার কর্মচারীরাও পছন্দ করেনি তাঁকে। রণক্ষেত্রে হুকুমজারি করতে যিনি অভ্যস্ত,অসংখ্য ফাইলের লাল ফিতের বন্ধনে বাঁধা পড়ে তিনি ছটফট করেছেন। তরবারি ছেড়ে শাসকের কলম ধরলে যেকোনো নির্দেশ জারি করবার আগে তাঁকে অধীনস্থ কর্মচারীদের সূক্ষ্ম কুট যুক্তিজালের সম্মুখীন হতে হয়। তা ছাড়া তিনি সৰ্বক্ষণ লাট সাহেবের মতন কেতাদুরস্ত থাকতে পারেন না। কলকাতার গরম অসহ্য হলে যখন-তখন কোট, ওয়েস্ট কোট, কলার, টাই খুলে ফেলেন, এমনকি জুতোর বদলে চটি পরে বেড়ান, মাঝে মাঝে দেশীয় লোকদের সঙ্গে হিন্দুস্থানী ভাষায় কথা বলেন। কোনো বড়লাটের পক্ষে এরকম ব্যবহার তো অকল্পনীয়। তিনিই প্ৰথম প্ৰতি গ্ৰীষ্মে কলকাতা থেকে রাজধানী সিমলা পাহাড়ে সরিয়ে নিয়ে গেলেন, তাতেও সিভিলিয়ানদের খুশী করতে পারেন নি। কখনো কখনো তাঁর কথাবার্তায় নেটিভদের প্রতি সহানুভূতি প্ৰকাশ করেন বলে আড়ালে তিনি তাঁর স্বজাতীয়দের উপহাসের পাত্র।

আজ সম্পূর্ণ ধড়াচুড়া পরে, আড়ষ্ট, ক্লান্তভাবে তিনি দাঁড়িয়ে বড়লাট হিসেবে শেষ কর্তব্য পালনের জন্য প্রস্তুত। লর্ড মেয়ো পরিধান করে আছেন সরল সকালের পোশাক। সেই সুদৰ্শন পুরুষটি প্ৰফুল্ল বদনে উঠে এলেন সিঁড়ি দিয়ে। তোপধ্বনি তখনও চলেছে।

 

নতুন ভাইসরয়ের আগমনের কারণে আজ গঙ্গায় সবরকম নৌকা ও জাহাজ চলাচল বন্ধ। নদীর মধ্যখানে সারি সারি যুদ্ধজাহাজ ঘাটগুলি ঘিরে রেখেছে। নবীনকুমারের বজরা এর মধ্যে এসে বড়ই অসুবিধেয় পড়ে গেল। উজানের টানে বজরাটি চলে এসেছে চাঁদপাল ঘাটের দিকে, কিন্তু এখন কুলে বজরা ভেড়াবার কোনো উপায় নেই। নবীনকুমার গুরুতর রকমের অসুস্থ। যত শীঘ্র সম্ভব তার সুচিকিৎসার প্রয়োজন। বজরার ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে দুলালচন্দ্ৰ একেবারে দাপাদাপি করতে লাগলো। কিন্তু গোরা সিপাহীদের সে কী উপায়েই বা বোঝাবে! এখন ভাঁটা ঠেলে বজরা ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াও তো সম্ভব নয়।

বজরার মধ্যে ছোট কামরায় নবীনকুমার নিদ্রিত। শিয়রের কাছে বসে আছে ভুজঙ্গধর। নবীনকুমারের বক্ষের ক্ষতস্থানে মস্ত বড় ব্যাণ্ডেজ বাঁধা। ভুজঙ্গধর সেই সাঙ্ঘাতিক ঘটনার পর অনতিবিলম্বেই ধানকুড়ি গ্রামের এক প্রবীণ কবিরাজকে দিয়ে নবীনকুমারের ক্ষতস্থানে ওষুধ প্রয়োগ করে বেঁধে দিয়েছে। এবং আর কোনো বুকি না নিয়ে অতিরিক্ত দাঁড়িমাঝি নিয়ে বজরা চালিয়েছে ঝড়ের বেগে কলকাতার দিকে।

