দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
শ্রীরামকৃষ্ণ — Sir Humphrey Davy ও অবতারবাদ
ঠাকুর মাস্টারের সহিত ডাক্তার সরকারের কথা কহিতেছেন। পূর্বদিনে ঠাকুরের সংবাদ লইয়া মাস্টার ডাক্তারের কাছে গিয়াছিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ — তোমার সঙ্গে কি কি কথা হল?
মাস্টার — ডাক্তারের ঘরে অনেক বই আছে। আমি একখানা বই সেখানে বসে বসে পড়ছিলাম। সেই সব পড়ে আবার ডাক্তারকে শোনাতে লাগলাম। Sir Humphrey Davy-l বই। তাতে অবতারের প্রয়োজন এ-কথা আছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ — বটে? তুমি কি কথা বলেছিলে?
মাস্টার — একটি কথা আছে, ঈশ্বরের বাণী মানুষের ভিতর দিয়ে না এলে মানুষ বুঝতে পারে না। (Divine Truth must be made human Truth to be appreciated by us)z তাই অবতারাদির প্রয়োজন।
শ্রীরামকৃষ্ণ — বাঃ, এ-সব তো বেশ কথা!
মাস্টার — সাহেব উপমা দিয়েছে, যেমন সূর্যের দিকে চাওয়া যায় না, কিন্তু সূর্যের আলো যেখানে পড়ে, (Reflected rays) সেদিকে চাওয়া যায়।
শ্রীরামকৃষ্ণ — বেশ কথা, আর কিছু আছে?
মাস্টার — আর এক যায়গায় ছিল, যথার্থ জ্ঞান হচ্ছে বিশ্বাস।
শ্রীরামকৃষ্ণ — এ তো খুব ভাল কথা। বিশ্বাস হল তো সবই হয়ে গেল।
মাস্টার — সাহেব আবার স্বপ্ন দেখেছিলেন রোমানদের দেবদেবী।
শ্রীরামকৃষ্ণ — এমন সব বই হয়েছে? তিনিই (ঈশ্বর) সেখানে কাজ করছেন। আর কিছু কথা হল?
[শ্রীরামকৃষ্ণ ও ‘জগতের উপকার’ বা কর্মযোগ ]
মাস্টার — ওরা বলে জগতের উপকার করব। তাই আমি আপনার কথা বললাম।
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — কি কথা?
মাস্টার — শম্ভু মল্লিকের কথা। সে আপনাকে বলেছিল, ‘আমার ইচ্ছা যে টাকা দিয়ে কতকগুলি হাসপাতল, ডিস্পেন্সারি, স্কুল, এইসব করে দিই; হলে অনেকের উপকার হবে।’ আপনি তাকে যা বলেছিলেন, তাই বললুম, ‘যদি ঈশ্বর সম্মুখে আসেন, তবে তুমি কি বলবে, আমাকে কতকগুলি হাসপাতাল, ডিস্পেনসারি, স্কুল করে দাও!’ আর-একটি কথা বললাম।
শ্রীরামকৃষ্ণ — হাঁ, থাক আলাদা আছে, যারা কর্ম করতে আসে। আর কি কথা?
মাস্টার — বললাম, কালীদর্শন যদি উদ্দেশ্য হয়, তবে রাস্তায় কেবল কাঙ্গালী বিদায় করলে কি হবে? বরং জো-সো করে একবার কালীদর্শন করে লও; — তারপর যত কাঙ্গালী বিদায় করতে ইচ্ছা হয় করো।
শ্রীরামকৃষ্ণ — আর কিছু কথা হল?
[ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্ত ও কামজয় ]
মাস্টার — আপনার কাছে যারা আসে তাদের অনেকে কামজয় করেছেন, এই কথা হল। ডাক্তার তখন বললে, ‘আমারও কামটাম উঠে গেছে, জানো?’ আমি বললাম, আপনি তো বড় লোক। আপনি যে কাম জয় করেছেন বলছেন তাতো আশ্চর্য নয়। ক্ষুদ্র প্রাণীদের পর্যন্ত তাঁর কাছে ইন্দ্রিয় জয় হচ্ছে, এই আশ্চর্য! তারপর আমি বললাম, আপনি যা গিরিশ ঘোষকে বলেছিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — কি বলেছিলাম?
মাস্টার — আপনি গিরিশ ঘোষকে বলেছিলেন, ‘ডাক্তার তোমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে নাই।’ সেই অবতারে কথা।
শ্রীরামকৃষ্ণ — তুমি অবতারের কথা তাকে (ডাক্তারকে) বলবে। অবতার — যিনি তারণ করেন। তা দশ অবতার আছে, চব্বিশ অবতার আছে আবার অসংখ্য অবতার আছে।
[মদ্যপান ক্রমে ক্রমে একেবারে ত্যাগ ]
মাস্টার — গিরিশ ঘোষের ভারী খবর নেয়। কেবল জিজ্ঞাসা করেন, গিরিশ ঘোষ কি সব মদ ছেড়েছে? তার উপর বড় চোখ।
শ্রীরামকৃষ্ণ — তুমি গিরিশ ঘোষকে ও-কথা বলেছিলে?
মাস্টার — আজ্ঞা হাঁ, বলেছিলাম। আর সব মদ ছাড়বার কথা।
শ্রীরামকৃষ্ণ — সে কি বললে?
মাস্টার — তিনি বললেন, তোমরা যে কালে বলছো সেকালে ঠাকুরের কথা বলে মানি — কিন্তু আর জোর করে কোনও কথা বলব না।
শ্রীরামকৃষ্ণ (আনন্দের সহিত) — কালীপদ বলেছে, সে একেবারে সব ছেড়েছে।