চতুর্থ পরিচ্ছেদ
শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্তদিগকে আশ্বাস প্রদান ও অঙ্গীকার
অনেকক্ষণ সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছে। বলরামের বৈঠকখানায় দীপালোক জ্বলিতেছে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এখনও ভাবস্থ, ভক্তজন পরিবৃত হইয়া আছেন। ভাবে বলিতেছেন —
“এখানে আর কেউ নাই, তাই তোমাদের বলছি, — আন্তরিক ঈশ্বরকে যে জানতে চাইবে তারই হবে, হবেই হবে! যে ব্যকুল, ঈশ্বর বই আর কিছু চায় না, তারই হবে।
“এখানকার যারা লোক (অন্তরঙ্গ ভক্তেরা) তারা সব জুটে গেছে। আর সব এখন যারা যাবে তারা বাহিরের লোক। তারাও এখন মাঝে মাঝে যাবে। (মা) তাদের বলে দেবে, ‘ই করো, এইরকম করে ঈশ্বরকে ডাকো’।”
[ঈশ্বরই গুরু — জীবের একমাত্র মুক্তির উপায় ]
“কেন ঈশ্বরের দিকে (জীবের) মন যায় না? ঈশ্বরের চেয়ে তাঁর মহামায়ার আবার জোর বেশি। জজের চেয়ে প্যায়দার ক্ষমতা বেশি। (সকলের হাস্য)
“নারদকে রাম বললেন, নারদ, আমি তোমার স্তবে বড় প্রসন্ন হয়েছি; আমার কাছে কিছু বর লও! নারদ বললেন, রাম! তোমার পাদপদ্মে যেন আমার শুদ্ধাভক্তি হয়, আর যেন তোমার ভুবনমোহিনী মায়ায় মুগ্ধ না হই। রাম বললেন, তথাস্তু, আর কিছু বর লও! নারদ বললেন, রাম আর কিছু বর চাই না।
“এই ভুবনমোহিনী মায়ায় সকলে মুগ্ধ। ঈশ্বর দেহধারণ করেছেন — তিনিও মুগ্ধ হন। রাম সীতার জন্য কেঁদে কেঁদে বেড়িয়েছিলেন। ‘পঞ্চভূতের ফাঁদে ব্রহ্ম পড়ে কাঁদে।’
“তবে একটি কথা আছে, — ঈশ্বর মনে করলেই মুক্ত হন!’
ভবনাথ — গার্ড (রেলের গাড়ির) নিজে ইচ্ছা করে রেলের গাড়ির ভিতর আপনাকে রুদ্ধ করে; আবার মনে করলেই নেমে পড়তে পারে!
শ্রীরামকৃষ্ণ — ঈশ্বরকোটি — যেমন অবতারাদি — মনে করলেই মুক্ত হতে পারে। যারা জীবকোটি তারা পারে না। জীবরা কামিনী-কাঞ্চনে বদ্ধ। ঘরের দ্বার-জানলা, ইস্কুরু দিয়ে আঁটা, বেরুবে কেমন করে?
ভবনাথ (সহাস্যে) — যেমন রেলের থার্ডক্লাস্ প্যাসেঞ্জার-রা (তৃতীয় শ্রেণীর আরোহীরা) চাবিবন্ধ, বেরুবার জো নাই!
গিরিশ — জীব যদি এইরূপ আষ্টেপৃষ্ঠে বদ্ধ, তার এখন উপায়?
শ্রীরামকৃষ্ণ — তবে গুরুরূপ হয়ে ঈশ্বর স্বয়ং যদি মায়াপাশ ছেদন করেন তাহলে আর ভয় নাই।
ঠাকুর কি ইঙ্গিত করিতেছেন যে, তিনি নিজে জীবের মায়াপাশ ছেদন করতে দেহধারণ করে, গুরুরূপ হয়ে এসেছেন?