মাঝে মাঝেই নবীনকুমারের ব্যাণ্ডেজের সাদা কাপড় ভিজে যাচ্ছে লাল রক্তে। ঘুমের মধ্যে এক আধবার পার্শ্ব পরিবর্তন করলেই নতুনভাবে রক্তক্ষরণ হয়। এর মধ্যে দুবার মাত্র জ্ঞান ফিরেছিল নবীনকুমারের।

মানুষের কোলাহল, ব্যাণ্ড বাদ্য এবং তোপের প্রচণ্ড গর্জনেও নবীনকুমারের নিদ্রা ভঙ্গ হচ্ছে না দেখে ভুজঙ্গধর শঙ্কিত হয়ে উঠলো। নিজের কাছে সে একটি ছোট কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো দর্পণ রেখে দিয়েছে। এখন সেই দৰ্পণটি অতি সাবধানে নিয়ে এলো নবীনকুমারের নাসিকার কাছে। একটু পরে সেই আয়নার কাচ একটু ঝাপসা হতে দেখে ভুজঙ্গধর স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।

নদীতীর প্রহরীমুক্ত হবার পর নবীনকুমারকে নামানো হলো বজরা থেকে। তারপর একটি পাল্কিতে শুইয়ে দেবার পর ভুজঙ্গধর পাল্কিবাহকদের নির্দেশ দিল যে, তাদের প্রত্যেককে একসঙ্গে পা মেপে মেপে চলতে হবে ধীরে ধীরে। কোনোক্রমেই যেন পাল্কি না দোলে। দুলাল আর সে রইলো পাল্কির দু-পাশে। জোড়াসাঁকোর সিংহসদনে পৌঁছোতে পৌঁছোতে তাদের দ্বিপ্রহর পার হয়ে  গেল।

গঙ্গানারায়ণ তখন গৃহে নেই, লোক ছুটলো তাকে সংবাদ দিতে। দুলাল তার মধ্যেই প্রায় সবলে ধরে নিয়ে এলো ডাক্তার সূৰ্যকুমার গুডিভ চক্রবর্তীকে। তিনি কিছুদিন যাবৎ এ বাড়ির গৃহ-চিকিৎসক। তিনি সদ্য, তখন মধ্যাহ্নভোজে বসেছিলেন, দুলালের তাড়নায় আহার অসমাপ্ত রেখে তাঁকে ছুটে আসতে হলো।

ব্যাণ্ডেজ খুলে ক্ষত স্থান দেখে ডাক্তার সাহেব বলে উঠলেন, মাই গড! কোন ক্যানিবালের পাল্লায় পড়েছিলেন ইনি? মানুষ কখনো মানুষের মাংস এতখানি কামড়ে নিতে পারে?

তারপরই তিনি ক্রুদ্ধ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, উণ্ডের ওপর এত সব ধুলো বালি কেন? হাঁটু ওয়াটারে কটন ভিজিয়ে পরিষ্কার করে দেবার বুদ্ধিও কারুর হেড-এ আসে নি?

ভুজঙ্গধর কাঁচুমাচু ভাবে বললো, আজ্ঞে, তা দেওয়া হইয়াছে। এক কবিরাজ মশায় ঔষধ লাগাইয়া দিছেন।

সূৰ্যকুমার বললেন, ওষুধ না রাবিশ। দোজ কোয়াকস! একেই বলে অ্যাডিং ইনসাল্ট টু দি ইনজুরি। এর ফলে কত কমপ্লিকেশন দেখা দিতে পারে—

কবিরাজদের একেবারেই পছন্দ করেন না সূৰ্যকুমার গুডিভ চক্রবর্তী। তিনি দ্রুত হাতে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে লাগলেন।

ডাক্তার আসবার আগে পর্যন্ত সরোজিনী এবং কুসুমকুমারী এই কক্ষে ছিল। যে কোনো বিপদের সম্মুখীন হলেই সরোজিনী ভীতি-বিহ্বল হওয়া ও কান্না ছাড়া আর কিছু জানে না। এখন তারা অপেক্ষা করছে পার্শ্ববর্তী কক্ষে। ডাক্তার সাহেবের মুখে ইংরেজী তর্জন গর্জন শুনে সরোজিনী আরও ভয় পেয়ে কান্না শুরু করে দিল আবার। সরোজিনী বাইরের কোনো লোকের সামনেই যায় না, তাদের সঙ্গে কথাও বলে না। কুসুমকুমারী এতটা পরদা মানে না। সে এগিয়ে এসে দোরের বাইরে দাঁড়িয়ে বললো, দুলাল, ডাক্তারবাবুকে ভালো করে জিজ্ঞেস কর, কতখানি ক্ষতি হয়েচে! কোনো সাহেব ডাক্তারকে ডাকতে হবে। কিনা!

ডাক্তার বললেন, ভয়ের তো কিছু নেই। আউটওয়ার্ড ইনজুরি, ক-দিনেই শুকিয়ে যাবে। ইউ ক্যান কল ইওরোপিয়ান ডক্টরস, কিন্তু আমি তার কোনো প্রয়োজন দেখি না।

কুসুমকুমারী আবার বললো, দুলাল, তুই ডাক্তারবাবুকে বলিচিস, যে কামড়েচে সে একটা বদ্ধ পাগল?

ডাক্তার উত্তর দিলেন, পাগল না হলে কোনো সেইন লোক কি কোনো মানুষকে এমনভাবে বাইট করে। ওহে, তোমার গিন্নীমাদের জানিয়ে দাও, চিন্তার কোন কারণ নেই।

ডাক্তার সাহেব ক্ষত পরিষ্কার করে, মলমের প্রলেপ লাগিয়ে পটু হাতে নতুন ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দিলেন। তারপর অন্য ঔষধপত্রের নির্দেশ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ফ্রেস ব্রিডিং যদি হয়, দেন অ্য। খৃঃ দেয়ার আমায় কল দেবে। নচেৎ আমি কাল সকালে নিজেই আবার আসবো।

ডাক্তার চলে যাবার পর দুলাল বাইরের অন্যান্য লোকদের ঘর ছেড়ে দিতে বললো। সঙ্গে সঙ্গে সরোজিনী, কুসুমকুমারী ও অন্য কয়েকজন আত্মীয় রমণী এসে ঢুকলো সেখানে এবং এক-একজন পালা করে বলতে লাগলো অন্য কবে কোথায় মানুষে মানুষকে কামড়ানোর ঘটনা শুনেছে বা দেখেছে। দেখা গেল, এই ঘটনা খুব দুর্লভ নয়। অনেকেই এ রকম বিষয়ে জানে।

এই সময় জুতো মসিমসিয়ে ডাক্তার সূৰ্যকুমার গুডিভ চক্রবর্তী ফিরে এসে দাঁড়ালেন দ্বারের কাছে। মহিলারা পালাবার পথ পায় না, যে যার দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে একগলা ঘোমটা টেনে দিল। শুধু কুসুমকুমারী স্থানচ্যুতা হলো না, চোখ নামালো মাটির দিকে।

ডাক্তারাসাহেব বললেন, একটা ইম্পটন্ট কথা বলার জন্য আমি ফিরে এসেছি। ইউ মাস্ট নট ডিস্টার্ব দি পেশেন্ট। এখানে শোরগোল করবেন না। শুধু একজন দু-জন থাকুন, যাতে জ্ঞান ফিরলে পেশেন্ট হঠাৎ উঠে না বসতে চায়। ইংলণ্ডের রমণীরা এই রকম সময়ে বেশী কমপেজড়-আই মীন ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দেয়।

এবারে রইলো শুধু সরোজিনী ও কুসুমকুমারী। একটুক্ষণ থেকে থেকেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে। সরোজিনী। কুসুমকুমারী তাঁর পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো, ওলো, কাঁদিস নি বোনটি, মিছিমিছি। কান্না যে অলুক্ষ্মণে, ডাক্তারবাবু তো বললেনই ভয়ের কিছু নেই।

সরোজিনী অশ্রুসজল মুখখানি তুলে বললো, ও দিদি, মানুষের দাঁতে যে সাঙ্ঘাতিক বিষ! কুসুমকুমারী বললো, কে বললে তোকে? সরোজিনী বললো, হাঁ আমি জানি! পাগল যদি কারুকে কামড়ায়, তা হলে সেও পাগল হয়ে যায়! আমার বাপের বাড়িতে একবার এমন হয়েছেল!

নিজের অজ্ঞাতসারেই কুসুমকুমারী নিজের বাম স্কন্ধে হাত রাখলো। মানুষে মানুষকে কামড়ায়। এমনকি কোনো পাগল কামড়ালেও যে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না, তার জলজ্যাস্ত প্ৰমাণ তো সে নিজে। তার কাঁধে এখনো দাগ আছে।

কিন্তু সে ঘটনার উল্লেখ না করে সে আস্তে আস্তে বললো, না রে, ও সব ভুয়ো কতা! তেমন কিছু ভয় থাকলে ডাক্তারবাবু বলতেন না?

সরোজিনী দু দিকে মাথা নেড়ে বললো, বাড়িতে আর কোনো পুরুষমানুষ নেই, ও দিদি ভাসুর ঠাকুর কখন আসবেন? আমার বুকের মধ্যে এমন ধড়ফড় কচ্চে, আমি যে আর বসে থাকতে পাচ্চি নি!

গঙ্গানারায়ণের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেরি হলো। গঙ্গানারায়ণ নিজেদের কোম্পানির হৌসে বেরিয়েছিল, সেখানে গৌরদাস বসাকের কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়ে সে চলে গেছে স্পেনসেন্স হোটেলে।

বিলাত থেকে ফেরার পর মধুসূদনের প্রায় দুই বৎসর কেটে গেছে। এই হোটেলে। এই ব্যয়বহুল স্থান ছেড়ে কোনো ভদ্র পল্লীতে বাসা ভাড়া করে থাকবার জন্য বন্ধু ও শুভাখীরা অনেকেই পীড়াপীড়ি করেছিলেন, কিন্তু মধুসূদন কৰ্ণপাত করেননি। সাহেবগণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যারিস্টারি করতে গেলে সাহেবী চালচলন রক্ষা করতেই হবে। মধুসূদনের ভাষায় এটাই বামুনপাড়া।

স্ত্রীকে বিলাতেই রেখে এসেছেন, পুত্র-কন্যাদের শিক্ষাও চলছে সেখানে। প্রতি মাসে সেখানে অর্থ প্রেরণ করা এবং স্পেনসেস হোটেলে নিজের খরচ চালানো কয়েক মাসের পরেই মধুসূদনের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে এলো। ব্যারিস্টার মাইকেল এম এস ডাট যত খ্যাতনামা তত উপাৰ্জনক্ষম নন। তাঁর কণ্ঠস্বর ভাঙ্গা ভাঙ্গা বলে আদালতে তাঁর স্পীচু ততটা মৰ্মস্পশী নাটকীয় হয় না। মাঝে মধ্যে তিনি বিচারকদের তির্যক বিদ্যুপ করতে ছাড়েন না। নিয়মিত আদালতে যাওয়াই হয়ে ওঠে না। মক্কেলদের সঙ্গে শ্ৰীফ নিয়ে আলোচনা করার বদলে বান্ধব সংসগে মজলিস করাই তাঁর বেশী পছন্দ। অর্থের সাঙ্ঘাতিক টানাটানি থাকলেও কোনো পরিচিতব্যক্তি মামলা নিয়ে এলে, এমনকি কোনো বন্ধুর সুপারিশ নিয়ে কেউ এলেও মধুসূদন তাদের মামলায় ফি নিতে চান না। তাঁরা নেহাত জেদ্দাজেদি করলে বলেন, ঠিক আছে, তা হলে এক বোতল বাগণ্ডি, আধা ডজন বীয়ার আর শখানেক মালদার ল্যাংড়া আম পাঠিও।

প্রবাসে নিরুপায় হয়ে যাঁর কাছে বার বার হাত পেতেছেন, স্বদেশে এসেও চরম আর্থিক বিপর্যয়ের সময় সেই বিদ্যাসাগরের কাছেই আবার ঋণ চাইতে শুরু করলেন। বিদ্যাসাগরেরও একেবারে নাজেহাল অবস্থা। তিনি অন্যের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মধুকে টাকা পাঠিয়েছেন, এখন সেই সব মহাজনরা তাঁকে ঋণ শোধের জন্য বার বার তাগিদ দিয়ে এখন মামলার হুমকি দিচ্ছে। এবার বিদ্যাসাগর কঠোর হলেন। মধুসূদনের বর্তমান জীবনযাপন পদ্ধতি তাঁর পছন্দ হবার কথা নয়, বিশেষত এজনা তিনি কেন অর্থের জোগান দিয়ে যাবেন!

মধুসূদন ব্যারিস্টারিতেও সার্থক হতে পারছেন না। এদিকে তাঁর কবিত্ব শক্তিও উধাও। এটা সেটা লেখবার চেষ্টা করছেন, কোনোটাই দানা বাঁধে না। ভিতরে ভিতরে দারুণ অস্থিরতা এবং তা নিবৃত্ত করার একমাত্র উপায় সুরাপান।

বিলাতে অর্থ প্রেরণ অনিয়মিত হয়ে যাওয়ায় হেনরিয়েটাও দারুণ দুর্বিপাকে পড়েছে। পুত্রকন্যারা আবার অনাহারের সম্মুখীন। এই অবস্থায় হেনরিয়েটা আবার কলকাতায় স্বামী সন্নিধানে ফিরে আসার সংকল্প নিল। নিজেই সে চেষ্টা করতে লাগলো কোনো জাহাজ কোম্পানির কাছে সস্তায় প্রত্যাবর্তনের টিকিট পাবার জন্য। এই সংবাদ পেয়ে মধুসূদন আরও অস্থির। স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের তিনি যোগ্য সমাদরের সঙ্গে কোথায় রাখবেন, কেমনভাবে সংসার চালাবেন? এই চিন্তায় চিন্তায় মধুসূদনের মদ্যপানের পরিমাণ আরও বধিত হলো।

বন্ধুরা সকলেই মধুর বর্তমান অবস্থার জন্য উৎকণ্ঠিত। এ রকমভাবে চললে মধু আর কতদিন বাঁচবে? তার শরীর অসম্ভব স্থূল হয়ে গেছে। কথাবার্তা সর্বক্ষণ জড়ানো। পানের মতন আহারের প্রতিও মধুসূদনের খুব ঝোঁক হয়েছে। ইদানীং। হোটেলে ছ কোর্সের কমে আহার করেন না। কখনো কখনো বিলাতি খাদ্যে অরুচি হলে কোনো বন্ধুর গৃহে গিয়ে সুক্তো-চচ্চড়ি-কুমড়োর ছক্কা খাবার জন্য বায়না করেন। এক একদিন হোটেলের খানসামাকেও বলেন কোনো দিশী পদ রন্ধন করতে। একদিন তাঁর মুগের ডাল খাবার শখ হলো, খানসামাকে হুকুম দিলেন মুগের ডাল বানাতে। হোটেলের পাকশালা থেকে খানসামা পোর্সিলিনের পিরিচে যে তরল পদার্থটি নিয়ে এলো, সেটি মুখে দিয়েই মধুসূদন থুথু করে উঠলেন। এর নাম মুগের ডাল? তৎক্ষণাৎ চিঠি দিয়ে এক আদলিকে পাঠালেন খিদিরপুরে এক বন্ধুর বাড়িতে। তাঁর আজই মুগের ডাল চাই। কিন্তু বাঙালী বাড়ির বাটি-গামলার মতন কোনো পাত্ৰে তুচ্ছ কোনো দেশী খাবার তো স্পেনসেস হোটেলে ঢোকানো চলবে না। তাই মধুসূদন আদলির হাতে পাঠিয়ে দিলেন একটি খালি মদের বোতল। সেই বোতলে ভরেই এলো মুগের ডাল এবং মদ্যপানের ভঙ্গিতেই সরাসরি বোতলে চুমুক দিয়ে সেই ডাল খেয়ে মধুসূদন তৃপ্তির সঙ্গে বললেন, আঃ!

মধুসূদনের এই উদ্দাম মদ্যপান কিছুটা রহিত করতে না পারলে তাঁকে আর বাঁচানো যাবে না। তাঁর বন্ধুরা অনেকেই এজন্য দুশ্চিন্তাগ্ৰস্ত। মধুর কাণ্ডজ্ঞান পর্যন্ত চলে গেছে। নইলে সে মাননীয় বিদ্যাসাগর মশাইয়ের কাছে সাক্ষাৎ করতে যাবার আগে চিঠি লিখে অনুরোধ জানায়, এক বোতল মদ সংগ্রহ করে রাখবেন!

কাৰ্যসূত্রে গৌরদাসকে বাইরে থাকতে হয়, তাই সে গঙ্গানারায়ণকে অনুরোধ করেছে মধুর খবরাখবর নিতে। সেই জন্য গঙ্গানারায়ণ আজই এসেছে। আজও মধুসূদন আদালতে যাননি, একটি ড্রেসিংগাউন আলুথালুভাবে অঙ্গে জড়ানো। কক্ষটি উগ্ৰ তামাকের গন্ধে ভরপুর। আগে মধুসূদন শখ করে শুধু সিগারেট টানতেন, এখন তিনি আলবোলাতেও ধূমপান করেন। মধুসূদনের হাতে দুটি কাঁচা লঙ্কা, তাদের ডগা ভেঙে তিনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বড় জিভ বার করে তাতে ঐ ভাঙ্গা লঙ্কা দুটি ঘষছেন।

গঙ্গানারায়ণের দিকে ফিরে মধুসূদন বললেন, গঙ্গা, মাই ডিয়ার বয়। এই লঙ্কা একটু চেকে দ্যাক তো ঝাল আছে কি না। আই কনটু ফিল এনিথিং!

গঙ্গানারায়ণের দুই চক্ষে গভীর বিস্ময়। মধুসূদনের কথা শুনে সে প্রায় আঁতকে উঠে বললো, ওরে বাপরে, কাঁচা লঙ্কা-আমি জন্মে কখোনো খাইনি–।

মধুসূদন ঈষৎ হেসে বললেন, আমরা যশুরে বাঙাল, আমরা খুব ঝাল খেতে পারি-কিন্তু এখন আর জিভে কোনো সাড় নেই-যত লঙ্কাই ঘষি, ঝাল লাগে না-জিভের আর দোষ কী!

—মধু, তুই কেন এমন সর্বনাশ কচ্চিস! তুই—

–ডোনট সারমনাইজ, মাই ডিয়ার-তুই এসিছিস, আয় সেলিব্রেট করা যাক। বোয়! পেগ লাগাও!

—না, না না মধু, এই ভর-দুপুর বেলা তুই আবার শুরু করিস নি!

—ও, তুই তো নিরিমিষ্যি! তা হলে আমি খাই! না খেলে আমার শরীরটা কেমন দমসম করে!

—মধু, আমি সারমন দিচ্চি নি। কিন্তু এ কতা তো আমরা বলবোই যে তুই এত খরচ-পত্তর করে বিলেত থেকে ব্যারিস্টার হয়ে এলি, এবার কোথায় বেশ গুচিয়ে বসবি, মন দিয়ে প্রাকটিস কবি, তা না, এই হোটেলে ছন্নছাড়ার মতন।–।

—গুছিয়ে বসা আর আমার হলো না এ জীবনে!

একটু থেমে মধুসূদন দুঃখিত কণ্ঠে আবার বললেন, সবাই এসে বলে, কেন আমি মন দিয়ে প্রাকটিস করছি না! কেউ তো বলে না, কেন আমি আর কাব্য রচনা করছি না?

—না, না। সেটা তো আমাদেরও প্রশ্ন। মেঘনাদের মতন আর একখানা মহাকাব্য তুই কেন শুরু কচ্চিস না? দেশবাসী তোর কাঁচ থেকে আরও অনেক কিচু প্ৰত্যাশা করে!

—আই অ্যাম ফিনিসড়! গঙ্গা, দি মিউজ হ্যাজ লেফটুমি। আমার আর লেখার ক্ষমতা নেই। আমার পক্ষে এখন বাঁচা-মরা সমান! বিষ খেতে ভয় পাই, তাই এইটে খাচ্চি!

আরও কিছুক্ষণ বসে গঙ্গানারায়ণ নানা রকম কথা বলেও মধুসূদনকে নিবৃত্ত করতে পারলো না। মধুসূদন তো শিশু নন যে অন্যের কথা শুনে চলবেন। তাঁর নেশার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে লাগলো। প্রায় হাহাকারের মতন তিনি বার বার বলতে লাগলেন, দি মিউজ হ্যাজ লেফট মী!

ভারাক্রান্ত মন নিয়ে গঙ্গানারায়ণ হোটেলের বাইরে এসে দেখলো তার জুড়িগাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুর্যোধন গোমস্তা। নানা সূত্র থেকে সে গঙ্গানারায়ণের সন্ধান পেয়ে এখানে এসেও সাহস করে সাহেবী হোটেলের ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি।

সংবাদ পাওয়া মাত্র গঙ্গানারায়ণ বাড়ির দিকে ছুটলো। নবীনকুমারকে তখনও নিদ্রাভিভূত দেখে সে দুলাল ও ভুজঙ্গধরের কাছ থেকে একাধিকবার শুনলো সম্পূৰ্ণ ঘটনার বিবরণ। তারপরই সে আবার বেরিয়ে গেল পর পর এই শহরের অ্যালোপ্যাথিক, কবিরাজী ও হোমিওপ্যাথিক প্ৰধান তিন চিকিৎসকের কাছে। তিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিল। একমাত্র কবিরাজ ব্যতীত বাকি দুজন তেমন বিপজ্জনক মনে করলেন না। তবে সকলেই ক্ষতস্থান স্বচক্ষে পরীক্ষা করতে চান।

তারপর গঙ্গানারায়ণ গেল ডাক্তার সূৰ্যকুমার গুডিভ চক্রবতীর কাছে। সূৰ্যকুমার জেদী পুরুষ। তিনি বললেন, গঙ্গানারায়ণের ইচ্ছে হলে সে যত খুশী বিশেষজ্ঞ দেখাতে পারে। কিন্তু অন্য কেউ চিকিৎসা করলে তিনি আর ভার নেবেন না। সূৰ্যকুমারের দৃঢ় বিশ্বাস, তিনি একই সারিয়ে তুলতে পারবেন।

