৫ জুন, শনিবার ১৯৭১
আজো শরীর খুব খারাপ। তবে গত দুদিন যেমন উঠতেই পারি নি, সেরকম নয়। জ্বর বন্ধ হয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছি। আজ একটু-আধটু উঠে হেঁটে বেড়াতে পারছি।
সকালে খবরের কাগজ দেখিয়ে শরীফ বলল, শুধু শুধু খাটালে। এই দেখ।
দেখলাম কাগজে হেডলাইন : কোন কারেন্সি নোট অচল নয়। গুজব ভিত্তিহীন।
খবরে বলা হয়েছে : পাকিস্তান সরকারের সকল কারেন্সি নোট চালু থাকবে। জনসাধারণের কাছে আইনসম্মত মুদ্রা হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা অব্যাহত থাকবে। কোন কোন কারেন্সি নোট অচল করা হয়েছে বলে যে গুজব ছড়িয়েছে, এবং কোন কোন খবরের কাগজে যে লেখা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন এবং তার পেছনে কোনো সত্যতা নেই।
চুপ করে রইলাম। গতকাল আমার জেদেশরীফকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও টাকা জমা দিতে হয়েছে। কেবল আমারই নয়, মায়েরও। শুক্রবার এগারোটা পর্যন্ত ব্যাঙ্কিং–নটাতেই রুমীকে মার বাড়ি পাঠিয়ে মার একশো টাকার পাঁচটা নোট আনিয়ে আমাদের পুরো তিন হাজার টাকা শরীফের হাতে তুলে দিয়েছি জমা দেবার জন্য। দিলকুশা কমার্শিয়াল এরিয়াতে শরীফের অফিসের পাশেই ব্যাঙ্ক। ঘন্টাখানেক পরে আবার ফোন করে জেনেছি–শরীফ টাকা জমা দিয়েছে কিনা!
কাসেম এসে বলল, আম্মা, আর অ্যাক ব্যালার মতন চাউল আছে। চাউল কিনন লাগব। রেশনের চালে আমাদের সপ্তাহ যায় না। ভোলাবাজার থেকেও কিনতে হয়।
ধমক দিয়ে বললাম, দুতিনদিন আগে থেকে বলতে পারিস না? তোদের সব সময় বলি না সব জিনিস ফুরোবার দুতিনদিন আগে থেকে বলবি? তা যদি মনে থাকে। মাত্র তিনদিন বিছানায় পড়ে আছি
শরীফ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, যাই, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আমি কাঁচুমাচু মুখে বললাম, চাল কেনার জন্য।
শরীফ সঙ্গে সঙ্গে বলল, এখন তো সাভার যাচ্ছি বাঁকার সঙ্গে, ফিরতে ফিরতে একটা বেজে যাবে। কালকে টাকা তুলব। বেশ খুশি মুখ নিয়ে বেরিয়ে গেল।
আমি কাসেমকে ধমক দিয়ে বললাম, যা, বেরো সামনে থেকে, হতচ্ছাড়া। চালে কুলোয়, রুটি বানাবি।
শরীফের ফিরতে ফিরতে তিনটে হলো। উদ্বিগ্ন হয়ে দোতলার বারান্দায় পায়চারি করছিলাম। এত দেরি হওয়া তো উচিত নয়। কি জানি কিছু হলো নাকি?
না, ঐ যে গাড়ি এসে থেমেছে গেটে। শরীফ হাকডাক করে ডাকল কাসেম বারেককে। ওপর থেকে দেখলাম, ড্রাইভার ও কাসেম ধরাধরি করে একটা চালের বস্তা নামাচ্ছে! বারেক নামাচ্ছে দুজোড়া মোরগ!