2 of 3

৬৪. আজ আর নেই

॥ ৬৪ ॥

আজ আর নেই! আজ আর তার কোনো জোর নেই ধ্রুবর ওপর! কথাটার মানে কী? রেমি যেমন রাগে আক্রোশে আবেগে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ধ্রুবর ওপর তেমনি হঠাৎ নিবে গেল। অবশ হয়ে পড়ল।

আজ আর নেই কেন? জল টলটলে চোখে ধ্রুবর দিকে চেয়ে সে আকুল গলায় প্রশ্নটা করে।

ধ্রুব তার দিকে চেয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিল তাকে। তারপর বলল, কখনো কখনো মানুষ অধিকার হারায়। তুমিও হারিয়েছো।

কেন সেটা ব্যাখ্যা করে বলো।

অত কথা বলতে গেলে আমার নেশা ছুটে যাবে।

আমি তোমার মাথায় এক্ষুণি ঠাণ্ডা জল ঢেলে দেবো না বললে।

ধ্রুব অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে মৃদু গলায় বলে, দু নৌকোয় পা দিয়ে চলার চেষ্টা করছো কেন রেমি? আজ দুপুরের পর থেকে আমার সঙ্গে তোমার সব সম্পর্ক শেষ হওয়া উচিত।

কেন, দুপুরে কী এমন হল?

কী হয়েছে তার খবর কে রাখে বলো! কিন্তু তুমি তো তৈরি হয়েই বেরিয়েছিলে। তোমার মন তো প্রস্তুত ছিল। শোনো রেমি, শরীরের কোনো দোষ হয় না। শরীর তো একটা নিরপেক্ষ জিনিস। মন যেভাবে চালায় সে সেইভাবে চলে। তোমার শরীরটা কী করেনি সেটা বড় কথা নয়। তোমার মন তো টলেছে। সেটাই আসল কথা।

এ পাগলকে রেমি কী করে বোঝাবে যে, তার শরীর যদিও বা কখনো অবাধ্যতা করে, মন করতে চায় না। সে মাথার মধ্যে একটা পাগলামির মতো কিছু টের পাচ্ছিল। গলা দিয়ে স্বর বেরোতে চাইছে না। সে ফিসফিস করে বলল, আমার মন কখনো টলেনি। কখনো না। তুমি আমাকে জোর করে তাড়িয়ে দিচ্ছো। তুমি যে কিছুতেই আমাকে সহ্য করতে পারছো না। আমি কী করব?

তুমি কী করবে সে বিষয়ে তোমারই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সেটা আমি কেন স্থির করে দেবো? কেনইবা এ যুগে একজন মেয়ে একজন পুরুষের ওপর এত নির্ভরশীল হবে? স্বাধীন হও রেমি, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে শুরু করো। পারবে।

তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না?

করি। কিন্তু আমার বিশ্বাসভাজন হয়ে তোমার লাভ কী? আমাকে এতটা গুরুত্বই বা দিচ্ছো কেন? আমি তোমাকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দিতে চাই, বুঝছো না? বিয়ের বন্ধন নয়, ভালবাসা, বিশ্বাস, সততা এইসব কোনো শর্তই নয়। তুমি তোমার ইচ্ছেমতো চলবে, আমি চলব আমার মতো। কেউ কারো কাছে দায়বদ্ধ নই।

আমি ওরকম সম্পর্ক বুঝি না। তুমি আমার কে হবে তাহলে?

কেউ নয়। আমি একজন লোক, তুমি একজন মহিলা।

মাগো! আমি ওরকম ভাবতে পারব না।

দেখ না চেষ্টা করে। আদ্যিকালে তো এরকমই ছিল মেয়ে আর পুরুষের সম্পর্ক। তাছাড়া আমাকে নিয়ে তোমার প্রবলেমও তো নেই। তুমি রাজার সঙ্গে বোম্বে চলে যাচ্ছো। তুমি যেরকম বর-বউ সম্পর্ক চাও সেটা হয়তো বা রাজার সঙ্গে কোনোদিন গড়ে উঠবে। আমার সঙ্গে নয়।

আমি ভীষণ ঘাবড়ে যাচ্ছি। আমি পারব না।

এক্সপেরিমেন্ট করে দেখ।

রেমি শুকিয়ে যাচ্ছিল ভিতরে ভিতরে। আকণ্ঠ ভয়, পিপাসা, অনিশ্চয়তা। কাঁদতে পর্যন্ত ভুলে যাচ্ছিল সে। ধ্রুব এরকম সব আভাস অনেকদিন ধরেই দিচ্ছে বটে, কিন্তু এখন যেন তারা সত্যিই পৌঁছে গেছে পথের একেবারে শেষ মাথায়। সামনেই খাদ।

রেমি ধ্রুবর দুটো হাত ধরে টেনে নিল নিজের দিকে। নিজের শরীরে সেই হাতদুটোর বেষ্টনী দিয়ে বলল, একটু জড়িয়ে ধরো আমাকে। শক্ত করে। মনে হচ্ছে আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো। পাগল হয়ে যাবো। মরে যাবো।

ধ্রুব হতাশ গলায় বলে, কেন যে তোমার সংস্কারগুলো যাচ্ছে না!

রেমি ধ্রুবর বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে শক্ত হয়ে রইল। বলল, শোনো, আমি রাজার সঙ্গে যাবো না। তুমি যা চাও তাই হোক। আমাকে ডিভোর্স করো। তারপর আমরা একসঙ্গে থাকব।

ধ্রুব তার মাথায় সস্নেহে একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, চালাকি করছো?

কিসের চালাকি?

ছলে ছুতোয় আমার সঙ্গে লেগে থাকতে চাও!

ছল ছুতো কেন হবে? প্রোপোজালটা তুমি দিয়েছিলে।

দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি তোমার দ্বারা লিভিং টুগেদার সম্ভব নয়। ও একটা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি, আলাদা দর্শন। নিজের প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে লিভিং টুগেদার হয় না।

আমি পাগল হয়ে যাবো। আমাকে ছেড়ো না।

তুমি কী করে ওরকম সম্পর্ক অ্যাকসেপ্ট করবে বলো তো! তুমি তো আজ পর্যন্ত আমাকে নাম ধরেও ডাকতে পারোনি। পারবে?

তোমার জন্য আমি সব পারি।

আচ্ছা, ডাকো তো!

নাম ধরে? ধ্রুব!

ও কি ডাকা হল? শুধু উচ্চারণ করলে।

আস্তে আস্তে হবে। দেখো।

হবে না। কিছুতেই তোমার হবে না। তোমার সেই মানসিকতা নেই।

সেটাও হবে। তুমি শিখিয়ে নিও।

শেখানোর কিছু নেই। বললাম তো ওটা একটা মানসিক গঠন।

তুমি কি ওই মেয়েটাকে ভালবাসো?

কোন মেয়েটাকে?

ওই যে, আমি চলে গেলে যাকে নিয়ে তুমি থাকতে চাও।

ধ্রুব রেমিকে কেন যে একটু গাঢ় করে চেপে ধরল একথা শুনে তা বলা মুশকিল। কিন্তু ধরল। তারপর বলল, ওটাও আমার একটা একস্‌পেরিমেন্ট রেমি। তুমি ঠিক বুঝবে না।

আমি ওকে একবার দেখব। কতবার বলেছি। একটু দেখাবে?

এই প্রসঙ্গটায় ধ্রুব ভারী অস্বস্তি বোধ করে, লক্ষ্য করেছে রেমি। ধ্রুব তাকে তেমনি কটকটে করে চেপে ধরে থেকে বলে, না। দরকার নেই।

কেন নেই?

তোমার সঙ্গে ওর তুলনা করার কিছু নেই।

ও কেমন?

ওর মতো।

রেমির ফের রাগ হল। হিংসে হল। সে জানে ধ্রুবকে সে পায়নি। সেটা মেনে নেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আর কেউ ধ্রুবকে পেয়েছে এটাও বা সে মানে কী করে? মাথাটা পাগল-পাগল হয়ে যায় তার। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে থাকে। খুন করতে ইচ্ছে করে। আগুন লাগাতে ইচ্ছে করে।

রেমি আচমকাই ধ্রুবর আলিঙ্গন ভেঙে ফণা তুলল, আমি আর সহ্য করব না। বুঝলে! আর সহ্য করব না। ও কোথায় থাকে বলো! নাম কী?

ধ্রুব মাথা নেড়ে বলল, ওরকম প্রগলভ হয়ো না। আমি তো কিছু লুকোইনি। লুকোবার কিছু নেইও।

তবে ওর ঠিকানা দাও।

কেন, গিয়ে হামলা করবে নাকি?

না। কিচ্ছু করব না। ভয় নেই। ঠিকানাটা দাও।

ওর কোনো দোষ নেই। ওর ঠিকানা দিয়ে কী হবে? দোষ তো আমার। যদি দোষ বলে মনে করা যায়।

দোষ নয়?

আমার কাছে নয়। আমি অন্য ভাবে ভাবতে শিখছি।

রেমি দর্শন বোঝে না। তার নিজস্ব কোনো দৃষ্টিভঙ্গি বা জীবনদর্শন নেইও। ধ্রুবর মানসিকতাও তার কাছে রহস্যময়। কিন্তু সে নিজস্ব অধিকারবোধ বোঝে। সে বুঝল, এখন যদি জোর খাটানো না যায় তবে সব হারিয়ে ফেলবে সে। শুধু কান্নায় তো হবে না।

রেমি তীব্র স্থির চোখে ধ্রুবর দিকে চেয়ে থেকে বলল, আমি মরলে তুমি খুশি হও? অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায় তাহলে! তাই না?

না। সব সমস্যাই থেকে যায়। বরং আরো জটিল হয় ব্যাপারটা। কিন্তু মরার কথা ভাবছো কেন?

তুমি কি জানো, যে অবস্থায় আমি আছি তাতে অনেক আগেই আমার মরা উচিত ছিল?

না। এরকম কোনো সিচুয়েশন তৈরি হয়নি।

হয়নি একজন মাত্র মানুষের জন্য। তিনি শ্বশুরমশাই। তিনি না থাকলে আমাকে মরতেই হত।

ধ্রুব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, তিনি না থাকলে অনেক সমস্যা তৈরিই হত না রেমি। এমন কি তোমার সঙ্গে আমার বিয়েটাই হত না।

সেটা হয়তো ঠিক। কিন্তু উনি আমার জন্য যা করেছেন তা বাবাও করেনি।

একজন মানুষকে, আমরা দুজন দুটো অ্যাঙ্গেল থেকে দেখছি রেমি। তোমার সঙ্গে আমার মিলবে না। তবু বলি, যদি ওর জন্যই তোমার মরা না হয়ে থাকে তবে ওর জন্যেই বেঁচে থাকো। আমার কাছে কিছু প্রত্যাশা কোরো না।

তবে আমার বেঁচে থাকাটা চাইছো কেন?

মরাটাও তো মিনিংলেস। ওটা তো কোনো সমাধান নয়।

কেন সমাধান হবে না? আমি মরলে আমার সমস্যা মেটে। তোমারটা হয়তো মেটে না।

দাঁড়াও। আমার মাথায় এখন কোনো লজিক কাজ করছে না।

কোনোদিনই করে না। কিন্তু তুমি আমার মরাটা চাইছো।

কবে চেয়েছি?

রোজ চাইছো। নানাভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছো যে, আমাকে তোমার প্রয়োজন নেই। বউকে অন্যের ঘরে পৌঁছে দিতে চাইছো আপদবিদেয় করার জন্য, এত ঘেন্না আমাকে তোমার। কিন্তু কেন? ওই মেয়েটার জন্য? কতদিন ধরে ওর সঙ্গে সম্পর্ক তোমার?

আঃ, বাজে বোকো না।

আজকাল তুমি আমার শরীর ছুঁতে চাও না। কেন বলো তো! ঘেন্না?

রেমি! চুপ করো।

রেমি আঁচলটা ফেলে দেয়। খুব দ্রুত হাতে নিরাবরণ হতে হতে রুদ্ধশ্বাসে বলে, দেখ: দেখ আমি তার চেয়ে কতটা খারাপ। দেখ তো চেয়ে অন্ধ, শুধু শরীরও যদি তোমার চাহিদা হত তাহলেও কি আমি ফ্যালনা! দেখ।

ধ্রুব দেখল। মাথা নেড়ে বলল, আমি তো বলিনি তুমি খারাপ!

রেমি তেমনি রুদ্ধশ্বাস উত্তেজিত স্বরে বলে, সেকস ছাড়া অনেক বেশী কিছু দিয়েছি তোমাকে। তুমি তা বুঝলে না। ও মেয়েটা কী পারে দিতে তোমাকে? শরীর তো! তাও কি আমার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো? বলো!

ধ্রুব রেমিকে ধরে টেনে আনে কাছে, পাগলী হয়ে যাচ্ছ নাকি?

আমার কি নরম্যাল হওয়ার কথা? এত কিছুর পরেও?

ধ্রুব একটা দীর্ঘ চুম্বন দিল তার ঠোঁটে। বলল, তোমার কি জ্বর হয়েছে? শরীরটা বড্ড গরম। শ্বাস জোরে করো।

ছাড়ো আমাকে। খুব ক্ষীণ গলায় বলে রেমি।

ছাড়ব? সত্যিই চাও ছেড়ে দিই।

চাই। তুমি বদমাশ।

সে তো পুরোনো কথা। তবু তো ছাড়তে চাও না আমাকে।

ছাড়ো। আমি সেই মেয়েটার কাছে যাবো।

যেয়ো। তাড়া কিসের?

ঠিকানাটা দাও।

আমি নিয়ে যাবো।

তুমি ওর সঙ্গে শুয়েছো?

কী হবে জেনে? পুরুষদের তো সতীত্ব নষ্ট হয় না।

আমি জানতে চাই। বলো।

এই রকম রুদ্ধশ্বাস কথাবার্তার মধ্যেই ধ্রুব রেমিকে বিছানায় নিয়েছে। তাদের রাগ, উত্তেজনা, আক্রোশ আর ঘৃণা সব কিছুই একটা রন্ধ্র খুঁজছিল। বেরোবার পথ না পেলে দুজনেরই ভিতরে তা টগবগ টগবগ করে ফুটতে থাকত অনেকক্ষণ। দুজনেই সেই পথ পেয়ে গেল দুজনের শরীরে।

এমন আদর, এত ভালবাসাবাসি, বহুকাল হয়নি তাদের। উন্মত্তের মতো, জ্বালাময় তীব্রতার সঙ্গে তারা আঁকড়ে ধরল পরস্পরকে। অথচ বোঝা যাচ্ছিল, শরীরের এই মিলন দুজনের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করছে না। একটু ফাঁক থেকে যাচ্ছে কোথাও।

আনন্দের একটা ক্ষণস্থায়ী শিখর থেকে নেমে এসে অবসন্ন দুটি শরীর যখন পড়ে ছিল পাশাপাশি তখন রেমি হাত বাড়িয়ে ধ্রুবর চুলের মুঠি নরম হাতে ধরে নিজের দিকে টেনে আনল।

বলো। শুয়েছো?

সত্যি কথা সইতে পারবে?

সেটা আমি বুঝবো। তুমি বলো।

একটু রহস্য থাক না।

না, থাকবে না।

তোমাকে সব কথা বলতে হবে এমন প্রতিজ্ঞা কি বিয়ের সময় করেছি?

না করলেও আমি তোমার বউ তো! আমার কিছু অধিকার আছে তোমার ওপর। আমি জানতাম তোমার সবটুকুই আমার। হয়তো ভুল জানতাম। কিন্তু তবু আমার সম্পত্তিতে কেউ ভাগ বসিয়েছে কিনা সেটা না জানলে আমার শান্তি নেই।

জানলে কি শান্তি হবে? যদি জ্বালা আরো বাড়ে?

তবু জানতে চাই।

শোনো রেমি। তোমাকে তো বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে, শরীরের দোষ নেই। যেসব মেয়েরা রেপড হয় তারা তো নিজের ইচ্ছেয় হয় না। সমাজও তাদের প্রতি সিমপ্যাথেটিক। তুমি বরং খোঁজ নিয়ে দেখ, আমার মন আর কেউ দখল করেছে কিনা। সেটা অনেক বেশী বিপজ্জনক।

ওর আগে শরীরের কথাটাই বলো।

শুনবেই?

শুনবোই।

তাহলে বলি, হ্যাঁ। কয়েকবার।

রেমি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইল। তারপর ঠাণ্ডা স্বরে বলল, তোমার ঘেন্না করল না?

তোমার করে?

আমার! রেমি অবাক হয়ে তাকায়।

রাজা যখন—!

রেমি লজ্জায় রাঙা হয়। তারপর বলে, তুমি আমাকে বিশ্বাস করো?

করি। কারণ তুমি খুব ভাল মিথ্যেবাদী নও।

আমাকে রাজা কয়েকবার চুমু খেয়েছে কিংবা বলা ভাল খাওয়ার চেষ্টা করেছে। আমি জানি তুমি জেলাস নও। তবু বলি, আমার কিন্তু ঘেন্না হয়েছে। ভীষণ।

আর আজ?

আজ তোমার ওপর রাগ করে আমি একটা যাচ্ছেতাই কাণ্ড করতে যাচ্ছিলাম ঠিকই। কিন্তু যদি ঘটনাটা ঘটত তবে নিশ্চয়ই আমি গলায় দড়ি দিতাম।

ধ্রুব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর খুব ধীরে ধীরে রেমির নগ্ন শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, এ কথাটা তোমার কাছে সত্যি বলে মনে হয়?

কোন কথাটা?

এই যে রাজার ওপর তোমার ঘেন্না?

সত্যি নয়! তুমি আমাকে কেন বিশ্বাস করো না বলো তো!

কারণ ঘেন্না যে যুক্তিসিদ্ধ নয় রেমি। যে কোনো মেয়েকেই আকর্ষণ করার মতো গুণ আছে রাজার। হি ইজ হ্যানডসাম, ভাল গায়, স্মার্ট।

সব ঠিক। তব আমার ওরকম হয়।

হয়? আমাকে ছুঁয়ে বলো।

একটু দ্বিধা করে রেমি। বলে, ছুঁয়ে কেন?

দিব্যি দেওয়ায় আমার বিশ্বাস নেই, কিন্তু তোমার আছে। তাই দিব্যি দিচ্ছি। আমার দিব্যি, সত্যি বলো।

রেমি কুণ্ঠিত হাত বাড়িয়ে তার গলাটা জড়িয়ে ধরল। তারপর গভীর চুমু দিল ঠোঁটে। দাঁতের দাগ বসিয়ে দিল। দিতে দিতে কাঁদতে লাগল ফুলে ফুলে।

কাঁদছো কেন?

তুমি আমার এমন সর্বনাশ করতে গেলে কেন? আমাকে দুভাগ করে দিয়ে তোমার কী লাভ?

এটাও একসপেরিমেণ্ট রেমি। কিসের একসপেরিমেণ্ট?

আমি বিয়েতে বিশ্বাস করি না, সতীত্বে বিশ্বাস করি না, কোনো পুরোনো প্রথাকেই মানি না। আমি তোমার মধ্যে কিছু সেকেলে পতিপরায়ণতা লক্ষ্য করেছিলাম। মনে হয়েছিল, এটা একটা সংস্কার মাত্র। কিন্তু ভাঙা যায়। তাই তোমাকে রাজার দিকে ঠেলে দিয়েছিলাম রেমি। শুধু দেখতে চেয়েছি কতক্ষণ তুমি রেজিস্ট করতে পারো।

শুধু একসপেরিমেণ্ট? আমি কি তোমার গিনিপিগ?

গিনিপিগ কে নয়?

ঠিক আছে। একসপেরিমেণ্টের ফলটা কী হল?

দেখলাম, তুমিও রেজিস্ট করতে পারলে না।

পেরেছি।

ধ্রুব মাথা নেড়ে বলে, পারোনি। রাজার ভাগ্নী আর দিদি ছিল বলে বেঁচে গেছ। নিজের ইচ্ছেয় প্রতিরোধ করোনি। পারতেও না রেমি।

রেমির কান্নার বেগ বাড়ল।

ধ্রুব তাকে বুকে টেনে নিল। খুব খুব আদর করল তাকে। বলল, শোনো রেমি, তুমি মানুষ। মানুষ কখনো কি বিগ্রহ হয়? পাথর তো নয় সে।

এসব কী বলছো আমি যে বুঝতে পারছি না।

পারার দরকার নেই। এসো।

এই বলে ধ্রুব রেমিকে প্রায় পিষে ফেলতে লাগল নিজের শরীরের সঙ্গে।

এখন এক কুয়াশাচ্ছন্ন উপত্যকায় দাঁড়িয়ে রেমি যখন চারদিককার মায়াবী হলুদ আলোটির উৎস খুঁজছে তখন একটা কালো পাখি উড়ে গেল মাথার ওপর দিয়ে আর তীব্র কর্কশ স্বরে বলে গেল, খাঃ! খাঃ।।

কী সর্বনেশে ডাক! ও বাবা।

ওগো! রেমি ডাকল।

চারদিককার ন্যাড়া পাথুরে পাহাড়ের অবরোধ। কে যেন প্রতিধ্বনির মতো জবাব দিল, কী বলছো?

পাখিটা কী বলে গেল!

কী বলে গেল?

খা! কী খেতে চায় ও?

তোমার ভয় কিসের?

আমার পেটে যে বাচ্চা! ভয় করে।

বাচ্চা!

হ্যাঁ গো! সেই যে আমাদের ভালবাসাবাসি হয়েছিল একদিন। মনে নেই?

কবে?

অনেকদিন আগে। আমার তো ভালবাসার কপাল নয়। তবু একদিন হয়েছিল। কাঙালের মতো শুষে নিয়েছিলাম একদিনের সেই ভালবাসা। সেইটেই পেটের মধ্যে আমার বাচ্চা হয়ে এসেছে যে।

পাখিটা কী বলে গেল তোমাকে?

খা! আমার ভীষণ ভয় করে। আমার যে একটা নষ্ট হয়ে গেছে।

তোমার পেটে এখন কোনো বাচ্চা নেই রেমি। শুনতে পাচ্ছো না?

কী শুনবো?

ছেঁড়া নাড়ী দিয়ে রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে! শুনছো?

হ্যাঁ। ও, তাই তো! বাচ্চাটা! সে কি আছে?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *