2 of 3

৫৪. স্কুল-টুলেও বক্তৃতা

৫৪

তুমি আজকাল স্কুল-টুলেও বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছো! হল কি তোমার? প্রেস্টিজ বলে কি কিছু নেই নাকি? ডাকলেই যেতে হবে?

একটু থতমত খেয়ে গেল কৃষ্ণজীবন। অপ্রস্তুত হয়ে বলল, প্রেস্টিজ! না, প্রেস্টিজের কি আছে? ওরা ডাকল, গেলাম।

সেটাই তো আমার আপত্তির কারণ। যাকে দেশ-বিদেশ থেকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে, যার ঘর-সংসারের দিকে মন দেওয়ার সময় নেই, সে যদি এখন এসব ছোটখাটো ব্যাপারেও তু বললেই ছুটে যায় তা হলে সেটা কেমন দেখায় বলো তো!

গণ্ডগোলটা কোথায় হল তা বুঝতে পারছিল না কৃষ্ণজীবন। একটা মিশনারি স্কুলের কর্তৃপক্ষ তাকে ডেকেছিল সেমিনারে। কৃষ্ণজীবন ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সামনে তার কথা বলার সুযোগ কমই পায়। এই সুযোগটা পেয়ে সে খুশিই হয়েছিল।

অবাক হয়ে কৃষ্ণজীবন খুব সরলভাবে বলল, কোনও দোষ হয়েছে নাকি? বাচ্চাদের শেখানো তো ভালই। ওরাই তো ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে দেখবে।

ছাই দেখবে! তোমার বকবকানি এক কান দিয়ে শুনে আর এক কান দিয়ে বের করে দিয়েছে এতক্ষণে। এসব আজেবাজে অনুষ্ঠানে যাচ্ছো, অথচ ইতুর বিয়ের নেমন্তন্নে গেলে না! কত দুঃখ পেল ওরা বলল তো! মেলোমশাই নিজে এসে নিমন্ত্রণ করে গিয়েছিলেন। তোমার জন্য আমাদেরও যাওয়া হল না।

কৃষ্ণজীবন সংসারী নয় বটে, কিন্তু খুব বোকাও নয়। ইতু হল রিয়ার এক মাসতুতো বোন। ব্যান্ডেলে ওদের বাড়ি। সম্পর্ক খুব একটা নেই। নেমন্তন্নে যাওয়ার ব্যাপারটা খুব জরুরী কিছু ছিল না। কিন্তু রিয়া হঠাৎ ব্যাপারটাকে ভীষণ গুরুত্ব দিতে যে কেন শুরু করল কে জানে! ব্যান্ডেল যেতে হলে পুরো দিনটা বরবাদ হত। সেমিনারে যাবে বলে কথা দেওয়া ছিল, কথার খেলাপ হত।

কৃষ্ণজীবন অপরাধীর মতো মুখ করে বলল, তুমি গেলে না কেন? তোমাকে তো যেতে বলে গিয়েছিলাম!

এত দূরের রাস্তা বাচ্চাদের নিয়ে আমি একা যাবো? সেটা কি ভাল দেখাত?

তারা কি বুঝত না যে, কথার খেলাপ করাটা ঠিক নয়? তেমন হলে গাড়িটা নিয়েও যেতে পারতে। ড্রাইভার রতন থাকত।

গাড়ি অতদূর নিয়ে গেলে তুমি কি খুশি হতে?

না, গাড়ি নিয়ে বেরোনোর ব্যাপারে কৃষ্ণজীবনের আপত্তি আছে। পৃথিবীর ভারাক্রান্ত আবহাওয়ায় সে নিজের অবদান যোগ করতে চায় না। তবু গাড়িটা কেনা হয়েছে স্ট্যাটাস সিম্বল হিসেবে। কিনিয়েছে রিয়াই। ওরাই ঘোরে বেড়ায়। কৃষ্ণজীবন কখনও আপত্তি করে না। তবে তেল পোড়ানো যে তার পছন্দ নয় এটা তার পরিবারের সবাই জানে।

কৃষ্ণজীবন কাঁচমাচু হয়ে বলে, খুশিই হতাম। তোমার তো প্রয়োজনটা জরুরীই ছিল।

সামান্য একটা স্কুলের সেমিনারে না-গেলেও তোমার চলত। ওই ক্যাংলাপানা, কালো সাউথ ইন্ডিয়ান মেয়েটা যে তোমাকে কী মন্ত্র করল কে জানে!

কৃষ্ণজীবন একটু ব্যাকুল হয়ে বলে, সে বড় ভাল মেয়ে।

ভাল হোক না, কিন্তু স্কুলে-পড়া মেয়ে তো! তার কথাটারই গুরুত্ব বেশি হল?

মেয়েটার গুরুত্ব যাই হোক, বিষয়টার গুরুত্ব ছিল।

দেখ, ওসব বোলো না। পৃথিবীর ভাল-মন্দ নিয়ে ভাববার জন্য অনেক বড় বড় মাথা আছে। তোমার জন্য কিছুই ঠেকে থাকবে না। একটি দিনের জন্য পৃথিবী ক্ষয় হয়েও যাচ্ছিল না।

কৃষ্ণজীবনের মুশকিল হল, সে ভাল অভিনেতা নয়। এ সময়ে তার হয়তো খুব নরম গলায় বলা উচিত ছিল, আই অ্যাম সরি রিয়া। আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। কাম অন, লেট আস ফরগেট দি হোল থিং। কিন্তু সেটা ঠিক পেরে ওঠে না সে। ওসব কৃত্রিম কথা বলতে গেলে সে মনে মনে হোঁচট খায়। রিয়ার এখন তাকে অপমান করার দরকার, তাই করছে। অপমানটা সে বরাবর মেনে এবং সয়েও নেয়। এসব ছোটখাটো ব্যাপার তাকে দমিত করে না।

ক্যাংলা কালো সাউথ ইন্ডিয়ান বাচ্চা মেয়েটার নাম আপা। অনুদের বাড়িতে পরিচয় হয়েছিল। এ বাড়িতে আজকাল প্রায়ই আসে। তারই জন্য তাদের স্কুলে যেতে রাজি হয়েছিল কৃষ্ণজীবন। সে জানে, রিয়া যতটা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করল ততটা তুচ্ছ আপা নয়। আপার ধাত অন্য। কৃষ্ণজীবন মানুষকে খানিকটা চেনে। অধ্যাপিকা রিয়া বুদ্ধিমতী, শিক্ষিতা, সম্প্রতি ডক্টরেটও পেয়েছে। তবু আপার পাশে তাকে দাঁড় করানোই যাবে না। আপার যা আছে তা খুব কম মেয়েরই আছে। সাধারণ মেয়েদের মতো কোনও দুর্বলতা তার নেই। এইটুকু বয়সেই সে অনেক বিস্তার লাভ করেছে হৃদয়বত্তায়।

তোমার সস্তা হাততালি পাওয়ার লোভ খুব বাড়ছে। বুঝলে! অহংকারও বেড়েছে।

কৃষ্ণজীবন একটা দীর্ঘশ্বাস খুব সন্তর্পণে ছাড়ল। তারপর হেলানো চেয়ারে এলিয়ে চোখ বুজে বাক্য-বুলেটে ঝাঁঝরা হতে লাগল নীরবে। তার মূক-বধিরতা আজকাল এইসব পরিস্থিতিতে কাজে লাগে।

আজ সে স্কুলের একরাশি ফুলের মতো ছেলেমেয়ের সামনে এক ঘণ্টা ধরে বক্তৃতা দিয়েছে চোস্ত ইংরিজিতে। বিষয় ছিল, “সেভ দি আর্থ”। তার প্রিয় বিষয়। বক্তৃতাও নয় ঠিক। একজন ব্যথিত মানুষের মুখ থেকে পৃথিবীর অন্তর্নিহিত যন্ত্রণাই যেন মথিত হয়ে বেরিয়ে এল। তার সঙ্গে মিশে গেল অবিমৃশ্যকারী মানুষের কৃতকর্মের জন্য মনস্তাপ। হল ফেটে পড়ল হাততালিতে।

বক্তৃতার পর আধ ঘণ্টা ছিল প্রশ্নোত্তরের পালা। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরাও আজকাল পৃথিবার সমস্যা নিয়ে কত ভাবছে। নানা সুন্দর ও প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেছিল তারা। দিনটা অনেক দিন মনে থাকবে তার।

আপা সেমিনারের শেষে সোজা এসে তার হাত ধরল, আপনি আজ আমার কথাই যেন বললেন। আমিও কত ভাবি, কিন্তু এলোমেলোভাবে। আপনার চিন্তাগুলি খুব বিন্যস্ত।

কৃষ্ণজীবন হেসে বলেছিল, তুমি এরকম বাংলা শিখলে কোথা থেকে?

কিছু ভুল বললাম?

না তো! তবে এরকম বাংলায় কেউ কথা বলে না।

আমি মনে করি একটা ভাষায় যত শব্দ আছে তার সব কিছুই মুখের ভাষায় প্রয়োগ করলে একঘেয়েমি কেটে যায়। ভাষা তো ব্যবহারের জন্যই, না?

তা বটে।

প্রিন্সিপালের ঘরে যখন চা কেক দিয়ে আপ্যায়িত করা হচ্ছিল তাকে তখন স্বয়ং প্রিন্সিপাল হঠাৎ প্রশ্ন করলেন, আপাকে আপনি কত দিন চেনেন?

খুব সম্প্রতি। কেন বলুন তো!

আপা আমাদের সব চেয়ে ভাল ছাত্রী। কিন্তু খুব একরোখা। ওকে নিয়ে ওইটেই প্রবলেম।

একরোখা হওয়াই তো ভাল।

প্রিন্সিপাল একটু চিন্তিতভাবে শুধু বললেন, হুঁ।

তাকে বাড়ি অবধি পৌঁছে দিয়ে গেল যে-দুটি ছেলেমেয়ে তাদের মধ্যে একজন আপা, অন্যজন অনুর দাদা বুবকা।

বুবকা বলল, আপা আমাকে খুব অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে, যেগুলো পসিবল্‌ নয়।

কি কথা বলে?

বলে যে, গড়ের মাঠে যত ঘাস আছে তার ওপর যেসব গঙ্গাফড়িং লাফিয়ে বেড়ায়, আকাশে যে মেঘ ভাসছে বা টু মিলিয়ন লাইট ইয়ার দূরে যে স্টারটা মিটমিট করছে, এসবের সঙ্গে নাকি আমার রিলেশন আছে। এটা কি সত্যি হতে পারে?

কৃষ্ণজীবন একটু হাসল। তারপর বলল, আপা হয়তো খুব মিথ্যেও বলে না। কে জানে, হয়তো আছে।

কিরকমভাবে আছে? হোয়ার ইজ দি লজিক?

লজিক! না, লজিক নেই। তবে খুব সূক্ষ্ম জিনিস বুঝতে গেলে শুধু যুক্তি দিয়ে বোঝা যায় না। অনুভূতি চাই।

আপা বোঝে, আমি বুঝি না কেন? আমার কি ফাইনার ফিলিং নেই?

তা নয়। তবে সৃষ্টি জিনিসটাই তো অদ্ভুত। একদিক দিয়ে দেখতে গেলে এর কোনও মানেই হয় না। এই যে আমরা জন্মেছি, সভ্যতা তৈরি করছি, কথা কইছি—এসবের মানে কি বলো তো? কেন এই প্রাণ, এই শরীর, এই অনুভব, এইসব পারসেপশন? জড় বিশ্বে হঠাৎ এসব কোথা থেকে এল? কেনই বা এল?

কেমিক্যাল রি-অ্যাকশনস। ডায়ালেকটিক⋯

যদি তাই হয় তাও স্পষ্ট হল না। আবছা থেকে গেল।

কিন্তু স্টার বা ঘাসফড়িং-এর সঙ্গে আমার রিলেশন কি?

আমি তা জানি না। তবে এটা জানি, সারা পৃথিবীতে যে প্রাণের প্রকাশ দেখতে পাই তার মধ্যে একটা সূক্ষ্ম টিউনিং আছে। আছে প্রাণ ও জড়ের মধ্যেও একটা অদৃশ্য আত্মীয়তা। তুমি, আমি, গাছ, পাখি আলাদা ঠিকই, আবার খুব একটা অনাত্মীয়ও নই। গোটা দুনিয়াটাই যেন একটা ছক, একটা সুরে বাঁধা।

তবে আমি তা টের পাই না কেন?

চেষ্টা করলে হয়তো পাবে।

আপা পায়?

আপা হাসল না। গম্ভীর হয়ে বলল, শোনো বৃদ্ধরাম, ভালবাসা ছাড়া ওসব টের পাওয়া যায় না।

কি বোগাস কথা দেখুন। হচ্ছে সায়েন্সের কথা, ও ভালবাসা এনে ফেলল!

কৃষ্ণজীবন তার দু’পাশে বসা দুটি প্রতিপক্ষকে নিরস্ত করল না। কে জানে, হয়তো এই বিবাদই ওদের বন্ধুত্বে আটকে রেখেছে।

কৃষ্ণজীবন খানিকক্ষণ ওদের তর্ক শোনার পর বলল, আপা যে ভালবাসার কথা বলছে সেটা অলৌকিক কিছু নয়। আমার মনে হয় ভালবাসা একটা এমন জিনিস যা সব জ্ঞানকে গ্রাস করে নিতে পারে।

বুবকা উত্তেজিত গলায় বলে, হোয়াট ইজ দি মিনিং অফ দিস? আমি তো বুঝতে পারছি না।

কৃষ্ণজীবন বলে, আমিও বুঝতে পারি না। কিন্তু এটা জানি ভালবাসাই মানুষকে শেখায়, জানায়, ভালবাসাই মানুষকে মানুষ করে।

সেটা কিরকম ভালবাসা?

আপা অন্য পাশ থেকে বলে উঠল, তুমি বুঝবে না।

কেন বুঝব না?

তার কারণ আছে। তুমি আজ সেমিনারে বক্তৃতা শুনে বেশ উদ্বুদ্ধ হয়েছিলে তো!

বুবকা বলল, ইট ওয়াজ ইমপ্রেসিভ, ইয়েস।

কিন্তু পৃথিবীর জন্য তুমি কিছু করবে কি?

কেন করব না?

করবে না। কারণ, তুমি কয়েকদিন পরেই সব ব্যাপারটা ভুলে যাবে। আমরা যে যার কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ব। চাকরি বা কিছু করব। আমাদের সব ফ্যামিলি হবে। তারপর পৃথিবী একদিকে থাকবে আর আমরা থাকব নিজেদের ধান্ধা নিয়ে। তাই না!

আমি অত সেলফিস নই।

মানছি বুবকা। তুমি অন্তত তোমার বাবাকে ভীষণ ভালবাসো।

যাঃ, ওর সঙ্গে এর কী সম্পর্ক?

আছে। বাবাকে যখন ভালবাসো তখন তুমি সেলফিস নও। তাই না?

তা তো নই-ই।

এবার বুঝতে চেষ্টা করো, বাবা তোমার কাছে যেমন, এই পৃথিবীটা তোমার কাছে যদি তেমন হয়, তা হলে কেমন হবে? বাবার অসুখ হওয়ায় তুমি পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলে, রাতে গিয়ে বসে থাকতে নার্সিংহোমের ফটকের বাইরে। মনে নেই?

থাকবে না কেন?

যখন পৃথিবীর গভীর, গভীরতর অসুখ টের পাও তখন কি ওরকম অস্থির হও?

মাথা নেড়ে বুবকা বলে, আমি কিছু বুঝতে পারছি না। দিস ইজ গ্রীক টু মি।

আপা বলল, সেইটেই তো সমস্যা। ইট ইজ গ্রীক টু এভরিবডি।

কৃষ্ণজীবন একখানা হাত বুবকার পিঠে রেখে ধীর গলায় বলল, অত ভেবো না। রাগ করারও কিছু নেই। আপার মতো সূক্ষ্ম অনুভূতি আমারও নেই। কিন্তু আপা যা বলছে তার মধ্যে একটা সত্য থাকলেও থাকতে পারে। ব্যাপারটা তুমি হাইপথেটিক্যালি নাও।

নিতেই হবে? যদি না মানি?

তা হলেও ক্ষতি কিছু নেই।

বুবকা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, আপা খুব বিচ্ছু মেয়ে, জানেন? একটুও পড়াশোনা করে না, কিন্তু হায়ার সেকেন্ডারিতে ঠিক আমাদের বিট করবে। কি করে যে পারে কিছু বুঝতে পারি না। ও ব্ল্যাক আর্ট জানে বোধ হয়!

আপা বলল, তুমি একটি বোকারাম।

কৃষ্ণজীবন আবার নীরবে বসে ওদের ঝগড়া শুনল কিছুক্ষণ। বুঝতে পারল, আপার কাছে তার বন্ধুরা নানাভাবে হেরে যাচ্ছে, রেগে যাচ্ছে। অথচ কিছু করতে পারছে না।

আজ রাতেও আপাকে নিয়ে খানিকক্ষণ ভাবল কৃষ্ণজীবন। তারপর বাড়ি নিঝুম হল। সে বসল তার বইপত্র নিয়ে।

ফোনটা এল গভীর রাত্রে। বারোটার পর।

ফচকে গলায় মেয়েটা বলল, কী করছেন?

তটস্থ হয়ে কৃষ্ণজীবন বলে, আরে! তুমি এখনও জেগে আছে নাকি?

আমার একটা পরীক্ষা আছে সামনে। তাই পড়ছি।

ওঃ।

আচ্ছা, আপনি দাদাদের স্কুলে নাকি আজ একটা দারুণ বক্তৃতা দিয়েছেন?

কে বলল তোমাকে?

কী যে আপনি! দাদাই তো বলল!

ওঃ, তাও তো বটে!

আপনি খুব বক্তৃতা দেন, না?

এটা কে বলল?

মোহিনী। শি ইজ মাই বুজুম ফ্রেন্ড।

সে তো জানি।

আপনি কিন্তু ভীষণ আনসোশ্যাল।

কেন বলো তো!

বন্ধুর সঙ্গে রিলেশন রাখেন না। আমি কতবার ফোন করি আপনাকে। কই, আপনি তো করেন না!

কৃষ্ণজীবন একটু হেসে বলে, আমি ভাল কথা কইতে পারি না যে! তোমাকে ফোন করে কী বলব বলো তো!

খবর নেবেন। কথা বলতে পারেন না, তা হলে অত ভাল বক্তৃতা করেন কি করে?

বক্তৃতা তো সাজানো ব্যাপার। কথা তো তা নয়। কথা একটা আলাদা জিনিস। আমি ভাল পারি না।

মোহিনীও তাই বলে।

তোমার কী মত?

আমার মত হল, আপনি যা আছেন তাই ভাল।

তার মানে কি?

আপনাকে আমার বেশ পছন্দ। একটু চালাকও আছেন, একটু বোকাও আছেন।

দু’রকম থাকাই ভাল বলছো?

হ্যাঁ। পুরুষদের ওরকমই আমার ভাল লাগে।

তুমি বেশ পাকা মেয়ে।

গাল দিচ্ছেন না তো!

না। পাকা মানে ম্যাচিওরড।

আজকাল সবাই ম্যাচিওরড বাবা। সবাই সব বোঝে।

তাই নাকি?

আমাদের জেনারেশনকে তো আপনি চেনেন না। চিনলে বুঝতেন। কবে দেখা হবে বলুন তো!

তোমার সময় হলেই হবে।

মোটেই না মশাই। পরীক্ষার পর হয়তো গিয়ে শুনবো, আপনি কামস্কাটকা না হয় আজারবাইজান চলে গেছেন। যা গ্লোব-ট্রটার আপনি!

মোহিনীর কাছে খোঁজ নিয়ে এসো।

হঠাৎ কৃষ্ণজীবনের মনে হল, বাইরের ঘরের এক্সটেনশন লাইনটা কেউ ধরে আছে। শুনছে তাদের কথা। একটা তৃতীয় স্বাসের শব্দ আসছে টেলিফোনে।

সে অভিনয় জানে না। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উপায় তার নেই। কয়েক মাস আগে কর্ডলেস টেলিফোনটা সে এনে লাগিয়েছিল বাইরের ঘরে। খুব ভুল হয়েছিল বোধ হয়।

সে বলল, আজ ছাড়ছি অনু।

ওমা, এত তাড়া কিসের? এখনই তো কথা বলতে মজা, আর একটু জেগে থাকুন না প্লীজ! একটু আড্ডা মারি।

অসহায় কৃষ্ণজীবন বলে, কিন্তু, রাত জাগা কি তোমার পক্ষে ভাল?

আমার যে আপনার সঙ্গে অনেক কথা আছে।

কি কথা?

আচ্ছা, আপনারা নাকি আজ খুব ভালবাসার কথা বলেছেন?

ভালবাসার কথা? ওঃ হ্যাঁ। কিন্তু সেটা তো—

দাদা কিছুই বুঝতে পারেনি। খুব অ্যাজিটেটেড।

ওটা অন্য ধরনের ব্যাপার।

আমাকে একদিন ভালবাসার ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেবেন?

তৃতীয় পক্ষ শুনছে। শঙ্কিত কৃষ্ণজীবন বলে, ওঃ, ওটা কোনও ব্যাপার নয়। আসলে ওটা হল…

কৃষ্ণজীবন এত নার্ভাস হয়ে গেল যে, কথাই খুঁজে পেল না আর। অনু খুব হাসছিল।

ফোনটা তৃতীয় পক্ষ নামিয়ে রাখল। তারপর দরজায় আচমকা দেখা দিল রিয়া। চোখ জ্বলছে। মুখখানা টকটক করছে লাল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *