এক-একটা সর্বনাশের সময় আসে যখন সবকিছুকেই মনে হয় ভস্মাবশেষ ছাই। দীপনাথের কাছে তেমনি চারদিকটা ছাইরঙা হয়ে গেল।
বিলু প্রীতমের কথা শেষ করে মুখ নিচু করে কাঁদছে বিছানায় বসে। প্রীতমেরই বিছানা। কলকাতায় শেষদিন পর্যন্ত সে এই বিছানায় শুয়ে গেছে।
দীপনাথের কান্না আসছিল না। তার ভিতরটা বড় বেশি শুকনো, অনুভূতিহীন। তার চোখের সামনে সমস্ত ঘরটা তার জিনিসপত্র সমেত ছাই হয়ে গেছে। পৃথিবীর আর কোনও বর্ণ নেই, অর্থ নেই।
বিলু ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, তুমি ওকে কত ভালবাসতে তা আমি জানি সেজদা। দুঃখ পাবে বলে শিলিগুড়ি থেকে ফিরে প্রথমে খবরটা দিইনি। কিন্তু আমি একা আর পারছি না। আজই শতমের চিঠি এল। এখনও কোনও খোঁজ নেই।
দীপনাথের আজ আবার দৃশ্যটা মনে পড়ে। বাচ্চা প্রীতম রোগাভোগা, নিরীহ, জীবনে কোনওদিন কারও কাছে মার খায়নি। সেই প্রীতমকে শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার রাস্তায় মারছে দীপনাথ। ভীষণ মারছে।
গলার কাছে একটা বাতাসের বল কিছুতেই গিলতে পারছে না দীপনাথ। অবরোধ ঠেলে অতি কষ্টে সে বলতে পারল, তুই চলে এলি কেন?
বিস্মিত বিলু বলে, বাঃ, আমার যে চাকরি।
তাই তো! ওঃ হ্যাঁ।—এইরকম অর্থহীন কয়েকটা শব্দ উচ্চারণ করে দীপনাথ।
বিলু একটু ভয়ের গলায় বলে, তোমাকে কেমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে সেজদা! কী হল বলো তো তোমার? পায়ে পড়ি, ওরকম নার্ভাস হোয়ো না। তা হলে আমি দাঁড়াব কোথায়?
এটা হাসির সময় নয়। তবু দীপনাথ তার ঠোঁট রবারের মতো প্রসারিত করে বীভৎস একটু হাসার চেষ্টা করল। বলল, ও কিছু নয়। এক গ্লাস জল দে।
বিলু তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে জল আনে।
দীপনাথ জলের গ্লাসটার অর্থহীনতার দিকে চেয়ে সেটাকে হাতে নিয়ে বসে থাকে। তারপর আপনমনে বলে, তোর মতো সাহসী ক’জন ছিল বে? তবে পালালি কেন?
এ কথা কাকে উদ্দেশ্য করে বলা তা জানে বিলু। তাই ফের ভয়ের গলায় বলে, তুমি ওরকম ভেঙে পোড়ো না সেজদা!
আবার রবারের ঠোঁট টেনে হাসে দীপনাথ। তারপর মাথা নেড়ে বলে, না। ভেঙে পড়ার কী আছে?
তবে ওরকম করছ কেন?
দীপনাথ গ্লাস থেকে জল হাতের কোষে ঢেলে নিয়ে নিজের চোখ কান ভিজিয়ে নেয়। কয়েক ঢোক খায়ও! তারপর আস্তে করে বলে, প্রীতম! ওঃ! প্রীতম!
হয়তো হঠাৎই কান্নার ঝড় আসত, ভেসে যেত দীপনাথ। কিন্তু হঠাৎ খুব রূঢ় এক ঝটকায় সে উঠে দাঁড়াল।
কোথায় যাচ্ছ?—আর্তস্বরে জিজ্ঞেস করে বিলু।
দার্জিলিং মেল।—প্রায় সাংকেতিক শব্দটা উচ্চারণ করেই সে ঘর থেকে বাইরের ঘরে চলে আসে।
পিছু পিছু বিলু এসে পথ আটকায়, পাগল হয়েছ! এখনই তো সাড়ে সাতটা বাজে। কখন দার্জিলিং মেল চলে গেছে।
তাই তো।—আবার সোফায় বসে পড়ে দীপনাথ, তোর কি মনে হয় প্রীতম বেঁচে নেই?
আমার বিশ্বাস ও কোথাও লুকিয়ে আছে গিয়ে।
কিন্তু কোথায়?
আমি তো শিলিগুড়ি বা নর্থ বেঙ্গলের সব চিনি না। কোথায় কোথায় ওর চেনা লোক আছে তাও জানি না। সেইজন্যই বলছি তুমি ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো। তুমি হয়তো ওকে খুঁজে বের করতে পারবে। রোগা শরীরে ও বেশিদুর যেতেই পারে না।
রোগা শরীর!—বলে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে দীপনাথ। তারপর মাথা নেড়ে বলে, প্রীতমের যা মনের জোর তাতে রোগকে ও বহুদূর ছাড়িয়ে গেছে। রোগ ওকে রুখবে কী করে!
তবুও তো প্রীতম আর অতিমানুষ নয়।
তা নয়। কিন্তু আমি জানি ওই রোগটা খুব ভুল লোককে বেছে নিয়েছিল, যে তোক কখনও রোগের কাছে হার মানছে না। মরার দিন পর্যন্ত প্রীতম ঠিক হাসিমুখে বলে যাবে, ভাল আছি। খুব ভাল আছি।
বলতে বলতে প্রতিরোধ ভেঙে যাচ্ছিল। গলা কেঁপে উঠল দীপনাথের। ঠিক যেমন করে বমি আসে তেমনি অপ্রতিরোধ্য গতিতে কান্না উঠে আসছিল চোখে। দীপনাথ কয়েকবার ঢোক গিলল, হাতের মুঠো পাকিয়ে রইল শক্ত করে। কয়েকবার কেঁপে স্থির হল। বিপদের সময় স্থির থাকতে হয়।
দীপনাথের কথায় হঠাৎ প্রীতমের জন্য নতুন করে শোক উথাল-পাথাল হয়ে উঠল বুকে। বিলু সোফায় বসে কাঁদতে থাকে।
পাশের ঘরে দরজা বন্ধ করে টিউটরের কাছে পড়ছিল লাবু। নিঃশব্দে দরজা খুলে পরদা সরিয়ে মুখে একটা আঙুল পুরে সে চেয়ে রইল। প্রীতমের মেয়ে। দীপনাথ কিছু না ভেবেই দু’হাত বাড়িয়ে দিল। ঠিক ছুটে এল না লাবু, কিন্তু একটু জড়তার সঙ্গে পায়ে পায়ে এল কাছে। একটু শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল কাছ ঘেঁষে। নিঃশব্দে তাকে জড়িয়ে ধরে থাকে দীপনাথ। এই ছোট মেয়েটার মধ্যে একটা বিদ্রোহ টের পাচ্ছিল।
বাবা আবার ফিরে আসবে লাবু। ভাবিস না।
লাবু কথা বলল না। শরীরের শক্ত ভাবটাও নরম হল না।
লাবু, বাবার কথা বুঝি সবসময় ভাবিস?
না, তোমরা কাঁদছিলে কেন?
কই আমি তো কাঁদিনি।
মা কাঁদছিল কেন?
এমনি। ব্যথা-ট্যাথা পেয়েছে বোধহয়।
লাবু ফের চুপ করে যায়।
তোর টিউটর চলে গেছে?
না। আমি বাথরুমে যাব বলে এসেছি।
তা হলে যাও। বাথরুম সেরে পড়তে চলে যাও।
লাবু তেমনি নিঃশব্দে গুটগুট করে চলে গেল।
ও কি বাবার কথা বলে রে বিলু?
বিলু লাল চোখ তুলে তাকাল। মুখে কথা এল না। মাথা নেড়ে জানাল, না। একটু সামলে নিয়ে বলল, মেয়েটা কেমন হয়ে গেছে। কথা বলে না, হাসে না। সবসময় শক্ত হয়ে থাকে। খুব ভাবে।
আমি কাল শিলিগুড়ি যাচ্ছি।-বলে দীপনাথ উঠে দাঁড়ায়।
আমি কী করব বলে যাও সেজদা।
তুই! তোর আর কী করার আছে?