গঙ্গানারায়ণ ফাঁপরে পড়ে গেল। সূৰ্যকুমারও বিশেষ খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসক এবং পারিবারিক শুভার্থী, তাঁর কথা অগ্রাহ্য করা চলে না। সুতরাং অন্তত আর একটি দিন অপেক্ষা করতেই হয়। পরদিন সূৰ্যকুমার এসে দেখলেন, নবীনকুমারের সম্পূর্ণ চেতনা ফিরে এসেছে। মুখখানি পাণ্ডুবৰ্ণ, কিন্তু চক্ষু দুটি উজ্জ্বল। নবীনকুমারের মাথায় সদ্য গজানো ঘাসের মতন বাইশ দিনের চুল। সূৰ্যকুমার এসে শুনলেন, অতি প্ৰাতঃকালেই তাঁর রোগী ক্ষুধার কথা জানিয়ে এক বাটি দুগ্ধ পান করেছে। শয্যার পাশে একটি চেয়ারে তিনি আসন গ্রহণ করবার পর নবীনকুমার পরিষ্কার কণ্ঠস্বরে বললো, ডক্তর চক্রবর্তী, কেমন অবস্থা আমার? বাঁচবো তো?

সূৰ্যকুমার বললেন, মরবার জন্য আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। অন্তত আরও পঞ্চাশ বছর!

নবীনকুমার ক্ষীণভাবে হাসলো। তারপর বললো, কতখানি কামড়ে নিয়েচে? অনেকখানি?

ডাক্তারবাবু নিজের ডানহাতের আঙুলগুলো দিয়ে একটি ক্ষুদ্র গোল তৈরি করে বললেন, এই এইটুক খানি! দিস মাচ! নাথিং টু ওয়ারি অ্যাবাউট!

নবীনকুমার হঠাৎ উঠে বসতে যেতেই ডাক্তারবাবু তাকে ধরে ফেলে বলে উঠলেন, আরে ওকি, ওকি!

—এই বাঁধনগুলো একবার খুলুন তো, আমি একবার নিজের চক্ষে দেখবো!

এই কথার সমস্বরে প্রতিবাদ করলো গঙ্গানারায়ণ এবং সূৰ্যকুমার। কিন্তু নবীনকুমার কিছুতেই মানবে না। তার নিজের শরীরের কতখানি ক্ষতি হয়েছে তা সে নিজে না দেখে ছাড়বে না। সূৰ্যকুমার অনেক করে বোঝাবার চেষ্টা করলেন যে দু-তিন দিনের মধ্যে ব্যাণ্ডেজ খোলা উচিত নয়। খুলতে গেলেও খুবই ব্যথা লাগবে। কিন্তু নবীনকুমার নাছোড়বান্দা। এই মানুষটি যে কত জেদী তার প্রমাণ সূৰ্যকুমার আগে অনেকবার পেয়েছেন, সুতরাং শেষ পর্যন্ত তিনি র্ব্যাণ্ডেজ খুলতে বাধ্য হলেন। নবীনকুমারের দারুণ ব্যথা বোধ হচ্ছে নিশ্চয়, তবু সে মুখের একটা রেখাও কাঁপালো না।

নবীনকুমারের বাঁদিকের বুকে একটি মুষ্টি পরিমাণ বৃহৎ ক্ষত। আবার রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ায় লাল রঙের মাংস হাঁ করে আছে।

গঙ্গানারায়ণ অশ্রু সংবরণ করতে না পেরে ধরা গলায় বললো, ছোটকু, তুই কেন অমন উদবঙ্কা পাগলের কাচে গেলি? কেউ যায়?

সে কথার উত্তর না দিয়ে নবীনকুমার বেশ কিছুক্ষণ নির্নিমেষে চেয়ে রইলো নিজের বুকের দিকে। তারপর যেন আপন মনেই বললো, ঠিক হৃৎপিণ্ডের ওপরে-ওই গর্তটা দিয়ে আমার হৃৎপিণ্ডটা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসবে না তো?

সূৰ্যকুমার বললেন, সে কী কথা! একেবারেই সুপারফিসিয়াল ইনজুরি, পচন ধরেনি, ভয়ের কিছু নেই—।

আবার শুয়ে পড়ে চক্ষু মুদে নবীনকুমার বললো, ডক্টর চক্রবতী, আমায় তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলুন! আমায় এখন বেশী দিন শুয়ে থাকলে চলবে না, আমার অনেক কাজ!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *