2 of 3

৬৮. মেয়েটির হাসিটি অদ্ভুত সুন্দর

॥ ৬৮ ॥

মেয়েটির হাসিটি অদ্ভুত সুন্দর। কোনো কায়দা নেই, একেবারে শিশুর মতো সরল ও সহজ হাসি। নম্র স্বরে বলল, আসবো?

আসুন। রেমি ক্ষীণ কণ্ঠে বলল।

আমি ধারা। ধ্রুব আমাকে বলেছিল, আপনি আমাকে দেখতে চান।

বসুন।

ধারা খুব সহজভাবে বসল। একটুও সংকোচ নেই, অতিরিক্ত স্মার্ট হওয়ার চেষ্টাও নেই। কথাবার্তা টানটান এবং স্পষ্ট। গলার স্বরটির মধ্যে একটা আন্তরিকতা মাখানো নম্রভাব রয়েছে।

রেমি চেয়ে ছিল। কথা আসছিল না মুখে বা মনে। কী বলবে?

ধারা অবস্থাটা অনুমান করে নিল বোধ হয়। শাড়ির কুঁচিটা অকারণে একটু ঠিকঠাক করে বলল, আমার আসল নাম কিন্তু ধারা নয়।

তবে কী?

রাধা। বড্ড সেকেলে নাম বলে আমি একটু বর্ণবিপর্যয় করে নিয়েছি।

তাই বুঝি! রেমি এলানো গলায় বলে।

আপনার নামটা কিন্তু ভীষণ আধুনিক।

রেমি একটু নড়েচড়ে বসল। তারপর একটা গভীর শ্বাস ফেলে বলল, আমি কিন্তু বড্ড সেকেলে।

খুব হাসল ধারা। ভদ্রতার হাসিই হবে। তারপর বলল, আপনি আমাকে দেখতে চেয়েছিলেন কেন বলুন তো।

এমনি।

দেখাদেখির ব্যাপারটি কিন্তু খুব অস্বস্তিকর। তাই না? আমার তো মনে হয়েছিল আপনি আমার সঙ্গে ঝগড়া করবেন।

ঝগড়া করব! রেমি ভ্রু কুঁচকে বলল, না, ঝগড়া করব কেন? হেরে গেলে ছেলেবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া করতাম। এখন তো বড় হয়েছি।

আপনি সুন্দর কথা বলেন তো। ধ্রুব যা বলেছিল মোটেই তা নয়।

ও কী বলেছিল?

বলেছিল আপনি একটু প্রাচীনপন্থী, আর—

আর কী?

একটু অ্যাগ্রেসিভ।

আপনার কি তাই মনে হচ্ছে?

ধারার মুখে হাসিটি লেগেই ছিল। হাসিতে উজ্জ্বল মুখখানা এক অপরূপ ভঙ্গিতে নেড়ে বলল, এখনো নয়। তবে রেগে যাওয়ার কীই বা আছে বলুন! আমি কিন্তু ধ্রুবকে বলেছিলাম, তোমার বউ আমাকে দেখলে কিছুতেই রাগ করতে পারবে না। ধ্রুব বলেছে, না না, রেমি ভীষণ রাগী। তুমি একটু গার্ড নিও।

বলেছে বুঝি?

হ্যাঁ। বোধ হয় টিজ করছিল। তবু আমি একটুও ভয় পাইনি। ধ্রুবকে বললাম, উনি যখন দেখা করতে চান আমি দেখা করব। আই হ্যাভ নাথিং টু লুজ। অপমান করলেও আমার গায়ে লাগবে না।

লাগবে না! কেন!

আমি যে জীবনের শুধু ব্রাইট সাইডটা দেখি। একদম পেসিমিস্ট নই। বলে ধারা আবার হাসতে থাকে।

রেমি একবারও হাসতে পারেনি। এবারেও পারল না। তবে মেয়েটার মধ্যে এমন একটা প্রাণপ্রাচুর্য ও খুশিয়াল ভাব আছে যে সেটা অজান্তে রেমির ভিতরকার আড়ষ্টতা কাটিয়ে দিচ্ছিল। সে স্বাভাবিক গলায় বলল, আমি ঠিক উল্টো। ব্রাইট সাইড আমার চোখেই পড়ে না।

তার কারণটা কী জানেন?

কী?

আপনার নানারকম এক্সপেরিয়েনস হয়নি। তাই। জীবনে যাদের খুব একটা ঘটনা ঘটে না, নানারকম অভিজ্ঞতা হয় না তারা সবসময়ে বিষণ্ণ থাকে আর ডার্ক সাইড নিয়ে ভাবে।

আপনার কি অনেক অভিজ্ঞতা?

তা বলতে পারেন। তবে বিয়ের পর আমাকেও আপনার মতো জবুথবু ঘরবন্দী করে রাখার একটা চেষ্টা হয়েছিল।

আপনার বিয়ে হয়েছে?

ধারা হাসিমুখে বলে, দু’বার। আমি দু’টাইম ডিভোর্সী।

এইটুকু বয়সে?

কী করব বলুন। কোনো বিয়েই এক বছরের বেশী টেকেনি।

কেন টিকল না?

খুব সহজভাবে, যেন অন্য কারো গল্প বলছে, এমন সরল গলায় ধারা বলল, প্রথম যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল হি পারহ্যাপস হ্যাড ইডিপাস কমপ্লেকস। মা ছাড়া আর কিছু বুঝতেই চাইত না। তার মা কেমন ছিল জানেন? ভেরি বিচী, ভেরী পজেসিভ। একদিন বরের সঙ্গে ড্রিংক করে ফিরেছিলাম বলে আমাকে উনি চড় মেরেছিলেন, কিন্তু নিজের ছেলেকে কিছু বলেননি।

তারপর?

তারপর আর কী? খুব ঝামেলা হতে শুরু করল। অ্যান্ড উই সেপারেটেড।

দ্বিতীয় জনও কি তাই?

না। চাঁদ ওয়াজ এ নাইস গায়। আমি কখনো ওকে ডিসলাইক করতে পারিনি। এখনো করি না।

তাহলে?

কী বলব! সামথিং ডিডনট ক্লিক। ওর সব ভাল, কিন্তু হাজব্যাণ্ড মাস্ট বি সামথিং ডিফারেন্ট। উই ওয়্যার রাদার ফ্রেন্ডস।

রেমির সামান্য একটু মজা লাগছিল। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে তার ভিতরে যে একটা বদ্ধমূল ধারণা প্রোথিত রয়েছে তা একটু নাড়া খাচ্ছিল মেয়েটির এসব আলগা কথায়। কিন্তু তবু মেয়েটাকে কিছুতেই সে খুব অপছন্দ করতে পারছিল না। তাই একটু রাগ হচ্ছিল নিজের ওপর। মেয়েটা বড্ড সরল, বড় অকপট।

রেমি বলল, এখন?

এখন! ওঃ, এখন আমি ভেরী মাচ ফ্রি অ্যান্ড ভেরী মাচ হ্যাপী।

বিয়ে করবেন না?

কী দরকার? আপনি খুব ঘরসংসার পছন্দ করেন?

রেমি চুপ করে কিছুক্ষণ ভাবল। সে ধারার মতো অভিজ্ঞ নয়। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া, কিছু উচ্চকিত পোশাক পরা, কয়েকজন ছেলে বন্ধুর সঙ্গে নিরামিষ মেলামেশা এবং সামান্য কিছু বিদেশী নৃত্যগীত ছাড়া তার আধুনিকতার তেমন কোনো দীক্ষা হয়নি। আধুনিকতা তো কেবল আচরণ নয়, ও একটা বিশেষ মনোভঙ্গী। ধারা জিনস্ পরেনি, চোখমুখের ভাবে বা অঙ্গভঙ্গিতেও ভারী শিষ্ট ভাব, কিন্তু ওর মনটাই অন্য রকম। এ পৃথিবীকে, এই জীবনকে রেমি যে-চোখে দেখে ও মোটেই সেরকম দেখে না। রেমি অনেকক্ষণ ভেবে বলল, কী জানি। বোধ হয় ঘরসংসার বলে নয়, ভালবাসি একজন বা দুজন মানুষকে। তাদের ছাড়তে ইচ্ছে করে না।

ইচ্ছে না করলে ছাড়বেন কেন? সেকথা বলছি না। কিন্তু ধরুন, কখনো আপনার নিজের মতো করে থাকতে ইচ্ছে করে না? আর একটু ফ্রিডম পেতে ইচ্ছে করে না?

করে। খুব করে। রেমি খুব আকুল গলায় বলে।

ধারা চমৎকার হাসিটা হেসেই যাচ্ছে। বলল, আমাদের দেশের মেয়েদের কী মুশকিল জানেন? তাদের ইচ্ছেটাই মরে যায়। ছেলেবেলা থেকে এমন সব শেখানো হয় যে, মাথাটাই তাদের অবসেসড। ঘরসংসার পেলেই তাদের আর সব ইচ্ছে মরে যায়। আর না হলে চুরি করে গোপনে কোনো লাভারের সঙ্গে ভয়ে ভয়ে মেলামেশা করে। কিন্তু এটা তো ঠিক নয়। আমার যদি কাউকে ভাল লাগে তবে প্রকাশ্যেই মিশব, নিজেকে তো বাঁধা দিইনি। বলুন ঠিক কিনা!

রেমি বলল, ঠিকই তো।

ধ্রুব বলে আপনি ভীষণ সেকেলে।

রেমি এই প্রথম একটু হাসতে পারল। মাথা নেড়ে বলল, আমি ঠিক কেমন তা ও জানেই না।

কেন জানবে না?

জানে না, তার কারণ আমাকে ও লক্ষ করে না।

বাট ইউ আর চার্মিং। সিম্পলি চার্মিং।

হবে হয়তো। কিন্তু ও সেটাও লক্ষ করেনি কখনো। ওর সঙ্গে আপনার পরিচয় কবে থেকে?

বেশীদিন নয়।

কোথায় দেখা?

সেটা একটু অদ্ভুত ঘটনা। আমাদের দেখা খুব নরমাল সারকামস্ট্যানসে হয়নি।

কিরকম?

আমার মতো যারা একা এবং স্বাধীন জীবন যাপন করতে চায় সেইসব মেয়েদের পদে পদে বিপদ। আপনি ঠিক বুঝবেন না। যারা নিরাপদ ঘরে থাকে তাদের পক্ষে এ শহর সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন। ধরুন সোনাগাছি, টেরিটিবাজার, চীনাপট্টি, খিদিরপুর ডক বা সন্ধ্যার এসপ্লানেডের গলিঘুঁজি এসব মেয়েদের পক্ষে নিরাপদ জায়গা নয়। লোকে ডাকে, ইশারা করে, অফার দেয়, গাড়িতে তুলে নিতে চায়, আড়কাঠি পিছনে ঘুরঘুর করে, ছেলেরা দল বেঁধে পিছু নেয়, টিটকারি দেয়। এসব সহ্য করে এবং এড়িয়ে তবে চলাফেরা করতে হয়।

রেমি একটু শিউরে ওঠে। বলে, মা গো! আপনি ওসর জায়গায় একা যান?

না গেলে আর স্বাধীনতা কিসের? যখন যেমন খুশি ঘুরব ফিরব দেখব তবে না স্বাধীনতা! আমি অ্যাডজাস্টেড হওয়ার চেষ্টা করছি। মাঝে মাঝে অবশ্য বেশ বিপদে পড়ে যেতে হয়। এরকম একটা বিপদে পড়েই ধ্রুবর সঙ্গে আলাপ হয়ে গেল।

বলে হাসে ধারা। নিয়মরক্ষার খাতিরে রেমিও ঠোঁটটা রবারের মতো টেনে একটু হাসবার চেষ্টা করে। বলে, তাই নাকি?

ধারা বলে, যত রোম্যান্টিক শোনাচ্ছে তত রোমান্টিক কিন্তু নয় ব্যাপারটা। আপনি কি জানেন যে, ধ্রুবর এক দল অত্যন্ত ন্যাস্টি ফ্রেণ্ডস আছে!

খানিকটা জানি।

ভীষণ ন্যাস্টি। ধ্রুব কি করে যে ওদের সঙ্গে মেশে! এ প্যাক অফ হেলহাউন্ডস। ওদের মধ্যে এক জন হচ্ছে লালু। চেনেন?

রেমি মাথা নেড়ে বলে, না। ওর বন্ধুরা বড় একটা এ বাড়িতে আসে না।

ইউ আর লাকি। ওই লালুর একটা জুয়ার ব্যবসা আছে টালিগঞ্জে। বাবসাটা অবশ্য দুনম্বরী। আমি আমার এক বয় ফ্রেণ্ডের সঙ্গে একদিন জুয়া খেলতে গিয়েছিলাম।

আপনি? রেমি চোখ কপালে তোলে।

কী আছে তাতে? একটা নতুন অভিজ্ঞতা হল। কিন্তু জয়েন্টটা যে এত খারাপ তা আগে জানতাম না। আমার সঙ্গে শ পাঁচেক টাকা ছিল। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে আমি সব টাকা হেরে গেলাম। আমার বয়-ফ্রেন্ড রাজু হারল দেড় হাজার টাকার মতো। আমাদের কারো কাছেই আর টাকা ছিল না। রাজু যখন শেষ রাউণ্ড খেলছে তখন ওর বিড করার মতো টাকা পকেটে নেই। এর আগেই ঘড়ি আংটি সব বিড দিয়ে হেরেছে। এমন কি আমার ঘড়িটা অবধি ধার নিয়ে খুইয়েছে। কিন্তু তবু মুখে মুখে বিড দিয়ে যাচ্ছিল। শেষ বাজিতে ও আরো দেড় হাজার টাকা হারল। কিন্তু পেমেন্টের টাকা নেই। কী অবস্থা ভাবুন। লালু সঙ্গে সঙ্গে ওর কলার চেপে ধরল, টাকা না দিয়ে যেতে পারবে না। রাজুর তখন কাঁদো-কাঁদো অবস্থা। আমি জানতাম বেচারা মোটেই বড়লোক নয়। একটা বিদেশী ফার্মের অফিসার। মাইনে ভালই পায়, কিন্তু ঝপ্ করে দু’আড়াই হাজার টাকা জুয়ায় হেরে যাওয়ার মতো ভাল অবস্থা তো নয়। রাজু অনেক কাকুতি মিনতি করছিল, কিন্তু লালু আর তার তিলট রাফিয়ান বন্ধু একে চেয়ারে বসিয়ে রেখে দরজা বন্ধ করে দিল। বলল, যেতে দেবো না, তবে ফোন করতে দেবো। কল সামওয়ান হু উইল পে ফর ইউ।

রেমির হাত-পা হিম হয়ে যাচ্ছিল গল্প শুনে। বলল, কী সাঙ্ঘাতিক!

সাঙ্ঘাতিক আর কী শুনলেন! এর পরের ঘটনা আরো সাঙ্ঘাতিক। রাজু যখন বলল যে, ফোন করে কাউকে পাওয়ার উপায় নেই তখন লালু কী বলল জানেন? বলল, ঠিক আছে, তোমার গার্ল ফ্রেণ্ডকে রেখে দিচ্ছি। রাত দশটার মধ্যে যদি টাকা নিয়ে না আসতে পারো তব রাত্রিবেলা উই ক্যান এনজয় হার।

রেমি ককিয়ে ওঠে, মাগো! আপনি কী করলেন?

ধারা একটু হেসে বলে, আপনি ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু ইটস অল ইন দি গেম। এসব তো ঘটতেই পারে। তবে আমার যেটা ভয় হচ্ছিল সেটা রাজুকে নিয়ে। আমি জানতাম রাজু ইজ এ কাওয়ার্ড এবং আমার প্রতি সফটনেস থাকলেও হি ইজ অলওয়েজ ইন টু মাইন্ডস্। ও হয়তো আমাকে রেসকিউ করত আসবে না।

তবু গুন্ডাদের সঙ্গে থাকতে রাজি হলেন?

আমি রাজি হয়েছিলাম কে বলল? বাট দে ডিডন্ট কেয়ার টু আস্‌ক্ মি। আমার মতামতের তোয়াক্কা করেছিল নাকি ওরা!

আপনি কিছু করলেন না?

ধারা হেসে ফেলে বলে, একজন মেয়ের পক্ষে যা সম্ভব সবই করেছিলাম। চেঁচিয়েছি, কামড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি, জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছি। রাজুও আপত্তি করছিল মিনমিন করে। বন্ড লিখে দিতে চাইছিল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না।

রেমি, উদ্বেগের গলায় বলে, রাজু চলে গেল?

যেতে চাইছিল না। কিন্তু লালু এবং তার বন্ধুরা শিকারের গন্ধ পেয়ে গেছে। তাই রাজুকে একটু ম্যানহ্যান্ডেল করে বের করে দিল। তখন সন্ধে সাড়ে সাতটার মতো বাজে। ওরা বলে দিল, রাত দশটা পর্যন্ত ডেডলাইন। তারপর আমাকে ওরা যা খুশি করবে।

রাজু পুলিসে খবর দিতে পারত তো!

পারত। তবে লাভ ছিল না। পরে ওকে হয়তো ওরা খুন করত, আর পুলিসও কি কিছু করত ভাবেন?

তারপর কী হল?

ধারা খুব হাসতে লাগল। একদম প্রাণখোলা হাসি। তারপর হাসি থামিয়ে বলল, আপনি হলে বোধ হয় মূর্ছা যেতেন!

শুধু মূর্ছা ভয়ে হার্টফেল করতাম।

আমারও ভীষণ ভয় করছিল। তাবে ওরা কথা রেখেছিল কিন্তু। রাজুকে বের করে দিয়ে ওরাও ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আমাকে একা রেখে।

আপনি পালালেন না?

কী করে পালাবো? দরজা বন্ধ করে গেল যে!

তারপর?

আমাকে অবশ্য দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। ঘন্টা খানেক পরেই দরজা খুলে দারুন স্মার্ট একটা ছেলে ঘরে ঢুকল। দেখে আমি অবাক। ওরকম একটা বিচ্ছিরি জায়গায় এরকম ভদ্র আর অ্যারিস্টোক্র্যাট চেহারার একজন ইয়ংম্যানকে দেখব ভাবতেই পারিনি।

সেই কি ও?

ধারা খুব হেসে ওঠে। মাথা নেড়ে বলে, হি ইজ রিয়েলি স্ট্রাইকিং, তাই না?

রেমি বিরস মুখে বলে, আমি তো তাই শুনি। মেয়েরা বলে। তারপর?

আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল, আপনি কি লালুর হোস্টেজ? আমি তখনো ভয়ে সিঁটিয়ে আছি। বললাম, হ্যাঁ। কাইন্ডলি আমাকে ছেড়ে দিতে বলবেন? ও একটু হাসল। বলল, লিবারেশন কি এত সোজা? জুয়া খেলতে অচেনা জায়গায় যখন আসতে পেরেছেন তখন বাকিটাও পারতে হবে।

বলল?

বলল, তবে একটু হাসি ছিল মুখে। বুঝতে পারছিলাম, ইয়ার্কি করছে। হি ইজ নট সিরিয়াস।

তারপর কী হল?

বললে আপনি বিশ্বাস করবেন না। ওর সঙ্গে আমার আরো কিছু কথাবার্তা হয়েছিল। আজ আর ডিটেল মনে নেই। তবে কাটা কাটা কথা, ডিবেটের মতো। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমার ভিতরে সামথিং ওয়াজ টিকিং।

কী সেটা?

একটা আর্জ। আকূতি। লোকটাকে আমার ভীষণ ইন্টারেস্টিং লাগছিল। আমাকে অনেক প্রশ্ন করল। কোথায় থাকি, কার সঙ্গে থাকি, কী করি, উড়নচণ্ডী কেন, এসব। আমিও জবাব দিচ্ছিলাম। কিন্তু খুব হাসি পাচ্ছিল আর মজা লাগছিল।

ভয় করছিল না?

একদম না। একটু আগেও যে সাঙ্ঘাতিক ভয় পাচ্ছিলাম তা ওকে দেখে একদম উবে গেল। বললাম না, সামথিং ওয়াজ টিকিং ইনসাইড মি!

ওরা কিছু করল না?

না। ওদের আর দেখতেই পেলাম না। ধ্রুব আমার ইন্টারভিউ নিয়েছিল মিনিট পনেরো ধরে। তারপর বলল, চলুন পৌঁছে দিয়ে আসি। আমি ওর পিছু পিছু নেমে এলাম। ও আমাকে একটা ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে চলে যাচ্ছিল। আমিই ওকে বললাম, আমার ফ্ল্যাট পর্যন্ত চলুন, প্লীজ।

ও রাজি হল?

