সাড়ে তিন ভরি আছে। পান বাদ যাবে।
পান বাদ দেবেন কেন? হারটা তো সুন্দর। একটু পালিশ করলে নতুন বলে বিক্রি হয়ে যাবে।– মণিদীপা বুদ্ধি খাঁটিয়ে বলল।
দোকানি গম্ভীর মুখে বলে, আমি শুধু সোনার দাম দিতে পারি।
মণিদীপার কিছু করার ছিল না। বলল, তাই দিন।
টাকা নিয়ে উঠল এবং ট্যাক্সি ধরল।
বাসায় ফিরে টাকার গোছটার দিকে চেয়ে মুখ বাঁকা করে সে। এ টাকা দিয়ে কিছুই শুরু করা যায় না। আরও টাকার দরকার। অনেক টাকা।
টাকাটা অনিবার্যভাবে মার্কেটিং-এ যাওয়ার জন্য তাকে ঠেলছিল। কষ্টে লোভ সামলৈ নেয় মণিদীপা। অঞ্জর মতো এন্টারপ্রাইজিং একটা কিছু করতে হবে। অনেক টাকার দরকার।
কাগজ কলম নিয়ে সারাদিন ডাইনিং টেবিলে বসে অনেক হিসেব-নিকেশ করল। দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, ডেকোরেশন, ট্যাক্স। তবে অঞ্জুর মতো টেলারিং শপ না রেস্টুরেন্ট না হ্যান্ডিক্র্যাফটস তা ঠিক করতে পারল না। কিন্তু কিছু একটা করতে হবে।
রাত আটটা নাগাদ যখন টেলিফোন বাজল তখনও মণিদীপার হুশ নেই। স্বপ্নাচ্ছন্ন চোখে সে একটা ঝকঝকে দোকানঘর দেখতে পাচ্ছে। ভারী ব্যস্ত দোকান, ভীষণ জনপ্রিয়। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার বিক্রি।
সেই ঘোরের মধ্যেই গিয়ে টেলিফোন ধরল।
বোস সাহেব আছেন?
গলাটা শুনে আচ্ছন্ন ভাবটা কেটে গেল মণিদীপার। বুকে বড় জ্বালা, বড় ক্ষোভ হতাশা।
এখনও ফেরেনি। কোথা থেকে ফোন করা হচ্ছে?
শিলিগুড়ি। কালকের ফ্লাইটে যাচ্ছি। কিন্তু পৌঁছতে বিকেল হয়ে যাবে, কাল আর বোস সাহেবের সঙ্গে দেখা হবে না, বলে দেবেন কাইন্ডলি।
বলব। আপনার সঙ্গে আমারও একটু দরকার ছিল যে! কবে দেখা হতে পারে বলবেন?
কাল নয়। পরশু চেষ্টা করব। কেন?
একটা কাজ হাতে নিয়েছি। এক্সপার্ট ওপিনিয়ন চাই।
আমি কোনও ব্যাপারেই এক্সপার্ট নই।
এক্সপার্ট বলেই তো অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের পোস্টে আছেন।
পোস্টটা আমি পেয়েছি তেল দিয়ে। আপনি তো জানেন।
ব্যাপারটা সিরিয়াস। আমি একটা দোকান দিচ্ছি।
দোকান? কিসের দোকান?
পান-বিড়ির।
ওঃ, তা হলে আমি ভাল অ্যাডভাইস দিতে পারব।
তা হলে পরশু? আফটার অফিস-আওয়ার্স?
হ্যাঁ। বোস সাহেবের গাড়িতেই চলে যাব আপনাদের ফ্ল্যাটে।
শুনুন। আপনাকে কিন্তু আমার পার্টনার হতে হবে।
কীরকম পার্টনার?
পার্টনার আবার কীরকম হয়? ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট ফিফটি-ফিফটি।
অর্থাৎ আপনি পান সাজবেন আর আমি বিড়ি বাঁধব?
শপ ম্যানেজমেন্ট আমার, আউটডোর আপনার।
আর কিছু?
আর কী?
ধরুন লাভটা আপনার, লোকসানটা আমার।
ফের ইয়ারকি?
না, ভাবছিলাম রাজনীতি কি একদম ছেড়ে দিলেন?
ছাড়ব কেন? এটাও এক ধরনের লড়াই। অপ্রেশনের বিরুদ্ধে।
আপনি ক্যাপিট্যাল পেলেন কোত্থেকে?
এখনও পাইনি। কী করে পাওয়া যায় তা আপনাকেই জিজ্ঞেস করব। শুনেছি আজকাল ব্যাংক ব্যাবসার জন্য লোন দেয়। সত্যি?
দেয়।
আমার সামান্য কিছু সোনা আছে। বেচে দিচ্ছি।
সর্বনাশ।
সর্বনাশ কেন?
সোনা বেচলে আর কিনতে পারবেন না কখনও। সোনা বেচতে নেই।
ওসব প্রিমিটিভনেস আমার নেই। সোনা আমার কোনও কাজে লাগে না।
ইতিমধ্যেই কি কিছু বেচে দেয়েছেন?
শুধু হারটা।
কতটা সোনা ছিল?
সাড়ে তিন ভরি।
দীপনাথ চুকচুক করে একটা আফসোসের শব্দ করে বলল, নিশ্চয়ই জানি আপনি ঠকেছেন। আজকাল সোনার দর জানেন?
না তো!
কত দিয়েছে আপনাকে?
তিন হাজারের মতো। সোনার পান বাদ দিল যে।
ওরা সব সময়েই পান বাদ দেয়। কিন্তু কথা তো তা নয়। ওর ওপরে বারগেন করতে হয়। আপনি নিশ্চয়ই তা করেননি!
আমি লোককে বিশ্বাস করি।–বলল মণিদীপা, কিন্তু গলার স্বরে তেজ ফুটল না। বরং করুণ শোনাল।
দীপনাথ হাসল।আমি গিয়ে পৌঁছোনোর আগে আর কাউকে সোনা বিক্রি করবেন না। খুব ঠকে যাবেন। তাছাড়া বোস সাহেবের অ্যাডভাইস নিলেন না কেন?
ও জানলে রাগ করবে।
রাগ করাই উচিত।
সেইজন্যই এক্সপার্ট ওপিনিয়ন চেয়েছিলাম। এ সময়ে আপনি নর্থ বেঙ্গলে গিয়ে বসে রইলেন কেন বলুন তো!
আমাকে খেটে খেতে হয়, অন্যের হুকুমে চলতে হয়। আমি কি জানতাম আমি নর্থ বেঙ্গলে এলেই আপনি সোনা বেচবেন!
সোনা আমি সব বিক্রি করব। তবে এবার আপনার থ্রু-তে।
আমি ও দায়িত্ব নিতে পারব না।
তা হলে আমার হাত-খরচ চলবে কীসে?
কেন, বোস সাহেব হাত-খরচও বন্ধ করেছেন নাকি?
ঠিক তা নয়। যা দেয় তাতে চলে না। ট্যুর থেকে ফিরে এসেই ফিনানশিয়াল ব্যারিকেড তৈরি করেছে।
যতদুর জানি, আপনি চারশো টাকা পান।
বিস্মিত মণিদীপা বলে, আপনি জানেন? কী করে? ও কি আপনাকে বলেছে?
দীপনাথ থতমত খেয়ে বলে, ঠিক ওভাবে বলেননি। একবার কী একটা কথা প্রসঙ্গে হঠাৎ ইনফরমেশনটা বেরিয়ে আসে।
কুট সন্দেহে চোখ ছোট করে মণিদীপা বলে, ও।
চারশো টাকা কিন্তু কম নয় মিসেস বোস।
কম বলছি না। কিন্তু আমি জানতে চাই আমার স্বাধীনতা নেই কেন? আজকাল বয় বাবুর্চির মাইনে পর্যন্ত বোস সাহেব দেয়, আগে আমার হাত দিয়ে দেওয়ানো হত। জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে টাকা নেই। গাড়ি গ্যারাজে তালাবন্ধ। কিন্তু আপনাকে বলে কী হবে? আপনি পুরুষমানুষ, সবসময়ে পুরুষদের পক্ষ নেবেন। আই নো ইউ অল।
আপনিও তো অবলা নারী নন মিসেস বোস। চারশো টাকায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত একটা পরিবারের চলে যায়। আর আপনার তো ওটা শুধু হাত-খরচ। খাওয়া থাকা বা পোশাক ওর বাইরে।
হাউ ড়ু ইউ নো সো মাচ? বোস সাহেব কি এসবও বলেছে?
না। তবে টেলিফোনে আর এসব প্রসঙ্গে না বলাই ভাল।
দেন টক অ্যাবাউট ওয়েদার।
এখানে ভীষণ ঠান্ডা। আজ গ্যাংটকে গিয়ে জমে গিয়েছিলাম।
মণিদীপা রাগ করে বলল, রিসিভার রেখে দিচ্ছি কিন্তু।
আরে, রেগে গেলেন যে! ওয়েদারের কথা আপনিই বললেন তো!
রাগ হওয়ার কথা নয় বুঝি? এ দেশ বলেই মেয়েদের এত সহজে বেকায়দায় ফেলা যায়। সভ্য দেশ হলে—
দেশটাকে সভ্য করে তুলুন না! কে আটকাচ্ছে?
আপনারাই আটকাবেন, মেয়েরা প্রগ্রেস করলে যাদের ইন্টারেস্ট হ্যামপার্ড হয়।
আমি তো আপনার পার্টনার। আপনি প্রগ্রেস করলে আমারও প্রগ্রেস।
এখনও পার্টনার হননি।
হচ্ছি তো! পরশুদিন।
আপনাকে পার্টনার করব কি না তা দু’বার ভাবতে হবে।
কোনও মেয়েকে পার্টনার করতে চান? জমবে না।
তার মানে?
মেয়েতে মেয়েতে কো-অপারেশন হয় না।
পুরুষে মেয়েতেও তো হচ্ছে না।
পরশু বরং আপনি আমার একটা ইন্টারভিউ নিন।
ইন্টারভিউ বহুবার নিয়েছি। কাওয়ার্ড, সেলফ কনটেন্ট।
আমি?
নয়তো কে? অলস ভিতু আনস্মার্ট।
তবু আমাকেই পার্টনার করতে চেয়েছিলেন একটু আগে।
এখন চাইছি না। আপনি আমাকে রাগিয়ে দিয়েছেন।
আপনি না রেগে কখন থাকেন বলুন তো! যখনই দেখা হয় তখনই দেখি রেগে আছেন।
আমি মোটেই রাগী নই।
আপনার ব্যাবসা যদি জমে যায় তা হলে কী হবে মণিদীপা?
নামটা মনে পড়েছে তা হলে?
পড়েছে। কিন্তু প্রশ্নের জবাবটা?
আমার ব্যাবসা জমবেই।
কিন্তু তারপর?
তারপর আবার কী? ইট উইল গ্রো বিগার। আমি একটা চেইন অফ শস-এর কথা ভাবছি।
সে না হয় হল। কিন্তু আপনার সাংসারিক বা দাম্পত্যজীবনের কী হবে?
তার সঙ্গে এর কী সম্পর্ক?
আমি জানতে চাই আপনি সংসার ছাড়ার প্রোলোগ হিসেবে এসব ব্যাবসা-ট্যাবসার কথা ভাবছেন কি না।
আমি তো সংসারছাড়া হয়েই আছি। গেস্টদের মতো থাকি খাই।
তবু তো একটু হলেও আছেন।
সেটুকু বাদ গেলেও কারওর ক্ষতি হবে না। বরং ফ্রি হলে অনেক বেশি কাজ করতে পারতাম। আমাদের ডিভোর্সটা আপনার জন্যই হল না। কিন্তু তাতে লাভ কী হল বলুন তো!
লাভ-ক্ষতির হিসেব এখনও শেষ হয়নি। সময় হলেই ব্যালান্স শিট পেয়ে যাবেন।
বোস সাহেব উকিলকে একটা ভিজিটও দিয়েছিল শুনেছি। আপনার পরামর্শে নোটিশটা সার্ভ করেনি। কিন্তু এটা বালির বাঁধ।
দেখা যাক।
আমি কারওর করুণার পাত্রী হয়ে থাকা পছন্দ করি না। সব সময়েই মনে হয়, বোস ইচ্ছে করলেই আমাকে ডিভোর্স করতে পারে, দয়া করে করছে না। একজন আউটসাইডারের মতো এই থাকাটা কি খুব সম্মানজনক?
ধৈর্য ধরুন।
ধৈর্য ধরছি, তার কারণ অন্য। বোসের ফ্ল্যাট থেকে বেরোলে আমার কলকাতায় আর থাকার মতো জায়গা নেই। শুধু সেইজন্যেই–
জানি মণিদীপা।
আপনি জানেন বলেই বোধহয় ডিভোর্সটা আটকেছেন। কিন্তু ও ডিভোর্স না করলেও আমি মামলা আনব। তখন ঠেকাতে পারবেন না।
তারপর কী হবে মণিদীপা?
কিন্তু তার আগে বলুন, আপনি তিন মিনিটের টাইম-লিমিট কতক্ষণ আগে পার হয়েছেন?
অনেকক্ষণ। কিন্তু আমি এক্সচেঞ্জ থেকে কথা বলছি। এ জায়গা আমার চেনা। এমনকী পয়সাও লাগে না।
ও। হ্যাঁ, তারপর কী হবে জিজ্ঞেস করছিলেন। জেনে কী হবে? আমি ডিভোর্স করলেও তো কেউ মালা হাতে বসে থাকবে না। এ দেশের কাওয়ার্ড পুরুষরা ডিভোর্সি মেয়েদের ভয় পায়।
ঠিক তাই মণিদীপা।
কিন্তু আমি তো আর বিয়ে করতে যাচ্ছি না। কাজেই ও প্রশ্ন ওঠে না। আমি চাই কাজ। অনেক, হাজার কাজে ড়ুবে থাকব।
কাজ চাই? সেজন্য দোকান কেন? আপনার বিপ্লব কি শেষ হয়ে গেছে মণিদীপা?
মণিদীপা ভ্রূ কোঁচকায়, কেন শেষ হবে? যে লোকটা বিপ্লবীর জুতোয় পেরেক ঠুকে দেয় সেও বিপ্লবী। আপনি রিভোলিউশন অফ দি প্রোলেতারিয়েত কাকে বলে তাই জানেন না।
আপনি বোধহয় বিপ্লবীদের জন্যই গুন্ডি দিয়ে পান সাজবেন, আর আমি বিপ্লবী ব্র্যান্ডের বিড়ি লাল সুতোয় বেঁধে দেব?
কেন যে আপনি এত অশিক্ষিত!
দীপনাথ গা-জ্বালানো হাসি হাসছিল। দীপনাথের ওপর সে কখনও সত্যিকারের রাগ করেনি। আজ করল। হাসির মাঝখানে রেখে দিল ফোনটা।
বোস সাহেব ফিরল ন’টা নাগাদ। আজকাল সবসময়েই বাসায় ঢোকে গম্ভীর মুখে, ভ্র কোঁচকানো। মণিদীপা তাতে ভয় পায় না বা গুরুত্ব দেয় না। লোকটাকে তার বোঝা হয়ে গেছে। এও জানে তারা দু’জনে কেউ নিজেকে বদলাবে না। যদি না বদলায় তবে মিলও হবে না কোনওদিন।
তবে আজ মণিদীপা আধঘণ্টা বাদে হানা দিল বোসের ঘরে। ততক্ষণে বোস গরম কাপড়ের ড্রেসিং গাউন পরে এক কাপ কালো কফি শেষ করেছে। বাইফোকাল চশমা চোখে কিছু কাগজপত্র দেখছিল লেখাপড়ার টেবিলের কাছে বসে।
মণিদীপা সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলার পাত্রী নয়। ঘরে ঢুকেই বলল, বুনু, তোমার সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে।
বোস কাগজ সরিয়ে একটু অবাক চোখে মণিদীপাকে দেখে নিয়ে বিরক্ত গলায় বলে, আই নো। তোমার কথা মানেই টাকা। আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।
অপমানটা খুব ঝাঁঝালো হয়ে মণিদীপার সর্বাঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ল বটে, কিন্তু তবু সে আজ মাথা ঠান্ডা রাখতে পারল। আর-একটা চান্স ওকে দেবে সে।
মণিদীপা মাথা নেড়ে বলে, টাকার কথা তোলাটা নিশ্চয়ই দোষের নয়।
দোষের হত যদি যথেষ্ট টাকা তুমি না পেতে।
আমি যথেষ্ট পাই না। তার চেয়েও বড় কথা, টাকার ব্যাপারে আমার কোনও স্বাধীনতা নেই।
স্বাধীনতা দেব এমন শর্ত ছিল না।
তা হলে আমাকে বউ সাজিয়ে রেখেছ কেন?
চলে যাও। দরজা সবসময়েই খোলা।
আমি যেতেই চাই। কিন্তু যাওয়ার জন্যও আমার কিছু থোক টাকার দরকার। আমাকেও বাঁচতে হবে তো।
সেটা কোর্টে ঠিক হবে।
তুমি কি ডিভোর্স স্যুট আনছ?
না। পাবলিসিটি আমি পছন্দ করি না। তবে তুমি মামলা করতে পারো। আমি লড়ব না।
আমি কেন মামলা করতে যাব? তোমার আমার মিল নেই, ছাড়াছাড়ি দরকার, সেটা কি কাছারির মুখ দিয়ে বলাতে হবে? কাছারিতে গিয়ে তো আমরা বিয়ে করিনি।
তা হলে আপসে সেপারেশন চাও?
চাই।
আর সেজন্যই টাকাটা তোমাকে দিতে হবে।
তাও নয়। তুমি মিন বলে অন্যরকম অর্থ করছ। চলে যাওয়ার প্রি-কন্ডিশন হিসাবে আমি টাকাটা চাইনি। আই ওয়ান্ট টু স্টার্ট সামথিং ইমিডিয়েটলি। পরে আমি ব্যাংকের লোন পেয়ে যাব। তোমার টাকা তখন শোধ করে দেব।
তুমি কী স্টার্ট করতে যাচ্ছ আগে সেটা আমার জানা দরকার।
এখনও ঠিক করতে পারিনি। আই ওয়ান্ট টু ওপেন এ শপ।
শপ? মুদিখানা নাকি?
তোমার কালচার বেশি দূর ওঠে না, তাই যা খুশি ভাবতে পারো।
ভদ্রঘরের মেয়েরা কি দোকানদারি করে? কখনও শুনিনি।
করে এবং খুব ভাল ঘরের মেয়ে-বউও করে। আমার বন্ধু অঞ্জু কত বড় টেলারিং করেছে! ওর বর তোমার চেয়ে অনেক উঁচু পোস্টে কাজ করে।
অঞ্জু? সেটা কে?
ইউ নো হার ওয়েল। ন্যাকামি কোরো না।
বোস নিজেই নাকটাকে দুআঙুলে চেপে ধরে একটু ভাবল। তারপর মাথা নেড়ে বলল, আই নো। বোধহয় বালিগঞ্জে ওর একটা ফ্যাশনের দোকান আছে, অ্যান্ড শি ইজ এ কাটথ্রোট।
তোমার অ্যাসেসমেন্ট তোমার নিজস্ব। তবে আমিও ওরকম কিছু করতে চাই।
আমি তোমাকে টাকা দিয়ে বিশ্বাস করতে পারি না। অঞ্জু যা পেরেছে তুমি তা না পারতেও পারো।
তবু তুমি তোমার টাকা ফেরত পাবে। আমি ধার হিসেবে কাগজপত্রে সই করে টাকা নেব। ইভন আই অ্যাম রেডি টু পে ইন্টারেস্ট।
বোস হাসল। খুবই শেয়ালমুখো হাসি, যা আসলে হাসি নয়। বলল, তুমি চলে গেলেও তো আমার লাভ হবে না! আইনত আমি বিবাহিতই থেকে যাচ্ছি।
তুমি কি আবার বিয়ে করতে চাও বুনু?
চাইলে দোষ কী?
আর একটা মেয়ের সর্বনাশ হবে। ঠিক আছে আমি মিউচুয়াল করে নিতে রাজি। কেস তো ইন ক্যামেরাও করা যায়।
যায়। তবু আমার ইচ্ছে কেসটা তুমি ফাইল করো।
তবে টাকা দেবে?
ভেবে দেখব।
মণিদীপা অত্যন্ত গভীর বুক-খালি-করা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, চ্যাটার্জি শিলিগুড়ি থেকে ফোন করেছিল।
কবে আসছে!
কাল। তবে কাল তোমার সঙ্গে দেখা হবে না।
জানি। তুমি যাও।
আর একটা কথা বুনু, চ্যাটার্জি আমার টাকার অসুবিধের কথা সবই জানে। তুমি যে আমাকে রেশনে রেখেছ তা ও জানল কী করে? তুমি বলেছ?
আমি!—বলে যেন একটু অবাক হয় বোস। তারপর সত্যিকারের একটু হাসে, ইন ফ্যাক্ট তোমাকে টাকার ব্যাপারে কন্ট্রোল করার কথা ওই আমাকে প্রথম বলে। হি ইজ এ রিয়্যাল ফ্রেন্ড। ব্যাংকরাপটুসি থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
দীপবাবু?
অবাক হওয়ার কিছু নেই। তুমি যখন আমাকে ফকির বানানোর মহান ব্রত নিয়েছিলে তখন আমার অবস্থা পাগলের মতো। অত টাকা আয় করেও কিছুই থাকে না। দীপনাথ ঠিক সেই সময়ে ইন্টারফেয়ার করে। আই অ্যাম গ্রেটফুল টু হিম।
মণিদীপা হাত মুঠো করে রাগে কাঁপতে কাঁপতে অন্ধের মতো, আচ্ছন্ন মাথায় নিজের ঘরে ফিরে এল।
তার কান্না আসে না সহজে। আজ এল। আসলে কান্না নয়। অসহায় দুর্দম রাগ তার ভিতরটাকে বিদীর্ণ করে দিল বুঝি। বালিশে মুখ চেপে ধরে নিজের শ্বাসরোধ করতে করতে হাত-পা ছুড়ে কাঁদতে লাগল মণিদীপা।