দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
শ্রীযুক্ত নন্দ বসুর বাটীতে শুভাগমন
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এইবার ছবি দেখিতে গাত্রোত্থান করিলেন। সঙ্গে মাস্টার ও আরও কয়েকজন ভক্ত, গৃহস্বামীর ভ্রাতা শ্রীযুক্ত পশুপতিও সঙ্গ সঙ্গে থাকিয়া ছবিগুলি দেখাইতেছেন।
ঠাকুর প্রথমেই চতুর্ভুজ বিষ্ণুমূর্তি দর্শন করিতেছেন। দেখিয়াই ভাবে বিভোর হইলেন। দাঁড়াইয়াছিলেন, বসিয়া পড়িলেন। কিয়ৎকাল ভাবে আবিষ্ট হইয়া রহিলেন।
হনুমানের মাথায় হাত দিয়া শ্রীরাম আশীর্বাদ করিতেছেন। হনুমানের দৃষ্টি শ্রীরামের পাদপদ্মে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ অনেকক্ষণ ধরিয়া এই ছবি দেখিতেছেন। ভাবে বলিতেছেন, “আহা! আহা!”
তৃতীয় ছবি বংশীবদন শ্রীকৃষ্ণ কদমতলায় দাঁড়াইয়া আছেন।
চতুর্থ — বামনাবতার। ছাতি মাতায় বলির যজ্ঞে যাইতেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ বলিতেছেন, “বামন!” এবং একদৃষ্টে দেখিতেছেন।
এইবার নৃসিংহমূর্তি দর্শন করিয়া ঠাকুর গোষ্ঠের ছবি দর্শন করিতেছেন। শ্রীকৃষ্ণ রাখালদের সহিত বৎসগণ চরাইতেছেন। শ্রীবৃন্দাবন ও যমুনাপুলিন!
মণি বলিয়া উঠিলেন — চমৎকার ছবি।
সপ্তম ছবি দেখিয়া ঠাকুর বলিতেছেন — “ধূমাবতী”; অষ্টম — ষোড়শী; নবম — ভুবনেশ্বরী; দশম — তারা; একাদশ — কালী। এই সকল মূর্তি দেখিয়া ঠাকুর বলিতেছেন — “এ-সব উগ্রমূর্তি! এ-সব মূর্তি বাড়িতে রাখতে নাই। এ-মূর্তি বাড়িতে রাখলে পূজা দিতে হয়। তবে আপনাদের অদৃষ্টের জোর আছে, আপনারা রেখেছেন।”
শ্রীশ্রীঅন্নপূর্ণা দর্শন করিয়া ঠাকুর ভাবে বলিতেছেন, “বা! বা!”
তারপরই রাই রাজা। নিকুঞ্জবনে সখীপরিবৃতা সিংহাসনে বসিয়া আছেন। শ্রীকৃষ্ণ কুঞ্জের দ্বারে কোটাল সাজিয়া বসিয়া আছেন। তারপর দোলের ছবি। ঠাকুর অনেকক্ষণ ধরিয়া এর পরের মূর্তি দেখিতেছেন। গ্লাসকেসের ভিতর বীণাপাণির মূর্তি; দেবী বীনাহস্তে মাতোয়ারা হইয়া রাগরাগিনী আলাপ করিতেছেন।
ছবি দেখা সমাপ্ত হইল। ঠাকুর আবার গৃহস্বামীর কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া গৃহস্বামীকে বলিতেছেন, “আজ খুব আনন্দ হল। বা! আপনি তো খুব হিন্দু! ইংরাজী ছবি না রেখে যে এই ছবি রেখেছেন — খুব আশ্চর্য!”
শ্রীযুক্ত নন্দ বসু বসিয়া আছেন। তিনি ঠাকুরকে আহ্বান করিয়া বলিতেছেন, “বসুন! দাঁড়িয়ে রইলেন কেন?”
শ্রীরামকৃষ্ণ (বসিয়া) — এ পটগুলো খুব বড় বড়। তুমি বেশ হিন্দু।
নন্দ বসু — ইংরাজী ছবিও আছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — সে-সব অমন নয়। ইংরাজীর দিকে তোমার তেমন নজর নাই।
ঘরের দেওয়ালের উপর শ্রীযুক্ত কেশব সেনের নববিধানের ছবি টাঙ্গানো ছিল। শ্রীযুক্ত সুরেশ মিত্র ওই ছবি করাইয়াছিলেন! তিনি ঠাকুরের একজন প্রিয় ভক্ত। ওই ছবিতে পরমহংসদেব কেশবকে দেখাইয়া দিতেছেন, ভিন্ন পথ দিয়া সব ধর্মাবলম্বীরা ঈশ্বরের দিকে যাইতেছেন। গন্তব্য স্থান এক, শুধু পথ আলাদা।
শ্রীরামকৃষ্ণ — ও যে সুরেন্দ্রের পট!
প্রসন্নের পিতা (সহাস্যে) — আপনিও ওর ভিতরে আছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — ওই একরকম, ওর ভিতর সবই আছে। — ইদানিং ভাব!
এই কথা বলিতে বলিতে হঠাৎ ঠাকুর ভাবে বিভোর হইতেছেন। ঠাকুর জগন্মাতার সঙ্গে কথা কহিতেছেন।
কিয়ৎক্ষণ পরে মাতালের ন্যায় বলিতেছেন, “আমি বেহুঁশ হই নাই।” বাড়ির দিকে দৃষ্টি করিয়া বলিতেছেন, “বড় বাড়ি! এতে কি আছে? ইট, কাঠ, মাটি!”
কিয়ৎক্ষণ পরে বলিতেছেন, “ঈশ্বরীয় মূর্তিসকল দেখে বড় আনন্দ হল।” আবার বলিতেছেন, “উগ্রমূর্তি, কালী, তারা (শব শিবা মধ্যে শ্মশানবাসিনী) রাখা ভাল নয়, রাখলে পূজা দিতে হয়।”
পশুপতি (সহাস্যে) — তা তিনি যতদিন চালাবেন, ততদিন চলবে।
শ্রীরামকৃষ্ণ — তা বটে, কিন্তু ঈশ্বরেতে মন রাখা ভাল; তাঁকে ভুলে থাকা ভাল নয়।
নন্দ বসু — তাঁতে মতি কই হয়?
শ্রীরামকৃষ্ণ — তাঁর কৃপা কই হয়? তাঁর কি কৃপা করবার শক্তি আছে?
[ঈশ্বর কর্তা — না কর্মই ঈশ্বর ]
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — বুঝেছি, তোমার পণ্ডিতের মত, ‘যে যেমন কর্ম করবে সেরূপ ফল পাবে’; ওগুলো ছেড়ে দাও! ঈশ্বরের শরণাগত হলে কর্ম ক্ষয় হয়। আমি মার কছে ফুল হাতে করে বলেছিলাম, ‘মা! এই লও তোমার পাপ, এই লও তোমার পুণ্য; আমি কিছুই চাই না, তুমি আমায় শুদ্ধাভক্তি দাও। এই লও তোমার ভাল, এই লও তোমার মন্দ; আমি ভালমন্দ কিছুই চাই না, আমায় শুদ্ধাভক্তি দাও। এই লও তোমার ধর্ম, এই লও তোমার অধর্ম; আমি ধর্মাধর্ম কিছুই চাই না, আমায় শুদ্ধাভক্তি দাও। এই লও তোমার জ্ঞান, এই লও তোমার অজ্ঞান; আমি জ্ঞান-অজ্ঞান কিছুই চাই না, আমায় শুদ্ধাভক্তি দাও। এই লও তোমার শুচি, এই লও তোমার অশুচি, আমায় শুদ্ধাভক্তি দাও।’
নন্দ বসু — আইন তিনি ছাড়াতে পারেন?
শ্রীরামকৃষ্ণ — সে কি! তিনি ঈশ্বর, তিনি সব পারেন; যিনি আইন করেছেন, তিনি আইন বদলাতে পারেন।
[চৈতন্যলাভ ভোগান্তে — না তাঁর কৃপায় ]
“তবে ওকথা বলতে পার তুমি। তোমার নাকি ভোগ করবার ইচ্ছা আছে, তাই তুমি অমন কথা বলছ। ও এক মত আছে বটে, ভোগ শান্তি না হলে চৈতন্য হয় না! তবে ভোগেই বা কি করবে? কামিনী-কাঞ্চনের সুখ — এই আছে, এই নাই, ক্ষণিক! কামিনী-কাঞ্চনের ভিতর আছে কি? আমড়া, আঁটি আর চামড়া; খেলে অমলশূল হয়। সন্দেশ, যাই গিলে ফেললে আর নাই!”
[ঈশ্বর কি পক্ষপাতী — অবিদ্যা কেন — তাঁর খুশি ]
নন্দ বসু একটু চুপ করিয়া আছেন, তারপর বলিতেছেন, — ও-সব তো বলে বটে! ঈশ্বর কি পক্ষপাতী? তাঁর কৃপাতে যদি হয়, তাহলে বলতে হবে ঈশ্বর পক্ষপাতী?
শ্রীরামকৃষ্ণ — তিনি নিজেই সব, ঈশ্বর নিজেই জীব, জগৎ সব হয়েছেন। যখন পূর্ণ জ্ঞান হবে, তখন ওই বোধ। তিনি মন, দেহ বুদ্ধি, দেহ — চতুর্বিংশতি তত্ত্ব সব হয়েছেন। তিনি আর পক্ষপাত কার উপর করবেন?
নন্দ বসু — তিনি নানারূপ কেন হয়েছেন? কোনখানে জ্ঞান, কোনখানে অজ্ঞান?
শ্রীরামকৃষ্ণ — তাঁর খুশি।
অতুল — কেদারবাবু (চাটুজ্যে) বেশ বলেছেন। একজন জিজ্ঞাসা করেছিল, ঈশ্বর সৃষ্টি কেন করলেন, তাতে বলেছিলেন যে, যে মিটিং-এ তিনি সৃষ্টির মতলব করেছিলেন, সে মিটিং-এ আমি ছিলাম না। (সকলের হাস্য)
শ্রীরামকৃষ্ণ — তাঁর খুশি।
এই বলিয়া ঠাকুর গান গাইতেছেন:
সকলি তোমার ইচ্ছা, ইচ্ছাময়ী তারা তুমি।
তোমার কর্ম তুমি কর মা, লোকে বলে করি আমি।
পঙ্কে বদ্ধ কর করী, পঙ্গুরে লঙ্ঘাও গিরি,
কারে দাও মা! ব্রহ্মপদ, কারে কর অধোগামী।।
আমি যন্ত্র তুমি যন্ত্রী, আমি ঘর তুমি ঘরণী।
আমি রথ তুমি রথী, যেমন চালাও তেমনি চলি।।
“তিনি আনন্দময়ী! এই সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের লীলা করছেন। অসংখ্য জীব, তার মধ্যে দু-একটি মুক্ত হয়ে যাচ্ছে, — তাতেও আনন্দ। ‘ঘুড়ির লক্ষের দুটো-একটা কাটে, হেসে দাও মা হাত চাপড়ি’। কেউ সংসারে বদ্ধ হচ্ছে, কেউ মুক্ত হচ্ছে।
“ভবসিন্ধু মাঝে মন উঠছে ডুবছে কত তরী!”
নন্দ বসু — তাঁর খুশি! আমরা যে মরি!
শ্রীরামকৃষ্ণ — তোমরা কোথায়? তিনিই সব হয়েছেন। যতক্ষণ না তাঁকে জানতে পাচ্ছ, ততক্ষণ ‘আমি’ ‘আমি’ করছ!
“সকলে তাঁকে জানতে পারবে — সকলেই উদ্ধার হবে, তবে কেহ সকাল সকাল খেতে পায়, কেহ দুপুর বেলা কেউ বা সন্ধ্যার সময়; কিন্তু কেহ অভুক্ত থাকবে না! সকলেই আপনার স্বরূপকে জানতে পারবে।”
পশুপতি — আজ্ঞা হাঁ, তিনিই সব হয়েছেন বোধ হয়।
শ্রীরামকৃষ্ণ — আমি কি, এটা খোঁজো দেখি। আমি কি হাড়, না মাংস, না রক্ত, না নাড়ীভুঁড়ি? আমি খুঁজতে খুঁজতে ‘তুমি’ এসে পড়ে, অর্থাৎ অন্তরে সেই ঈশ্বরের শক্তি বই আর কিছুই নাই। ‘আমি’ নাই! — তিনি। তোমার অভিমান নাই! এত ঐশ্বর্য। ‘আমি’ একেবারে ত্যাগ হয় না; তাই যদি যাবে না তবে থাক শ্যালা ঈশ্বরের দাস হয়ে। (সকলের হাস্য) ঈশ্বরের ভক্ত, ঈশ্বরের ছেলে, ঈশ্বরের দাস, এ-অভিমান ভাল। যে ‘আমি’ কামিনী-কাঞ্চনে আসক্ত হয়, সেই ‘আমি’ কাঁচা আমি, সে ‘আমি’ ত্যাগ করতে হয়।
অহংকারের এইরূপ ব্যাখ্যা শুনিয়া গৃহস্বামী ও অন্যান্য সকলে সাতিশয় প্রীতিলাভ করিলেন।
[ঐশ্বর্যের অহংকার ও মত্ততা ]
শ্রীরামকৃষ্ণ — জ্ঞানের দুটি লক্ষণ, প্রথম অভিমান থাকবে না; দ্বিতীয় শান্ত স্বভাব। তোমার দুই লক্ষণই আছে। অতএব তোমার উপর ঈশ্বরের অনুগ্রহ আছে।
“বেশি ঐশ্বর্য হলে, ঈশ্বরকে ভুল হয়ে যায়; ঐশ্বর্যের স্বভাবই ওই। যদু মল্লিকের বেশি ঐশ্বর্য হয়েছে, সে আজকাল ঈশ্বরীয় কথা কয় না। আগে আগে বেশ ঈশ্বরের কথা কইত।
“কামিনী-কাঞ্চন একপ্রকার মদ। অনেক মদ খেলে খুড়া-জ্যাঠা বোধ থাকে না, তাদেরই বলে ফেলে, তোর গুষ্টির; মাতালের গুরু-লঘু বোধ থাকে না।”
নন্দ বসু — তা বটে।
[Theosophy — ক্ষণকাল যোগে মুক্তি — শুদ্ধাভক্তিসাধন]
পশুপতি — মহাশয়! এগুলো কি সত্য — Spiritualism, Theosophy? সূর্যলোক, চন্দ্রলোক? নক্ষত্রলোক?
শ্রীরামকৃষ্ণ — জানি না বাপু! অত হিসাব কেন? আম খাও; কত আমগাছ, কত লক্ষ ডাল, কত কোটি পাতা, এ হিসাব করা আমার দরকার কি? আমি বাগানে আম খেতে এসেছি, খেয়ে যাই।
“চৈতন্য যদি একবার হয়, যদি একবার ঈশ্বরকে কেউ জানতে পারে তাহলে ও-সব হাবজা-গোবজা বিষয় জানতে ইচ্ছাও হয় না। বিকার থাকলে কত কি বলে, — ‘আমি পাঁচ সের চালের ভাত খাবো রে’ — ‘আমি একজালা জল খাবো রে।’ — বৈদ্য বলে, ‘খাবি? আচ্ছা খাবি!’ — এই বলে বৈদ্য তামাক খায়। বিকার সেরে, যা বলবে তাই শুনতে হয়।”
পশুপতি — আমাদের বিকার চিরকাল বুঝি থাকবে?
শ্রীরামকৃষ্ণ — কেন ঈশ্বরেতে মন রাখো, চৈতন্য হবে।
পশুপতি (সহাস্যে) — আমাদের ঈশ্বরে যোগ ক্ষণিক। তামাক খেতে যতক্ষণ লাগে। (সকলের হাস্য)
শ্রীরামকৃষ্ণ — তা হোক; ক্ষণকাল তাঁর সঙ্গে যোগ হলেই মুক্তি।
“অহল্যা বললে, রাম! শূকরযোনিতেই জন্ম হউক আর যেখানেই হউক যেন তোমার পাদপদ্মে মন থাকে, যেন শুদ্ধাভক্তি হয়।
“নারদ বললে, রাম! তোমার কাছে আর কোনও বর চাই না, আমাকে শুদ্ধাভক্তি দাও, আর যেন তোমার ভুবনমোহিনী মায়ায় মুগ্ধ না হই, এই আশীর্বাদ করো। আন্তরিক তাঁর কাছে প্রার্থনা করলে, তাঁতে মন হয়, — ঈশ্বরের পাদপদ্মে শুদ্ধাভক্তি হয়।”
[পাপ ও পরলোক — মৃত্যুকালে ঈশ্বরচিন্তা — ভরত রাজা ]
“আমাদের কি বিকার যাবে!’ — ‘আমাদের আর কি হবে’ – ‘আমরা পাপী’ — এ-সব বুদ্ধি ত্যাগ করো। (নন্দ বসুর প্রতি) আর এই চাই — একবার রাম বলেছি, আমার আবার পাপ!”
নন্দ বসু — পরলোকে কি আছে? পাপের শাস্তি?
শ্রীরামকৃষ্ণ — তুমি আম খাও না! তোমার ও-সব হিসাবে দরকার কি? পরলোক আছে কি না — তাতে কি হয় — এ-সব খবর!
“আম খাও। ‘আম’ প্রয়োজন, — তাঁতে ভক্তি –”
নন্দ বসু — আমগাছ কোথা? আম পাই কোথা?
শ্রীরামকৃষ্ণ — গাছ? তিনি অনাদি অনন্ত ব্রহ্ম! তিনি আছেনই, তিনি নিত্য! তবে একটি কথা আছে — তিনি ‘কল্পতরু –’
“কালী কল্পতরু মূলে রে মন, চারি ফল কুড়ায়ে পাবি!
“কল্পতরুর কাছে গিয়ে প্রার্থনা করতে হয়, তবে ফল পাওয়া যায়, — তবে ফল তরুর মূলে পড়ে, — তখন কুড়িয়ে লওয়া যায়। চারি ফল, — ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ।
“জ্ঞানীরা মুক্তি (মোক্ষফল) চায়, ভক্তেরা ভক্তি চায়, — অহেতুকী ভক্তি। তারা ধর্ম, অর্থ, কাম চায় না।
“পরলোকের কথা বলছ? গীতার মত, — মৃত্যুকালে যা ভাববে তাই হবে। ভরত রাজা ‘হরিণ’ ‘হরিণ’ করে শোকে প্রাণত্যাগ করেছিল। তাই তার হরিণ হয়ে জন্মাতে হল। তাই জপ, ধ্যান, পূজা এ-সব রাতদিন অভ্যাস করতে হয়, তাহলে মৃত্যুকালে ঈশ্বরচিন্তা আসে — অভ্যাসের গুণে। এরূপে মৃত্যু হলে ঈশ্বরের স্বরূপ পায়।
“কেশব সেনও পরলোকের কথা জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি কেশবকেও বললুম, ‘এ-সব হিসাবে তোমার কি দরকার?’ তারপর আবার বললুম, যতক্ষণ না ঈশ্বরলাভ হয়, ততক্ষণ পুনঃ পুনঃ সংসারে যাতায়াত করতে হবে। কুমোরেরা হাঁড়ি-সরা রৌদ্র শুকুতে দেয়; ছাগল-গরুতে মাড়িয়ে যদি ভেঙে দেয় তাহলে তৈরি লাল হাঁড়িগুলো ফেলে দেয়। কাঁচাগুলো কিন্তু আবার নিয়ে কাদামাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে ও আবার চাকে দেয়!”