খবরটা কে কাকে বলেছিল ঈশ্বর জানেন, কিন্তু স্কটিশ চার্চ কলেজে জানাজানি হয়ে গেল বিখ্যাত চিত্রপরিচালক সুবিনয় সেন দীপাবলী ব্যানার্জিকে নায়িকা করতে চেয়েছিলেন তাঁর পরের ছবিতে কিন্তু সে রাজি হয়নি। ছেলেমেয়েদের কাছে এক লহমায় যেন সে নায়িকা হয়ে গেল। কালচারাল সেক্রেটারি এসে ক্লাসের বাইরে তাকে একদিন বলল, আপনি নিশ্চয়ই জানেন সামনের শনিবার মহাজাতিসদনে কলেজ সোস্যাল। সবাই চাইছে আপনি এই অনুষ্ঠানটা কনডাক্ট করুন। মানে, যেসব শিল্পী গান গাইবেন তাঁদের নাম ঘোষণা করবেন।
সেকি! আমি তো এমন কাজ কখনও করিনি। তাহলে আমাকে বলছেন কেন?
কাউকে তো করতে হবে। আর এই মুহূর্তে আপনি খুব উপযুক্ত।
কেন?
সুবিনয় সেনের ব্যাপারটার জন্যে।
এসব কথায় আপনি কেন কান দেন! আমাকে মাপ করবেন।
মুখে যাই বলুক সহপাঠিনীরা যে তাকে ঈর্ষা করছে বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না। নিজের ভাগ্য ক্রমশ নিজের কাছেই বিস্ময়ের বস্তু হয়ে উঠছে। যে কোন সাধারণ অসাধারণ মেয়ের চেয়ে ঈশ্বর তাকে অনেক বেশী শান্তি দিয়েছেন। কষ্ট কি জিনিস তার মত আর কটি মেয়ে বুঝতে পেরেছে কে জানে। অন্তত এই বয়সে। কলেজে এমন কোন মেয়ে পাওয়া যাবে না যে পৃথিবীতে তার মত একা। অথচ মাঝে মাঝে তাকে নিয়ে এমন এক একটা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যে সে সবার আলোচনার অথবা ঈর্ষার বস্তু হচ্ছে।
হোস্টেলে ফিরতেই সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে দেখা। এত ঝড় জল বয়ে গেল তবু কখনও সুভাষচন্দ্র বা তার জন্মদাতার কথা মনে আসেনি। সুভাষচন্দ্ৰ আজ অন্যরকম। বেশ হাসি-খুশী। বললেন, তোর মামীম প্রায়ই বলেন মেয়েটা কেন আসে না, এত কাছে থাকে। তুই তো মাঝে মাঝে যেতে পারিস।
আমাকে আপনি এর আগে কখনও বলেননি। দীপা হাসল।
যাক গে! শোন, তোর পাওয়ার অফ অ্যাটনি নিয়ে প্রতুল বাঁড়িয্যের সম্পত্তি উদ্ধাব করতে অনেকটা এগিয়েছি, বুঝলি? লাখ লাখ টাকার ব্যাপার। স্বনামে যা রেখেছিল তাই এই, বেনামে যা ছিল তা আর উদ্ধার করা যাবে না। এখন তুই মন খুলে বল তো, তোর কি ইচ্ছা??
আপনি একটু পরিষ্কার করে বলুন, আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
ব্যাপার হল, তুমি প্রতুল বাঁড়িয্যের উত্তরাধিকারিণী। সব সম্পত্তি তোমার। কিন্তু তুমি বলেছি ওসব নেবার ইচ্ছে নেই। তাহলে কে নেবে? এই কিছুদিন আগে যখন জলপাইগুড়িতে গিয়েছিলাম তখন ভাবলাম চা-বাগানে গিয়ে ওদের দেখে আসি। তোমার মা ঠাকুমা যে কষ্টে আছে তা চোখে দেখা যায় না। মনে হল তোমার আপত্তি না থাকলে ওদের কিছু দেওয়া উচিত। আমারও বয়স বেড়েছে। কিছুই জমাতে পারিনি এ পর্যন্ত। অথচ দায়দায়িত্বও কম নয়। কি করে সেসব মাথা থেকে নামাবো বুঝতে পারছি না। তাছাড়া এসব কাজে যাওয়া আসা কোর্ট কাছারিতে কম খরচ হচ্ছে না।
আমি কিন্তু আপনাকে বলিনি খরচ করতে।
আহা! তুমি বলবে কেন? আমি আমার গরজেই করেছি। বলছিলাম কি, তরী প্ৰায় কুলে এনে ফেলেছি। এখন তোমার কি ইচ্ছে আছে ওদের কিছু দেওয়ার?
কাদের কথা বলছেন?
তোমার জন্মদাতা বাবা আর সৎমায়ের কথা বলছি।
আপনিই ওঁদের নিয়ে এসেছিলেন আমার কাছে।
হুঁ। পরে ভেবে দেখলাম ঠিক হয়নি। তোমার মা মারা যাওয়ার পরই তো আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল সে। আবার বিয়ে করে সে নিজেই সব সম্পর্ক অস্বীকার করেছে। আমার নিজের বোন যখন নেই। আর তার স্মৃতি যখন মানুষটা নষ্ট করেছে তখন তাকে কেন তুমি আর এখন অনুগ্রহ করবে?
কি ব্যাপার বলুন তো?
মানে?
আপনার সঙ্গে কি ওদের ঝগড়া হয়েছে।
না না, ঝগড়া-ঝাঁটি নয়। আমার বুঝতে একটু সময় লাগল।
আপনার এই মত ওঁরা জানেন?
না, আমার জিনিস নয়, আমি কেন বলব? বলবে তুমি!
ওঁরা যদি বলেন। আপনাকে কিছু না দিতে। ভাগ্নীর সম্পত্তিতে মামার কোন অধিকার নেই। একথা তো আইনও বলবে।
বলতে আরম্ভ করেছে। তোমার বাবা যাকে বিয়ে করেছেন, মানে যাকে নিয়ে আমি এখানে এসেছিলাম তার কথাবার্তায় আমি ভুলে গিয়েছিলাম সব। কিন্তু তোমার সম্মতি পাওয়ার পর তার ব্যবহার পাল্টে গিয়েছে। আমাকে তো বলেই দিল বাবার চেয়ে মামা বড় হতে পারে না।
তাই বলুন। আপনারা এখন আর এক দলে নেই। ঠিক আছে, আপনি যা করছেন করুন। এ ব্যাপারে যত খরচ হচ্ছে লিখে রাখবেন। যখন আমাকে প্রয়োজন হবে খবর দেবেন। ঠাকুমা এখন কেমন আছেন?
ওই আর কি।
আপনি বললেন চা-বাগানের বাড়িতে গিয়েছিলেন?
হ্যাঁ। তোমার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। এসব ব্যাপার নিয়ে।
ঠাকুমাকে দ্যাখেননি?
শুনলাম ওঁর শরীর খারাপ। বৃদ্ধ মানুষ। নিজের ঘরে ছিলেন। তাই আর বিরক্ত করিনি। কেন, কি হয়েছে বলতো?
দীপা জবাব দেবার প্রয়োজন বোধ করল না। ঠাকুমার পা ভাঙার খবরটা নিয়ে সে আর কিছু ভাবতে চাইল না। সুভাষচন্দ্র সেটা ধরতে পারলেন না। দীপা বলল, আপনি ওখানে গিয়ে ঠিক কি কি কাজ করেছেন বলুন তো?
সুভাষচন্দ্ৰ যেন এবার বলার মত বিষয় খুঁজে পেলেন। সোৎসাহে বলতে লাগলেন, প্ৰথমে পাড়ায় গিয়ে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম। ঠিকঠাক সম্পত্তির পরিমাণ কেউ বলতে পারল না। প্রতুল বাঁড়ুয্যের বাড়ির তো অবশিষ্ট কিছু নেই। বন্যায় পলি পড়ে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পাড়ার লোকে জানলা দরজাও খুলে নিয়ে গিয়েছে। গাছগাছালিরও খারাপ অবস্থা। প্রতুল বাঁড়িয্যের ভাইপোর সঙ্গে দেখা করলাম। সে তো প্ৰথমে আমায় সাফ কথা বলতেই চায় না। তোমার সই করা কাগজ দেখাতে বলল তার কোন ইন্টারেস্ট নেই, সে জানেও না কি কি সম্পত্তি আছে। উঃ, সে যে কি হ্যাপা তা তোমাকে কি বলব। মাথা নাড়লেন সুভাষচন্দ্ৰ। দীপা কথা বলল না। কিন্তু লক্ষ করল হঠাৎ হঠাৎই সুভাষচন্দ্ৰ তুই থেকে তুমিতে উঠে যাচ্ছেন।
সুভাষচন্দ্ৰ আবার শুরু করলেন, আমি তো ছাড়ার পাত্র নই। গেলাম জলপাইগুড়ির কোর্টে। জমিজমার রেকর্ড দেখতে চাইলাম। সে তো হিমালয়ে একটা লতা খোঁজার মত ব্যাপার। কিন্তু খুঁজতে জানলে কি না হয়। যে ভদ্রলোক প্রতুলবাবুর বিষয় সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন, মানে ওঁর উকিলবাবু, তিনি তো সব মেরে দেবার তালে ছিলেন। আমায় দেখে মোটেই খুশী হলেন না। কিন্তু তাঁর মুহুরিকে টাকা পয়সা দিয়ে ম্যানেজ করে সব বের করলাম রেকর্ড থেকে। বুঝতেই পারিছ যা ছিল ওটা তার আর্ধেকও না। ওঁর সম্পত্তির বেশীর ভাগই তো বেনামে। কোর্টে তার রেকর্ড থাকবে কেন? যা পেয়েছি। সব লিখে নিলাম। এরপর গেলাম ব্যাঙ্কে। অ্যাকাউন্ট নাম্বার জানি না, কোন ব্যাঙ্কে টাকা রাখতেন তাও না। যে কটা ব্যাঙ্ক জলপাইগুড়িতে আছে সব চরতে লাগলাম। সেখান থেকে তিনটে অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেলাম। তার ব্যালান্স অ্যামাউন্ট, অ্যাকাউন্ট নম্বর লিখে এনেছি। তুমি চাও তো তার কপি দিতে পারি তোমাকে।
দেবেন তো।
ও, আচ্ছা, দেব। একটু হকচকিয়ে গেলেন সুভাষচন্দ্ৰ, এখন কোর্ট থেকে অর্ডার বের করতে হবে যে তুমিই তাঁর উত্তরাধিকারিণী। অর্ডার পেলে ওগুলো তোমার নামে ট্রান্সফার করা যাবে। মুশকিল হল, এসব সময়সাপেক্ষ ব্যাপার আর তা করতে আমাকে জলপাইগুড়িতে গিয়ে কিছুদিন থাকতে হবে। সুভাষচন্দ্ৰ মুখ বিমর্ষ করলেন।
ও, আচ্ছা। মাথা নাড়ল দীপা।
ইয়ে, তোমার জন্মদাতা তো কোনকালে দায়িত্ব নেননি। এতে যে পয়সাকড়ি খরচ হচ্ছে তা যাচ্ছে আমার পকেট থেকেই। অথচ পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা নিতে তার জিভা লকলক করছে। এসব আমার সহ্য হয় না। আর তাঁর স্ত্রীর কথাবার্তা শুনলে মনে হয় তিনি যেন কুইন ভিক্টোরিয়া। সুভাষচন্দ্ৰ আক্রোশ বোঝালেন, কিন্তু মুশকিল হল আমার তো অবস্থা ভাল নয়। কলকাতায় সংসার রেখে জলপাইগুড়িতে যাওয়া মানে একই সঙ্গে দুজায়গায় খরচ চালানো। এ আমি পারব কি করে? তাছাড়া কোর্ট কাছারির খরচাও আছে। তাই আমি বলছিলাম। যদি তুমি এখন হাজার টাকা আমাকে দাও, মানে তাতেই সব হয়ে যাবে, তাহলে প্রতুল বাঁড়িয্যের টাকা পাওয়ামাত্ৰই তোমাকে শোধ করে দেব।
এরকম প্রস্তাব যে সুভাষচন্দ্র করতে পারেন চিন্তাও করেনি দীপা। মামার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সে বলল, আমি কি করে দেব?
আমি সব জানি। অজলি বলেছে আমাকে। অমরনাথ যাওয়ার আগে প্রতুল বাঁড়িয্যের টাকা থেকে তোমার ভবিষ্যতের ব্যবস্থা করে গিয়েছে। বিচক্ষণ মানুষ ছিল তো! তা বেশী দিন তো নয়, কয়েক মাসের মধ্যেই টাকাটা ফেরত পাচ্ছ মা!
দীপা মাথা নাড়ল, আপনি ভুল শুনেছেন। তাছাড়া যে সামান্য টাকা আমাকে দেওয়া হয়েছিল তা থেকেও আমি চা-বাগানে সাহায্য করেছি। এখন আমাকে টিউশনি করতে হয় নিজের খরচ চালানোর জন্যে। আপনার যদি খুব অসুবিধে হয় তাহলে এসব করার দরকার নেই। আপনারা নিজেরাই এমন প্ৰস্তাব নিয়ে এসেছিলেন, আমার এতে কোন আগ্রহ ছিল নাম এখনও নেই।
সুভাষচন্দ্র যখন দেখলেন দীপা নরম হবার পাত্রী নয়। তখন দেখি কি করা যায় গোছের কথা বলে বিদায় নিয়েছিলেন। হোস্টেলে নিজের খাটে শুয়ে দীপা নিঃসাড়ে হাসল। যতই সে ভাবুক অতীত ভুলে গেছে, তার বিবাহিত দুদিনের স্মৃতি কি তাকে চিরকাল এভাবে বিব্রত করে যাবে? তার মনে হল সম্পত্তির বিলিব্যবস্থা হয়ে গেলে সে রক্ষা পেতে পারে। সুভাষচন্দ্রের মুখের ওপর কিছু বলতে পারেনি সে। চারপাশের আত্মীয়স্বজনের অর্থনৈতিক অবস্থা এত খারাপ যে তাঁরা কিছু চাইলে সরাসরি না বলা মুশকিল হয়ে ওঠে। ওই সম্পত্তিটাকে ওঁরা পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা বলে মনে করছেন। যদি সম্পত্তি না থাকত, যদি দীপা নিজের পরিশ্রম এবং বুদ্ধিতে খুব বিত্তশালী হয়ে উঠত তাহলেও ওঁরা একইভাবে সাহায্যের জন্যে আসতেন। মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের কোনকালেই বিনাশ্রমে পাওয়ার লোভ দূর হবে না। হঠাৎ ভাবনাটা মাথায় এল। প্রতুল বাঁড়িয্যের ভাই-এর ছেলে সুভাষচন্দ্ৰকে বলেছেন ওইসব সম্পত্তিতে তাঁর আগ্রহ নেই। বংশের সূত্র ধরলে তিনিই প্রকৃত উত্তরাধিকারী। দীপা দু-রাতের বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে সেই উত্তরাধিকার অর্জন করতে বাধ্য হয়েছে। সে যদি ভদ্রলোককে সমস্ত দাবি লিখিতভাবে প্ৰত্যাহার করে অনুরোধ জানায় তিনি তাঁর ইচ্ছেমতন বিলিব্যবস্থা করুন তাহলে আর এইসব অনুরোধ-উপরোধের মুখোমুখি হতে হবে না। দীপাকে। কিন্তু ভদ্রলোকের নাম ঠিকানা সে জানে না। শুধু রায়কত পাড়ার কথা মনে আছে। দীপার মনে পড়ল রায়কত পাড়ায় তার এক সহপাঠিনী থাকত। প্রতুলবাবুর দাদা তো জেলার নামকরা কংগ্রেস নেতা। তাই সেই সহপাঠিনীকে লিখলে নাম ঠিকানা পেতে অসুবিধে হবে না। যেন মাথার ওপর থেকে একটা বিরাট বোঝা নেমে গোল এমন একটা অনুভূতি হচ্ছিল দীপার।
দুদিন বাদে বিকেলে, হোস্টেলে বসে বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছিল দীপা এমন সময় খবর এল তার ভিজিটার এসেছে। নিচে নেমে দেখল শমিত আর একজন ভদ্রলোক।
শমিত ওকে দেখেই বলল, কি ব্যাপার, একদম ড়ুমুরের ফুল, মায়ার কাছেও খবর পাচ্ছি না। আমাদের একদম ত্যাগ করলে?
শমিতকে দেখামাত্র কেমন একটা বিমঝিমে ভাব চলে এল শরীর এবং মনে। যেন একটা ভারি কিছু হঠাৎই ঝুলে পড়ল সেখানে। সে হাসার চেষ্টা করল, তা কেন? অসুখের জন্যে অনেক পিছিয়ে পড়েছিলাম, তাই—।
শমিত বলল, আগে এই ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা শেষ করো। ইনি আমাকে খুঁজে বের করেছেন তোমার সঙ্গে কথা বলার জন্যে।
দীপা ভদ্রলোকের দিকে তাকাল। শমিত যখন নিয়ে এসেছে তখন নিশ্চয়ই আনার পেছনে যুক্তি আছে। সে বলল, বলুন।
ভদ্রলোক দুহাত জড়ো করে নমস্কার করলেন, আমাকে সুবিনয় সেন পাঠিয়েছেন। উনি চেষ্টা করেও অনেকদিন যোগাযোগ করতে পারেননি। উনি আপনার সিদ্ধান্তের জন্যে এখনও অপেক্ষা করছেন।
দীপা মাথা নাড়ল, না। সিনেমায় অভিনয় করার কোন বাসনা আমার নেই।
ঠোঁট কামড়ালেন ভদ্রলোক, তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, কারণটা জানতে পারি?
এটা আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
ভদ্রলোক যেন স্বস্তি পেলেন। তিনি বারংবার দীপার মুখ শরীর দেখছিলেন। এবার ঘরে দাঁড়িয়ে তিনি শমিতকে বললেন, অনেক ধন্যবাদ। আপনাকে। আসলে সুবিনয়বাবু এত ব্যস্ত হয়েছিলেন যে আমাকেই আসতে হল। আসলে উনি বোঝেন না ভদ্রঘরের সব মেয়েই যে ফিল্মে অ্যাক্টিং করার সুযোগ পেলেই চলে আসবে তা নয়। আপনাকে বিরক্ত করলাম বলে দুঃখিত। চলি।
ভদ্রলোক চলে গেলে শমিত হাসল, ব্যাপারটা লক্ষ করলে?
কি ব্যাপার? দীপা এত সহজে নিকৃতি পয়ে খুশী হয়েছিল।
সুবিনয়বাবুর আগামী ছবির প্রয়োজক যেন তোমার না শুনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। একটু আগে আমার সঙ্গে কথা বলার সময় উনি বলেছিলেন এত টাকা খরচ করে ছবি তৈরী হবে, নতুন নায়ক নায়িকা নিলে বেশ ঝুঁকি হয়ে যায়। নেহাত সুবিনয়বাবু খুব নামজাদা পরিচালক তাই তিনি কিছু বলতে পারছেন না। নইলে সুচিত্রা সেনকে নেওয়া পাকা হয়ে গিয়েছিল।
দীপার মুখে রক্ত জমল, যাঃ। যে চরিত্রে আমায় ভেবেছে সেই চরিত্রে উনি করবেন কি করে? মানাবেই না। উনি আমার থেকে কত বড়।
শমিত মাথা নাড়ল, ওটা ফিল্ম লাইন। চল্লিশ বছরেও নায়ক নায়িকা কলেজের ফার্স্টইয়ারের ছাত্রছাত্রী হয়। নাটকে তো আকছার। সেদিন কম্বাইন শো বিষবৃক্ষের বিজ্ঞাপন দেখলাম। কুন্দনন্দিনীর চরিত্রে পঞ্চান্ন বছরের এক বৃদ্ধ নায়িকা নামছেন। অতএর সব হয়। কিন্তু তুমি করছ না বলে প্রয়োজক যেন বেঁচে গেলেন।
বেঁচে গেলেন?
হুঁ। তাঁর আর কোন ঝুঁকি রইল না।
আমি করলে ঝুঁকি হতো?
হতো না। তোমাকে কে চেনে? এক পয়সাও টিকিট বিক্রী হতো না তোমার নামে। লোকে অন্য কারণে হলে এসে তোমার অভিনয় দেখে ভাল লাগলে তোমাকে নিয়ে কথাবার্তা বলতো। না লাগলে তোমার কপাল পুড়লো। সবাই বলত তোমার জন্যেই ছবি ফ্লপ করেছে। যাক, ছেড়ে দাও এসব কথা।
না, দাঁড়ান। আপনার মনে হয়েছে লোকটি আমায় অবহেলা করল?
অবহেলা করেছে কিনা জানি না। তবে বেঁচে গিয়েছে। ভাবখানা দেখে তাই তো মনে হল। শমিত হাসল।
দীপা আচমকা গম্ভীর হয়ে গেল। শমিত জিজ্ঞাসা করল, এখন তোমার শরীর কেমন আছে? বেশ রোগা হয়ে গিয়েছ।
ভালই তো আছি। আচ্ছা, সেই ওয়ার্কিং গার্লস হোস্টেলের কোন খবর পাওয়া গেল? আমি মানিকতলায় একটা হোস্টেলের খবর পেয়েছি। কিন্তু ওখানে কোন সিট খালি নেই।
তুমি করে থেকে যেতে চাও?
এমন করে বলছেন যে এখনই যেতে পারি?
আমি বলে রেখেছি। মাস তিনেক বাদে একটা সিটি খালি হবে বাগবাজারের একটা হোস্টেলে। ওখানকার ব্যবস্থা খুব ভাল।
আমি কিন্তু চাকরি করি না।
চাকরির সংজ্ঞা কি? তুমি তো টিউশনি করেও রোজগার কর। আর এ নিয়ে ওরা কোন কড়াকড়ি করবে না। হোস্টেলের কিছু স্বাভাবিক নিয়ম আছে। এক মাস ওরা দেখবে তুমি সেই নিয়ম মেনে চলাছ কিনা। তারপর বোর্ডার হিসেরে পার্মানেন্ট করে নেবে। শমিত বলল।
আপনি আমার একটা বড় উপহার করলেন।
তুমি আমাকে না বললে করতাম না।
ঠিক হল না। ওয়ার্কিং গার্লস হোস্টেলের প্রস্তাব। আপনিই দিয়েছিলেন।
ও, হ্যাঁ, তাই তো বলেই হাসতে শুরু করল শমিত। দীপাও সেই হাসিতে যোগ দিল এটা এল খুব স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই। হাসি থামলে দীপা বলল, আপনাকে আর একটা উপকার করতে হবে। আমার।
শোনা যাক।
আজ কি রিহার্সাল আছে আপনার?
কেন বলতো?
জিজ্ঞাসা করছি।
রিহার্সাল নেই। তবে গ্রুপে যাব। সাতটা নাগাদ যাওয়ার কথা।
তাহলে এখনও অনেক সময় আছে। আপনি আমার সঙ্গে যাবেন?
কোথায়?
সুবিনয় সেনের বাড়িতে।
সে কি? সেখানে যাবে কেন?
ভদ্রলোকের সঙ্গে কিছু কথা আছে আমায়।
আশ্চর্য। সেটা ওই ভদ্রলোককে বলে দিতে পারতে।
ওঁকে তো বলার নয় কথাগুলো।
দ্যাথো দীপা, আমি সুবিনয় সেনের বাড়ি চিনি না। খোঁজ করে বের করতে হবে। আজ না গিয়ে কাল যদি যাও তাহলে ভাল হয়।
না, আজই। কাল গেলে ব্যাপারটার গুরুত্ব থাকবে না।
বেশ চল। স্টুডিও পাড়ায় গিয়ে খোঁজ করতে হবে।
আমি আপনার বেশ অসুবিধে করলাম—।
দীপা, দূরত্ব নিয়ে কথা বললে আমাকে অনুরোধ করো না।
সুবিনয় সেনের বাড়িতে যেতে হল না। নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওতে ঢুকে শমিত এবং দীপা এক বাঁক দ্বিতীয় শ্রেণীর শিল্পীদের দেখতে পেল। সবাই এমন ভাবভঙ্গী করছেন যেন সরে মর্তে পা দিয়েছেন। গেটে দারোয়ানকে সুবিনয় সেনের কথা জিজ্ঞাসা করেছিল শমিত। জেনেছিল তিনি এই স্টুডিওতে একটা অফিস ঘর ভাড়া নিয়ে রোজ সন্ধে ছটা অবধি কাজ করেন।
দোতলা বাড়ির একতলায় সুবিনয় সেনের অফিস। বাইরে নেমপ্লেট এবং পিওন আছে। দেখা করতে চায় জেনে সে জেরা করতে লাগল। ফিল্মে নামতে চাইলে সেনসাহেব দেখা করবেন না। এইসময় একটি লোক দীপাকে দেখে এগিয়ে এল, আরে আপনি। আসুন আসুন, দাদার সঙ্গে দেখা করতে চান?
ওরা চিনতে পারল। সুবিনয় সেনের সহকারী ইনি, শো দেখতে গিয়েছিলেন।
পিওন আর কথা বাড়াল না।
সুবিনয় সেন একজনকে কিছু বোঝাচ্ছিলেন। হঠাৎ ওদের ঢুকতে দেখে চোখ ছোট করলেন, কথা থামালেন। সহকারী তাঁর কাছে ছুটে গিয়ে পরিচয় দিতেই তিনি সামনে বসা লোকটিকে ছেড়ে দিয়ে ওদের বসতে বললেন, বলুন কি ব্যাপার?
দীপা চেয়ারে বসে বলল, আজ এক ভদ্রলোক আমার কাছে গিয়েছিলেন, বোধহয় আপনার ছবির তিনি প্ৰযোজক-।
হ্যাঁ। উনি আমাকে এসে বলেছেন। আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের কথা। কিন্তু ওঁকে তো আপনি জানিয়েই দিয়েছেন, তারপর–। আপনি কি মত পরিবর্তন করেছেন?
আমি আপনার কাছে একটা অনুরোধ নিয়ে এসেছি।
কি ব্যাপার?
দেখুন, এখন এই মুহূর্তে আমার পক্ষে পড়াশুনা ছাড়া আর কিছু করা একেবারেই অসম্ভব। আমাকে রেজাল্ট ভাল করতেই হবে।
তা করুন। তবে থিয়েটার করলে রেজাল্ট ভাল থাকবে। আর ফিল্ম করলে খারাপ হয়ে যাবে এটা আমি মেনে নিতে পারছি না। তাছাড়া আপনার অভিনয় দেখার পর আমি কয়েকজন সাংবাদিককে বলি যে পরের ছবিতে নতুন মেয়েকে নায়িকা করব। বুঝতেই পারছেন এ নিয়ে এখন কথা হবে।
পরীক্ষা পর্যন্ত আমি নাটকও করছি না।
বলুন, আপনার অনুরোধ কি?
পরীক্ষার পরে যদি আমাকে একটা সুযোগ দেন তাহলে কৃতজ্ঞ থাকব। শুধু সুবিনয় সেনই নন শমিত পর্যন্ত চমকে উঠল। ও যে এই কথা বলতেই এতদূরে আসতে পারে এমন ভাবনা শমিত ভাবতেই পারেনি।
তুমি বলছি, সুবিনয় সেন বাঁ হাতে চশমা খুললেন, তুমি তো ফিল্মে অভিনয় করতে চাও না, তাহলে আর পরীক্ষার পরে আসতে চাইছ কেন?
প্ৰথমে বলুন, একরছর বাদে আপনি আমাকে সুযোগ দিতে পারেন কিনা। তাহলে আমি আমার কথা বলব।
দিতে পারি না বলব না, পারি তাও না। সামনের বছর যে ছবি করব সেখানে তোমার বয়সী কোন মেয়ের ভূমিকা নাও থাকতে পারে।
এই ছবিতে এখন যিনি আমার ভূমিকায় করবেন তাঁর বয়স কত?
ও হো! তুমি বড্ড বেশী কথা বল। একজন বড় অভিনেত্রী জানেন বেমানান-বয়সী। কোন চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে কি করতে হয় যাতে দর্শক তাঁর অভিনয়টাই দেখবে বয়সটা বিচার করবে না। এটা করতে গেলে অভিজ্ঞতা দরকার হয়। তবে, একথা বলছি, যদি ঠিকঠাক চরিত্র পাই, যদি প্ৰযোজক আমার বিরোধিতা না করেন তাহলে তোমার কথা নিশ্চয়ই ভাবব। সেদিন তোমার অভিনয় ভাল লেগেছিল, শুধু এই কারণেই ভাবব।
এতেই হবে। আজ আপনার এই ছবির প্রয়োজক গিয়েছিলেন আমার কাছে। আমি করব না শুনে তিনি যেন নিষ্কৃতি পেলেন। নতুন একজনকে নিয়ে ছবি করার ব্যাপারে ওঁর অনাগ্ৰহ হয়তো স্বাভাবিক কিন্তু আমি একটি ছবিতে অভিনয় করে প্রমাণ করতে চাই যে আপনি ভুল নির্বাচন করেননি।
মনে হচ্ছে ওঁর ব্যবহারে তুমি একটু ধাক্কা খেয়েছ। গুড। মানুষের যদি আত্মসম্মানবোধ না থাকে তাহলে সে কিসের মানুষ। আর শিল্পীর তো সেটা আরও বেশী থাকা উচিত। আমি মনে রাখব তোমার কথা! তুমি তোমার পরীক্ষা শেষ হলেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করো।
সুবিনয় সেনের অফিস থেকে বেরিয়ে স্টুডিওর মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় ওরা একটাও কথা বলল না। স্টুডিওর বাইরে এসে বাসস্টপে দাঁড়িয়ে শমিত মুখ খুলল, আমি এমন অবাক খুব কম হয়েছি।
ওমা, কেন?
তুমি যে এই কথা বলতে আসবে কে জানত।
আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কেউ আমায় উপেক্ষা করছে দেখলে আমি স্থির থাকতে পারি না।
বাঃ, তাহলে কাজ হাসল করতে হলে তোমায় উপেক্ষা করতেই হবে।
ভ্যাট, ইয়ার্কি হচ্ছে!
তবে তুমি অতবড় একটি নামী মানুষের সঙ্গে যেভাবে কথা বলে গেলে তা অনেক ছেলে পারত না। শমিত দেখল দূরে বাস আসছে, চল, ওঠা যাক, রিহার্সাল না থাকলেও তো যেতে হবে।
বাসটি এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত এল। শমিত ঘড়ি দেখল, এখনও কিছুটা সময় আছে। জিজ্ঞাসা করল, চা খাবে? খিদে পেয়েছে।
আমি খাওয়াবো।
কারণ?
কোন কারণ নেই।
ধর্মতলা স্ট্রীটের মুখটায় একটি বাঙালি-রেস্টুরেন্টে ঢুকাল ওরা। বেশ ভিড়। দোতলায় জায়গা মিলল। এখানে মিষ্টি খুব বিক্ৰী হয়। ওরা নোনতা আর চা বলল। শমিত মিষ্টি খেতে চাইল না। ছোট টেবিলে মুখোমুখি বসে শমিত বলল, ভুল করেছি। তোমাকে অবহেলা করে কিছু বললে অন্তত পরীক্ষার পর নাটক করতে। জানা ছিল না। তাই ভুলটা হল।
দীপা চোখ তুলে উজ্জ্বল হাসল। তারপর বলল, এই যে তুমি দিনরাত নাটক নিয়ে থাকে, তোমার অ্যাম্বিশন ভাল নাটক করা এটাই তোমাকে আর পাঁচজনের থেকে আলাদা করেছে। স্বপ্নেও তুমি নাটকের ছবি দ্যাখো, না?
এটা নিন্দে না প্ৰশংসা বুঝতে পারছি না।
মানে?
হঠাৎ তুমি বলতে আরম্ভ করলে?
দীপা জিভ বের করল, মাথা নাড়ল শমিত, দয়া করে আর আপনি বলো না। তাহলে সেটাই প্ৰমাণ করবে। তুমি আমার নিন্দে করছিলে।
দীপা আর কথা বলল না। খাবার এলে চুপচাপ খেতে লাগল। মিনিট পাঁচেক বাদে ওরা যখন চায়ের জন্যে অপেক্ষা করছে তখন শমিত বলল, মনে হচ্ছে তুমি না জেনে বিরাট একটা অপরাধ করে ফেলেছি।
না, তা কেন? দীপা ওপর থেকে নিচের কাউন্টারের দিকে তাকাল।
তাহলে এমন মুখ করে আছ কেন? আমাকে বন্ধু ভাবতে পার না?
ভাবি না কে বলল?।
কি আনন্দ।
শুধু ইয়ার্কি!
কি রকম বন্ধুত্ব বল। ইয়ার্কি তো আসবেই। আমি কেরিয়ারের কথা না ভেবে আজ নাটক নিয়ে পড়ে থাকতে চাই। এতেই আনন্দ পাই। সুদীপ ইংরেজিতে এমে করছে, কলেজে পড়াবে। সেইসঙ্গে নাটক। অর্থাৎ পাশাপাশি অন্যকিছু ভাবছে। আমাকে মা মাসীরা বাউণ্ডুলে বলেন। এক কাকা ঘোষণা করেছেন যে আমার ভবিষ্যৎ ঝরঝরে। আর তুমি সিরিয়াসলি পড়াশুনা করে কেরিয়ার তৈরী করতে চাও। আইএ এসে বসতে যাচ্ছি। জিরো আর একশতে বন্ধুত্ব হল। দুটোতেই অবশ্য জিরো আছে, অবস্থান এদিক ওদিক।
এতে তোমার আফসোস হচ্ছে?
নাঃ। যাই বল, পাওয়াটাই বড় কথা, কতটা পাচ্ছি। সেই বিচার করতে গেলে কষ্ট্রর গড়ে। আমি যেচে কষ্ট পেতে রাজি নাই?
আর যার ওপর কষ্ট চাপিয়ে দেওয়া হয়? অনবরত যার ওপর কষ্টের বৃষ্টি হচ্ছে আর যে দুটো হাত মাথার ওপর তুলে তার আড়ালে নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করছে তাকে কি বলবে?
আমি জানি।
কি জানো? চমকে যেও না, তুমি জানো, আমি বিধবা?
এটাকে কি তুমি অস্ত্র হিসেরে ব্যবহার করো? শমিত গম্ভীর হল।
মানে। দীপা অবাক হয়ে গেল।
তোমার সমস্ত ঘটনা আমি মায়ার কাছে শুনেছি। বিধবা বলে ঘোষণা করলে অনেকের কৌতূহল থেকে আড়াল নিশ্চয়ই করতে পারো। কিন্তু সত্যি কথাটা বলতো, তুমি নিজেকে বিধবা ভাবো?
এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে দীপা মাথা নাড়ল, না।
তাহলে? কথাটা আমাকে শোনালে কেন? শুনে আমি তোমার সঙ্গে আর মিশতে চাই কিনা পরীক্ষা করতে?
যদি বলি তই।
তাহলে ভুল হয়েছে তোমার।
আর পাঁচটা অবিবাহিতা মেয়ের সঙ্গে আমার কোন মিল নেই।
সেটা তোমার আচরণে বোঝা যায়।
তার মানে?
ওরা কেউ তোমার মত প্ৰতিবাদী নয়। বোধহয় এই কারণেই নাটক করবে না জানার পরেও আমি তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারিনি।
চা এল। ওরা চুপচাপ খেল। দীপাকে দাম দিতে দিল শমিত। বাইরে বেরিয়ে এসে শমিত জিজ্ঞাসা করল, তুমি কি হোস্টেলে যাবে?
হ্যাঁ।
তাহলে ট্রামে ওঠে। আমি বাস ধরি। আর বেশী সময় নেই।
ঠিক আছে। তুমি এগোও, সামনেই তো ট্রাম গুমটি, আমি উঠে যাবো। তোমাকে সময় নষ্ট করতে হবে না। দীপা হাসল।
করে দেখা হবে?
টিউশনির দিনগুলোর বাইরে হোস্টেলেই থাকব।
কি হয়েছে তোমার? এমন গম্ভীর হয়ে কথা বলছ?
কেমন যেন গোলমাল হয়ে গেল। আজ। ভাবনাটাবনাও যেন আচমকা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। কিছু নয়, সামলে নেব। দীপা কথা শেষ করা মাত্র একটি মেয়েলি গলা ভেসে এল, আরে, দীপাবলী না?
ওরা দুজনেই মুখ ফিরিয়ে দেখল এক মধ্যবয়সী মহিলা এগিয়ে আসছেন। তাঁর হাতে সদ্য কেনা জামাকাপড়ের প্যাকেট। দীপার গলা একদম পাল্টে গেল। উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, ওমা, আপনি! এখানে!
আমি তো এখন কলকাতায়। কাছে এসে হাত ধরলেন মহিলা।
শমিত বলল, তাহলে আজ। আমি চলি দীপা। শমিত দাঁড়াল না। দীপা তার চলে যাওয়া-দেখল। এভাবে না গেলে সে আলাপ করিয়ে দিত। ভদ্রমহিলা ততক্ষণে দীপাকে প্ৰায় জড়িয়ে ধরেছেন, তুই কি বড় হয়ে গেছিস।
দীপা ওঁর মুখের দিকে তাকাল। রমলা সেনের সিঁথিতে সিঁদুরের লম্বা দাগ।