৬ আগস্ট, শুক্রবার ১৯৭১
আজ আমার জ্বর এসেছে। পরশু থেকেই একটু একটু ঠাণ্ডা লেগেছিল, ঠিক কেয়ার করি। নি, রোজকার মতই ঘরের কাজ, বাইরের ছুটোছুটি–সব করে গেছি, শরীর তা সইবে কেন? দুপুরে খুকু এসে গোশত আর একটা নিরামিষ বেঁধে দিয়ে গেছে, বারেক কোনমতে ভাতের ফ্যান গালতে পেরেছে। আমি সারাদিন ডাইনিং রুমে আমার চৌকিটাতে। বিকেলে মা এসেছিলেন। এত ঘনঘন অসুখ হচ্ছে–তার আর দোষ কি-এই ধরনের কিছু একটা বিড়বিড় করে বলে কথা শেষ না করে চুপ করে গেলেন। মা সহজে মনের ভাব চাপতে পারেন না, মুখে খৈ ফোটে! কিন্তু আজ তিনি যেন নিজেই। জোর করে নিজের মুখ বন্ধ করে রাখলেন। তবে কুঁচকানো ভুরু, টেপা ঠোট আর সর্ব অবয়বের কাঠিন্য থেকে আমার প্রতি তার অসহনীয় অথচ নীরব অভিযোগ ও অভিমান ফুটে বেরুতে লাগল। তার পেটের মেয়ে হয়ে তাঁর কাছে রুমীর কথা গোপন রেখে ভেতরে ভেতরে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছি, তার সঙ্গে আলাপ করে মনের ভাব হালকা করছি। না, এটা তিনি চোখের সামনে দেখে যেন আর সইতে পারছেন না। আবার কিছু বলতেও পারছেন না আমার কঠিন নীরবতার কারণে।