2 of 2

৬২. পর পর অনেকগুলো ট্রাম

পর পর অনেকগুলো ট্রাম থেমে আছে সারবন্দি হয়ে। প্রথমে মনে হয়েছিল ট্রাফিকের গোলযোগ, তারপর একসময় শোনা গেল, ইউনিয়নের একজন নেতাকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে ট্রামকর্মীরা অকস্মাৎ ধর্মঘট ডেকেছে। ডঃ প্রফুল্ল ঘোষ মন্ত্রিসভা চালাতে পারেননি, ডাক্তার বিধান রায়কেও গোড়া থেকেই বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা হচ্ছে নানা রকম। তবু বছর তিনেকের মধ্যেই তিনি অনেকটা সামলে নিলেন। শক্ত মানুষ হিসেবে তাঁর নাম রটে গেছে। খবরের কাগজগুলিতে প্রায়ই সুভাষচন্দ্র বসু সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর খবর বেরোয়, দেশের এক বিরাট সংখ্যক লোকের ধারণা সুভাষচন্ত ফিরে এলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। প্রায় প্রত্যেক জলসাতেই সমবেত সংগীত শোনা যায়, ‘আজি তুমি কোথা নেতাজি—।’

সূর্য আর দীপ্তি একটা ট্রামে পাশাপাশি বসে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় বিভোর হয়ে ছিল। অনেকক্ষণ বাইরের দিকে লক্ষ করেনি। একসময় খেয়াল করল, সমস্ত ট্রামে তারা দু’জন ছাড়া আর কেউ নেই।

দীপ্তি বলল, কিছু একটা হয়েছে বোধহয়, চলো নেমে পড়ি।

সূর্য জানলার বাইরে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করল। কিছুই বুঝতে পারল না। অবাকও হল না। হঠাৎ যানবাহন বন্ধ হয়ে যাওয়া এখন আর তেমন বিস্ময়কর কোনও ব্যাপার নয়। সে নির্লিপ্ত ভাবে বলল, গুলিগোলার শব্দ তো কিছু শুনতে পাচ্ছি না।

দীপ্তি হাতের ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, চলো—

সূর্য বলল, নেমে কী হবে? এ রকম ফাঁকা জায়গা আর কোথাও পাওয়া যাবে না। একসময়-না-একসময় তো চলবেই!

তা বলে কতক্ষণ এখানে বসে থাকব?

যতক্ষণ কেউ এসে আমাদের নামিয়ে না দেয়? দু’জনে নিরালায় গল্প করার মতন ফাঁকা জায়গা তো কোথাও নেই কলকাতা শহরে!

দীপ্তি হেসে বললেন, সব জায়গাতেই মানুষের চোখ!

আমার তো বেশ ভালো লাগছে। বসুন না।

দীপ্তি আবার বসে পড়লেন। কিন্তু কথাবার্তায় আর মন বসাতে পারলেন না। ট্রাম থেমে থাকার কারণটা জানতে না পারলে অস্বস্তি হয়।

একটু বাদেই ড্রাইভার ও কন্ডাকটররা ফিরে এল। সূর্য আর দীপ্তিকে দেখে প্রায় ধমকের সুরে বলল, আপনারা এখনও বসে আছেন? যান, নেমে যান।

সূর্য লঘু ভাবে বলল, আমাদের টিকিটের পয়সা ফেরত দেবেন না? সেই জন্যই তো বসে আছি।

টিকিট ফেরত হয় না।

একদিন একটা বাস খারাপ হয়ে গিয়েছিল, সেই বাসের কন্ডাকটর কিন্তু আমার টিকিটের পয়সা ফেরত দিয়েছিল।

সে ওইসব সর্দারজিরা যা খুশি করুক, আমাদের কোম্পানি নিয়মকানুনে চলে।

নিয়মকানুনে চললে কি হঠাৎ ট্রাম থামে?

আপনি নামবেন?

সূর্য দু’দিকে মাথা নেড়ে বলল, না। দীপ্তি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, কী হচ্ছে কী? চলো!

সূর্য যেন বেশ একটা মজা পেয়ে গেছে। বলল, দাঁড়ান না। এক্ষুনি নেমে কী হবে? ট্রাম তো আবার চলবে মনে হচ্ছে।

সব ট্রাম এখন ডিপোয় যাবে। প্যাসেঞ্জার নেওয়া হবে না।

আমরাও যদি ডিপোতে যাই?

সূর্য সাধারণত খুব কম কথা বলে। কিন্তু আজ তার মেজাজ বেশ হালকা আছে বলেই এইসব অবান্তর কথাবার্তায় সে বেশ আনন্দ পাচ্ছে মনে হয়। ট্রামকর্মীরা অবশ্য তার ঠাট্টা খুব একটা উপভোগ করছিল না–একজন তাদের কোম্পানির কয়েকটা নিয়ম পড়ে শোনাতে আরম্ভ করল পর্যন্ত। দীপ্তি আর সূর্য নেমে পড়ল।

সূর্য বলল, একটা জিনিস লক্ষ করেছেন? এরা এদের কোম্পানি সম্পর্কে খুব গর্বিত, বাসওয়ালাদের ঘৃণা করে।

দীপ্তি বললেন, তা তো হবেই। চারদিকে দেখো না, কেউ এখন বিলিতি কোম্পানিতে চাকরি পাওয়াটাকে বিরাট একটা সৌভাগ্যের ব্যাপার মনে করে! ইংরেজি বলার ঝোঁকও এখন অনেক বেড়ে গেছে।

পরাধীন আমলে জানতাম দেশ কাকে বলে। এখন দেশ কথাটার মানে আর বুঝতে পারি না। আপনি পারেন?

আমার মনের মধ্যে কিন্তু একটা অস্পষ্ট ধারণা আছে। তবে সেটা স্বপ্নের দেশ বলে মনে হয়। কোনও দিনই বোধহয় সেখানে পৌঁছোতে পারব না।

পণ্ডিত নেহরু জেনারেল ইলেকশানের কথা ঘোষণা করেছেন। তখন আবার খুব একচোট দেশ দেশ শোনা যাবে। কমিউনিস্ট পার্টিও পার্লামেন্টারি ডেমক্রেসি আপাতত মেনে নেবে মনে হচ্ছে।

হ্যাঁ। আমাদের স্কুলের এক টিচারের মুখে শুনলাম হীরেনবাবু দাঁড়াচ্ছেন–তোমাদের পাড়া থেকেই। আচ্ছা সূর্য, তোমার আর এসবে অংশ নিতে ইচ্ছে করে না?

নাঃ!

তা হলে তুমি কী করবে?

কেন, বেশ ভালোই তো আছি।

দীপ্তি একটুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার প্রশ্ন করলেন, সূর্য, তোমার শংকরদাকে মনে আছে?

কোন শংকরদা?

একসময় আমাদের পার্টিতে ছিলেন। মনে নেই? তোমরা যে ডাকাতিতে গিয়েছিলে, উনিও তো সেই দলে–

ও হ্যাঁ। উনি আমাকে কখনও ঠিক পছন্দ করেননি। জেলেও দেখা হয়েছিল।

উনি এখন কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। খুব ভালো করছেন শুনেছি। আমাকে বলছিলেন ওঁদের সঙ্গে যোগ দিতে।

না। আপনার যাওয়া হবে না। এখন অন্য কারওর কথা থাক।

দীপ্তি মুখ তুলে তাকালেন সূর্যর দিকে। সূর্য অপলক ভাবে চেয়ে আছে।

দীপ্তি সে-দিকে বেশিক্ষণ চোখ রাখতে পারলেন না। অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে লাজুক গলায় বললেন, এ ভাবে আর কতদিন চলবে?

সূর্য বলল, যতদিন না আপনি আমাকে তাড়িয়ে দেবেন!

মেঘলা মেঘলা বিকেল, বেশ ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে, একটি চমৎকার দিন। সূর্য আর দীপ্তি হাঁটছে চৌরঙ্গি দিয়ে। আজ আর গাড়িঘোড়া পাবার আশা নেই। সূর্য দীপ্তির তুলনায় অনেকখানি লম্বা। দীপ্তি কখনও রঙিন শাড়ি পরা কিংবা সাজগোজ পছন্দ করেন না–তবু তাকে তার বয়সের তুলনায় কমবয়সি মনে হয়। অবশ্য সূর্যর সঙ্গে তার বয়সের পার্থক্য বোঝা যাবেই।

সূর্য বলল, চলুন, ময়দানে গিয়ে একটু বসবেন?

তুমি যে বলছিলে, তোমার খিদে পেয়েছে? বাড়ি চলো বরং, তোমাকে খাওয়াচ্ছি।

এখন আর খিদে নেই।

দীপ্তি ময়দানের দিকে তাকালেন। এখানে সেখানে ঝোঁপঝাড়। অসময়েই অন্ধকার হয়ে এসেছে। অশ্বারোহী আউটরামের মূর্তিটা ঝাঁপসা দেখা যায়।

একটু চিন্তিত ভাবে দীপ্তি বললেন, জায়গাটা ভালো নয় শুনেছি। সাহেব-মেমরা আসা বন্ধ করায় গুন্ডাদের খুব উপদ্রব বেড়েছে। সে-দিনই কার কাছে শুনলাম, সন্ধেবেলাতেই এই মাঠের মধ্যে একটি মেয়েকে কারা খুন করেছে।

সূর্য বলল, তাই নাকি?

দীপ্তি হঠাৎ হেসে বললেন, অবশ্য তুমি পাশে থাকলে আমার কোনও ভয় নেই।

সূর্যও হেসে আলতো ভাবে দীপ্তির পিঠে হাত ছুঁইয়ে বলল, তা হলে চলুন।

তুমি কি আমাকে আপনি বলা কিছুতেই ছাড়বে না?

এমন অভ্যেস হয়ে গেছে।

আজ থেকেই শুরু করো।

চেষ্টা করব।

হঠাৎ দীপ্তি সূর্যর পাশ থেকে সরে গিয়ে দ্রুত ট্রাম লাইন পার হয়ে যেতে লাগলেন একা। সূর্য ঠিক বুঝতে পারল না ব্যাপারটা। দ্রুত পা চালিয়ে এসে বলল, কী হল?

দীপ্তি চকিতে একবার পেছনে তাকিয়ে চাপা গলায় বললেন, তুমি এখন আমার সঙ্গে এসো না। আমি পুকুরটার পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছি।

কেন?

যা বলছি শোনো না—

সূর্য মন্থর ভাবে হাঁটতে হাঁটতে বিস্মিত ভাবে কয়েক বার পেছন ফিরে তাকাল। অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পেল না। শুধু একজন প্রৌঢ় লোক অপস্রিয়মান দীপ্তির দিকে কৌতূহলী সরু চোখে তাকিয়ে আছেন বলে মনে হয়। প্রৌঢ়টির কাঁধে মুগার চাদর, একটি সাত-আট বছরের মেয়ের হাত ধরে আছেন। তিনি বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন এ-দিকে।

পুকুরের পাশে একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে দীপ্তি রুমাল দিয়ে মুখ মুছলেন। সূর্য সেখানে এসে জিজ্ঞেস করল, কী হল?

কিছু না।

তবে হঠাৎ ও রকম ভাবে চলে এলেন যে? কী হল, আমাকে বলবেন না?

কিছুই হয়নি। চলো, এখান থেকে অন্য কোথাও যাই।

আপনি কারোকে দেখে যেন পালিয়ে এলেন মনে হল! কে?

দীপ্তির মুখখানা আরক্ত, হঠাৎ কোনও কথা বলতে পারছেন না। তারপর মৃদু গলায় বললেন, ওখানে আমার বড় জামাইবাবু দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমাকে ভীষণ ভালোবাসতেন।

আপনার জামাইবাবু? আপনি কথা বললেন না?

আমার লজ্জা করল!

কেন? আমি সঙ্গে রয়েছি বলে?

দীপ্তি সূর্যর চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিলেন। একথা অবধারিত ভাবে সূর্যর মনে। এল যে মাত্র দু’-এক মিনিট আগেই দীপ্তি বলেছিলেন যে সূর্য পাশে থাকলে তার কোনও ভয় নেই। তার ঠিক পরেই সূর্য পাশে থাকার জন্যই তিনি নিজের জামাইবাবুর সঙ্গেও কথা বলতে পারলেন না।

সূর্য একটু থমকে গেল। ভুরু কুঁচকে বলল, আমি পাশে থাকলে কথা বলায় দোষ কী?

তুমি বুঝতে পারো না?

কী বুঝব?

দীপ্তি নিজেকে চাপতে পারলেন না। বেশ অভিমান আর ঝাঁঝ মিশিয়ে জোরে জোরে বললেন, তুমি কিছুই বুঝতে পারো না? গত দু’বছর ধরে আমি কোনও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করি না, কারওর সঙ্গে মিশি না, আমি যে কী করেছি, তা আমি নিজেই জানি না। সূর্য, তুমি আমার এ কী করলে?

সূর্যর মনে হল, আকাশটাতে নোংরা কালি ঢালা। বাতাসে বিষ।

দীপ্তি আবার বললেন, আমার দিদিরা আমাকে চিঠি লেখেন–আমি কারোকে উত্তর দিই না। জামাইবাবু আমাকে এত ভালোবাসতেন, ওঁর সঙ্গে চোখাচোখি হতেও কথা বলতে পারলাম না। দিদির মেয়ে ঝুনু সঙ্গে ছিল, ও যদি আমাকে দেখে থাকে–কী ভাবল বলো তো?

সূর্য কর্কশ ভাবে বলল, আমরা কি কোনও অপরাধ করেছি? কী অপরাধ?

আমরা বনেজঙ্গলে বাস করি না। আমরা বাস করি সভ্য সমাজে। সেখানে থেকে আমরা অদ্ভুত একটা অসামাজিক কাজ করছি না? তুমি আমার ছোট ভাইয়ের বয়সি, আমরা দু’জনে যে ভাবে আছি–

কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে সূর্য বলল, এসব সমাজ টমাজ আমি গ্রাহ্য করি না।

তুমি গ্রাহ্য না করলেও আমি কি সবকিছু এড়াতে পারি? আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব সবাইকে কি বাদ দিয়ে বাঁচা যায়? সূর্য, আমি তোমাকে কোনও দোষ দিচ্ছি না। আমি নিজেই তো কী রকম হয়ে গেছি। তোমাকে বাধা দেবার শক্তিও আমার নেই। আমি এখন কী করব বলো তো?

দীপ্তিদি, আপনি একটা কথার শুধু জবাব দিন। আমরা কি আত্মীয়স্বজনের ইচ্ছেমতন বাঁচব, না নিজেদের ইচ্ছেমতন বাঁচব? আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি আপনাকে চাই। এতে অন্য কার কী বলার আছে? আমার চেয়ে আপনার বেশি আত্মীয় কে? বেশি বন্ধু কে?

কিন্তু ওই যে বললাম, এটা তো জঙ্গল নয়। এখানে অনেক মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে বাঁচতে হয়–সেই জন্যই এর নাম সমাজ।

চুলোয় যাক সমাজ। এ-পৃথিবীতে এক লক্ষ মানুষ মিলে আপনাকে যতখানি ভালোবাসতে পারে, আমি তার চেয়েও বেশি ভালোবাসি আপনাকে। আমি কারওর বাধা মানব না।

রাগ কোরো না। লক্ষ্মীটি, রাগ কোরো না। তোমার রাগ কী সাংঘাতিক আমি জানি। তোমার রক্ত গরম, তুমি রাগের মাথায় ভাবো যে গোটা পৃথিবীটাই তুমি উলটেপালটে তছনছ করে দিতে পারো! কিন্তু তা তো হয় না!

ঠিক আছে, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। তাতে তো কারওর আপত্তি থাকতে পারে না।

তা হয় না।

কেন হয় না? পৃথিবীতে কি বয়সের তফাত থাকা সত্ত্বেও কারওর বিয়ে হয় না? দেয়ার আর প্লেন্টি অব ইনস্টানসেস—

তুমি একটু মাথা ঠান্ডা করবে?

আমি অন্যায় কিছু বলছি? আমি যদি আপনাকে বিয়ে করতে চাই, তাতে কারওর কোনও আপত্তি থাকতে পারে কি?

যদি আমার থাকে?

আপনার?

হঠাৎ সূর্যর মুখখানা বিবর্ণ হয়ে গেল। একথাটা সে চিন্তাই করেনি। সে একরোখা ধরনের ছেলে, একই সঙ্গে বিভিন্ন দিকের কথা চিন্তা করতে পারে না। সে ভেবেছিল লোকলজ্জাই যখন বাধা, তখন তার উপযুক্ত ব্যবস্থার নাম বিয়ে। কিন্তু দীপ্তির দিক থেকেও যদি বাধা থাকে–

আহত ভাবে সে বলল, আপনি আমাকে চান না?

দীপ্তি সূর্যর হাত জড়িয়ে ধরে বললেন, আমি তোমার মনে দুঃখ দিয়েছি! শোনো, আমি সে কথা বলিনি। তোমাকে ছাড়া আমি এখন বেঁচে থাকার কথা ভাবতেই পারি না। ছি ছি ছি, আজ আমি কী বোকার মতন ব্যবহার করেছি তোমার সঙ্গে। জামাইবাবুকে দেখে আজ আমার মনের মধ্যে এমন একটা গোলমাল হয়ে গেল–আমি যখন বাচ্চা মেয়ে তখন থেকে জামাইবাবু আমাদের…উনি ঠিক আমাদের বড় ভাইয়ের মতন…দিদির মেয়ে ঝুনুকে আমি এত ভালোবাসি–আজ ওকে দেখেও একটু আদর করলাম না, পালিয়ে এলাম–ঠিক যেন কলঙ্কিনীর মতন মুখ ঢেকে পালিয়ে এলাম হঠাৎ মনে হল, আমি কী হয়ে গেছি!

পালিয়ে এলেন কেন?

এটা তো যুক্তিতর্কের ব্যাপার নয়। মনের মধ্যে যা হয়, তা কি আগে থেকে ঠিক করা থাকে? গুরুজনদের সামনে আজকাল আমি চোখ তুলে চাইতেই পারি না। জামাইবাবু যদি বলতেন, ছি ছি, তুমি এ কী করলে? তখন আমি কী উত্তর দিতাম? উনি যদি তোমাকেও অপমান করে কিছু বলতেন? উনি সে রকম মানুষই নন, হয়তো কিছু বলতেন না—

আপনি লোকের কাছে আমার পরিচয় দিতে লজ্জা পান কেন?

এ-পরিচয় দেওয়া যায় না।

তা হলে একটা সোজা কথা বলুন। আমাকে বিয়ে করতে আপনার আপত্তি আছে?

এসব কথা কি এই রকম ভাবে আলোচনা করা যায়? তুমি যে বসবে বলেছিলে? চলো কোথাও বসি।

না, আগে এটা ঠিক হয়ে যাক।

এখনও তোমার রাগ কমেনি? আমি তোমার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইব?

আমার বাবা আমার কোনও বিষয়ে আপত্তি করেন না। বাবাকে আমি আজই জানাব। আমার দিক থেকে কোনও অসুবিধে নেই। আপনি আপনার দিকটা ভালো করে ভেবে দেখুন। তা হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব

দীপ্তি ব্যাকুল ভাবে বললেন, আমি কিছু ভাবতে পারছি না। আমাকে এক্ষুনি কিছু ভাবতে বোলো না। তুমি অত রাগ রাগ চোখে তাকিয়ো না আমার দিকে।

সূর্য মুখ নিচু করে বড় নিশ্বাস ফেলে বলল, দীপ্তিদি, আমার আর কেউ নেই। আমি অন, কছুই জানি না, অন্য কিছুই আমার এখন ভালো লাগে না। আপনি আমাকে দূরে সরিয়ে দেবেন না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *