2 of 3

৫৯. চপলা খুব ধীরে ধীরে

॥ ৫৯ ॥

চপলা খুব ধীরে ধীরে নলিনীকান্তর পুরোনো, পরিত্যক্ত ঘরখানার দিকে এগিয়ে গেল। প্রায় পা টিপে টিপে। আজকাল কৃষ্ণকান্ত এই ঘরে থাকে। স্বেচ্ছা নির্বাসনের মতোই। সে কদাচিৎ ভিতরবাড়িতে যায়। বলাই বাহুল্য, এই ঘরখানাকে বাড়ির অন্য সবাই ভয় পায়। কারণ এ ঘরের বাসিন্দা নলিনীকান্তর অপঘাতে মৃত্যু ঘটেছিল। হর কমপাউনডার থেকে শুরু করে অনেকেই নলিনীর ভূতকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছে। কিন্তু কৃষ্ণর কেন ভূতের ভয় নেই? সব বাচ্চাদের থাকে, কৃষ্ণরই কেন নেই তা বুঝতে পারে না চপলা। এই কিশোর দেওরটি ক্রমেই নিজেকে একটা কুয়াশা দিয়ে ঢেকে ফেলছে যেন।

চপলা ভেজানো দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে একটু দ্বিধা করল। ভিতরে ঢুকতে কেমন কেমন লাগছে। আজকাল কৃষ্ণ নাকি ধ্যান করে মৌন পালন করে, স্ত্রীলোকের মুখের দিকে সহজে তাকাতে চায় না।

কিন্তু চপলা এর সঙ্গে আজ একটু কথা না বলে পারবে না। আস্তে দরজাটা ঠেলল সে। ভেজানো দরজা ফাঁক করে দেখল, কৃষ্ণকান্ত টেবিলে বাতির আলোয় লেখাপড়া করছে। প্রাইভেট টিউটর পড়িয়ে চলে গেছে। এখন সে একা।

চপলাকে দেখে কৃষ্ণকান্ত একটু হাসল। বলল, এসো বউদি।

চপলা ঘরে ঢুকে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে বলে, কী রে হনুমান, কদিন হল বউদির খোঁজ নিস না যে বড়!

কৃষ্ণকান্ত ভারী লাজুক একটু হাসল। কী সুন্দর যে দেখাল ওকে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে চপলা।

কৃষ্ণকান্ত বলল, খবর নিই না কে বলল? আমি রোজ তোমার কথা ভাবি।

থাক আর বানিয়ে বানিয়ে বলতে হবে না। এ ঘরে বসে তুই দিনরাত কী করিস বল তো!

এই পড়াশুনো করি।

সবাই বলে তুই নাকি ব্রহ্মচর্য করছিস। মেয়েদের দিকে তাকাস না।

ঠিক তা নয়। কৃষ্ণকান্ত লজ্জা পেয়ে বলে।

তোকে আমি খুব ভাল চিনি, বুঝলি হনুমান। ব্রহ্মচর্য করছিস তো কী? তা বলে আমার মুখও দেখবি না নাকি?

তাই বলেছি! আজকাল অনেক কাজ পড়েছে বউদি। ভোরবেলা সংস্কৃত পড়ি। লাঠিখেলা, ছোরাখেলা শিখি, ব্যায়াম করি, ধ্যান করি।

তুই এতসব করছিস কেন বল তো! স্বদেশী হবি নাকি সত্যিই?

এমনিই, স্বদেশীরা ছাড়া বুঝি এসব কেউ করে না?

কী জনি বাপু তোর এই বয়সে এসব লক্ষণ আমার মোটেই ভাল লাগে না।

এই বলে চেয়ারের পাশে চৌকির বিছানায় বসল চপলা। তারপর ডান হাতখানা বাড়িয়ে রূপবান দেওরটির মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিতে গিয়ে তার চোখে জল এল।

বউদির হাতের স্পর্শটি খুব স্বস্তিকর বোধ হচ্ছিল না কৃষ্ণকান্তর। বাস্তবিকই সে মেয়েদের সংস্পর্শ সম্পূর্ণ বাঁচিয়ে চলছে আজকাল। মেয়েদের কথা সে ভাবে না, তাদের দিকে তাকায় না, স্পর্শ গোমাংসের মতো পরিহার করে চলে। কিন্তু বউদিকে সে কিছু বলতে পারে না। বউদি তাকে বড় বেশী ভালবাসে। সে শুধু কাঠ হয়ে রইল।

চপলা আঁচলে চোখ মুছে বলে, কাল চলে যাচ্ছি।

কৃষ্ণকান্ত অবাক হয়ে বলে, কোথায় যাচ্ছো?

কলকাতা।

কেন, এত তাড়াতাড়ি যাওয়ার কথা তো ছিল না তোমার!

যাচ্ছি। আর ভাল লাগছে না রে।

কেন ভাল লাগছে না?

এ বাড়ির কেউই আমাকে পছন্দ করে না।

যাঃ, কী যে বলো।

তুই সব কথা জানিস না। আজকাল তো ভিতর-বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক নেই তোর।

আমি তো তোমাকে খুব পছন্দ করি।

তার তো নমুনা দেখতেই পাচ্ছি। দিনে একবারও খোঁজ করিস না বউদিটা বেঁচে আছে না মরে গেছে।

আমি তোমার খবর নিই। রোজ নিই। বিশ্বাস করো।

আচ্ছা করলাম।

তবে যাচ্ছ কেন? কে তোমাকে পছন্দ করে না?

চপলা খুব অন্যমনা হয়ে দেয়ালের দিকে চেয়ে রইল, জবাব দিল না। অনেকক্ষণ বাদে হঠাৎ বলল, তুই এত ঘর থাকতে এই ঘরটা বেছে নিলি কেন বল তো! এই ঘরটা তোর কি খুব ভাল লাগে?

কৃষ্ণকান্ত মৃদু হেসে কুণ্ঠিত গলায় বলে, এ ঘরটা একটু অন্যরকম বউদি।

কীরকম?

অন্য সব ঘরের মতো নয়।

কিন্তু ঘরটা তো একদম বিচ্ছিরি। দেয়ালে নোনা ধরেছে, জানালার পাল্লা ভাঙা, চৌকিটা নড়বড়ে। লোকে বলে এ ঘরে ভূতও আছে।

কৃষ্ণকান্ত মাথা নেড়ে বলে, দূর! সব বাজে কথা।

তুই কখনো ভূত দেখিস না?

না তো?

একা থাকতে তোর ভয় করে না?

না। একা তো থাকি না।

তাই নাকি? তোর সঙ্গে কে থাকে তবে?

কাকা।

কাকা! কাকা আবার কে রে?

আর শশীদা।

চপলা অবাক হয়ে দেওরের দিকে চেয়ে বলে, কী সব বলছিস! তোদের সেই শশীদা তো এখন জেলখানায়, তার ফাঁসি হবে। আর কাকা কে বল তো! নলিনীকান্ত?

কৃষ্ণকান্ত মাথা নেড়ে বলে, আমি কাকার ভয়েস শুনতে পাই।

ওমা!

সত্যি বউদি। যখন ভয়-ভয় করে, মাঝরাতে যদি হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়, তখন কাকার গলা কানে আসে।

চপলা শিউরে উঠে দেওরের হাত চেপে ধরে বলে, তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

কৃষ্ণকান্ত কাঁদো-কাঁদো হয়ে বলে, সত্যি শুনি বউদি। বিশ্বাস করো। কাকা বলে, ভয় কী রে! ভয় কী? আমি তো আছি।

চপলা বড় বড় চোখে চেয়ে ছিল। বলল, আমি তোকে আর এ ঘরে থাকতে দেবো না।

কেন বউদি?

তোকে ভূতে পেয়েছে।

দূর! ভূত নয়। ভূত মানে যা অতীত। কিন্তু কাকা তো ভূত নয়। কাকা আছেন যে।

মাগো! তুই কী রে। শুনেই তো আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।

এই ঘরে শশীদাও আছে। শশীদা তো আর মরেনি।

তুই কি তারও ভয়েস শুনিস?

না। শশীদা যতদিন আমাদের বাড়িতে ছিল ততদিন কেবল ভুল বকত। খুব জ্বর ছিল। পরে জ্বর একটু কমলে একদিন আমাকে বলেছিল, তোমার ভিতরে ফায়ার আছে।

কিসের ফায়ার?

তা জানি না। তবে বলেছিল। আমি যখন বিছানায় শুই তখন নিজেকে একদম শশীদা বলে মনে হয়।

সেটা আবার কীরকম?

মনে হয় আমি সাহেব খুন করে পালিয়ে এসেছি। পুলিশ আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ধরতে পারলেই নিয়ে গিয়ে ফাঁসিতে ঝোলাবে। ভাবতে এত আনন্দ হয় না!

চপলা ক্রমে বিস্ময়ে স্থির হয়ে যাচ্ছিল। চোখ ক্রমে বিস্ফারিত হচ্ছে।

তুমি শুনে ভয় পাচ্ছো বউদি?

ভীষণ ভয় পাচ্ছি। লক্ষ্মীসোনা, আমার একটা কথা রাখবি?

কী কথা?

আগে আমাকে ছুঁয়ে বল কথাটা রাখবি।

ও বাবা, ওসব কিরেটিরে আমি কাটতে পারব না। বলো না কী!

আমার সঙ্গে কাল কলকাতায় চল।

কলকাতা! না বউদি, আমার ভাল লাগে না।

লক্ষ্মীসোনা, বরাবরের মতো নয়, কয়েকদিনের জন্য চল।

কেন বলো তো?

তোর মাথা থেকে ওই ভূতগুলো না নামালে আমার শান্তি নেই।

তুমি যে কেন খামোখা ভয় পাচ্ছো? আমার তো বেশ লাগে।

ছাই লাগে। তোর মাথারই ঠিক নেই। তোর চোখমুখও কেমন অন্যধারা হয়ে গেছে। চোখদুটো অত জ্বলজ্বল করে কেন তোর?

করে! সত্যি করে? কৃষ্ণকান্ত খাড়া হয়ে বসে ব্যগ্র গলায় জিজ্ঞেস করে।

করেই তো। একদম ডাকাতের মতো, খুনীর মতো চোখ। এত অল্প বয়সে তোর চোখ এরকম হল কী করে, ভূতে না পেলে?

আমি যে রোজ ধ্যান করি।

কার ধ্যান করিস?

সে আছে।

তোর মাথা খারাপ হতে আর বাকি নেই। আমি শ্বশুরমশাইয়ের কাছে যাচ্ছি এখনই। দাঁড়া।

কৃষ্ণকান্ত মাথা নেড়ে বলে, আমাকে কলকাতা যাওয়ার পারমিশন বাবা এখন দেবে না।

কী করে বুঝলি?

বাবার খুব ইচ্ছে, এখন আমার পৈতে হোক।

তোর পৈতে! কই উনি তো আমাকে কিছু বলেননি!

কাউকেই বলেননি। শুধু আমাকে।

কবে পৈতে?

ঠাকুরমশাই দিন দেখছেন। শীগগীরই। তুমি থেকে যাও।

থাকব? বাবাকে যে বলে এলাম কালই চলে যাবো।

যেও না বউদি। আমার তো মা নেই।

ওঃ, খুব তো সেনটিমেনটে খোঁচা দিতে শিখেছিস! আমাকে মা বলে সত্যি ভাবিস নাকি?

তোমাকে একটু মা-মা লাগে কিন্তু! সত্যি।

ইয়ার্কি করছিস না তো।

একদম না। তোমাকে ছুঁয়ে বলতে পারি।

বল তো। বলে হাত বাড়াল চপলা।

কৃষ্ণকান্ত হাতখানা ছুঁয়ে বলল, সত্যি বলছি। এবার বলো আমার পৈতে পর্যন্ত থাকবে!

থাকব। তবে শর্ত আছে।

কী শর্ত?

তোকে আমার ঘরে থাকতে হবে।

সে কী?

শোন বাপু তোর ভয় নেই। আমি তোকে একটুও জ্বলাতন করব না। তুই ধ্যানট্যান করিস করবি। আমি বাইরে একজন চাকর মোতায়েন রাখব যাতে কেউ ঘরে ঢুকতে না পারে।

কিন্তু এ ঘর থেকে গেলে আমি বাঁচবই না।

সত্যি?

সত্যি বউদি। বিশ্বাস করো, এ ঘরে কাকা থাকে, শশীদা থাকে।

তাহলে একটা কাজ করি?

কী বলো তো।

আমি তোর এই ঘরটাতেই এসে থাকি বরং! ওদিকটায় একটা খাট পেতে নিলেই হবে।

প্রস্তাবটা খুব পছন্দ হল না কৃষ্ণকান্তর। সে বউদির দিকে প্রশ্নাতুর চোখে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে বলল, তোমার একটা কী যেন হয়েছে। খুব ভয় পাচ্ছো।

পাচ্ছি।

কিসের ভয় বলো তো!

সে তুই বুঝবি না।

বলো না!

বলতাম, কিন্তু তোর মতো শুদ্ধ ব্রহ্মচারীর মনটাকে নষ্ট করে দিতে ইচ্ছে হয় না, থাকগে, সব শুনতে নেই।

কৃষ্ণকান্ত ভারী সুন্দর করে একটু হাসল। তারপর হঠাৎ বলল, ছোড়দির সঙ্গে শচীনদার বিয়ে দিতে পারলে না তো বউদি!

শচীনের নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল চপলার। সে স্পষ্ট টের পেল তার মুখ রক্তশূন্য হয়ে যাচ্ছে, বুক কাঁপছে।

চপলা হাসবার চেষ্টা করে বলল, কই আর পারলাম!

ছোড়দিটা খুব বোকা না?

বোধহয়।

কৃষ্ণকান্ত একটু ভেবে নিয়ে বলে, মুখে যাই বলুক ছোড়দি কিন্তু শচীনদাকেই বিয়ে করতে চায় জানো?

না তো, কী করে জানব? তুই টের পেলি কী করে?

আমি টের পাই।

তাহলে ওরকম করল কেন?

কে জানে! কিন্তু মাঝরাতে উঠে কাঁদতে বসত। আমি দু-একদিন দেখেছি।

একটু গম্ভীর হয় চপলা। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর বলে, তুই কি বিশাখার জন্য খুব ভাবিস?

না তো! ভাববার কী আছে? শচীনদার জন্য একটু কষ্ট হয়।

কেন?

শচীনদা যে ভীষণভাবে ছোড়দিকে বিয়ে করতে চায়।

আবার কেঁপে ওঠে চপলার বুক।

একটু শ্বাস তার বুকে আটকে আঁকুপাঁকু করতে থাকে। কম্পিত গলায় সে বলে, কী করে বুঝলি?

শচীনদা যে ছোড়দিকে চিঠি দেয়।

দেয়? সত্যি? চপলার চোখ বড় হয়ে ওঠে ক্রমে।

দেখবে?

তোর কাছে আছে?

আছে। বলে কৃষ্ণকান্ত তার টেবিলের টানা থেকে একটা মুখ-আঁটা খাম বের করে আনে।

মুখ-আঁটা খামটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে চপলা। বুকের ভিতরটা ধরফর করতে থাকে। শচীনের হাতের লেখা সে চেনে। খামের ওপর তারই গোটা হাতের লেখায় শ্রীমতী বিশাখা চৌধুরি নামটা দেখেও যেন বিশ্বাস হয় না। সে জিজ্ঞেস করল, এ চিঠি তুই কোথায় পেলি?

শচীনদা তো আজই বিকেলবেলায় চিঠিটা আমাকে দিয়ে বলল, ছোড়দির কাছে পৌঁছে দিতে।

এতে কী লেখা আছে জানিস?

না। কী করে জানব! পরের চিঠি পড়তে নেই।

চপলার মন আঁকুপাঁকু করছে জানার জন্য। চিঠিটা সে ব্লাউজের মধ্যে রেখে বলল, আমি বিশাখাকে দিয়ে দেবখন।

দিও।

এরকম আরও চিঠি দিয়েছে নাকি?

না। এই প্রথম আমাকে চিঠি পৌঁছে দিতে বলল।

একটু নিশ্চিন্ত হয় যেন চপলা। শচীনের হাত এড়িয়ে সে পালাতে চাইছে কলকাতায়, তবু কী আশ্চর্য, নিজের অধিকারটুকু পাছে চলে যায় সেই ভয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছে ভিতরে ভিতরে।

চপলা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমি যাচ্ছি রে। তুই পড়।

কলকাতায় যাবে না তো!

দেখি শ্বশুরমশাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তোর পৈতের দিন কবে ঠিক হল আগে জেনে নিই।

ছোড়দি কেমন আছে গো বউদি?

ভালই তো!

না। ছোড়দিটা বড় কান্নাকাটি করত। ওর জন্যই আরও আমি পালিয়ে চলে এসেছি।

ভাবিস না। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। মেয়েরা কথায় কথায় কাঁদে। বলতে বলতে আনমনে দরজার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে বলে, যোগীবর, তোমার ভয় নেই। আমি তোমাকে যোগভ্রষ্ট করতে এ ঘরে আসব না। তবে মাঝে মাঝে দেখে যাবো। তাতে দোষ নেই তো!

শৈশব ও যৌবনের মধ্যবর্তী একটা অদ্ভুত দ্বৈত সত্তার টানাপোড়েন চলছে এখন কৃষ্ণকান্তর মধ্যে। সে এবার যে হাসিটা হাসল তা শিশুর মতো। বলল, কী যে বলো না!

চপলা অন্ধকার মাঠটা ধীর পায়ে পার হয়। ধীরে ধীরে নিজের ঘরে আসে সে। আজ সন্ধেবেলায় এই ঘরের দরজার কাছেই তাকে স্পর্শ করেছিল শচীন। তার সমস্ত শরীর শাঁখের মতো বেজে উঠেছিল সেই স্পর্শে। সাড়া দিয়েছিল। অনাবৃষ্টির তৃষিত শরীরও ছিল পুরুষ স্পর্শের জন্য উন্মুখ। কিন্তু এই প্রাচীন বাড়ির পুরোনো বদ্ধ বাতাসে সংস্কারের ভূতও তো কিছু আছে, যেমন আছে গুপ্ত প্রণয়ের অনেক কেলেংকারী। চপলার অর্ধেক মন নত হয়েছিল শচীনের কাছে, বাকী অর্ধেক আড় হয়ে ছিল।

চপলা জলে ভিজিয়ে খুব ধীরে ধীরে সাবধানে খামের জোড় খুলে ফেলে। বর্ষাকালের ভেজা বাতাসে আঠা তেমন জোড়েনি ভাল করে। চমৎকার নীলাভ একটা কাগজে ছোটো ছোটো সুন্দর হস্তাক্ষর!

বিশাখা, তোমার চিঠি পেয়েছি। এত কিছু হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে আবার তোমার কাছ থেকে এরকম প্রস্তাব আশা করিনি। হঠাৎ কেনই বা এরকম পাগলের মতো আচরণ করছো? আমার বিয়ে করবার কোনো সংকল্প নেই। বাড়ি থেকে যে প্রস্তাব উঠেছিল তাতে আমি অসম্মতি জানিয়ে দিয়েছি।

জীবন অনেক বড় এবং জটিল। তোমাকে যদি আমি উদ্ধার না করি তবে তুমি গলায় দড়ি দেবে ইত্যাদি লিখেছো। ঠাকুর দেবতার নামে অনেক ভয় দেখিয়েছো। এসব বড় বাড়াবাড়ি। আমার জন্য তোমার এত আগ্রহ এতকাল কোথায় ছিল? তুমি সুন্দরী, সুপাত্রের অভাব হবে না। উপরন্তু কোকাবাবুর নাতি শরতের প্রতি নিজের দুর্বলতার কথা তুমি নিজেই প্রচার করেছো। তারপরও এই নাটক কেন?

আমি নাটক পছন্দ করি না। তবে তোমার প্রতি আমার স্নেহ আছে। কিন্তু তোমার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। আশা করি বুঝবে। —শচীন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *