অধ্যায় : ৪৬ ইসলামী ব্যাংক বিধি
ধারা-১০৯২
ইসলামী ব্যাংকের সংজ্ঞা (ক) ইসলামী ব্যাংক বলিতে ইসলামী শরীয়ার ভিত্তিতে ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে বুঝাইবে।
(খ) ইসলামী ব্যাংক ব্যবসা বলিতে শরীয়ার পরিপন্থী উপাদানমুক্ত সকল ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা বুঝাইবে।
বিশ্লেষণ
ইসলামী ব্যাংক কথাটি অতি সাম্প্রতিক কালের উদ্ভাবন। ইসলামের প্রাথমিক কালে বর্তমান কালের ন্যায় সুসংগঠিত ব্যাংক ব্যবস্থা না থাকিলেও মুসলমানগণ ইসলামী শরীয়ার নীতিমালা অনুযায়ী তাহাদের আর্থিক লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করিতেন। অবশ্য সরকারের অর্থ-সম্পদ জমা রাখার জন্য “বায়তুল মাল” নামে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। ইহা বর্তমান কালের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহিত তুলনীয়। বস্তুত যন্ত্রশক্তির আবিস্কার ও শিল্প বিপ্লবের পর হইতেই প্রকৃত অর্থে আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থা গড়িয়া উঠে। যেহেতু ইহূদী ও খৃস্টান জাতির দ্বারা এই প্রতিষ্ঠানের ক্রমোন্নতি হইয়াছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই উহাতে ইসলামী নীতিমালা অনুসৃত হয় নাই। এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সূদভিত্তিক হওয়াতে বর্তমান শতকের মাঝামাঝি একদল মুসলিম মনীষী উহাকে ইসলামী শরীয়ার আলোকে পুনর্গঠিত করিতে উদ্যোগী হন। সম্ভবত ষাটের দশকে মিসরে একটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাহা অল্প সময়ের মধ্যে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে সক্ষম হয়। ইহার পর হইতে বিশ্বব্যাপী ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলিয়া আসিতেছে। অবশ্য জাতীয় অর্থ ব্যবস্থা ইসলামী শরীয়ার আলোকে পুনর্গঠিত করা হইলে তখন আর স্বতন্ত্রভাবে ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থার প্রয়োজন হইবে না।
৫৩২
মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রাখিয়া দিন দিন ব্যাংক ব্যবসারও পরিধি বর্ধিত হইতেছে। পূর্বে ব্যাংক সরাসরি কোন ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করিতে পারিত না। উহার কার্যক্রম কেবলমাত্র জনগণের নিকট হইতে আমানত হিসাবে তাহাদের নগদ অর্থ গ্রহণ এবং তাহা কোন ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানকে সূদ প্রদানের শর্তে ঋণ হিসাবে প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ব্যাংক-এর পাশ্চাত্য মনীষীদের সংজ্ঞা হইতে ইহা সুস্পষ্ট। অর্থনীতিবিদ আর. এস. সেয়ার্স বলেন, “ব্যাংক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যাহার ঋণ সাধারণত অন্যান্যদের পারস্পরিক দেনা-পাওনা পরিশোধের জন্য গৃহীত হইয়া থাকে”। অর্থনীতিবিদ কেয়ার্নকে মতে, ব্যাংক হইল একটি আর্থিক মধ্যস্থতাকারী ও ঋণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। অধ্যাপক এ. নাথের মতে : “ব্যাংক একটি অর্থনৈতিক সংস্থা যাহার প্রধান ও হইল জনগণের এক অংশের নিকট হইতে আমানত স্বরূপ অর্থ গ্রহণ এবং সংগৃহীত অর্থ অপর অংশকে ঋণ হিসাবে প্রদান।
ইসলামী ব্যবস্থায় ব্যাংক আমানত গ্রহণ ও তাহা ঋণ হিসাবে প্রদান ব্যতীত ব্যবসায়িক কার্যক্রমও পরিচালনা করিতে পারে। অবশ্য ব্যাংকের কার্যক্ষেত্র কতটা সম্প্রসারিত হইবে তাহা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের আর্থিক নীতিমালার উপর। তবে ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্ষেত্র যতখানিই সম্প্রসারিত হউক, তাহা ইসলামী শরীআর নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হইতে হইবে, শরীআর সুস্পষ্ট পরিপন্থী কোন কার্যক্রমে জড়িত হইতে পারিবে না। মালয়েশিয়ার ২৭৬ নম্বর এ্যাক্ট-এর অধীন ইসলামী ব্যাংকিং বিধি ১৯৮৩-এ ইসলামী ব্যাংকের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছে,”Islamic Bank” means any company which carries on Islamic Banking business and holds a valid licence. অর্থাৎ “ইসলামী ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনাকারী অনুমতিপত্রধারী লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানীকে ইসলামী ব্যাংক বলে”।
উক্ত আইনে ইসলামী ব্যাংক ব্যবসায়ের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছেঃ Islamic banking business means banking business whose aims and operations do not involve any element which is not approved by the Religion of Islam. অর্থাৎ “ইসলামী ব্যাংক ব্যবসা বলিতে এইরূপ ব্যাংক ব্যবসাকে বুঝায় যাহার উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমের মধ্যে, ইসলামে অনুমোদিত নহে, এমন কোন উপাদান বিদ্যমান নাই”।
অতএব ইসলামী ব্যাংক ব্যবসায়ের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে ইসলামী শরীআ ভিত্তিক হইবে, ইহার ব্যত্যয় ঘটিলে তাহা ইসলামী ব্যাংক ব্যবসা
৫৩
হিসাবে গণ্য হওয়ার যোগ্য নহে। উপরোক্ত সংজ্ঞায় ব্যাংক ব্যবসায়ের পরিধি বা ক্ষেত্র বিস্তৃত হইয়াছে, বাংলাদেশের ব্যাংক কোম্পানী আইনে প্রদত্ত সংজ্ঞার তুলনায়। ইহাতে বলা হইয়াছে, ব্যাংক ব্যবসা অর্থ ঋণ প্রদান বা বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে জনসাধারণের নিকট হইতে টাকার এইরূপ আমানত গ্রহণ করা যাহা চাহিবামাত্র বা অন্য কোনভাবে পরিশোধযোগ্য এবং চেক, ড্রাফট, আদেশ বা অন্য কোন পদ্ধতিতে প্রত্যাহারযোগ্য”।
ধারা-১০৯৩ ইসলামী ব্যাংকের লাইসেন্স (অনুজ্ঞাপত্ৰ) (ক) যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে ইসলামী শরীআ মোতাবেক ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনার জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন ব্যাংক কোম্পানী ইসলামী ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করিতে পারিবে না।
(খ) কোন কোম্পানী ইসলামী ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করিতে চাহিলে তাহাকে লাইসেন্স অর্জনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে আবেদন পেশ করিতে হইবে এবং আবেদনপত্রের সহিত নিম্নে উল্লেখিত দলীলপত্র সংযুক্ত করিতে হইবে
(১) স্মারকলিপি (Memorendum of Association) ও (২) সংঘস্মারক
Articles of Association) i
(গ) উপধারা (ক)-এর অধীন দরখাস্ত প্রাপ্তির পর যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ বিবেচনাপূর্বক লাইসেন্স প্রদান করিতে পারেন—(১) ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমের মধ্যে ইসলামী শরীআ কর্তৃক অনুমোন অযোগ্য কোন উপাদান নাই; এবং (২) ইহার সংঘস্মারকে (ইরধডফ মত মডধর্টধমভ) “শরীআ বাের্ড” নামে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠনের ব্যবস্থা রাখা হইয়াছে, যাহা ব্যাংক কোম্পানীকে উহার কার্যক্রম পরিচালনায় উপদেশ প্রদান করিবে, যাহাতে উহার কার্যক্রম শরীআর পরিপন্থী না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হইতে পারে।
ব্যাখ্যা।
(ক) এই ধারায় ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীকে ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি প্রদানকে লাইসেন্স (অনুজ্ঞাপত্ৰ) বলা হইবে।
৫৩৪
(খ) রাষ্ট্র বা সরকার যেই প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষকে ইসলামী ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি প্রদান ও উহার তদারকি করার কর্তৃত্ব অর্পণ করিবে সেই প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষই ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষ গণ্য হইবে।
(গ) যেই দলীলে ব্যাংক কোম্পানীর নাম-ঠিকানা, উদ্দেশ্য-লক্ষ্য, দায়দায়িত্ব, ব্যবসায়ের এলাকা, অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ পরিচালকবৃন্দের নাম-ঠিকানা ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে তাহাকে ‘‘স্মারকলিপি” বলে।
(ঘ) যেই দলীলে ব্যাংক কোম্পানীর কারবারের দৈনন্দিন আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ও কার্য পরিচালনার যাবতীয় নিয়ম-কানুন লিপিবদ্ধ থাকে তাহাকে “সংঘস্মারক” বলে।
বিশ্লেষণ
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর ব্যবসা যৌথ মূলধনী প্রকৃতির। বাংলাদেশে যৌথ মূলধনী কারবার সাধারণত ১৯১৩ খৃ.-এর কোম্পানী আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। উক্ত আইন ইসলামী শরীয়ার ভিত্তিতে প্রণীত হয় নাই ঠিকই, কিন্তু উহার সমস্ত উপাদানই ইসলামী আইনের সহিত সাংঘর্ষিকও নহে। অবশ্য ইসলামী শরীআর আলোকে উহার পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন রহিয়াছে। বৃটিশ রাজত্বকালে তৎকালীন সরকার যে আইন প্রণয়ন করে তাহার সহিত ইসলামী আইনের বহুল পরিমাণ সাদৃশ্য দেখা যায়। কারণ এই আইন প্রণয়নে তাহারা হানাফী মাযহাব-এর ফিকহ গ্রন্থাবলীর পর্যাপ্ত সহায়তা গ্রহণ করিয়াছিলেন, যদিও ঘুণাক্ষরেও তাহারা উহার জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নাই। বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবসা বা ব্যাংক ব্যবস্থা উক্ত আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষ ইসলামী নীতিমালার ভিত্তিতে ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি প্রদান করিয়াছে। অবশ্য এই ব্যবসা পরিচালনার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে যথারীতি লাইসেন্স অর্জন করিতে হয়। মালয়েশীয় সরকার সেই দেশে ইসলামী ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনার জন্য যে আইন পাশ করিয়াছে (Act 276, islamic Banking Act-1983) তাহাতেও লাইসেন্স গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রহিয়াছে।
রাসূলুল্লাহ (সা) ও তাঁহার পরবর্তী কালে অর্থাৎ সাহাবায়ে কিরাম (রা)-এর যুগে ব্যবসা-বাণিজ্য করিবার জন্য সরকারের অনুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল কিনা তাহা জানা না গেলেও একটি বিষয় নিশ্চিত যে, মুসলিম ও অমুসলিম সকলের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল উন্মুক্ত। উহার শ্রেণী ও ঠিকানা সরকারী কর্মচারীগণ কর্তৃক
তালিকাভুক্ত করা হইত তাহাদের নিকট যথাসময়ে যাকাত ও শুল্ক আদায়ের জন্য। সরকারী চারণভূমি, বনাঞ্চল, পানির উৎস, খনি ইত্যাদি ব্যবহারের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) ও তাঁহার পরের চারিজন খলীফা লিখিতভাবে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অনুমতি প্রদান করিয়াছেন। হাদীস ও ইতিহাসের গ্রন্থাবলীতে ঐসব দলীল আজও লিপিবদ্ধ আছে। খায়বার এলাকা মুসলমানগণ কর্তৃক বিজিত হইলে তথাকার ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট তথাকার ভূমি চাষাবাদের অনুমতি (লাইসেন্স) প্রার্থনা করে। রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাদেরকে এই মর্মে অনুমতিপত্র লিখাইয়া দেন যে, উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক তাহারা পাইবে।
عن ابن عمر أن رسول الله له أعطى خيبر اليهود على أن
يعملوها ويزرعوها ولهم شطر ماخرج منها.
“ইবন উমার (রা)-এর সূত্রে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা) খায়বারের জমি ইহুদীদেরকে এই শর্তে প্রদান করিয়াছিলেন যে, তাহারা উহাতে শ্রম বিনিয়োগ করিয়া কৃষিকার্য করিবে এবং উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক তাহাদের প্রাপ্য হইবে”।
রাষ্ট্রের শাসক বা সরকারের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হইল যথাযথভবে ইসলামী জীবনবিধান প্রতিষ্ঠা করা, ভালো ও সৎ গুণাবলীর বিকাশ সাধন এবং মন্দ ও অসবৃত্তির বিনাশসাধন বা প্রতিরোধ। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছেঃ
الذين ان منهم في الأرض أقاموا الصلوة وأتوا الزكوة وامروا
২.aji / 34j aju “আমি তাহাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করিলে তাহারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয়, সকার্যের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কার্য নিষেধ করে” (২২৪ ৪১)।
ইসলামী আইনে সূদ একটি অসৎ বৃত্তি বা পাপকার্য এবং উহার প্রতিরোধ করা সরকারের কর্তব্য। ব্যাংক যাহাতে ইসলামের বিধান লঙঘন করিয়া সূদের ব্যবসা না করিতে পারে তাহার প্রতিবিধানও সরকারের দায়িত্ব। ব্যাংক সূদের কারবার করিবে
এবং শরীআর বিধান লঙঘন করিবে না এই নিশ্চয়তা প্রদান করিলেই কেবল যথাযথ কর্তৃপক্ষ উহাকে ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি প্রদান করিতে পারে। এইভাবে পূর্বানুমতি গ্রহণের বিধান বা শর্ত আরোপ করিয়া সরকার ইসলাম বিরোধী পন্থায় ব্যবসা না করার নিশ্চয়তা লাভ করিতে পারে। উপরোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে সরকার লাইসেন্স প্রথাও চালু করিতে পারে।
জনগণের জান-মালের হেফাজতের ব্যবস্থা করাও রাষ্ট্রের শাসক বা সরকারের অন্যতম কর্তব্য। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছেঃ
ان الله يأمركم أن تؤدوا الأمانات الى أهلها.
“আমানত বহনের যোগ্য লোকদের নিকট আমানত সোপর্দ করার জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিতেছেন” (৪ঃ ৫৮)।
فان آمن بعضكم بعضا فليؤ الذي اؤمن أمانته.
“অতএব তোমাদের একে অপরকে বিশ্বাস করিলে যাহাকে বিশ্বাস করা হয়, সে যেন আমানত প্রত্যর্পণ করে এবং তাহার প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করে” (২ঃ২৮৩)।
ايها الذين آمنوا لا تخونوا الله والرسول وتتوا أنتم
وانتم تعلمون .
“হে ঈমানদারগণ! জ্ঞাতসারে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সহিত বিশ্বাসভংগ করিও না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও না” (৮ঃ ২৭)। রাসূলুল্লাহ (স) বলেন :
الامام الأعظم على الناس راع وهو مسئول عن رعيته.
“সর্বপ্রধান নেতা (শাসক) জনগণের রক্ষক। তাহাকে তাহার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করিতে হইবে”।২।
উপরোক্ত আয়াতসমূহের আলোকে বলা যায় যে, ব্যাংক জনগণের অর্থ সম্পদের আমানত গ্রহণ করিয়া থাকে। ব্যাংকের পরিচালকগণ সৎ ও বিশ্বস্ত, ন্যায়পরায়ণ ও সুযোগ্য হইলেই জনগণের আমানত নিরাপদ থাকিতে পারে। তাহারা অসৎ, অযোগ্য ও প্রতারক হইলে তাহাদের হাতে জনগণের অর্থ-সম্পদের আমানত রক্ষা পাইতে পারে না। শাসক বা সরকারের বিনা অনুমতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলিবার অবকাশ থাকিলে এই সুযোগে প্রতারকগণ জনগণের সম্পদ সংগ্রহ করিয়া তাহা আত্মসাৎ বা অপচয় করিবার সুযোগ পাইয়া যাইবে। অতএব প্রতারণার পথ রুদ্ধ করিয়া জনগণের সম্পদের সুষ্ঠু হেফাজতের জন্য সরকার আর্থিক প্রতিষ্ঠান খােলার জন্য পূর্বানুমতি গ্রহণের বিধান চালু করিতে পারে এবং এই আমানত রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী আরোপ করিতে পারে। এই ধরনের বিধান রাষ্ট্র কর্তৃক মারূফ (ন্যায়নীতি) কায়েমের মধ্যে গণ্য হইবে। শর্তাবলী
৫৩৭
আরোপ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ
والمسلمون على شروطهم الأشرطا حرم حلالا أو أحل حراما.
“মুসলমানগণ তাহাদের (নির্ধারিত) শর্তাবলী পালনে বাধ্য, কিন্তু কোন শর্ত হালালকে হারাম অথবা হারামকে হালাল করিলে (তাহা পরিত্যজ্য)”।৩
উক্ত হাদীস হইতে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, মুসলমানগণ তাহাদের পারস্পরিক আদান-প্রদান ও চুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যে কোন শর্ত যুক্ত করিতে পারে। এই ব্যাপারে তাহারা স্বাধীনভাবে শর্তাবলী স্থির করিতে পারিবে। তাহারা কেবল দীন ইসলামে সুস্পষ্টভাবে হালাল অথবা হারাম এই বিষয়ের বিপরীতে কোন শর্ত স্থির করিতে পারিবে না। অতএব বলা যায়, মানুষের সম্পদের আমানত সংগ্রহকারী ও তাহা দ্বারা ব্যবসা পরিচালনাকারী ব্যাংকের উপর সরকার প্রয়োজনীয় শর্তাবলী আরোপ করিতে পারে। আর লাইসেন্স গ্রহণ অনুরূপ একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত যাহার দ্বারা সরকার ইসলামী শরীআর ভিত্তিতে ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করার বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হইতে পারে অথবা উহাকে বাধ্য করিতে পারে।
কোন ব্যাংক কোম্পানীর কেবল আর্থিক লেনদেন সূদমুক্ত হইলেই উহা ইসলামী ব্যাংক হইয়া যায় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না উহার সার্বিক কার্যক্রম ইসলামী শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত হয়। এই বিষয়টি তদারক বা নিশ্চিত করার জন্য ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর একটি স্বাধীন শরীআ বোের্ড থাকিতে হইবে। এ পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠানসহ যে সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান খােলা হইয়াছে উহার প্রতিটির সহিত একটি করিয়া উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন শরীআ কাউন্সিল/বাের্ড রহিয়াছে। এই বাের্ড বা কাউন্সিল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম ইসলামী শরীআ মোতাবেক পরিচালিত হইতেছে কিনা তাহা পর্যবেক্ষণ করিবে এবং কোন সমস্যার উদ্ভব হইলে উহার শরীআত সম্মত সমাধান পেশ করিবে। উপরন্তু কোম্পানীর পরিচালনা কর্তৃপক্ষের গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহে ইসলামী শরীআর পরিপন্থী কোন উপাদান থাকিলে উক্ত বাের্ড তাহাও নির্দেশ করিবে। তাই সংগত কারণেই ইসলামী শরীআ বিষয়ে গভীর পাণ্ডিত্বের অধিকারী দীনদার ও ধর্মভীরু ব্যক্তিগণের সমন্বয়ে এই বাের্ড কাউন্সিল গঠিত হওয়া উচিৎ। ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা সূদভিত্তিক ব্যবস্থা হইতে সূদমুক্ত ও যাকাত ভিত্তিক ব্যবস্থায় উত্তরণের একটি প্রচেষ্টা। তাই ইহার সহিত একটি শরীআ বাের্ড কাউন্সিল থাকা
একান্ত দরকার।
স্মারকলিপি একটি কোম্পানীর সংবিধান হিসাবে গণ্য। ইহা কোম্পানীর সর্বপ্রধান গুরুত্বপূর্ণ দলীল। ইহাতে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি নিম্নরূপঃ (ক) কোম্পানীর নাম অর্থাৎ যেই নামে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী তাহার ব্যবসা চালাইতে চায় বা পরিচিত হইতে চায়; (খ) নিবন্ধনকৃত অফিসঃ অর্থাৎ ইহার নিবন্ধনকৃত অফিস হইবে বাংলাদেশে; (গ) কোম্পানীর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যঃ নিম্নলিখিত বিষয় ইহার অন্তর্ভুক্ত হইতে পারে। (ক) ইসলামী শরীআ মোতাবেক ব্যাংক ব্যবসা ও ব্যাংকিং সেবা পরিচালনা, জনগণের নিকট হইতে তাহাদের নগদ অর্থ আমানত হিসাবে গ্রহণ এবং চেক, ড্রাফট, পে-অর্ডার ইত্যাদির মাধ্যমে তাহাদের অর্থ ফেরতদান, বিদেশী গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা প্রদান, সূদমুক্ত ও লাভ-ক্ষতিতে অংশগ্রহণ নীতির ভিত্তিতে যাবতীয় প্রকারের ব্যাংকিং কার্যাবলী পরিচালনা, বাণিজ্যিক ও শিল্প উৎপাদনমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, ব্যাংকিং কার্যাবলীর নূতন নূতন ক্ষেত্র উদ্ভাবন এবং মুশারাকা, মুদারাবা, মুরাবাহা ইত্যাদি পদ্ধতিতে ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা; (খ) সূদমুক্ত পন্থায় ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক প্রকল্পে অর্থলগ্নি অথবা উহা ক্রয় করা; (গ) নিরাপদ হেফাজতে রাখার জন্য অথবা শর্তসাপেক্ষে বা শৰ্তমুক্তভাবে সূদমুক্ত পন্থায় লগ্নি করার জন্য গ্রাহকদের অর্থ গ্রহণ ইত্যাদি আরও বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে।
ধারা-১০৯৪।
লাইসেন্স বাতিলকরণ নিম্নবর্ণিত যে কোন কারণে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ইসলামী ব্যাংককে প্রদত্ত অনুমতি প্রত্যাহার করিতে পারিবেন –
(ক) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী ইহার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বিচ্যুত হইলে অথবা ইহার কার্যক্রমে ইসলামী শরীআ কর্তৃক অনুমোদন অযোগ্য কোন উপাদান যুক্ত হইলে;
(খ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী ইহার আমানতকারী ও অন্যান্য পাওনাদারগণের স্বার্থহানিকর পন্থায় কার্যক্রম পরিচালনা করিলে;
(গ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর সম্পত্তির পরিমাণ (জনগণের নিকট) উহাদের দায়ের তুলনায় অপর্যাপ্ত হইলে, এবং ঘাটতি পূরণ যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে অসম্ভব হইলে;
(ঘ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী এই আইনের কোন ধারা লংঘন করিলে;
(ঙ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী ইহার ব্যবসা ত্যাগ বা বন্ধ করিয়া দিলে।
বিশ্লেষণ
যথাযথ কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কারণ সাপেক্ষে কোন ব্যাংক কোম্পানীকে প্রদত্ত লাইসেন্স বাতিলও করিতে পারেন। যেসব শর্ত পালন সাপেক্ষে লাইসেন্স প্রদান করা হয়, ব্যাংক কোম্পানী ঐসব শর্তের খেলাপ কার্য করিলে সেই ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষ উহার লাইসেন্স বাতিল করিতে পারেন। ইতিপূর্বে উল্লেখিত হাদীসে আমরা লক্ষ্য করিয়াছি যে, মুসলমানগণ তাহাদের শর্তাবলী পালন করিতে বাধ্য। শর্ত লংঘনের ক্ষেত্রে অপর পক্ষের চুক্তি বাতিলের অধিকার জন্মায়। ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী শরীআ কর্তৃক অনুমোদন অযোগ্য পন্থায় ইহার কোন কার্যক্রম পরিচালনা করিলে সেই ক্ষেত্রে আইন লংঘনের অপরাধে উহার লাইসেন্স বাতিল হইতে পারে। ব্যবসার সাথে সাথে ব্যাংকের শেয়ার হােল্ডার ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর অন্যতম দায়িত্ব। তাহাদের স্বার্থ ক্ষুন্নকারী কার্যক্রম গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও উহার লাইসেন্স বাতিল হইতে পারে। অনুরূপভাবে যদি দেখা যায় যে, ব্যাংক কোম্পানীর দায় উহার সম্পত্তির তুলনায় অধিক হইয়া গিয়াছে এবং সংগত সময়ের মধ্যে উহা পূর্ণ করা সম্ভব নহে, তাহা হইলে সেই ক্ষেত্রেও উহার লাইসেন্স বাতিল হইতে পারে। অনুরূপভাবে লাইসেন্সে সন্নিবেশিত কোন শর্ত ভংগ করিলেও ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর লাইসেন্স বাতিল হইতে পারে। ব্যাংক উহার ব্যবসার অবসান করিলেও স্বাভাবিকভাবেই উহার লাইসেন্সও বাতিল হইয়া যায়।
ধারা-১০৯৫ পুঁজি তহবিল গঠন ও নগদ তহবিলের প্রতিবেদন
(ক) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাহিরে অবস্থিত অথবা শুধু দেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত উহার শাখাসমূহের সম্পত্তির একটি সুনির্দিষ্ট অংশ দ্বারা পুঁজি তহবিল গঠন করিবে।
(খ) ‘পুঁজি তহবিলে জমার হার এবং জমা রাখার স্থান যথাযথ কতৃপক্ষ কর্তৃক নিদ্ধারিত হইবে। * (গ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী একটি সংরক্ষিত তহবিল গঠন করিবে এবং প্রতি বত্সরের নীট মুনাফা হইতে লভ্যাংশ ঘোষণার পূর্বে এবং যাকাত বা কর যাহা প্রদেয় হয়, প্রদানের জন্য ব্যবস্থা রাখার পর, নির্দিষ্ট হারে উক্ত তহবিলে জমা করিবে।
৫৪০
(ঘ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উহার দায়ের একটি অংশ উপধারা (চ)-এ উল্লেখিত সম্পদে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হারে ও স্থানে জমা রাখিবে।
(ঙ) উপধারা (ঘ)-এ উল্লেখিত নগদ অর্থ, সঞ্চয়ী হিসাব, টাইম ডিপোজিট, ইনভেস্টমেন্ট একাউন্ট, সঞ্চয় হিসাবভুক্ত দায় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দেশিত অন্যান্য দায় বুঝায়।
(চ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর ন্যূনতম সম্পত্তির পরিমাণ নির্ধারণ করার সময় উহার নগদ তহবিলসহ সঞ্চয়ী হিসাব (Savings Account), বিনিয়োগ হিসাব (Investment Account), মেয়াদী অন্যান্য সঞ্চয়ী দায় (deposit liabilies) এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দেশিত দায়সমূহ হিসাবে ধরিতে হইবে।
(ছ) এই ধারায় বর্ণিত দায়ের অংশ হইবে – (১) দেশের বৈধ কাগজী মুদ্রা ও ধাতব মুদ্রা; (২) যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট রক্ষিত জমা, রিজার্ভ ফান্ড ব্যতীত; (৩) ইস্যুকৃত সঞ্চয়ী সার্টিফিকেটসমূহ; (৪) যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দেশিত অন্যান্য সম্পত্তি।
(জ) এই ধারার প্রয়োগের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনবােধে লিখিত পত্রের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীকে এই ধরনের বিবরণী দাখিলে নির্দেশ প্রদান করিতে পারে।
(ঝ) উপধারা (জ)-এ বর্ণিত বিবরণী দাখিলে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীকে জরিমানা করিতে পারে।
ব্যাখ্যা (ক) মোট মুনাফাঃ বিক্রয়লব্ধ আয় হইতে মোট প্রকাশিত খরচ (Explicit ) বাদ দেওয়ার পর যাহা অবশিষ্ট থাকে তাহাকে মোট মুনাফা (Grossprofit) বলে। প্রকাশিত খরচ : যেমন শ্রমিকের মজুরী, পণ্য আমদানীর পরিবহন খরচ ইত্যাদি।
(খ) নীট মুনাফা ও মোট মুনাফা হইতে অপ্রকাশিত খরচ বাদ দেওয়ার পর যাহা অবশিষ্ট থাকে তাহাকে নীট মুনাফা (Net profit) বলে। অপ্রকাশিত খরচঃ খাজনা, কর, যাকাত ইত্যাদি।
৫৪১
(গ) সংরক্ষিত তহবিলঃ ব্যাংক প্রতি বত্সর উহার নীট মুনাফার একটি অংশ অংশীদারগণের মধ্যে বন্টন না করিয়া ভবিষ্যত প্রয়োজন পূরণের জন্য যে নির্দিষ্ট তহবিলে জমা রাখে তাহাকে সংরক্ষিত তহবিল বলে।
বিশ্লেষণ
মালয়েশিয়ার ইসলামী ব্যাংক আইনে পুঁজি তহবিল (Copital Fund) বলিতে পরিশোধিত মূলধন, রিজার্ভ এবং অন্যান্য মূলধন যাহা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশিত নিয়মে হিসাব করিলে মূলধনের আওতায় পড়ে। এই পুঁজি তহবিল গঠিত হইবে ইসলামী ব্যাংক ও উহার শাখাসমূহে রক্ষিত সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ দ্বারা। ব্যাংক কোম্পানী ভবিষ্যতে কোন লোকসানের সম্মুখীন হইলে তাহা পূরণ করার উদ্দেশ্যে এই তহবিল গঠিত হইবে। সম্পদের কি পরিমাণ অংশ ঐ তহবিলে জমা করিতে হইবে তাহার হার যথাযথ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করিয়া দিবে এবং এই হার পরিবর্তনযোগ্য। এই তহবিলে জমা রাখার স্থানও যথাযথ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করিবে।
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উহার অর্জিত নীট মুনাফার একটি অংশ দ্বারা সংরক্ষিত তহবিল গঠন করিবে। নীট মুনাফা হইতে যাকাত ও অন্যান্য কর প্রদানের ব্যবস্থা রাখার পর এবং অংশীদারগণের মধ্যে বণ্টনের পূর্বে প্রতি বৎসর নির্দিষ্ট হারে উক্ত তহবিলে জমা করিবে। বাংলাদেশে বর্তমানে অনুর্ধ ২০% এবং মালয়েশিয়ার ইসলামী ব্যাংক আইনে সংরক্ষিত তহবিলের জমার পরিমাণ আদায়কৃত মূলধনের অর্ধেকের সমান না হওয়া পর্যন্ত মুনাফার ৫০% এবং সমান হওয়া পর্যন্ত ২৫% কর্তন করিয়া এই ফান্ডে জমা করার বিধান রাখা হইয়াছে।
ধারা-১০৯৬
নিরীক্ষণ ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন (ক) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী প্রতি বৎসর একজন নিরীক্ষক নিয়োগ করিবে, যাহা যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হইতে হইবে;
(খ) যথাযথ কর্তৃপক্ষ একজন নিরীক্ষক নিয়োগ করিবে যদি-(১) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী একজন নিরীক্ষক নিয়োগে ব্যর্থ হয়; অথবা
(২) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী চায় যে, উপধারা (ক)-এর অধীনে নিযুক্ত নিরীক্ষকের সহিত আরও একজন নিরীক্ষক কাজ করুক এবং সেই
৫৪২
নিরীক্ষকের বেতন/পারিতোষিক নির্ধারণ করিয়া দিবে, যাহা ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী প্রদান করিবে।
(গ) উপধারা (ক) ও (খ)-এর অধীনে নিয়োগকৃত নিরীক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিম্নরূপ
(১) যেই বত্সরের হিসাব নিরীক্ষণের জন্য তাহাকে নিয়োগ করা হইবে তিনি সেই বৎসরের হিসাবসমূহ নিরীক্ষা করিবেন; এবং
(২) তিনি ব্যাংকের প্রস্তুতকৃত বাৎসরিক লাভ-ক্ষতির বিবরণী ও উদ্বৃত্তপত্র মোতাবেক একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করিবেন।
(ঘ) উপধারা (গ) (২)-এ বর্ণিত নিরীক্ষকের প্রতিবেদন ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর পরিচালক পর্ষদের প্রতিবেদন সহকারে ব্যাংকের বাৎসরিক সাধারণ সভায় পেশ করিতে হইবে। ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই মর্মে ঘোষণা প্রদান করিবেন যে, নিরীক্ষা প্রতিবেদনসহ ব্যাংকের লাভ-ক্ষতির প্রতিবেদন ও উদ্বৃত্তপত্রের কপি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হইয়াছে।
(ঙ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর সহিত আর্থিক স্বার্থযুক্ত ব্যক্তি, উহার পরিচালক বা কর্মকর্তা নিরীক্ষক হিসাবে নিয়োগযোগ্য বিবেচিত হইবেন না এবং কোন ব্যক্তি নিরীক্ষক হিসাবে নিয়োগ লাভের পর উপরোক্তরূপ কোন স্বার্থ লাভ করিলে বা ব্যাংকের পরিচালক অথবা কর্মকর্তার পদ লাভ করিলে তৎক্ষণাৎ তাহার পদ শূন্য হইবে।
(চ) নিরীক্ষকের উপর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পণ করা হইয়াছে তদনুযায়ী তিনি ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর যে কোন বহি, হিসাব ও ভাউচার যে কোন সময় দেখিতে পারিবেন, তাহা যে স্থানেই থাকুক এবং তিনি ব্যাংকের কর্মকর্তাগণের নিকট হইতে প্রয়োজনীয় যে কোন তথ্য বা ব্যাখ্যা চাহিতে পারিবেন।
(ছ) উপধারা (চ)-এর বিধান অক্ষুন্ন রাখিয়া নিরীক্ষক নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ যাচাই করিয়া দেখিবেন –
(১) জামানতের ভিত্তিতে বা অন্য কোন পন্থায় ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ঋণ বা অগ্রিম যেভাবে ও যে শর্তে প্রদান করা হইয়াছে তাহা ব্যাংকের বা উহার শেয়ার হােন্ডারগণের স্বার্থ হানিকর কিনা;
৫৪৩
(২) ব্যাংকের যে সমস্ত লেনদেন কেবলমাত্র নথি বা হিসাব বহি বা চুক্তিপত্রে প্রদর্শিত হয় তাহা ব্যাংকের অথবা উহার শেয়ারহােন্ডারগণের স্বার্থ হানিকর কিনা;
(৩) বিনিয়োগ বা ব্যাংক কোম্পানী ব্যতীত অন্যান্য কোম্পানীর কোন পরিসম্পদ শেয়ার ডিবেঞ্চার ও অন্যান্য নিরাপত্তামূলক গ্যারান্টির মাধ্যমে যে মূল্যে ক্রয় করা হইয়াছে তদপেক্ষা কম মূল্যে বিক্রয় করা হইয়াছে কিনা;
(৪) ব্যাংক কোম্পানী কর্তৃক প্রদত্ত ঋণ ও অগ্রিম, জমাকৃত অর্থ হিসাবে প্রদর্শন করা হইয়াছে কিনা;
(৫) ব্যক্তিগত ব্যয় রাজস্ব ব্যয় খাতে অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে কিনা;
(৬) ব্যাংক কোম্পানীর কাগজপত্রে কোন শেয়ার নগদ অর্থে বরাদ্দ করা হইয়াছে বলিয়া উল্লেখ থাকিলে বাস্তবিকই নগদ অর্থ পাওয়া গিয়াছে কিনা এবং হিসাবের খাতায় ও উদ্বৃত্তপত্রে যে অবস্থা দেখানো হইয়াছে তাহা যথার্থ, নিয়মিত ও বিভ্রান্তিমুক্ত (ভর্ম বধফণটধভথ) কিনা।
(জ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উহার প্রত্যেক অফিসে সুস্পষ্টভাবে প্রদর্শন করিবে উহার- (১) সর্বশেষ নিরীক্ষিত উত্তপত্র ও সাভ-ক্ষতির বিবরণীর একটি করিয়া কপি এবং উহার সহিত নিরীক্ষকের প্রদত্ত নোট ও
প্রতিবেদন;
(২) পরিচালকগণের পূর্ণ নাম-ঠিকানা; এবং
(৩) সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নাম।
(ঝ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উহার নিরীক্ষাকৃত উত্তপত্র ও লাভ-ক্ষতির বিবরণী নিরীক্ষকের প্রতিবেদনসহ উহার সাধারণ সভায় পেশ করার পর ১৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ করিবে।
(ঞ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উহার নিরীক্ষাকৃত উদ্বৃত্তপত্র ও লাভ-ক্ষতির বিবরণীর দুইটির কপি, নিরীক্ষকের এবং পরিচালকগণের
প্রতিবেদনসহ, ছয় মাসের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করিবে।
(ট) উদ্বৃত্তপত্র, লাভ-ক্ষতির হিসাব বিবরণী এবং পরিচালকগণের প্রতিবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত পদ্ধতিতে বিন্যস্ত করিয়া তৈরি করিতে হইবে।
(ঠ) যথাযথ কর্তৃপক্ষ উদ্বৃত্তপত্র ও লাভ-ক্ষতির হিসাব বিবরণীর সহিত সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত তথ্য বা ব্যাখ্যা চাহিলে তাহা সরবরাহ করিবে।
৫৪৪
ধারা-১০৯৭
ব্যাংকের পরিসংখ্যানগত বিবরণী (ক) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহের প্রতিবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত ফর্মে তৈরি করিয়া উক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করিবে- (১) যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লিখিতভাবে প্রদত্ত সময়সীমার মধ্যে ব্যাংক অফিস ও উহার শাখাসমূহের প্রতি মাসের শেষ ব্যবসা দিবসের উহার মোট দায় ও সম্পত্তির বিবরণী;
(২) যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নোটিশের মাধ্যমে ধার্যকৃত মেয়াদের জন্য ব্যাংকের অফিসসমূহ ও শাখাসমূহের ঋণ, অগ্রিম ও লগ্নীর বিশ্লেষণাত্মক বিবরণী;
(৩) যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ব্যাংকের বিগত আর্থিক বৎসরের আয় ও ব্যয়ের অবস্থা নির্দেশক প্রস্তুত বিবরণী;
(৪) যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে অনুরূপ পরিসংখ্যানগত প্রয়োজনীয় তথ্য সম্মলিত বিবরণী।
(খ) এই ধারার অধীনে প্রদত্ত বা প্রাপ্ত বিবরণীসমূহ ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের মধ্যে গোপনীয় বিষয় হিসাবে গণ্য হইবে।
(গ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর বিদেশে শাখা অফিস বা প্রতিনিধি (Agency) অফিস থাকিলে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট, তাহার অনুরোধক্রমে, ব্যাংক কোম্পানীকে উক্ত অফিসসমূহের কার্যাবলীর বিবরণী দাখিল করিতে হইবে।
ধারা-১০৯৮
বাধানিষেধ (ক) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী –
(১) ইহার শেয়ারের উপর লভ্যাংশ প্রদান করিতে পারিবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত উহার প্রাথমিক ব্যয়, সাংগঠনিক ব্যয়, শেয়ার বিক্রয় ও দালালীর কমিশন, লোকসান ও অন্যান্য ব্যয়সহ মূলধনে পরিণত হইয়াছে এইরূপ সকল ব্যয় সম্পূর্ণরূপে অবলোপন করা না হইয়া থাকে;
৫৪৫
(২) ইহার নিজস্ব শেয়ার জামানত রাখিয়া কোন অগ্রিম ঋণ বা অনুরূপ অন্যান্য অগ্রিম সুবিধা প্রদান করিবে না;
(৩) কোন ইসলামী ব্যাংক, সিডিউল ব্যাংক, আর্থিক আইনের আওতায় রেজিষ্ট্রিভুক্ত আর্থিক কোম্পানী ব্যতীত অন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে জামানতবিহীন অগ্রিম, জামানতবিহীন ঋণ বা অনুরূপ আর্থিক সুবিধা প্রদান করিবে না;
(৪) জামানত ব্যতীত নিম্নবর্ণিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কোন ঋণ বা অগ্রিম মঞ্জুর করিবে না অথবা এই সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দায় গ্রহণের ভিত্তিতে কোন ঋণ বা অগ্রিম প্রদান করিবে না –
(অ) ইহার কোন পরিচালক বা তাহার পরিবারের কোন সদস্য;
(আ) এমন কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা প্রাইভেট কোম্পানী যাহাতে উক্ত ব্যাংক কোম্পানী বা উহার কোন পরিচালক বা উহার কোন পরিচালকের পরিবারের কোন সদস্য পরিচালক, মালিক বা অংশীদার রহিয়াছেন;
(ই) এমন কোন কোম্পানী যাহা উক্ত ব্যাংক কোম্পানী বা উহার কোন পরিচালক বা তাহার পরিবারের কোন সদস্য কর্তৃক কোনওভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, অথবা যাহাতে উক্ত ব্যক্তিগণের কাহারও এমন পরিমাণ শেয়ার থাকে যাহা দ্বারা তিনি অন্যন বিশ শতাংশ ভোট দান ক্ষমতার অধিকারী হন;
(ঈ) এমন কোন ব্যক্তি, ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর কোন পরিচালক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী যাহার জামিনদার হইয়াছে।
(খ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী, ইহার যথােচিত সেবা পরিচালনার আওতায় এবং বিশেষ অথবা সহানুভূতিমূলক পরিস্থিতির বিদ্যমানতায়, উপযুক্ত শর্তসাপেক্ষে ইহার কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে তাহার ছয় মাসের বেতনের সমপরিমাণ এককালীন ঋণ প্রদান করিতে পারিবে।
(গ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী কর্তৃক অগ্রিম, ঋণ অথবা অন্য কোনরূপ ঋণ সুবিধা প্রদানের বেলায় নিম্নে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উপধারা (ক) (ই)-এর বিধান প্রযোজ্য হইবে না – যে কোম্পানী স্টক এক্সেঞ্জ তালিকাভক্ত হইয়াছে এবং যাহাতে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর কোন পরিচালকের শেয়ার বা অন্য কোনরূপ আর্থিক স্বার্থ জড়িত নাই।
৫৪৬
(ঘ) নিম্নে বর্ণিত শর্তাবলী সন্তোষজনক না হইলে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উপধারা (গ)-এ প্রদত্ত অব্যাহতির (Exemtion) অধীনে কোন অগ্রিম, ঋণ অথবা ঋণ সুবিধা মঞ্জুর করিবে না –
(১) অগ্রিম, ঋণ, ঋণ সুবিধা অন্যান্য ঋণ গ্রহীতার জন্য যে মান নির্ধারিত তাহার সমতুল্য হইবে;
(২) অগ্রিম, ঋণ অথবা ঋণ সুবিধা প্রদানের শর্তাবলী, অন্যান্যকে যে শর্তে তাহা প্রদান করা হইয়াছে, সেই শর্তের তুলনায় ব্যাংকের জন্য কম সুবিধাজনক নহে;
(৩) অগ্রিম, ঋণ অথবা ঋণ সুবিধা মঞ্জুর করা ব্যাংকের জন্য সর্বোত্তম লাভজনক এবং
(৪) অগ্রিম, ঋণ অথবা ঋণ সুবিধা প্রদানের বিষয়টি পরিচালক পর্ষদের সভায় তাহাদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে অনুমোদিত হইয়াছে এবং তাহা সবার কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে।
(ঙ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে কোন ঋণ সুবিধা প্রদান করিবে না বা তাহার পক্ষে কোনরূপ দায় বহন করিবে না যাহার মূল্যমান উক্ত ব্যাংকের মোট মূলধনের ১৫ শতাংশের অধিক।
(চ) উপধারা (ঙ)-এর বিধান- (১) লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোন ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী, সিডিউল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহিত লেনদেনের ক্ষেত্র; (২) দেশের আন্তর্জাতিক আমদানী-রপ্তানী বাণিজ্যের প্রদত্ত এল, সি, বীর্ণণর মত ডরণধ) ও হুণ্ডির (ঈধফফ মত ঋসডদটভথণ) প্রদানের বিপরীতে; (৩) যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত অন্যান্য লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না।১৬৯
ধারা-১০৯৯
শেয়ার ক্রয়ের জন্য ঋণ সুবিধা প্রদান (ক) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী কোন ব্যক্তিকে শেয়ার অর্জন বা ক্রয়ের জন্য ঋণ সুবিধা মঞ্জুর করিলে উহার পরিমাণ ঋণ সুবিধা মঞ্জুরকালে শেয়ারের বাজার মূল্যের একটি নির্দিষ্ট হারের অধিক হইবে না, যে হার যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিদ্ধারণ করিবেন;
৫৪৭
(খ) এই ধারার অধীনে প্রদত্ত ঋণ সুবিধার হিসাব অন্যান্য ঋণ সুবিধার হিসাব হইতে স্বতন্ত্র একাউন্টে লিপিবদ্ধ করিতে হইবে;
(গ) যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিম্নবর্ণিত বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীকে লিখিত নির্দেশনা প্রদান করিতে পারে –
(১) ঋণ সুবিধা প্রদানের বিপরীতে জামানত স্বরূপ রক্ষিত শেয়ারের বাজার মূল্য নির্ণয়ের ভিত্তি বা পদ্ধতি;
(২) ঋণ সুবিধা লাভকারী ব্যক্তি কর্তৃক তহবিল অথবা শেয়ার উত্তোলন (Withdrawal);
(৩) ঋণ সুবিধার বিপরীতে জামানত স্বরূপ রক্ষিত শেয়ারের বিকল্প অন্যান্য শেয়ার এবং
(৪) প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয়।
ধারা-১১০০ যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী পরিদর্শন ও
নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা (ক) যথাযথ কর্তৃপক্ষ গোপন রাখার শর্তে সময়ে সময়ে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর হিসাবের খাতাপত্র ও লেনদেন তদন্ত করিতে ও করাইতে পারিবে।
(খ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উহার আমানতকারীগণের অথবা পাওনাদারগণের স্বার্থ হানিকর পন্থায় কাজ করিতেছে অথবা জনগণের পাওনা পরিশোধ করার মত ইহার পর্যাপ্ত পরিমাণ সম্পদ নাই অথবা ব্যাংক বিধির পরিপন্থী কার্য করিতেছে বলিয়া বিশ্বাস করার মত সংগত কারণ থাকিলে, যথাযথ কর্তৃপক্ষ গোপন রাখার শর্তে উক্ত ব্যাংকের হিসাবের খাতাপত্র ও লেনদেন তদুন্ত করিতে ও করাইতে পারিবে।
(গ) উপধারা (ক) এবং (খ)-এর অধীনে পরিচালিত তদন্তকালে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট ইহার হিসাবের খাতাপত্র, দলীলপত্র এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্য সরবরাহ করিবে?
তবে শর্ত থাকে যে, যে স্থানে ও যে সময়ে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উহার দৈনন্দিনের স্বাভাবিক কারবার পরিচালনা করে, সেই স্থানে ও সেই সময়ে হিসাবের খাতাপত্র ও দলীলপত্র উপস্থিত করিতে হইবে না।
৪৮
(ঘ) যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরিচালিত পরিদর্শন অথবা তদন্ত চলাকালে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর কোন মক্কেলের সহিত সংশ্লিষ্ট কোন প্রাসঙ্গিক তথ্য পাওয়া গেলে তাহা যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও ব্যাংক কোম্পানীর মধ্যে গোপন থাকিবে।
(ঙ) নিম্নে বর্ণিত তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর কোন কর্মকর্তা বা এমন কোন ব্যক্তি, যিনি ক্ষমতাবলে যে কোনভাবে ব্যাংকের হিসাবের খাতা, নথিপত্র, রেজিষ্ট্রার ইত্যাদি দেখিতে পারেন, তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ব্যতীত ব্যাংকের কোন মক্কেলের টাকা-পয়সা বা প্রাসংগিক বিষয়ের তথ্য প্রদান বা প্রকাশ করিবেন না –
(১) কোন মকেল বা তাহার প্রতিনিধি তৎসম্পর্কিত তথ্য প্রদানের অনুমতি প্রদান করিলে;
(২) কোন মক্কেল দেউলিয়া ঘোষিত হইলে; এবং
(৩) কোন মক্কেলের সহিত সংশ্লিষ্ট কোন প্রকৃত (bongfide) অথবা সম্ভাভ্য (prospective) বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে তাহার আর্থিক সামর্থ্য (credit worhiness) নিরূপণের জন্য তৎসম্পর্কিত তথ্য প্রয়োজন হইলে;
(চ) উপধারা (ঙ)-এর বিধান ধারা (নিরীক্ষণ)-এর অধীনে নিয়োজিত নিরীক্ষকগণ তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়;
(ছ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী প্রতি মাসে নিম্নে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানসমূহকে যে অগ্রিম, ঋণ অথবা ঋণসুবিধা প্রদান করিবে, উহার একটি বিবরণী পরবর্তী মাসের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করিবে –
(১) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর সহিত সংশ্লিষ্ট বলিয়া বিবেচিত রেজিষ্ট্রিকৃত কোন কোম্পানী;
(২) ধারা (বাধানিষেধ)-এর (৪) উপধারায় বর্ণিত কোন কোম্পানী;
(৩) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর কোন পরিচালকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ স্বার্থ জড়িত কোন কোম্পানী।
(জ) উপধারা (ছ)-এ বর্ণিত বিবরণী পরীক্ষান্তে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট যদি প্রতিভাত হয় যে, ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উহার আমানতদারগণের স্বার্থ হানিকর পন্থায় অগ্রিম, ঋণ অথবা ঋণসুবিধা প্রদান করিয়াছে, তাহা হইলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ লিখিত নির্দেশের দ্বারা
৫৪৯
ব্যাংক কোম্পানীকে উক্তরূপ অগ্রিম, ঋণ বা ঋণ সুবিধা মঞ্জুর বারণ করিতে পারে এবং যে অগ্রিম, ঋণ বা ঋণ সুবিধা প্রদান করা হইয়াছে তাহা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আদায় করার বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য কোম্পানীকে নির্দেশ প্রদান করিতে পারে।
(ঝ) উপধারা (জ)-এর অধীনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আরোপিত বাধানিষেধ বা নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করিতে পারিবে এবং উক্ত কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত বিবেচনা করিলে আরোপিত বাধানিষেধ বা নির্দেশ বহাল, পরিবর্তন অথবা প্রত্যাহার করিতে পারে।
(4) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী, বাধ্যবাধকতা পালনে অপারগ বিবেচনা করিলে বা অপারগ হইয়া পড়িলে, ইহার আর্থিক লেনদেন স্থগিত করা উচিৎ মনে করিলে বা স্থগিত করিয়া থাকিলে, বিষয়টি অবিলম্বে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করিবে।
(ট) উপধারা (ঞ)-এ বর্ণিত বিষয় সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর যথাযথ কর্তৃপক্ষ উপধারা (ক) ও (খ)-এর অধীনে তদন্ত করিয়া এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইলে যে, ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী- (i) অসন্তোষজনক (unsound) অথবা অসংগত (Unproper) পন্থায় কাজ করিতেছে;
(i) বাধ্যবাধকতা পালনে অপারগ বিবেচনা করে বা অপারগ অথবা আর্থিক লেনদেন স্থগিত রাখা মনে করে বা স্থগিত করিয়াছে;
(ii) এই আইনের বিধান পালনে ব্যর্থ হইয়াছে বা লঙঘন করিয়াছে; অথবা
(iv) ইহার লাইসেন্স আরোপিত কোন শর্ত পালনে ব্যর্থ হইয়াছে বা লঙঘন করিয়াছে; অথবা
v) ইহার আমানতকারীগণের স্বার্থ হানিকর পন্থায় কাজ করিতেছে;
সেই ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনানুযায়ী উপধারা (জ)-এ বর্ণিত যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারে।
(ঠ) উপধারা (ট)-এর বিধান সাপেক্ষে (Subject to the subsection ট) যথাযথ কর্তৃপক্ষ
৫৫০
(১) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীকে বিষয়টি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের এবং তাহা একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কার্যকর করার নির্দেশ প্রদান করিতে পারে;
(২) নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত পুনরায় অগ্রিম, ঋণ অথবা ঋণ সুবিধা মঞ্জুর করা হইতে ব্যাংক কোম্পানীকে বিরত রাখতে পারে;
(৩) ব্যাংক কোম্পানীর কোন পরিচালককে অপসারণ করিয়া তদস্থলে অপর কোন ব্যক্তিকে পরিচালক নিয়োগ করিতে পারে;
(৪) ব্যাংক কোম্পানীকে ইহার ব্যবসা যথাযথভাবে পরিচালনার প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের জন্য উপদেষ্টা নিয়োগ করিতে পারে;
(৫) ব্যাংক কোম্পানীর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করিতে পারে অথবা এতদুদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ করিতে পারে।
(ড) যথাযথ কর্তৃপক্ষ কোন ব্যক্তিকে- (১) উপধারা (ঠ) (৩)-এর অধীনে পরিচালক নিয়োগ করিলে;
(২) উপধারা (ঠ) (৪)-এর অধীনে উপদেষ্টা নিয়োগ করিলে; (৩) উপধারা (ঠ) (৫)-এর অধীনে নিয়ন্ত্রক নিয়োগ করিলে,
তাহার বেতন-ভাতা ও আনুসঙ্গিক খরচাদির পরিমাণ নিদ্ধারণ করিয়া দিবে এবং তাহা পরিশোধের জন্য ব্যাংক কোম্পানীকে নির্দেশ প্রদান করিবে এবং তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অধীন কর্মচারী হিসাবে গণ্য হইবেন।
(ঢ) যথাযথ কর্তৃপক্ষ উপধারা (ঠ) (৩)-এর বিধান অনুসারে ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কে কার্য করিলে নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থা কার্যকর হইবে
(১) যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অপসারিত পরিচালকের স্থলে শেয়ারহােল্ডারগণের পরিচালক নির্বাচনের ভোটাধিকার মুলতবি থাকিবে।
(২) অপসারিত পরিচালক ব্যাংকের কার্যাবলীতে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন না;
(৩) এই উপধারার [(ঠ) (৩) অধীনে অপসারণ বা নিয়োগদান চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে এবং ইহার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা যাইবে না।
(ণ) (১) যথাযথ কর্তৃপক্ষ উপধারা (ঠ)-এর অধীনে কোন ব্যক্তিকে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর পরিচালক নিয়োগ করিলে তিনি উক্ত উপধারার (ঠ) (৩)] বিধান সাপেক্ষে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকিবেন এবং ব্যাংকের
৫৫১
নামে ও ব্যাংকের পক্ষে কার্য পরিচালনা করিবেন, যে পর্যন্ত না তাহাকে প্রত্যাহার করা হয়;
(২) উপধারা (ঠ) (৫) অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ ইসলামী ব্যাংকের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করিলে, সেই ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত যদি মনে করে যে, শেয়ারহােল্ডারগণের স্বার্থ রক্ষার্থে ব্যাংকের উপর যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের আর প্রয়োজন নাই, তাহ হইলে উক্ত নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহারের নির্দেশ প্রদান করিতে পারে;
(৩) উপধারা (ঠ) (৫)-এর অধীনে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হইলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ তাহা গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করিবেন।
(ত) উপধারা (ঠ) (৫) অনুসারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করিলে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উহার ব্যবসা উক্ত কর্তৃপক্ষ বা পরিচালনার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ বা তাহার নিয়োগকৃত ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও সুবিধা প্রদান করিবে।
(থ) (১) যথাযথ কর্তৃপক্ষ ডিপোজিটরগণের স্বার্থে যদি মনে করেন যে, ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীকে ব্যবসা পরিচালনা হইতে অথবা ব্যাংক ব্যবসার সহিত সংশ্লিষ্ট কোন কার্য সম্পাদন হইতে বিরত রাখার নির্দেশ প্রদান করা উচিত, তবে দ্রুপ নির্দেশ প্রদান করিবে;
(২) উপধারা (১)-এর বিধান বলবৎ থাকা অবস্থায় এই আইনের অধীন ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীকে প্রদত্ত লাইসেন্সের কার্যকারিতা স্থগিত থাকিবে;
(৩) উপধারা (১)-এর অধীন কোন নির্দেশ প্রদান করা হইলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ তাহা গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করিবেন।
ধারা-১১০১ স্মারকপত্র ও সংঘস্মারক সংশোধন (ক) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী ইহার স্মারকপত্র, সংঘস্মারক বা অনুরূপ কোন দলীল সংশোধন বা পরিবর্তন করিতে চাহিলে তাহার অনুমতি লাভের জন্য প্রস্তাবিত সংশোধনী বা পরিবর্তনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে লিখিতভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করিবে।
৫৫২
(খ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী ইহার স্মারকপত্র, সংঘস্মারক বা অনুরূপ কোন দলীল সংশোধন অথবা পরিবর্তন করার পর তাহা অন্যূন তিন মাসের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করিবে।
ধারা-১১০২। ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর মালিকানা নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা
(ক) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয়ে কোন নীতিগত পরিবর্তন আনয়নের প্রয়োজন হইলে উক্ত প্রস্তাবিত পরিবর্তন সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে অবহিত করিবে।
(খ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী অন্য কোন ব্যাংক কোম্পানী বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ইহার পরিশোধিত শেয়ার মূলধনের ২০% বা উহার অধিক জামানত রাখিয়া ঋণ বা অগ্রিম প্রদান করিতে চাহিলে বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করিতে হইবে।
(গ) উপধারা (খ)-এ উল্লেখিত প্রতিবেদনে নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত হইবে। (১) ঋণ বা অগ্রিম গ্রহণকারীর নাম-ঠিকানা;
(২) ঋণ বা অগ্রিম গ্রহণকারীর ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম; (৩) ঋণ বা অগ্রিমের বিপরীতে প্রদত্ত জামানতী শেয়ারের সংখ্যা; এবং (৪) ঋণ বা অগ্রিমের পরিমাণ।
(ঘ) এই ধারায় বর্ণিত বিষয়ে অন্য কোন আইনের অধীনে কোন প্রতিবেদন দাখিল বাধ্যতামূলক হইলে উপধারা (ক) ও (খ)-এ বর্ণিত প্রতিবেদন উহার অতিরিক্ত গণ্য হইবে।
(ঙ) এই ধারায় নিয়ন্ত্রণ” শব্দটি ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর ব্যাবস্থাপনা পরিচালনা ও নীতি নির্ধাণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষমতাধিকারকে বুঝায়।
ধারা-১১০৩ ব্যাংকের পুনর্বিন্যাস ও পুনর্গঠন পরিকল্পনা ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী ইহার – (ক) শেয়ার অথবা ব্যবসা বিক্রয় অথবা হস্তান্তর করিতে চাহিলে;
(খ) পুনর্বিন্যাস করিতে চাহিলে এবং তাহাতে ইহার ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসন্ন হইলে বা ভোটিং ক্ষমতা প্রভাবিত হইলে;
।
(গ) ব্যবসা অন্য কোন কোম্পানীর সহিত একীভূত (Amolgomotion or merger) করিতে চাহিলে, যাহার ফলে ব্যাংকের আংশিক অথবা সমস্ত ব্যবসা বা সম্পত্তি অন্য কোম্পানীতে স্থানান্তরিত হয়;
তাহা লিখিতভাবে অবহিত করিয়া যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাভ করিতে হইবে।
(ঘ) যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবিত পুনর্গঠন, চুক্তি অথবা পরিকল্পনা অনুমোদন অথবা প্রত্যাখ্যান করিতে পারেন, কিন্তু অযৌক্তিকভাবে মওকুফ রাখিবেন না।
ধারা-১১০৪ ব্যাংকের পরিচালক ও কর্মচারীদের অযোগ্যতা
(disqualification) (ক) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর ব্যবস্থাপনার সহিত সংশ্লিষ্ট কোন পরিচালক, ব্যবস্থাপক, সচিব বা অপর কোন কর্মকর্তা স্বীয় পদ হইতে অপসারিত হইবেন, যদি তিনি
(১) দেউলিয়া ঘোষিত হন, অর্থ প্রদান বন্ধ রাখেন অথবা তাহার পাওনাদারগণের সহিত আপোসে মিটমাট করেন (Compound with his
creditors); sperat
(২) অসততা বা প্রতারণামূলক কোন নৈতিক অপরাধে অভিযুক্ত হন।
(খ) আদালত কর্তৃক ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর পরিসমাপ্তি ঘটিলে (Wound up), উক্ত ব্যাংকের কোন ব্যক্তি, যিনি উহার পরিচালক ছিলেন অথবা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালনার সহিত সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমোদন (guthority) ব্যতীত কোন ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর পরিচালক হইতে পারিবেন না বা সরাসরি উহার ব্যবস্থাপনার সহিত সংশ্লিষ্ট হইতে পারিবেন না।
ধারা-১১০৫
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর শাখা (ক) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী দেশের যে কোন এলাকায় উহার শাখা খুলিতে পারিবে।
৫৫৪
(খ) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী বৰ্হিদেশের ব্যাংকসমূহের সহিত অনুরূপ ব্যাংক ব্যবসা সংক্রান্ত যোগাযোগ স্থাপন করিতে পারিবে?
তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ ব্যাংকের সহিত কোন সূদী কারবার করিতে পারিবে না।
বিশ্লেষণ
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উহার ব্যবসার প্রসার ও সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য প্রয়োজন মনে করিলে দেশের যে কোন এলাকায় উহার এক বা একাধিক শাখা খুলিতে পারিবে। এইভাবেই গ্রাহক সেবা, পুঁজি সগ্রহ ইত্যাদি কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা যাইতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য দেশের গণ্ডি অতিক্রম করিয়া আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হওয়ার ফলে ব্যাংকিং সেবা, পুঁজি সরবরাহ, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আদান-প্রদান সহজতর করার জন্য ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী বিদেশের ব্যাংকসমূহের সহিত প্রতি সম্পর্ক (Corresponding relationship) স্থাপন করিতে পারিবে। তবে সেই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সহিত ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী কোনরূপ সূদী লেনদেন করিতে পারিবে না।
ধারা-১১০৬ ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর মূলধন (capital Fund) নিম্নে উল্লেখিত শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উহার ব্যবসা আরম্ভ করিতে পারিবে –
(ক) উহার প্রতিশ্রুত মূলধন উহার অনুমোদিত মূলধনের অর্ধেকের কম হইবে না;
(খ) উহার আদায়কৃত মূলধন প্রতিশ্রুত মূলধনের অর্ধেকের কম হইবে
;
(গ) উহার মূলধন শুধুমাত্র সাধারণ শেয়ার সমন্বয়ে গঠিত হইবে।
ব্যাখ্যা (ক) মূলধনের যেই পরিমাণ কোম্পানীর উদ্যোক্তাগণ প্রদান করিবার অঙ্গিকার করেন তাহাই প্রতিশ্রুত মূলধন। (খ) সর্বোচ্চ যেই পরিমাণ মূলধনসহ কোন কোম্পানী নিবন্ধিত হয় তাহাকে অনুমোদিত মূলধন বলে?
তবে শর্ত থাকে যে, ইহার পরিমাণ বর্ধিত করিতে হইলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণ করা আবশ্যক।
৫৫৫
(গ) অনুমোদিত মূলধনের যে পরিমাণ (শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে জনগণের নিকট বিক্রয়ের জন্য পত্রিকার মাধ্যমে প্রচার করা হয় বা ষ্টক এক্সেঞ্জে তালিকাভুক্ত করা হয় তাহাকে “বিলিযোগ্য মূলধন” বলে।
(ঘ) বিলিযোগ্য মূলধনের যে অংশ ক্রয়ের জন্য জনগণের নিকট হইতে দরখাস্ত পাওয়ার পর তাহাদের মধ্যে বণ্টন করা হয় তাহাকে “বণ্টনকৃত মূলধন” (Subscribed capital) বলে।
(ঙ) বণ্টনকৃত মূলধনের যে পরিমাণ “শৈয়ারপত্র” বিক্রয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় তাহাকে “পরিশোধিত মূলধন” বলে।
(চ) অনুমোদিত মূলধনকে যে অসংখ্যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একক-এ বিভক্ত করা হয়, উহার প্রতিটি একক-কে ‘শেয়ার’ বলে।
(ছ) শেয়ারপত্রকে “শেয়ার সার্টিফিকেট” বলে।
(জ) শেয়ারপত্রের অধিকারী ব্যক্তিকে “শেয়ারহােল্ডার” (ShareHolder) বলে।
(ঝ) বৎসরশেষে কোম্পানীর যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ ও দাবি পূরণের পর মোট লাভের যে অংশ শেয়ারহােল্ডারগণের মধ্যে বণ্টন করা হয় সেই অংশকে “লভ্যাংশ” বলে।
বিশ্লেষণ
কোন কোম্পানী যে অর্থ-সম্পদের সাহায্যে উহার কারবার পরিচালনা করে তাহাকে মূলধন’ বা ‘পুঁজি’ (capital) বলে। অর্থাৎ কোম্পানীর মূলধন বলিতে ইহার নগদ অর্থ এবং স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিকে বুঝায়। মূলধনের যে অংশ স্থাবর সম্পত্তি, যথা জমি, বাড়ি-ঘর, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য ব্যবহার করা হয় তাহা স্থায়ী মূলধন এবং অবশিষ্ট মূলধনকে চলতি মূলধন বলা হয়, যাহার সাহায্যে উৎপাদনকার্য ও দৈনন্দিনের ব্যয় বহন করা হয়। এই মূলধনের একটি অংশ কোম্পানী উদ্যোক্তাগণ যোগান দিয়া থাকেন এবং একটি অংশ শেয়ার সার্টিফিকেট বিক্রয়ের মাধ্যমে জনসাধারণের নিকট হইতে সগ্রহ করা হয়।
মূলধনের যেই পরিমাণ ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর উদ্যোক্তাগণ প্রদানের অঙ্গিকার করেন তাহাই প্রতিশ্রুত (Promised) মূলধন। ইহাকে উদ্যোক্তা মূলধনও (Interprenvers copital) বলা হয়। সর্বোচ্চ যেই পরিমাণ মূলধনসহ কোন কোম্পানী নিবন্ধিত হয় তাহাই অনুমোদিত (Authorised) মূলধন। ইহাকে
৫৫৬
নিবন্ধিত (Registered) মূলধন সাধারণ (Nominal) মূলধনও বলে। কোন কোম্পানী উহার মূলধন উক্ত পরিমাণের অধিক বর্ধিত করিতে পারে না, অবশ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে বর্ধিত করা যাইতে পারে। এই মূলধন আবার বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন নামে অভিহিত। যেমন অনুমোদিত মূলধনের যে অংশ (নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ারে বিভক্ত করিয়া) জনসাধারণের নিকট বিক্রয়ের জন্য পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে প্রচার করা হয় বা ষ্টক একচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করা হয় তাহাকে বিলিযোগ্য মূলধন (Issued capital) বলে। আবার বিলিযোগ্য মূলধন ক্রয়ের জন্য জনগণের নিকট হইতে দরখাস্ত পাওয়ার পর তাহাদের মধ্যে যে পরিমাণ বণ্টন করা হয় তাহাকে বণ্টনকৃত মূলধন (Subscribed capital) বলে। বণ্টকৃত মূলধনের যে পরিমাণ শেয়ার সার্টিফিকেট বিক্রয়ের মাধ্যমে সগ্রহ করা হয় তাহাকে পরিশোধিত মূলধন (Paid up capital) বলে। এই পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ অন্তত প্রতি মূলধনের অর্ধেক হইলেই কোম্পানী তাহার ব্যবসা শুরু করিতে পারে।
কোম্পানীর অনুমোদিত মূলধনকে নির্দিষ্ট মূল্যের কতগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এককে বিভক্ত করা হয়, ইহাদের প্রতিটি একককে শেয়ার বলে। অর্থাৎ শেয়ার হইল কোম্পানীর মোট মূলধনের এক একটি ক্ষুদ্র অংশ। ১৯৯৩ সালের কোম্পানী আইনের ২০১ (১৬) ধারায় বলা হইয়াছে? “Share means Share in the share capital of the Company”.
শেয়ার আবার বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত, যেমন সাধারণ (Ordinary) শেয়ার, অগ্রাধিকার (Preference) শেয়ার, সঞ্চয়ী অগ্রাধিকার (Cumulative Preference) শেয়ার (ইহা আবার কয়েক উপ-শ্রেণীতে বিভক্ত), বিলম্বিত দাবিযুক্ত শেয়ার, অধিবৃত্তি শেয়ার, অনাকাঙ্খিত (Non-per value) শেয়ার ইত্যাদি। এইসব শেয়ারের মধ্যে কেবল সাধারণ শেয়ার ব্যতীত, শরীআ আইনের দৃষ্টিকোণ হইতে সুস্পষ্ট কারণে অন্যান্য সর্বপ্রকার শেয়ার অননুমোদনযোগ্য। সুতরাং ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর মূলধন কেবল সাধারণ শেয়ারে বিভক্ত হইবে।
ও. আই. সি. (ইসলামী সম্মেলন সংস্থা)-এর অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ফিকহ একাডেমী উহার ৯-১৪ মে, ১৯৯২ / ৭-১২ যুলকাদা, ১৪১২ তারিখে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত সভায় সাধারণ শেয়ার ও অগ্রাধিকার শেয়ার সম্পর্কে অনুরূপ সিদ্ধান্তই প্রদান করিয়াছে। উক্ত সিদ্ধান্তের ইংরাজী সংস্করণে বলা হইয়াছেঃ।
Since the sale of a “bearer Share” involves a well identified portion of the company assests, and the share certificate is a document which attests to entitlement to the
৫৫৭
said portion, there is no objection in shariah to the company issuing and circulating shares in this manner.
It is not permissible to issue preferance shares with financial characteristics that involve guaranted payment of the capital or of a certain amount of profit or ensure precedence over other shares at the time of liqudation of distribution of dividends.
The addtion of a certain percentage to the value of the share to cover the issue expeness raises no objection in shariah as long as the estimated percentage is reasonable (পৃ.৩)।
ধারা-১১০৭
শরীআ বাের্ড গঠন (ক) একাধিক বিশেষজ্ঞ আলেম এবং ব্যবসা, অর্থনীতি ও দেশের আইন সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণের সমন্বয়ে শরীআ বাের্ড গঠিত হইবে।
(খ) সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী শরীআ বাের্ডের সদস্য হইবেন না।
(গ) শরীআ বাের্ডের সদস্যগণ স্বাধীনভাবে তাহাদের অভিমত প্রদান করিবেন এবং ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর কোন কার্যক্রম বা পরিকল্পনা ইসলামী শরীআর পরিপন্থী হইলে তাহা যুক্তি-প্রমাণসহ ব্যাংক কোম্পানীর পরিচালক পর্ষদকে জানাইয়া দিবেন।
(ঘ) ব্যাংক কোম্পানীর স্বার্থ অথবা উহার কার্যক্রমের সহিত সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে পরিচালক পর্ষদ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলে তাহা বাস্তবায়িত করার পূর্বে সেই সম্পর্কে শরীআ বাের্ডের অনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে।
(ঙ) ব্যাংক কোম্পানী কোন বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণ করিলে তাহা বাস্তবায়িত করার পূর্বে শরীআ বাের্ডের অনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে।
(চ) ব্যাংক কোম্পানীর কর্মচারীগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইলে উহা শরীআত কর্তৃক অনুমোদনযোগ্য কিনা তাহা শরীআ বোের্ড কর্তৃক যাচাই করাইয়া নিতে হইবে।
(ছ) শরীআ বাের্ড ব্যাংক কোম্পানীকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করিবে।
বিশ্লেষণ
কোন আর্থিক বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লেনদেন কেবল সূদমুক্ত হইলেই উহা ইসলামী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় না। উহার সমুদয় কার্যক্রম ইসলামী শরীআ মোতাবেক পরিচালিত হইলেই উহাকে ইসলামী প্রতিষ্ঠান বলা যায়। ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর যাবতীয় কার্যক্রম যাহাতে শরীআ মোতাবেক পরিচালিত হয় তাহা নিশ্চিত করার জন্য ইহার সহিত একটি শরীআ বাের্ড সংশ্লিষ্ট থাকিবে।
বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগণের সমন্বয়ে শরীআ বাের্ড গঠিত হইবে। উহার সদস্যগণের মধ্যে বিশেষজ্ঞ আলেমও থাকিবেন এবং অর্থনীতি, ব্যাংক ব্যবসা ও দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে অভিজ্ঞ ধর্মভীরু ব্যক্তিগণও থাকিবেন। ব্যাংক কোম্পানীর কোন কর্মকর্তা উক্ত বাের্ডের সদস্য হইতে পারিবেন না। কারণ নিম্নপদস্থ কর্মকর্তাগণ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বা পরিচালক পর্ষদ কর্তৃক প্রভাবিক হইতে পারেন এবং উহার বিরূপ প্রতিক্রিয়া শরীআ বাের্ডের স্বাধীন অভিমত গ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করিতে পারে।
শরীআ বাের্ডের সদস্যগণ যথাসম্ভব স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তাহাদের মতামত প্রদান করিবেন, যাহাতে প্রকৃত সত্যে উপনীত হওয়া সহজতর হইতে পারে। ব্যাংক কোম্পানী কোন পরিকল্পনা বা কার্যক্রম গ্রহণ করিলে তাহার মধ্যে শরীআর বিপরীত কোন উপাদান থাকিলে শরীআ বাের্ডের সদস্যগণ যুক্তি-প্রমাণসহ তাহা নির্দেশ করিবেন। অন্যদিকে এই ব্যাপারে পরিচালক পর্ষদেরও দায়িত্ব রহিয়াছে। তাহারা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলে উহা বাস্তবায়নের পূর্বে শরীআ বাের্ডের মতামত গ্রহণ করিবেন, যাহাতে উহার মধ্যে শরীআ বিরোধী কিছু না থাকিতে পারে।
বিনিয়োগ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও উহার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে শরীআ বাের্ডকে অবহিত করা উচিত যাহাতে উহার সার্বিক দিক শরীআ মোতাবেক হইতে পারে। শরীআ বাের্ড স্বীয় উদ্যোগে প্রয়োজনবােধে ব্যাংক কোম্পানীকে বিভিন্নরূপ পরামর্শ প্রদান করিয়া উহার কার্যক্রমকে সহজতর করিতে পারে। এই বাের্ডের প্রত্যেক সদস্যের মনে রাখা দরকার যে, ইসলামের একটি মহৎ ও বৃহৎ কাজের বােঝা তাহাদের উপর ন্যস্ত হইয়াছে। ব্যাংকের কোন কার্যক্রমে শরীআর বিধান লংঘিত হইলে উহার জন্য তাহাদেরও দুর্নাম হইতে পারে। তাই এই বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি থাকিতে হইবে। বাংলাদেশে এই পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে এবং ইহার প্রতিটির সহিত একটি করিয়া স্বতন্ত্র শরীআ বাের্ড। কাউন্সিল সংশ্লিষ্ট রহিয়াছে।
ধারা-১১০৮ ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর বিনিয়োগ ও তম্মাধ্যমে আয়ের পদ্ধতি ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী
(ক) মুরাবাহা পদ্ধতিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে (খ) মুদারাবা পদ্ধতিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে; (গ) বাই মুআজ্জাল পদ্ধতিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে; (ঘ) মুশারাকা পদ্ধতিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে; (ঙ) বাই সালাম পদ্ধতিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে; (চ) নিলামে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগের মাধ্যমে; (ছ) ভাড়া ক্রয় পদ্ধতিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে; (জ) ইজারা পদ্ধতিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে; (ঝ) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিনিয়োগের মাধ্যমে
(ঞ) নিজস্বভাবে উদ্ভাবিত সঞ্চয় বিনিয়োগ প্রকল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে;
(ট) অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে; উহার আয় অর্জন করিবে।
বিশ্লেষণ
গ্রাহকের নিক”ত চুক্তিপত্রে উল্লেখিত ব্যাংক নিজস্ব
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উহার তহবিল মুরাবাহা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করিতে পারে। গ্রাহকের সহিত পূর্ব নির্ধারিত চুক্তির ভিত্তিতে ব্যাংক নিজস্ব তহবিল দ্বারা মাল ক্রয় করিয়া উহার সহিত চুক্তিপত্রে উল্লেখিত পরিমাণ মুনাফা যোগ করিয়া উহা পুনরায় গ্রাহকের নিকট বিক্রয় করা মুরাবাহা পদ্ধতি হিসাবে গণ্য। এই ক্ষেত্রে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ব্যাংক কোম্পানী নগদ মূল্য গ্রহণের পর মাল সরবরাহ করিতে পারে অথবা কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের ভিত্তিতেও সরবরাহ করিতে পারে। মুরাবাহা পদ্ধতিতে মালের ক্রয়মূল্য ও যোগকৃত মুনাফা পৃথকভাবে উল্লেখ করিতে হয় এবং তাহা মক্কেলকে অবহিত করিতে হয়। বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য ধারা (২৪০) ও উহার অধীন বিশ্লেষণ
দেখা যাইতে পারে।
৫৬০
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী মুদারাবা পদ্ধতিতেও উহার তহবিল বিনিয়োগ করিতে পারে। ব্যাংক কোম্পানী মুদারাবা পদ্ধতিতে আমানত গ্রহণ করিয়া উহা আবার মুদারাবা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করিতে পারে। আমানত গ্রহণকালে আমানতকারী হয় পুঁজির যোগানদার এবং ব্যাংক হয় মুদারিব এবং বিনিয়োগকালে ব্যাংক হয় পুঁজির যোগানদার এবং গ্রাহক বা বিনিয়োগকারী হয় মুদারিব। মুদারাবা পদ্ধতিতে বিনিয়োগে ব্যাংক অর্থের যোগান দেয় এবং বিনিয়োগকারী গ্রাহক তাহার সময়, বুদ্ধিমত্তা ও শ্রম ব্যয় করিয়া মুদারাবা ব্যবসা পরিচালনা করে। মুদারাবা বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য ধারা (২৫০), (২৫১) ও (২৫২) এবং উহার অধীন বিশ্লেষণ
দেখা যাইতে পারে।
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী বাই মুআজ্জাল পদ্ধতিতেও ইহার তহবিল বিনিয়োগ করিতে পারে। ভবিষ্যতে কোন নির্দিষ্ট সময়ে একসাথে বা কিস্তিতে মূল্য পরিশোধ করার শর্তে পণ্য সামগ্রি বিক্রয় করাকে বাই মুআজ্জাল বলে। কোন গ্রাহক যদি ইসলামী ব্যাংকের নিকট হইতে পণ্য ক্রয় করিতে চায় কিন্তু উহার মূল্য নগদ পরিশোধ না করিয়া ভবিষ্যতে কোন নির্দিষ্ট তারিখে একসংগে অথবা নির্ধারিত কিস্তিতে পরিশোধ করার প্রস্তাব দেয়, তাহা হইলে ব্যাংক উক্ত পণ্য ক্রয় করিবার পর বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করিয়া চুক্তি মোতাবেক মূল্য পরিশোধ করার শর্তে গ্রাহককে সরবরাহ দেয়। ব্যাংক যে মূল্যে পণ্য ক্রয় করে তাহার সহিত মুনাফা যোগ করিয়া বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে। বাই মুআজ্জাল পদ্ধতিতে ব্যাংকের ক্রয়মূল্য ও মুনাফা পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখের প্রয়োজন নাই, কেবল বিক্রয় মূল্য উল্লেখ করাই যথেষ্ট। এই ক্ষেত্রে ব্যাংক তাহার মক্কেলকে পণ্যের ক্রয়মূল্য অবহিত করিতে বাধ্য নহে।
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী মুশারাকা পদ্ধতিতেও উহার তহবিল বিনিয়োগ করিতে পারে। মুশারাকা বা অংশীদারিত্ব পদ্ধতি হইল ব্যাংকের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ পদ্ধতি। অংশীদারী বা যৌথ মূলধনী কারবারে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মূলধন বিনিয়োগ করিয়া একত্রে ব্যবসা পরিচালনা করে এবং উদ্ভূত লাভ বা লোকসানে চুক্তি মোতাবেক অংশীদার হয়। মুশারাকা কারবারে ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়ে মূলধন বিনিয়োগ করে, কারবার পরিচালনায় অংশগ্রহণ করিতে পারে এবং উভয় পক্ষ একে অপরের প্রতিনিধি বা ট্রাস্টি হিসাবে কাজ করে। ব্যবসায়ে লাভ হইলে তাহা পূর্ব নির্ধারিত অনুপাতে উভয়ে ভাগ করিয়া নেয় এবং লোকসান হইলে স্ব স্ব পুঁজির আনুপাতিক হারে তাহা বহন করে। কারবারের স্বাভাবিক ও অপরিহার্য খরচ কারবারের আয় হইতে মিটানো হয় এবং কেবল নীট (প্রকৃত) লাভ বা ক্ষতি
৫৬১
অংশীদারগণের মধ্যে বন্টন করা হয়। শরীআ আইনে বিভিন্ন প্রকার মুশারাকার কথা বলা হইয়াছে। এই সম্পর্কে ধারা (২৪১) হইতে ধারা (২৪৯) পর্যন্ত এবং উহার
অধীন বিশ্লেষণ
দেখা যাইতে পারে।
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী বাই সালাম পদ্ধতিতেও উহার তহবিল বিনিয়োগ করিতে পারে। ইহা আসলে একটি আগাম ক্রয় পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ব্যাংক কোন পণ্য ক্রয় করার শর্তে মূল্য নির্ধারণ করিয়া বিক্রেতাকে উহা অগ্রিম পরিশোধ করিয়া দেয়। অতঃপর বিক্রেতা চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে সংশ্লিষ্ট পণ্য ব্যাংকের নিকট হস্তান্তর করে। সাধারণত কৃষি ও কুটির শিল্পের জন্য এই পদ্ধতি অধিক উপযোগী ও সহায়ক। ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী বাই সালাম পদ্ধতিতে ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করিয়া কৃষক ও কুটির শিল্পীদের উৎপাদিত পণ্য অগ্রিম ক্রয়ের ভিত্তিতে ফসল বপন ও উৎপাদনকালে তাহাদের প্রয়োজনীয় অর্থ যোগান দিতে পারে। এই পদ্ধতিতে ক্রীত পণ্য বিক্রয় করিয়া লোকসান হইলে অথবা উহা ব্যাংকের দখলে থাকা অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হইলে উহার সম্পূর্ণ দায় ব্যাংক বহন করে। রপ্তানী ভিত্তিক শিল্পের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী বাই সালাম পদ্ধতিতে শিল্পের উৎপাদনযোগ্য পণ্য অগ্রিম ক্রয় করিতে পারে। বাই সালাম সম্পর্কে জানার জন্য ধারা (২৩২) হইতে ধারা (২৩৯) এবং উহার অধীন বিশ্লেষণ
দেখা যাইতে পারে।
কোন ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী এককভাবে অথবা কয়েকটি ব্যাংক কোম্পানী যৌথভাবে গঠিত কোন কনসোর্টিয়াম কোন প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করিয়া সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ যোগান দেওয়ার শর্তে উক্ত প্রকল্প পরিকল্পনা প্রকাশ্য নিলামে বিক্রয় করিলে উহাকে বিনিয়োগ নিলাম (Investment Auctioning) বলা হয়। এই পদ্ধতিতে ব্যাংকে কোন প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করিয়া তাহা নিলামে দিতে পারে অথবা প্রকল্পের যাবতীয় কাজ শেষ করিয়া উৎপাদন শুরু করার পূর্বে অথবা পরে অথবা প্রকল্পের যে কোন পর্যায়ে তাহা নিলামে দিতে পারে। ব্যাংক প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন খরচ, প্রকল্পের সম্ভাব্য সুনাম (Goodwill) মূল্য এবং ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত তহবিল ও মুনাফা হিসাব করিয়া প্রকল্পের একটি সংরক্ষিত দাম স্থির করে। অতঃপর ডাকদাতাহাদের নিকট হইতে প্রাপ্ত দরপত্র যাচাই করিয়া সর্বোচ্চ ডাকদাতাহাদের নিকট অথবা সর্বদিক বিবেচনায় ভাল মনে করিলে যে কোন ডাকদাতার নিকট প্রকল্প বিক্রয় করিতে পারে। ক্রেতা চুক্তি মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অথবা কিস্তিতে মূল্য পরিশোধ করিতে পারে।
৫৬২
কোন কোন বিশেষজ্ঞ অবশ্য বিনিয়োগ নিলাম শরীআত অনুযায়ী বৈধ হওয়ার ব্যপারে সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন। তাহাদের মতে উহাতে সূদের আশংকা আছে। সেজন্য ডঃ এম উমার চাপরা ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীকে শেয়ার ইস্যু করার মাধ্যমে এই ধরনের প্রকল্প বাস্তাবায়ণের পরামর্শ প্রদান করিয়াছেন। অবশ্য সর্বক্ষেত্রে এই প্রকল্পে সূদের আশংকা নাই। যেমন কোন ব্যাংক কোম্পানী বাড়িঘর নির্মাণ করিয়া উহা নিলাম ডাকে বিক্রয় করিলে তাহা হইতে প্রাপ্ত আয় নিঃসন্দেহে মুনাফার অন্তর্ভুক্ত।
ভাড়াক্রয় পদ্ধতিতেও ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উহার তহবিল বিনিয়োগ করিতে পারে। এই পদ্ধতিতে দুইভাবে ব্যাংক উহার তহবিল খাটাইতে পারে। (এক) আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহিত যৌথভাবে সম্পত্তি বা প্রয়োজনীয় বস্তু ক্রয় করিয়া ব্যাংক উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট উহা ভাড়া দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে পুঁজির অনুপাত অনুযায়ী সম্পদের উপর উভয়ের মালিকানা বিদ্যমান থাকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উক্ত সম্পদ ভোগ-ব্যবহার করে। সম্পদ ভোগ-ব্যবহারকারীদের চুক্তিমত ব্যাংকের প্রাপ্য ভাড়া ও ক্রয়মূল্যের অংশ কিস্তিতে পরিশোধ করিয়া নিজ মালিকানার পরিমাণ বর্ধিত করিতে থাকে। ব্যাংকের মালিকানার পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার সংগে সংগে উহার প্রাপ্য ভাড়ার পরিমাণও হ্রাস পাইতে থাকে। অবশেষে সম্পদ ভোগ-ব্যবহারকারী উহার পূর্ণ মালিক হইয়া যায়। এই পন্থাকে “শিকাতুল মিলক” ভিত্তিক ভাড়া-ক্রয় (Hire purchase under Shirkatul Milk) বলা যাইতে পারে।
(দুই) ইসলামী ব্যাংক সম্পত্তি ক্রয় করিয়া কিস্তিতে উহার মূল্য ও মাসিক ভাড়া পরিশোধ করার চুক্তিতে উহা কোন গ্রাহকের ভোগ-ব্যবহারে অর্পণ করে। এই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ক্রয়মূল্য পরিশোধিত না হওয়া পর্যন্ত সম্পত্তির উপর ব্যাংকের মালিকানা বহাল থাকে। সমস্ত কিস্তির অর্থ পরিশোধিত হওয়ার পরপরই ব্যাংক উক্ত সম্পত্তির মালিকানা গ্রাহকের নিকট হস্তান্তর করে।
ইহা ছাড়া ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উহার তহবিল দ্বারা সম্পত্তি ক্রয় করিয়া নিজ মালিকানায় রাখিয়া ভাড়া প্রদানের চুক্তিতে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ইজারা দিতে পারে। ইজারা ও ভাড়াক্রয়ের মধ্যে পার্থক্য এই যে, ভাড়াক্রয় পদ্ধতিতে চুক্তি মোতাবেক এক পর্যায়ে সম্পত্তির ভোগদখলকারী উহার মালিক হইয়া যায় এবং ব্যাংকের মালিকানার পরিসমাপ্তি ঘটে। অপরদিকে ইজারা পদ্ধতিতে ইজারাদার কেবল ভাড়া প্রদানের বিনিময়ে সম্পত্তি ভোগদখল করে এবং ইজারার মেয়াদ শেষ হইয়া গেলে উক্ত সম্পত্তি মূল মালিকের ভোগদখলে চলিয়া আসে।
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী তিন পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উহার গ্রাহককে মাল আমদানীর ক্ষেত্রে সহায়তা দান করিয়া লাভবান হইতে পারে। যে ক্ষেত্রে ব্যাংক কেবল গ্রাহকের প্রয়োজন মাফিক তাহার প্রতিনিধি (ওয়াকীল) হিসাবে কাজ করে, ঋণপত্র ভোলার জন্য ব্যাংক গ্রাহকের নিকট হইতে পণ্য তালিকায় (Proformg Invoice বা Indent) বর্ণিত মালামালের সম্পূর্ণ বা আংশিক মূল্য জমা নিবে। ব্যাংক বিশ্বস্ততার গ্যারান্টি হিসাবে গ্রাহকের নিকট হইতে জামানতও গ্রহণ করিতে পারে। ঋণপত্র খােলা সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ, যেমন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি, যাতায়াত খরচ, ডাক খরচ, টেলেক্স, টেলিফোন, ফ্যাক্স ইত্যাদি রচ, চুক্তি মোতাবেক গ্রাহকের নিকট হইতে সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করিবে এবং ইহা ব্যাংকের আয় বা মুনাফা হিসাবে গণ্য হইবে। এই ক্ষেত্রে “ওয়াকালা”-এর নীতিমালা অনুসরণ করিতে হইবে (ওয়াকালার জন্য, ধারা (৬৬৩) হইতে (৬৭২) এবং উহার অধীন বিশ্লেষণ
দেখা যাইতে পারে)।
(দুই) ঋণপত্র খােলার ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী প্রতিনিধির ভূমিকায় না গিয়া শিরকাতুল ইনান” পদ্ধতির অনুসরণ করিতে পারে। কোন অংশীদারী কারবারে অংশীদারগণের মূলধনের পরিমাণ, লাভ-লোকসানের অংশ, দায়িত্ব ও কর্তব্য অসম হইলে উক্ত কারবারকে ‘শিরকাতুল ইনান’ বলে। এই পদ্ধতিতে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী ও গ্রাহক মূলধন ও শ্রম ব্যয় করিয়া মাল আমদানী করিবে। ঋণপত্র খােলার যাবতীয় খরচ ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়ে বহন করে। আমদানীকৃত মালের মুনাফা চুক্তি অনুযায়ী উভয়ের মধ্যে বণ্টিত হইবে এবং লোকসানের ক্ষেত্রে মূলধনের হার অনুযায়ী উভয়ে উহা বহন করিবে।
এই ক্ষেত্রে “বাই মুআজ্জাল” ও “বাই মুরাবাহা” পদ্ধতিও অনুসরণ করা যাইতে পারে। ভবিষ্যতে মূল্য পরিশোধের চুক্তিতে পণ্য বিক্রয় করাকে” বাই মুআজ্জাল বলে এবং “ক্রয়মূল্যের সহিত লাভের অংশ যোগ করিয়া ক্রীত পণ্য পুনরায় বিক্রয় করাকে” বাই মুরাবাহা বলে। এই ক্ষেত্রে ঋণপত্র খােলার অর্থ এবং উহার আনুসংগিক ব্যয় ব্যাংক একাই বহন করে।
অনুরূপভাবে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী পণ্য রপ্তানীর ক্ষেত্র আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উহার গ্রাহককে সেবা দান করিয়া কমিশন ও সার্ভিস চার্জ লাভ করিতে পারে। ব্যাংক মুশারাকা ভিত্তিতে গ্রাহককে রপ্তানীযোগ্য পণ্য উৎপাদনে বা সংগ্রহে এবং উহা জাহাজে বােঝাইয়ে সহায়তা করিয়াও লাভবান হইতে পারে। অনন্তর ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক সঞ্চয় বিনিয়োগ প্রকল্পেও উহার তহবিল বিনিয়োগ করিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ
৫৬৪
লিমিটেড সমাজের স্বল্প আয়ের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও আত্মকর্ম সংস্থানের লক্ষ্যে কতিপয় কল্যাণমুখী প্রকল্প চালু করিয়াছে। ক্ষুদ্র যানবাহন প্রকল্পের অধীনে শিক্ষিত বেকার যুবকদিগকে সহজ শর্তে ক্ষুদ্র যানবাহন ক্রয় করিয়া দেওয়া হয়। যুবকরা যানবাহনের আয় হইতে দায় শোধ করিয়া অবশেষে সংশ্লিষ্ট যানের মালিকানা প্রাপ্ত হয়। তরুণ ডাক্তারগণকে চিকিৎসা পেশায় সহায়তা করার জন্য গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা সুবিধা পৌছাইয়া দেওয়ার লক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ “ডাক্তার বিনিয়োগ প্রকল্প চালু করিয়াছে। ইহার অধীনে ব্যাংক ডাক্তারগণকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয় করিয়া দেয় এবং চেম্বার বা ক্লিনিক স্থাপনে আর্থিক সহায়তা দান করে। ডাক্তারগণ তাহাদের আয় দ্বারা ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করিতে থাকে। অনুরূপভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রকল্প, কৃষি সর মি প্রকল্প, পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প, গৃহায়ন বিনিয়োগ প্রকল্প, হকার বিনিয়োগ প্রকল্প ইত্যাদিতে ব্যাংক উহার তহবিল বিনিয়োগ করিয়া অর্থ উপার্জন করে।
ইহা ব্যতীত ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী আরও বহু রকমারি ব্যাংকিং সেবা দান করিয়া অর্থ উপার্জন করিতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয়, নগদ অর্থ হস্তান্তর ও স্থানান্তর (ড্রাফট, পেঅর্ডার, টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফার, মানি অর্ডার ট্রান্সফার ইত্যাদি পদ্ধতিতে), গ্রাহকের মূল্যবান দলীলপত্র ও অলংকারাদির নিরাপদ সংরক্ষণ, গ্রাহকের চেক ও বিল সংগ্রহ ইত্যাদি সেবা প্রদানের মাধ্যমে কমিশন বা সার্ভিস চার্জ আদায় করিয়া নিজস্ব আয় বর্ধন করে।
ধারা-১১০৯ ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর তহবিলের উৎস ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর মূলধনের উৎসসমূহ নিম্নরূপ (ক) পরিশোধিত মূলধন; (খ) সংরক্ষিত তহবিলে জমাকৃত অর্থ; (গ) সঞ্চিত ও অবণ্টিত মুনাফা; (ঘ) কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক হইতে গৃহীত ঋণ; (ঙ) ইসলামী অর্থায়নপত্র বিক্রয় বাবদ প্রাপ্ত অর্থ;
(চ) চলতি হিসাব, সাধারণ মুদারাবা হিসাব, বিশেষ মুদারাবা হিসাব, মেয়াদী মুদারাবা হিসাব, বিশেষ মেয়াদী মুদারাবা হিসাব ও অন্যান্য জমা হিসাবে গ্রাহকগণের জমাকৃত আমানত।
বিশ্লেষণ
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী শেয়ার সার্টিফিকেট বিক্রয়ের মাধ্যমে ইহার তহবিল সংগ্রহ করে। ইসলামী শরীআতের মুশারাকা (অংশীদারী ) নীতিমালার অধীন এইসব শেয়ার ইস্যু করা হয়। মুশারাকা বিধানমতে শেয়ার সার্টিফিকেট ক্রয়কারীগণ তথা শেয়ারহােল্ডারগণই ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর মালিক। শেয়ার ক্রয় বাবদ তাহাদের জমাকৃত অর্থই ব্যাংকের আসল মূলধন এবং ইহাই পরিশোধিত মূলধন।
বৎসরান্তে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর যে নীট মুনাফা হয় তাহার একটি অংশ শেয়ারহােল্ডারগণের মধ্যে বন্টন না করিয়া ব্যাংকের সংরক্ষিত তহবিলে জমা রাখা হয়। এই সঞ্চিতির প্রধান উদ্দেশ্য ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি মজবুত করা।
সংরক্ষিত তহবিল ব্যতীত ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী ভবিষ্যত লোকসান এবং অন্য যে কোন ধরনের বিপদ মোকাবিলা করার লক্ষ্যে অর্জিত মুনাফা হইতে নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে সঞ্চয় করিয়া বিশেষ সংরক্ষিত তহবিল গঠন করেন। ইহাও ব্যাংকের মূলধন হিসাবে গণ্য। উদাহরণস্বরূপ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ ইহার বার্ষিক বিনিয়োগলব্ধ সঞ্চিতির শতকরা দশ ভাগ লোকসান ভর্তুকি রিজার্ভ নামে বিশেষ সংরক্ষিত তহবিলে জমা রাখে। ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর কখনও তারল্য সমস্যা (নগদ অর্থের অভাব) হইলে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হইতে ঋণ গ্রহণ করিয়া উক্ত সমস্যার মোকাবিলা করিতে পারে। ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী প্রাপ্ত ঋণকে লাভ-ক্ষতিতে অংশীদারী জমা হিসাবে (Profit loss Sharing Account) গণ্য করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নামে মুদারাবা হিসাব খুলিয়া উক্ত হিসাবে ঋণের অর্থ জমা দেয়। ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী উক্ত অর্থ কারবারে খাটাইয়া যে মুনাফা লাভ করে তাহার অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও দেয়। অনুরূপ কায়দায় ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী অন্যান্য ব্যাংকের নিকট হইতেও ঋণ গ্রহণ করিতে পারে।
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী বিবিধ ইসলামী অর্থায়নপত্র ইস্যু করিয়াও ইহার মূলধন গঠন করিতে পারে। দেশ-বিদেশের ইসলামী ব্যাংকসমূহ ইসলামী আইনের সহিত সংগতি রাখিয়া বিভিন্ন ধরনের ফাইন্যানসিয়াল ইনষ্ট্রমেন্ট উদ্ভাবন করিয়াছে এবং এই সবের মাধ্যমে অর্থায়নের পদক্ষেপও নেওয়া হইয়াছে। উদাহরণস্বরূপ পাকিস্তানে পার্টিসিপেশন টার্ম সার্টিফিকেট, জর্দানে মুকারাদা সার্টিফিকেট এবং বাংলাদেশে মুদারাবা সঞ্চয়পত্র চালু করা হইয়াছে। এই সব ইনমেন্ট ইস্যু করিয়া
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী ইহার তারল্য ঘাটতি মোকাবিলা করিতে পারে অথবা কোন বিশেষ প্রকল্পের জন্য লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে অর্থ সগ্রহ করিতে পারে। মুকারাদা মূলত মুদারাবা-এর বিকল্প নাম। এইসব অর্থায়নপত্র ইস্যু করিয়া ব্যাংক যে অর্থ সঞ্চয় করে তাহা অংশীদারী কারবার ও মুদারাবা কারবারের নীতিমালা অনুযায়ী বিনিয়োগ করা হয় এবং বিনিয়োগ হইতে প্রাপ্ত আয়ের একটি অংশ সার্টিফিকেটধারীদের প্রদান করা হয়।
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী চলতি মেয়াদী ও বিভিন্নরূপ মুদারাবা হিসাব খুলিয়া উহাতে গ্রাহকগণের নগদ অর্থ আমানত হিসাবে গ্রহণ করে। এইসব হিসাবে জমা অর্থও ব্যাংকের মূলধন গঠন করে। চলতি হিসাবে আল-ওয়াদিআ নীতিমালার ভিত্তিতে গ্রাহকগণের নগদ অর্থ আমানত স্বরূপ গ্রহণ করা হয়। “কাহারও মাল অপর ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহারের অনুমতিসহ নিরাপদ হেফাজত বা সংরক্ষণ করাকে ওয়াদিয়া বলে”। আমানতকারীর অনুমতি লইয়া ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী চলতি হিসাবে জমাকৃত অর্থ স্বীয় প্রয়োজনে ব্যবহার করে। এই ক্ষেত্রে আমানতকারীকে কোনরূপ মুনাফা প্রদান করা হয় না এবং সে লোকসানও বহন করে না। কারণ আমানতকারী যে কোন সময় নিঃশর্তভাবে তাহার সমুদয় অর্থ বা উহার অংশবিশেষ ব্যাংক হইতে তুলিয়া নিতে পারে। ইহা অন্যান্য ব্যাংকের কারেন্ট একাউন্টের অনুরূপ।
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী সাধারণ মুদারাবা হিসাবে গ্রাহকের নগদ অর্থ আমানত স্বরূপ গ্রহণ করে এবং গ্রাহক বা আমানতকারীর পূর্বানুমতি লইয়া উক্ত অর্থ বিনিয়োগ করিয়া থাকে। এই ক্ষেত্রেও আমানত ফেরত নেয়ার কোন মেয়াদ নির্দিষ্ট থাকে না। অর্জিত মুনাফার একটি অংশ চুক্তি মোতাবেক আমানতকারীকে প্রদান করা হয়। এই ক্ষেত্রে ব্যাংক আমানতকারীর মুনাফার পূর্ব নির্ধারিত হার হ্রাস করিতে পারে না। কিন্তু স্বীয় অংশের হার হ্রাস করিয়া আমানতকারীর অংশের হার বৰ্দ্ধিত করিতে পারে।
মুদারাবা মেয়াদী হিসাবও সাধারণ মুদারাবা হিসাবের অনুরূপ। তবে এক্ষেত্রে একটি সময়সীমা বা মেয়াদ (যেমন তিন মাস, ছয় মাস, এক বৎসর, তিন বৎসর ইত্যাদি) নির্ধারিত থাকে, যে সময়ের মধ্যে গ্রাহক বা আমানতকারী তাহার আমানত তুলিয়া নিতে পারে না। এই হিসাবে আমানতকারী সাধারণ মুদারাবা হিসাবে আমানতকারীর তুলনায় অধিক মুনাফা লাভ করিয়া থাকে। কোন লোকসান হইলে আমানতকারীগণ তাহাদের স্ব স্ব হিসাবে রক্ষিত আমানতের হার অনুযায়ী তাহা বহন করে।
বিশেষ মেয়াদী মুদারাবা হিসাব বা বিশেষ মুদারাবা আমানত একই অর্থবােধক। ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী বিশেষ বা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে গ্রাহক বা আমানতকারীগণের নিকট হইতে তাহাদের নগদ অর্থ আমানতস্বরূপ গ্রহণ করিয়া থাকে। গ্রাহক বা আমানতকারীর সহিত চুক্তি অনুযায়ী ব্যাংক নির্দিষ্ট ব্যবসা, শিল্প বা প্রকল্পে উক্ত আমানত বিনিয়োগ করে। ইহা হইতে অর্জিত মুনাফা ব্যাংক ও আমানতকারীগণ পূর্ব নির্ধারিত হার অনুযায়ী প্রাপ্ত হয়। কিন্তু লোকসান হইলে তাহার সম্পূর্ণটাই আমানতকারীগণ বহন করে। এই ক্ষেত্রে ব্যাংকের শ্রম ও সময় বৃথা যায়।
ইসলামী ব্যাংক সময়ের চাহিদা অনুযায়ী ইসলামী শরীআর নীতিমালার আওতায় আরও বিভিন্নরূপ হিসাব খুলিয়া আমানতকারীগণের নগদ অর্থ জমা নিতে পারে। বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকসমূহ এইসব পদ্ধতি অনুসরণ করিয়া তাহাদের প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করিয়া সফলভাবে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করিয়া আসিতেছে।
ধারা-১১১০
ক্ষতিপূরণ তহবিল ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী ভবিষ্যত নিরাপত্তা এবং আমানতকারীগণের আমানতের অর্থ অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে প্রতি বৎসরের অর্জিত মুনাফার একটি অংশ সঞ্চয় করিয়া ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠন করিতে পারে।
বিশ্লেষণ
ইসলামী ব্যাংক কোম্পানী ক্ষতিপূরণ তহবিল বা রিজার্ভ (Loss offsetting Reserve) বিভিন্ন উদ্দেশ্যে গঠন করিয়া থাকে। আমানতকারীগণের, বিশেষত মুদারাবা আমানতকারীগণের জমাকৃত অর্থ লোকসানের কারণে যাহাতে হ্রাসপ্রাপ্ত না হয় বা নিঃশেষ হইয়া না যায় সেইজন্য বিশেষজ্ঞগণ ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের পরামর্শ প্রদান করিয়াছেন। তাহা ছাড়া ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীর কোন কারণে কোন বৎসর অর্জিত লাভের পরিমাণ যদি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাসপ্রাপ্ত হয় তবে বিগত বৎসরসমূহে ঘোষিত বা প্রদত্ত লভ্যাংশের সহিত সামঞ্জস্য বিধানের জন্য ক্ষতিপূরণ তহবিলে জমাকৃত অর্থ সংশ্লিষ্ট বৎসরের অর্জিত মুনাফার সহিত যোগ করিয়া ভারসাম্যপূর্ণ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। ইহাতে ব্যাংক উহার ব্যবসার সুনাম অক্ষুন্ন
রাখিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ ইহার প্রতি বৎসরের অর্জিত মুনাফার সর্বোচ্চ শতকরা ১৫ (পনের) ভাগ সঞ্চয় করিয়া একটি ক্ষতিপূরণ তহবিল গড়িয়া তুলিয়াছে।
তথ্য নির্দেশিকা ১. সহীহ আল-বুখারী, বাংলা অনুবাদ, আধুনিক প্রকাশনী, ২য় সংশোধনী, ঢাক ১৪১০/১৯৯৩, ২য়
খণ্ড, কিতাবুল মুযারাআ, অনুচ্ছেদঃ ইহুদীদের সহিত ভাগচাষ, নং ২১৬৩; কিতাবুশ শুরূত,
বাবুশ-শুরূত ফিল-মুআমালা। ২. বুখারী, কিতাবুল আহকাম, বাব ১; মুসলিম, কিতাবুল ইমারা, বাব ৫। ৩. তিরমিযী, আবওয়াবুল আহকাম, বাব ১৭, নং ১৩৫২, ফুআম্দ আবদুল বাকী কর্তৃক সম্পাদিত,
দারু ইহইয়াইত তুরাছিল আরাবী, বৈরূত সংস্করণ, ৩য় খ; আবু দাউদ, কিতাবুল আকদিয়া, বাব ফিস সুলহ, নং ৩৫৯৪, ইয্যাত উবায়দ ও আদিল সায়্যিদ সম্পা, দারুল হাদীস, হিমস (সিরিয়া), ১ম সংশোধিত সং ১৩৯৩/১৯৭৩, ৪র্থ খণ্ড; বুখারী, কিতাবুল ইজারা, বাব আজরিস
সামাসিরা। ৪. ডঃ নাজাতুল্লাহ সিদ্দীকী, ইজ ইন ইসলামিক ব্যাংকিং, দি ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইউ, কে
১৯৮৩, খৃণ্ড, পৃ. ১৪২। ৫. ডঃ এম. উমার চাপরা, Twords q just Moneytary system, the Islamic
Foundation, UK 1985, পৃ. ৫৭। ৬. ডঃ এম. উমার চাপরা, ইসলামী অর্থনীতিতে মুদ্রানীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থার রূপরেখা, অনু,
মুহাম্মদ শরীফ হুসাইন, ইসলামিক ইকোনমিক্স রিসার্চ ব্যুরো, ঢাকা ১৯৮৯ খৃণ্ড, পৃ. ২৪৯।