বিলু আবার খানিকক্ষণ আঁচলে মুখ ঢেকে রেখে বলল, সবাই বোধহয় ভাবছে আমার জন্যই প্রীতম নিখোঁজ হল।
দীপনাথ আস্তে করে বলল, ওকে কলকাতায় আনার জন্য জোরাজোরি না করলেও পারতিস।
তুমিও কি ভাবো যে, প্রীতম সেজন্য পালিয়েছে।
অসম্ভব নয়। তবে ওর দেখা না পেলে তো সত্যি কথাটা কখনও জানা যাবে না। তুই ভেঙে পড়িস না। মেয়েটাকে দেখিস।
রুদ্ধ স্বরে বিলু বলে, ওকে নিয়েই তো আছি। এখন ওই আমার সব।
দীপনাথ বেরিয়ে পড়ে। বড় শূন্য লাগে আজ। চারদিক ছাইবর্ণ। প্রীতমের জন্য এতটা হবে বলে ভাবেনি কখনও। বলতে কী, প্রীতমের মৃত্যুর জন্য মনে মনে প্রস্তুতও ছিল সে একসময়। প্রীতম বেঁচে নেই। এমন কথা এখনও বলা যায় না। তবু বুকটা ধক ধক করে। বেঁচে থাকলে প্রীতম অন্তত তাকেও কি জানত না যে, সে বেঁচে আছে।
মেসে ফিরে দেখল সুখেন বসে আছে তার জন্য। মুখটা কিছু করুণ, শুকনো। তাকে দেখে একটু চমকে উঠে বলে, কোনও খারাপ খবর নাকি দাদা?
দীপনাথ মাথা নাড়ল, খারাপ। খুব খারাপ।
কী হয়েছে?
জুতো মোজা ছাড়তে ছাড়তে সংক্ষেপে প্রীতমের ঘটনাটা বলল দীপনাথ। সুখেন মন দিয়ে শোনে। শুনতে শুনতে দুঃখের ভাব ফুটে ওঠে মুখে।
হাত-মুখ ধুয়ে এসে দীপনাথ যখন নিজের বিছানায় চিতপাত হয়ে শোয় তখন সুখেন খুব সন্তর্পণে বলে, আমার একটা কথা ছিল।
কী কথা?
বীথি বহুদিন আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
বীথি?—বলে বিরক্তির ভাব দেখায় দীপনাথ, কেন?
ওর বাসায় একবার পায়ের ধুলো…
সুখেন!–বলে একটা ধমক দেয় দীপনাথ।
সুখেন কুঁকড়ে যায়। রুমমেট ছাত্রটি পরীক্ষার পর চলে গেছে। সিটটায় নতুন বোর্ডার আসেনি এখনও। তবে কাল বা পরশুই আসবে। তাই বাঁচোয়া।
সুখেন মুখখানা কাঁচুমাচু করে বলে, অন্য কিছু নয়। কেবল একটু ভাল খাওয়া-দাওয়া।
আমার মন ভাল নেই।
জানি। কিন্তু সেজন্য ঘরে বসে থেকেই বা কী হবে? বীথি আমাকে বলে দিয়েছে, আপনাকে আজই ধরে নিয়ে যেতে। ওর ছেলে আজ থাকছে না। আমরা তিনজন।
না সুখেন।একটু দুর্বল গলায় বলে দীপনাথ। কিন্তু এক শূন্যতাবোধ, নিরবল সময়ের এই ফাঁকটুকু তার একাও থাকতে ইচ্ছে করে না। প্রীতমের খবর বুকে পাথর হয়ে জমে আছে। আজ সারা রাত ঘুম হবে না। দুশ্চিন্তায় কণ্টকিত হয়ে থাকবে সে। তাই বীথির নিমন্ত্রণ এক জটিল মানসিকতার ধাঁধার ভিতর দিয়ে তাকে টানে। বস্তুত বীথির কাছে কিছু পাওয়ার নেই তার। তাই বোধহয় যেতে ইচ্ছে করে। সেখানে শোক নেই। যা আছে তা তাৎক্ষণিক। দাগ কাটবে না।
সুখেন আরও মিনিট পাঁচেক ঘ্যান ঘ্যান করার পর দীপনাথ ওঠে। খুব বিরক্তি আর অনিচ্ছার ভাব দেখিয়েই ওঠে। এবং পোশাক পরে।
বেরোবার সময় সুখেন বলে, আজ রাতে আমরা না-ও ফিরতে পারি।
কথাটা শুনেও শুনল না দীপনাথ। গা তবু শিউরে উঠল একটু। টানা রিকশায় বসে সারা রাস্তাটা সে একটাও কথা বলল না।
বহুদিন পর বীথির সঙ্গে মুখোমুখি। যেমনি সুন্দরী, তেমনি ক্ষুরধার বুদ্ধির সঙ্গে মেশানো নষ্টামি। দু’হাত বাড়িয়ে বলল, আজ যে কোনদিকে সূর্য উঠেছে!
দীপনাথ উদাস মুখে একটু হাসল।
আজ বৈঠকখানার সাজসজ্জা অন্যরকম। চমৎকার একগুচ্ছ ধূপকাঠি জ্বলছে। টাটকা রজনীগন্ধার গন্ধ। বীথির রান্নার লোকও আজ হাজির। দুর্দান্ত মাংসের গন্ধে পাড়া মাত। খুব আস্তে করে চালানো রেকর্ড-প্লেয়ারে সময়োচিত “এসো এসো আমার ঘরে এসো, আমার ঘরে…” বেজে যেতে থাকল। রবীন্দ্রনাথ সকলের জন্য লিখেছেন, তা জানে দীপনাথ, তা বলে বীথির ঘরে তার এই আগমনের জন্যও কি রবীন্দ্রনাথের কলম ধরার দরকার ছিল?
আগে চা। কেমন?–বলে বীথি উড়ে গেল ঘর থেকে ঠিক প্রজাপতির মতোই। শাড়িখানা দু’রকম ছাপা এবং খুবই নতুন ধরনের। বীথিকে মানিয়েছে এবং বয়সটাকে বছর দশেক কমিয়ে ফেলেছে।
সুখেন বীথির সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে গিয়েছিল। কিছু বলে থাকবে। চায়ের ট্রে নিয়ে বীথি যখন ফের ঘরে ঢুকল তখন তার মুখে করুণা। বলল, আহা রে! আমার ধারণা আপনার ভগ্নিপতি কোথাও গিয়ে পালিয়ে আছে।
দীপনাথ এ কথায় কোনও রা কাড়ল না।
বীথি বলল, অত মন খারাপ করবেন না তো। আপনার ওই ভগ্নিপতির কথা সুখেন আমাকে বলেছে। ও মানুষ সহজে মরবার নন।
দীপনাথ এ কথাটা বিশ্বাস করে। তাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
বীথি চা বানিয়ে কাপ হাতে তুলে দিয়ে মৃদু স্বরে বলল, আগে জানলে আজ আপনাকে কষ্ট দিতে টেনে আনতাম না।
দীপনাথ বলল, আজ বোধহয় আমার একটু অন্যমনস্ক হওয়ারও দরকার ছিল।
সত্যি বলছেন? সত্যিই।
কী যে কদিন ছটফট করেছি আপনার জন্য। কেবলই মনে হত, আপনি আর আসবেন না। ভীষণ রাগ করেছেন।
দীপনাথ মুখ নিচু করে চায়ে চুমুক দেয়।
বীথি আস্তে একটা হাত বাড়িয়ে দীপনাথের কপাল থেকে একটা চুলের গুছি সরিয়ে দিয়ে বলে, শরীরের দিকে একদম নজর দিচ্ছেন না।
দীপনাথের কাঁপের চা একটু চলকে যায়। সে চোখ বোজে। আর সঙ্গে সঙ্গে তার চোখের সামনে ঘন্য জেদি একরোখা কিশোরীপ্রীতম মণিদীপা এসে দাঁড়ায়।
চোখ খুলে দীপনাথ বলে, খুব খাটুনি যাচ্ছে।
জানি। আপনি এখন বড় চাকরি করেন। আরও বড় চাকরিতে জয়েন করতে যাচ্ছেন।
সবই জানেন তা হলে।
বীথি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, এও জানি এরপর বীথির ঘরে আর কখনও পায়ের ধুলো পড়বে না আপনার।
দীপনাথ এই ঘনিষ্ঠতাটা উপভোগ করছিল এবং সেজন্য অবাকও হচ্ছিল কম নয়। সে বলল, কেন ডেকেছেন বলুন তো?
ও মা!–বীথি চোখ কপালে তুলে বলে, সেসবও কি খুলে বলতে হবে নাকি?
দীপনাথ একটু রূঢ় স্বরে বলে, কেন?
আপনার মেজাজ আজ ভাল নেই। আমি কিন্তু একেবারে হৃদয়হীনা নই। কোনও কোনও মানুষকে আমি সত্যিই ভালবেসে ফেলি। আপনি বিশ্বাস করবেন না, তবু বলছি, কথাটা সত্যি।
দীপনাথ জানে, সে এক ভিখিরি। বহুকাল ধরে তাকে কেউ সত্যিকারের ভালবাসেনি। বীথির কাছেও সেই ভালবাসা নেই। তবু ভান তো আছে। তাৎক্ষণিক? পুরো জীবনটাই তো আপেক্ষিকভাবে তাই।
বীথির ঘরেই খুব ভোরে ঘুম ভাঙল দীপনাথের। জাগা মাত্রই শঙ্খধ্বনির মতো বুকে ঢাক বেজে উঠল—প্রীতম।
আর কোনওদিকে তাকাল না দীপনাথ। ছেড়ে রাখা পোশাক পরে নিয়ে তড়িৎ পায়ে নেমে এল নীচে। তারপর মেসবাড়ি। দাড়ি কামানো, স্নান।
সাড়ে নটায় সে বোস সাহেবের চেম্বারে ঢুকল।
আজই আমাকে শিলিগুড়ি যেতে হচ্ছে বোস সাহেব।
বোস একটু অবাক হয়। তারপর হেসে বলে, আপনি তো আমাদের ছেড়ে চলেই যাচ্ছেন। আবার এই উটকো ছুটি কেন?
ব্যক্তিগত জরুরি দরকার।
খারাপ কিছু?
খুব।
দেন মেক ইট অ্যান অফিসিয়াল ট্যুর।
তা হয় না।
হয়। নর্থ বেঙ্গলে আমাদের একটু কাজও আছে। কবে যাচ্ছেন?
আজকের ফ্লাইটে। আমি ব্যাগ গুছিয়ে এনেছি।
অফিসের গাড়ি নিয়ে চলে যান। মেক ইট অফিসিয়াল। নর্থ বেঙ্গলে আমাদের কী কাজ আছে তা আপনি তো জানেনই।
সময় পাব কি না সেটাই প্রশ্ন।
টেক ইয়োর টাইম। ফিরে এসে বিল করবেন।
দীপনাথ হাসল। বলল, জানি বোস সাহেব।
ভ্রু কুঁচকেও বোস হাসল। সত্যিই তো। এই অফিসের দু’নম্বর লোকটা কি এসব প্রিলিমিনারিজ জানে না!
বোস বলল, চার্জটা কাকে বুঝিয়ে দিয়ে যাবেন?
যাকে বলবেন।
বোস একটু ভেবে বলে, থাকগে। আপনার অত সময়ও হবে না। আমি দেখে নেব।
পারবেন?
পারব। আই ফিল বেটার।
তা হলে যাই?
আসুন।
ঘণ্টা চারেক বাদে দীপনাথ শীততাপনিয়ন্ত্রিত সুগন্ধী বোয়িং-এর অভ্যন্তরে বসে গভীর ক্লান্তিতে চোখ বুজল। ভিতরটা কতখানি শূন্য তা টের পেল এতক্ষণে।