কেন হবে না?

শুনেছি ও মেয়েদের বেশী পাত্তা দেয় না!

আমাকেও দিয়েছিল নাকি প্রথমে? বলে ধারা খুব হাসল। মাথা নেড়ে বলল, মোটেই ভাববেন যে এক কথায় পৌঁছে দিতে রাজি হয়েছিল। আমাকেই বেশ খানিকটা সাধাসাধি করতে হল। বললে বিশ্বাস করবেন না। অন্য মেয়ে হলে এই জায়গা থেকে পালানোর প্রথম চান্স পেলেই আর পিছু ফিরে তাকাত না। কিন্তু আমি একটু অন্যরকম। পালানোর চেযে ইনভলভ্‌মেন্ট আমার বেশী ভাল লাগে।

রেমি করুণ গলায় বলে, আপনার খুব সাহস।

তা বলতে পারেন। তবে সাহস করে আমি ঠকিনি। আলটিমেটলি দেখেছি, মেয়েরা স্বাধীন হয়ে থাকতে চাইলে থাকতে পারে। একটু-আধটু অসুবিধে যা হয় তার তুলনায় লাভই বেশী।

আপনি কি একা থাকেন?

একদম একা। একটা সরকারী ফ্ল্যাট আছে আমার। ওনারশিপ।

চাকরি করেন?

নিশ্চয়ই।

বাড়ির কেউ নেই?

সবাই আছে। মাঝে মাঝে যাই। আমার বাবা অবশ্য গত বছর মারা গেছেন। কিন্তু তিনি আমাকে কোনো কাজে বাধা দেননি। ইন ফ্যাকট লিবারেশনের প্রথম পাঠটা তাঁর কাছেই শেখা।

ওর সঙ্গে কি আপনার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক?

ধ্রুব?

হ্যাঁ। বলে রেমি লজ্জায় লাল হয়।

ধারা সামান্য একটু হেসে গম্ভীর হয়ে গিয়ে বলে, প্রসঙ্গটা খুব সেনসিটিভ।

ধারা এই প্রথম সত্যিকারের গম্ভীর হল। রেমি দেখল, গম্ভীর মুখ ধারাকে মানায় না। সৌন্দর্যটা হেন অর্ধেক কমে যায়।

রেমি বলল, অবশ্য আপত্তি থাকলে শুনতে চাই না।

ধারা মাথা নেড়ে বলল, আমার লুকোনোর কিছু নেই। আপনাকে ফ্র্যাংকলি বলতে পারি, সারা জীবনে এই একজন পুরুষ সম্পর্কেই আমি দুর্বল। সেন্টিমেন্টাল কোনো ব্যাপার আমার ছিল না। বান্ধবী চেয়ে আমার ছেলে-বন্ধু বেশী। তাই ইমোশন কমে গেছে। তবু ধ্রুব হ্যাজ ডান সামথিং টু মি। কিন্তু মেয়েদের যে আলাদা ইনস্টিংট থাকে তা দিয়ে বুঝতে পারি, হি ইজ ইনভিনসিবল্।

তার মানে?

ও কোনো মেয়েকেই কানাকড়ি মূল্য দেয় না।

আপনার সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠতা হয়নি?

ধারা আবার হাসল, বলল, হয়েছে, আবার হয়ওনি। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ওর সবটাই প্লে-অ্যাকটিং। অনেক সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও হি নেভার স্লেপ্ট উইথ মি, নেভার কিস্ড মি।

রেমির মাথা ঘুরছিল। চোখ কিছুক্ষণ বন্ধ করে রইল সে। টের পেল, চোখের কোলে জল টলটল করছে।

ধারা হাত বাড়িয়ে তার একটা হাত ধরে বলল, আপনি একটু ইমোশনালি আপসেট। আজ বরং আমি যাই!

রেমি কিছু বলতে পারল না। থম মেরে বসে রইল।

বহুক্ষণ বাদে যখন চোখ খুলল তখন ঘরে ধারা নেই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *