আবুল বুখতারী ইবন হিশামের হত্যার ঘটনা
ইবন ইসহাক বলেন, বদর যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা) আবুল বুখতারীকে হত্যা করতে নিষেধ করেন। কেননা, মক্কায় রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে নির্যাতন করা থেকে তিনি কুয়ায়শদেরকে নিবৃত্ত করতেন। তিনি নিজে কখনও রাসূলুল্লাহকে কষ্ট দেননি এবং এমন কোন আচরণও করেননি যাতে তাঁর মন ব্যথিত হয়। এছাড়া কুরায়শদের যে লিখিত চুক্তিপত্রের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা) ও বনু হাশিমকে আবু তালিব গিরিসঙ্কটে অবরুদ্ধ রাখা হয়, সে চুক্তিপত্ৰ ভঙ্গের ব্যাপারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বদর রণাংগনে আবুল বুখতারী মুজাযযার ইবন যিয়াদের সামনে পড়েন। মুজাযযার ছিলেন আনসারদের মিত্র। তিনি আবুল বুখতারীকে জানিয়ে দেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) তোমাকে হত্যা করতে আমাদেরকে বারণ করে দিয়েছেন। আবুল বুখতারীর সঙ্গে ছিল জুনাদ ইবন মালীহা নামক লায়ছ গোত্রীয় তার এক বন্ধু। মক্কা থেকে সে আবুল বুখতারীর সঙ্গে এসেছিল। তার সম্পর্কে আবুল বুখতারী বললেন, আমার সংগীটির কী হবে? উত্তরে মুজাযযার জানালেন, আল্লাহর কসম, তোমার সঙ্গীকে ছাড়া হবে না। রাসূলুল্লাহ (সা) কেবল তোমার একার কথাই বলেছেন। আবুল বুখতারী বললেন, তাহলে আল্লাহর কসম করে বলছি, আমি ও সে এক সাথেই মরব। যাতে পশ্চাতে কুরায়শ মহিলারা আমার সম্পর্কে এ কথা বলতে না পারে যে, নিজের জীবন রক্ষার্থে আমি আমার সঙ্গীকে ত্যাগ করেছি। একথা বলেই তিনি মুজাযযারের উপর আক্রমণ করলেন এবং নিম্নের ছন্দটি পড়লেন :
لن یثرلت ابن حرةز میلهٔ–حتی یموت آویرای سبیلهٔ
“কোন সন্ত্রান্ত লোক তার সঙ্গীকে কখনও পরিত্যাগ করে না। হয় সে সঙ্গীর জন্যে জীবন
বিলিয়ে দেয়, না হয় অন্য কোন উপায় বের করে নেয়।”
তারপর উভয়ের মধ্যে লড়াই শুরু হলে আবুল বুখতারী মারা যায়। এ প্রসঙ্গে মুজাযযার নিম্নোক্ত কবিতাটি আবৃত্তি করেন :
১. হযরত উমর বলেন, আল্লাহর কসম, এই দিনই সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে “আবু হাফস” কুনিয়াতে
আখ্যায়িত করেন।
“হয়তো তুমি আমার বংশপরিচয় জান না; কিংবা জানলেও ভুলে গিয়েছ। তবে বাস্তব প্রমাণের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছি যে, আমি বালা গোত্রের লোক। যারা ইয়ামানের তৈরি বর্শা দ্বারা (শক্রকে) আঘাত করে এবং শত্রুপক্ষের বীর যোদ্ধারা যতক্ষণ পরাভূত না হয়, ততক্ষণ তাদের উপর আঘাতের পর আঘাত হানতে থাকে। (হে পথিক!) বুখতারীর সন্তানদেরকে ইয়াতীম হওয়ার সংবাদ দাও; কিংবা আমার সন্তানদের নিকট এ জাতীয় কোন সংবাদ পৌছিয়ে দাও। আমি সেই ব্যক্তি, যার সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, আমার মূল হচ্ছে বালা গোত্র। আমি বর্শা দ্বারা আঘাত করতে থাকি যতক্ষণ না তা বাকা হয়ে যায়। আমি আমার প্রতিপক্ষকে ধারাল মাশরাফী তরবারি দ্বারা হত্যা করি। আমি মৃত্যুকে সেইরূপ দ্রুত কামনা করি যেরূপ কামনা করে ঐ উস্ত্রী যার স্তনে দুধ জমাট বেঁধে যাওয়ায় যন্ত্রণা ভোগ করে; মুজাযযারের এ কথাগুলোকে কেউ মিথ্যা হিসেবে দেখতে পাবে না।”
এরপর মুজাযযার রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট এসে বললেন, সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি তাকে বন্দী অবস্থায় আপনার নিকট নিয়ে আসতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছি; কিন্তু সে আমার সাথে যুদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুতেই রায়ী হল না। ফলে আমাকে তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয় এবং আমার হাতে সে নিহত হয়।